ব্যাকস্টেজ: পর্ব ১৫

‘ তখন ১৯৮৪ সাল। বাংলা ছবি নতুন মুখ, নতুন মোড় খুঁজছে। তরুণবাবু সেটাই কী সুন্দর ব্যাখ্যা করলেন। ‘মহীরুহ পতন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নতুন বীজ তো আমরাই বপন করছি। চিরকাল সেটাই পরিচালকদের কাজ। আমি সেটা আগেও করেছি, এখনও করছি।’ ওঁর এই কথা আমার বহু বছর কানে লেগে ছিল। এবং আমি নিজে যখন ছবি করেছি, বিষয় নির্বাচন করেছি, তখন কোথাও যেন ওঁরই স্বর শুনেছি।’ স্মরণে, তরুণ মজুমদার।

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ১৪

‘ বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে শুনলাম প্লেন লেট হবে। আমরা ঢুকে বোর্ডিং পাস নিয়ে যখন রেস্তোরাঁয় ঢুকব, দেখি অসিত সেন বসে আছেন বাইরে। আমি চিনতে পারিনি, রাণাই চিনল। আমরা এগিয়ে গেলাম ওঁর দিকে। নিজেদের পরিচয় দিলাম। রাণা বলল, ‘আমরা দুজন ভাবী ফিল্মমেকার!’ কথাটা শুনে উনি হাসলেন, বললেন ‘আমিও এভাবেই আরম্ভ করেছিলাম।’

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ১৩

‘সেই বৃষ্টির সন্ধ্যা আজও মনে আছে। শুটিং হচ্ছিল, আমহার্স্ট স্ট্রিটের কাছে একটি বাড়িতে। বিকেলে যখন পৌঁছেছি তখন মেঘ করে এসেছে। পৌঁছে দেখি রীনাদির ঘরে সিন বোঝাচ্ছেন মৃণালদা । আমরাও বসে গেলাম। লাইট হচ্ছে রান্নাঘরে, ওখানেই সিন। আমাদের দেখে মৃণালদা কিছুটা বুঝিয়ে লাইট নিয়ে কথা বলতে বেরিয়ে গেলেন। ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আমরা তারই মধ্যে পাতা দেখিয়ে নিলাম রীনাদি কে। বৃষ্টির মধ্যেই ফিরে এলেন মৃণালদা, এত বৃষ্টির মধ্যে জানলার বাইরের লাইট বসানো যাচ্ছে না তাই অপেক্ষা করতে হবে।’

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ১২

‘লাঞ্চব্রেকে সুস্মিতা বলল, ‘আমাকে পরের সিনটা পড়ে দিও।’ হুড়মুড়িয়ে নিজে খেয়ে গেলাম। তখন ও স্যালাড খাচ্ছে। আমি বেরিয়ে যেতে চাইলে ও বলল, ‘খেতে-খেতেই কথা হোক।’ পড়ে দিলাম সংলাপ। দু’তিনবার। তারপর এটা-সেটা কথা। এবার ও বলল, ‘তুমি কিউ দাও, আমি আমার সংলাপ বলছি।’’ সুস্মিতা সেনের সঙ্গে শুটিং।

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ১১

ঋতু এল, এসে ওকে দেখে বলল, কাজল তোলো, চোখের কোলে কালি চাই, যদি না থাকে দাও, আর বলেই টিস্যু নিয়ে ওর ঠোঁট আর গাল ঘষে দিল । চলবে না, কোনো প্রসাধন চাই না, তুমি এমনিই সুন্দরী, একেবারে রাশিয়ার সাদা ক্রেন প্রজাতির এলিগ্যান্ট পাখি। আমি সেটাই চাই। ঋতু চলে যাওয়ার পর ও জিজ্ঞেস করল,’ ও কি আমার প্রশংসা করল না কি…অথ ঐশ্বর্য কথা।

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ১০

‘ঋতু কোনও প্রসাধন করতে দিত না ওর অভিনেত্রীদের। কিরণ নিয়ে এসেছিল ম্যাক-এর কম্প্যাক্ট। সকালে এসেই লুকিয়ে লাগিয়ে নিত প্রলেপ। ঋতুর চোখেও ধরা পড়েনি সেই আস্তরণ। অবশেষে বারুইপুরে রূপা গাঙ্গুলি ধরে ফেলে কিরণের কীর্তি।’ ‘বাড়িওয়ালি’র শুটিং-অভিজ্ঞতা।

আমার ছোটদিনের বড়দিন

‘দুর্গা পুজোর ঢাক ও জাঁকজমক যেমন পছন্দ ছিল, ক্রিসমাস ইভের নৈঃশব্দ্যের মধ্যে গান ততটাই টানত। ধীরে-ধীরে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় চলে যেতে থাকে দেশ ছেড়ে। আমার টিনেজের বন্ধু— জেনিংস, লোবো, সোয়ারেস পরিবার-সহ হয়ে গেল দেশছাড়া। আমি আর ক্যারল গাই না। বাড়ি-বাড়ি আর আজকাল কেউ ক্যারল গাইতে আসে না।’ হারিয়ে ফেলা ক্রিসমাস।

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ৯

যে মানুষটি ‘গল্প হলেও সত্যি’র মতো জনপ্রিয় ছবি ভাবতে পারেন, তিনিই আবার নাটক থেকে নিয়ে ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ছবি করে তাক লাগিয়ে দেন। আমি যখন দেখা করি ওঁর সঙ্গে, সেই সময় উনি ‘বৈদূর্য রহস্য’ ছবিটি নিয়ে ভাবছেন। বাঙালির আত্মীয় তপন সিনহা।

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ৮

‘গেলাম ওঁর ডেস্কে, লেখাটা দিলাম। অনেকে ছিলেন ওঁর দপ্তরে। আমাকে তেমন ভাবে চিনলেনও না। পেশাদারি ভঙ্গিতে বললেন, ‘নাও, পড়ো কী লিখেছ।’ অত অজানা মানুষের সামনে পড়তে লজ্জা করছিল। সুনীলদা বুঝতে পেরেছিলেন, বললেন, ‘সাংবাদিকদের ভূষণ লজ্জা নয়, সাহস।’’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতি।

ব্যাকস্টেজ : পর্ব ৭

‘…সুচিত্রা মিত্র যখন চুল কেটে ফেললেন একেবারে ছোট করে, আমার মাও অনুপ্রাণিত হয়ে ওঁকে অনুসরণ করলেন। মা’রও ছিল সাদা-কালো গোলমরিচ-রঙা চুল। চোখে চশমা। তাই অনেকে ভাবতেন, মা বোধহয় সুচিত্রা মিত্রের বোন।’ কিংবদন্তীর সঙ্গে বহু বছর।

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ৬

‘রাত একটায় যখন ওঁর ঘরের পার্টি থেকে সবাই যে-যার ঘরে ফিরছি, প্রযোজক ভয়ে-ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কাল কি কল-টাইম পিছিয়ে দেওয়া হবে? মিঠুনদা বললেন, ‘কেন? এটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। মজাও আছে, ডিসসিপ্লিনও। কাল ভোর ছ’টাতেই দেখা হবে। আমাদের কোনও ক্লান্তি নেই।’’ মিঠুনদার স্মৃতি।

ব্যাকস্টেজ: পর্ব ৫

‘সবাই হাসছে। আমিও! হঠাৎ মান্নাদার খেয়াল হল, আমি মহিলা। জিভ কেটে বললেন, ‘ইস! তুই যে রয়েছিস ভুলে গেছিলাম, খারাপ কথা বলে ফেললাম।’ উত্তরে আমি ওঁকে আশ্বস্ত করলাম, বললাম, মহিলা হলেও আমি কোনও পুরুষের থেকে কম নই।’ মান্না দে-র স্মৃতি।