ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • সামথিং সামথিং : পর্ব ৬৪

    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (January 22, 2025)
     

    অগ্নির মানে

    এর কি বেহ্মতালুতে ভাপ লাগল! ঘিলু পিলপিলিয়ে পিন্ডি! লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুনে গ্যারি হল জুনিয়র-এর সর্বস্ব গেল, সঙ্গে অলিম্পিক্সের সাঁতারে জেতা ১০টা মেডেল, আর সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন: মেডেলগুলোর জন্যে দুঃখ অবশ্যই হচ্ছে, কিন্তু ওগুলো তো প্রতীক। আর, সব কিছুই পুড়েছে বটে, কিন্তু গেছে তো জিনিসপত্র। সে আবার ফিরে আসবে, আমাকে একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে।

    আরে, মেডেল ছাই হয়েছে বলে তো লোকটার হল্লা মচিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদার কথা। গোটা বাঙালি জাত এখনও রবীন্দ্রনাথের নোবেল-মেডেল চুরির কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাসে উইন্ডমিল দাবড়াচ্ছে, অশ্রু-দাপটে হাইড্রো-ইলেকট্রিক ঝাপটা। পদক চুরি যাওয়া নির্ঘাত খারাপ, কিন্তু শেষ অবধি, সত্যিই, ওটা প্রতীক ছাড়া কী? চুরি গেছে একটা গোলমতো উজ্জ্বল বস্তু, কীর্তিটা নয়, পদকপ্রাপ্তির উত্তুঙ্গ সম্মানটাও নয়। রবীন্দ্রনাথের কোনও চিরুনি, পাণ্ডুলিপি, শংসাপত্র, তেলের ছিপি আর কক্ষনও কোনওদিন না দেখতে পেলেও— লোকে তাঁর লেখা পড়ে ও গান শুনে তাঁকে প্রণাম জানাবে, বা না-জানানোর সিদ্ধান্ত নেবে। মানে, সেগুলোর ভিত্তিতেই তাঁর মূল্যায়ন করবে, মেডেলের ব্যাসার্ধ ডায়রিতে টুকবে না।

    আরও পড়ুন : বাকস্বাধীনতার আমি-তুমি হয় কি?
    পড়ুন সামথিং সামথিং পর্ব ৬৩…

    এই গ্যারি ভদ্রলোকের একটা নয়, দশটা পদক নষ্ট, তবু নো চড়াইপাখির কষ্ট! উনি বুঝেছেন, তাতে ইতিহাস ছাই হয় না, ওঁর নামের পাশে রেকর্ড বইয়ে জয়গুলোর কথা স্পষ্ট। হ্যাঁ, চোখের সামনে ওগুলোকে নিত্যিদিন দেখতে পেলে যে ভাল্লাগা উৎপন্ন হত, তা হবে না, প্রাণের আরাম সত্তার শান্তি ঈষৎ ছাঁটাই। কিন্তু সেটা গৌণ মন-খারাপিয়া ঘটনা (এই সাক্ষাৎকার বিখ্যাত হয়ে যেতে, ওঁকে মেডেলগুলো ফের দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ)।

    পরের বাক্যগুলো আরও আশ্চর্য! একটা লোকের বাড়ি এবং তার মধ্যে থাকা সর্বস্ব ধ্বংসপ্রাপ্ত, যে সুইমিং পুলে উনি সাঁতার শেখাতেন, সেটারও দফা গয়া। অর্থাৎ, রুজিরোজগারের উপায়টা অবধি পুড়ে ঝামা। এবার তাঁর এমন ডেসিবেলে কপালে করাঘাত করার কথা যে, রামরাজাতলা থেকে শোনা যাবে। জীবনের এতখানি সঞ্চয় সহসা অ্যাক্কেরে শূন্য, ভবিষ্যতের নতুন উপার্জনের বন্দোবস্ত অবধি অনিশ্চিত। একটা ছ’পকেট প্যান্ট হারালে তার শোক ভুলতে আমাদের সাত বছর লাগে, ট্যাক্সিতে সানগ্লাস ফেলে এলে তিনগ্লাস খেয়ে রোদন ওগরাই, আর এই লোকটার সমস্ত সমুদয় তাবৎ সম্ভার জীবন থেকে উবে যাওয়ার পর সে বলছে, আহা, ওগুলো জিনিস বই তো কিছু নয়!

    ওরে, জিনিসই তো আসল প্রাণধন, বস্তু স্তূপ করেই তো আমরা সুখের হাইট মাপি। গ্যারেজে ক’টা গাড়ি আর বারান্দা ক’ইঞ্চি শূন্যে পাড়ি, ট্যাটু-বডি-ময় ব্র্যান্ডেড জামা, শাড়ির প্রান্তগিঁট মারলে চাঁদ টু পানামা, তার বশেই দর্পণে ললাট ঝাঁকাই জ্যোতি মাখাই। আলমারি গোছাতে বুঝি, যা আছে, ইহজীবনে ভোগ অসম্ভব, তবু সন্ধেয় ফ্ল্যাশ সেল-এ জিহ্বা লকায়। সেখানে এ বলছে, আহা, প্রাণ তো যায়নি আপন কারও, আত্মীয়রা তো অক্ষত, পোষা কুকুরটাও দিব্যি কাছ ঘেঁষটেই বিরাজমান, যা গেছে তা অ-জীবন্ত, এবং পুনরায় সংগ্রহযোগ্য। হ্যাঁ, জিনিস প্রিয়জনের অস্তিত্বের তুলনায় কম মূল্যবান। বস্তুর চেয়ে সহস্রগুণ কাম্য প্রেম, প্রীতি, সাহচর্য— যা মুঠোধার্য নহে। কিন্তু তা তো অভিধানে। কাঁড়িকেত্তর টাকা ও দখলীকৃত সামগ্রী ধুলো হয়ে গেলে তার অপেক্ষা বড় আফশোসে টম-ডিক-গ্যারি কলিযুগে দগ্ধেছে কি? মানুষ তো এ সান্ত্বনা-ধরনে চিন্তা করে না, যাক আমার তো তবু এতটি আছে: বরং আক্ষেপে ফোটে: অতটা নেই কেন।

    পদক চুরি যাওয়া নির্ঘাত খারাপ, কিন্তু শেষ অবধি, সত্যিই, ওটা প্রতীক ছাড়া কী? চুরি গেছে একটা গোলমতো উজ্জ্বল বস্তু, কীর্তিটা নয়, পদকপ্রাপ্তির উত্তুঙ্গ সম্মানটাও নয়। রবীন্দ্রনাথের কোনও চিরুনি, পাণ্ডুলিপি, শংসাপত্র, তেলের ছিপি আর কক্ষনও কোনওদিন না দেখতে পেলেও— লোকে তাঁর লেখা পড়ে ও গান শুনে তাঁকে প্রণাম জানাবে, বা না-জানানোর সিদ্ধান্ত নেবে।

    সেখানে অ্যাদ্দূর সংগত কারণ সত্ত্বেও লোকটা হাহাকারে না ডুকরে, এমন স্মার্ট নির্বেদ আয়ত্ত করল ক্যায়সে? কেন সে বলছে না, এত বছরের জমানো ভাঁড়ার অদৃশ্য হল কোন পাপে, জবাব চাই জবাব দাও। এবং কেন বলছে, নিজের শ্রমে পূরণ করতে হবে এ ভয়াবহ ক্ষতি? দায়িত্বটা সটান অন্যের ঘাড়ে থেবড়ে দিচ্ছে না কেন? আকাশে তাকিয়ে কেন হাঁকড়াচ্ছে না, ঈশ্বর, এমন নিষ্ঠুর শাপ হেনেছ যখন, মোচন করার ভার তোমার? কেন আওড়াচ্ছে না, সরকারের অবহেলা ও অপদার্থতার দরুণ ছড়িয়েছে এই আগুন, তারা সযত্নে গড়ে দিক আমার বাসস্থান ও সাঁতার-ক্ষেত্র? কী কারণে চাইছে না সমাজের কাছে গণ-চাঁদা ও কৈফিয়ত: সাধারণ ভিড় স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছে না কেন আমার জীবন তরিয়ে দিতে? আমাদের যে নিজ দৈন্যের দায় ও দুর্দশা মোচনের কর্তব্য অন্যের গর্দানে অর্পণের মিষ্ট অভ্যাস, তা এর মগজে পদ্মাসন গাড়েনি কেন? তার ওপর বলছে, নিজেই লেগে পড়বে প্রকাণ্ড খাটতে? খাটুনি? সে পাপটি এড়াবার জন্যই তো সমগ্র যাপনে এদিকে দারোয়ান ওদিকে গাড়োয়ান, সেদিকে শেফ ওদিকে লেপ? অ্যাদ্দিন ধরে তো আমাকে যাতে না শ্রম করতে হয়, তামুক সেজে গড়গড়া নিবেদিয়ে তটস্থ থাকে কর্মী-সমিতি, তারই আয়োজন থরে-বিথরে মজুত করলাম সামূহিক স্ট্রাগলান্তে?

    এতখানি খ্যাতি আমদানি করে, প্রকাণ্ড কোষাগার বাগিয়ে, সেগুলো পলকে হারিয়ে, কেউ যদি বলে, ফের কোদাল চালাবে, সে কি সুস্থ? না কি আগের জম্মে জেন-সন্ন্যাসী পুষত? হাত ছটকে ট্র্যাজিরোদন না রিহার্সিয়ে, নিজের দুর্ভাগ্যের আগাছা নিজে সাফ করতে নামছে, নিজে নিজের পাশে মেরুদাঁড়া সিধে করে দাঁড়িয়ে পড়ছে, সম্মুখে গনগন মেহনত-মধ্যাহ্ন?

    মার্কিন রক্তেই আছে হার না-মানার মন্ত্র?

    মার্কিন আত্মায় অবশ্য নাছোড় শ্রম ও কামড়ে-থাকা-জেদের মন্ত্র লেখা আছে। প্রতিভার চেয়েও এখানে অধ্যবসায় অধিক পূজ্য। হলিউডি ছবিতে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ মহাসংকটে পড়ে অতিমানব হয়ে উঠছে, সন্তানকে বাঁচাতে নির্বিবাদী লোক আধডজন গুন্ডার মহড়া নিচ্ছে, বা বুদ্ধির লড়াইয়ে হারাচ্ছে মাফিয়াকে। কিংবা, অতি সামান্য লোককে বিপন্ন মানুষেরা ত্রাতা ঠাওরালে সে বারংবার অকৃত্রিম বলছে: আমি নিজের শিরায় কোনও ক্ষমতাই অনুভব করি না, তারপর পরিস্থিতির চাপে, বা দাবিতে, শরণাগতের প্রতি করুণায়, অবধারিত হয়ে উঠছে মসিহা। মানে, মানুষের মধ্যে বিশালতর মানুষ সর্বক্ষণ গ্যাঁট, তাকে জাগিয়ে তুললেই সে তরোয়াল ঘুরিয়ে প্রস্তুত। চেষ্টায় মিলয়ে বস্তু, কেঁদো না, ঝাঁপিয়ে পড়ো।

    এই মানুষটি সেই প্রাণভোমরা ক্রোমোজোমে পেয়েছেন বা স্বভাবে পুষেছেন সচেতন, ছাই উড়িয়ে একটি তিন আনার পুতুল পেলে সেটিকে সাজিয়ে শূন্য থেকে শুরু করতে ইতিমধ্যে চনমন করছে তাঁর আশাদীপ্ত ও অ-নালিশবাদী পেশি। দুঃখে ও সুখে যার স্থিরতা সমান, হৃদয় যার উদীয়মান ও অস্তায়মান সূর্যের সম-তাম্রবর্ণ, তার অভ্যন্তরীণ অগ্নিকে একটি বিস্ময়মুগ্ধ স্যালুট না ঠুকে উপায়? 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook