ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • পুরনো ভাইরাস ভয়ে বাড়ে


    প্রহেলী ধর চৌধুরী (January 8, 2025)
     

    ভয় ব্যাপারটা আসলে অদৃশ্যের নেমসেক। যেমন কিনা ভূত। সবাই তার স্রষ্টা, তবু কেউই তাকে চোখে দেখেনি। আট থেকে আশি— সকলেই তাই নিজের ‘ক্রিয়েটিভ কন্ট্রিবিউশন’ রেখে যান ভয়াল ফ্যান্টাসিগোলা ভূতের চিত্রকল্পে। বিভীষণ সেই কল্পনা, সংসারের যে-কোনও দৃশ্যমান ও স্পর্শযোগ্য বাস্তবিক ভয়কে বলে বলে গোল দেয়; তা সে মানুষখেকো বাঘই হোক কিংবা রাজ্যখেকো আয়লা, চাকরিখেকো বসই হোক কিংবা দেশখেকো পলিটিশিয়ান; ভূতের কম্পারিজনে সক্কলেই নক আউট।

    ভেবে দেখলাম, হালের এইচএমপিভি ভাইরাসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এক্কেবারে এইরকম। একে তো ভাইরাস মানেই খালি চোখে অদৃশ্য; দেখা যায় না। ফলে আমার মতো সাধারণ মানুষ, ভূতের মতো ভাইরাসকেও কল্পপটে যেমন খুশি সাজিয়ে-গুছিয়ে, ভেঙেগড়ে নেন আর কী! আর কোভিডের পর থেকে তো ভাইরাসের কল্পচিত্র নির্মাণে অনুপ্রেরণারও কোনও অভাব নেই।

    ভাইরাসের ভয়টা সেই যে কোভিড থেকে আমাদের মনে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করল, সৃজনশীল বিজ্ঞাপনদাতারাও অমনি নাগাড়ে টুথপেস্ট, ফিনাইল, সাবান, শ্যাম্পু, ফ্লোর ক্লিনার, স্যানিটাইজার… সবকিছুরই প্রচার-বিজ্ঞপ্তিতে লম্বা-রোগা, খাটো-মোটা, বাচ্চা-বুড়ো, বেগনে-সবুজ, ডানামেলা- পাখাতোলা, শিংওলা-ঠ্যাংঝোলা ভাইরাসের ইউনিক প্রতিমাসকল নামাতে লাগলেন। ভেবে দেখলে, সত্যজিতের ‘বাবা ভূত, ছানা ভূত/ সোজা ভূত, বাঁকা ভূত/ রোগা ভূত, মোটা ভূত, আধা ভূত, গোটা ভূত’-এর সঙ্গে আজকের দিনে আমাদের মানসকল্পে তৈরি ভাইরাসের স্ট্রাকচারাল অন্তর-মিলটি প্রশ্নাতীত। ব্যাপারটাকে তাই ভাইরাসের ভূতও বলতে পারেন কিংবা ভূতুড়ে ভাইরাস।

    আরও পড়ুন : এআই-এর ভূত কোণঠাসা করছে মানুষকেই?…

    তা যেকথা বলছিলাম। এই মুহূর্তে যে সেলিব্রিটি ভূত ভাইরাসটি ভাইরাল হয়েছেন, তার নাম হল হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস। ডাকনাম— এইচএমপিভি। নামে ক্যাসেট কোম্পানির মতো শুনতে হলেও, এই এইচএমপিভি ভাইরাসটি কিন্তু কোভিডের মতো নবাগত (নভেল) নন। বরং বেশ খানদানি। এর জাতভাই আরএসভি ভাইরাস তো, যাকে বলে গিয়ে— ‘স্টার’। সেই ১৯৫৬ সালে আবিষ্কার হয়ে এখনও মার্কেট কাঁপাচ্ছেন। 

    সেইদিক থেকে দেখতে গেলে এইচএমপিভি-র কপাল আসলে মন্দই। আসলে কথায় বলে না, সবই আসলে নিয়তি। নইলে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তিনি যে হাটে-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, হতচ্ছাড়া বিজ্ঞানীরা তাঁকে চিনতেই পারল না! হাফ সেঞ্চুরি পথ হাঁটার পর, ২০০১ সালে এইচএমপিভি-কে মানব-শরীরে প্রথম আলাদা করে আবিষ্কার করলেন ভাইরোলজিস্টরা আর কানের পাশে গুঁজে দিলেন ভাইরাসের তকমাওলা পালকটি।

    ভয়ই ভাইরাসের পুঁজি?

    কিন্তু তাতেই বা লাভটা কী হল? ক্যাপিটালিস্ট বিশ্ববাজার, যা কিনা ঘোরতর বুর্জোয়া নীতিতে চলে, তাতে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাশালী (পড়ুন কম ক্ষতির ক্ষমতাশালী) এইচএমপিভি জায়গা করতে পারবে কী করে? উপরন্তু, অ্যাদ্দিন ধরে মার্কেটে ঘোরাঘুরির ফলে তার মুখও সবাই চিনে গেছে। ফলে মানবশরীর তাঁর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিও তৈরি করে ফেলেছে। বেমক্কা মানুষগুলোকে এখন আর ভয় দেখানোর মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই তাঁর। সব মিলিয়ে যাকে বলে, এক্কেরে লোকসানের একসা।

    তা এমনভাবে চলতে চলতেই গেল বছরের শেষের দিকে এই এইচএমপিভি যখন পঁচাত্তরের প্রৌঢ়, তাকে নতুন করে আবিষ্কার করল চিন। চিনের অবিশ্যি চেনার চোখ বরাবরই ভালো; ওদের ডুপ্লিকেট প্রোডাক্ট ওরাই নকল বলে চিনিয়ে না দিলে চিনতে পারে না কেউ। তাই এই এইচএমপিভি-কে চিনই হালে চিনে নিল। আর বুলেটিন জারি করে বিশ্বকে সে-কথা জানাল।

    মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ তুমুল তোলপাড় জাগিয়ে বিজ্ঞের মতো বলছে, এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করছে শিশু, বৃদ্ধ আর কো-মরবিডিটির পেশেন্টদের। বেমালুম চেপে যাচ্ছে যে, যে-কোনও ভাইরাসই সর্বদা বেশি আক্রান্ত করে এই তিন গোষ্ঠীকেই। এতে নতুন কিছুই নেই।

    তবে কিনা জোরালো কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণসংশয় না হওয়ার ফলে চিন ব্যাপারটাকে খানিক সাধারণভাবেই জানিয়েছিল। আর পাঁচটা আরএসভি ভাইরাসের মতো এটি হলেও, যেহেতু সর্দি, কাশি, জ্বর বা হালকা শ্বাসকষ্টের বাইরে খুব একটা কিছু হয় না, তাই একে নিয়ে আলাদা করে ভয়ের কিছু ছিল না। কোভিডের মতো তো নয়ই! কিন্তু জগৎটাই মধ্যমেধার সোশ্যাল মিডিয়ার কিনা, তাই আম আর আমলকি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। এমনিতেই কোভিডের পর থেকে চিনা ভাইরাসের নাম শুনলেই লোকে ভয়ে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছিল। নতুন একটা নাম সেই ভয়ের বাজারে, যাকে বলে, ঘি ঢেলে দিল। আর ওমনি এই ভয়টাকে কাজে লাগিয়ে পালে পালে ইউটিউবার আর মিডিয়া হাউজ ভাইরাসকে ভাইরাল করতে মাঠে নেমে পড়ল। পুরনো কোভিডকালীন ভিডিয়ো ফুটেজ এডিট করে তারা এইচএমপিভি-র নামে চালিয়ে দিলেন। কিছু কিছু ভিডিও তো এইচএমপিভি-র হেডলাইন দিয়ে শুরু করে কোভিডেরই ইতিহাস চর্চা করছে। মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ তুমুল তোলপাড় জাগিয়ে বিজ্ঞের মতো বলছে, এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করছে শিশু, বৃদ্ধ আর কো-মরবিডিটির পেশেন্টদের। বেমালুম চেপে যাচ্ছে যে, যে-কোনও ভাইরাসই সর্বদা বেশি আক্রান্ত করে এই তিন গোষ্ঠীকেই। এতে নতুন কিছুই নেই। ডাক্তার, গবেষক কিংবা স্পেশালিষ্টরা অবশ্য প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বলছেন; ভয় নাই ওরে ভয় নাই,/ অ্যান্টিবডি রয়েছে যেখানে,/ অ্যাটাকের সেথা/ ঠাঁই নাই ওরে ঠাঁই নাই। 

    কিন্তু তাঁদের কণ্ঠস্বর ছাপিয়ে ভাইরাসের ভূতের অদৃশ্য বাসা এখন আমজনতার দিল পে। সাধারণ শীতকালীন জ্বরজ্বালা- সর্দিকাশি হলেই তারা বলে উঠছেন, ‘নেহাত টেস্ট কিট এখনও আবিষ্কার হয়নি তাই, নইলে দেখিয়ে দিতাম, গতকাল আমার এইচএমপিভি-ই হয়েছিল।’

    আসলে ওই যে বললাম না, ভয় ব্যাপারটা আসলে অদৃশ্যেরই ডাকনাম, ভূতের মতো। আমাদের মনে তাই ভাইরাসের ভূতের সঙ্গে যে অবিরাম ছায়াযুদ্ধ চলে; অ্যান্টিবডির সাধ্যি কি তাকে রোখে? 

    আর এসবের মধ্যে এই প্রৌঢ়ত্বে এসে দিব্য ফুটেজ উপভোগ করছেন স্বয়ং এইচএমপিভি। বিগতযৌবনে হঠাৎই তিনি সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছেন। থেকে থেকেই নিজেকে সইফ আলি খানের সঙ্গে তুলনা করছেন। বলছেন, আমজনতাই আসলে আমার করিনা কপুর।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook