ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শুভারম্ভ: পর্ব ২০


    শুভা মুদ্গল (Shubha Mudgal) (October 21, 2022)
     

    দেখনদারিই হল এখন আসল ব্যাপার এবং তার হোতা হল — সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ‌্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় দেখনদারির এই নির্মম চাহিদার সঙ্গে ভারতের সঙ্গীতশিল্পীরা ঠিক এঁটে পঠতে পারছেন না। । এবার, এই বাস্তবকে তাঁরা গ্রহণ করতে রাজি হবেন কি না, বা পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসাবে তাঁদের সম্ভাব্য অগ্রগতির উপর এর চমকপ্রদ প্রভাব স্বীকার করবেন কি না— তা অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে তাঁদের অধিকার। কিন্তু বহু্‌ শিল্পীর কাছে এই মুহূর্তের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে হাবুডুবু খেয়েও কোনও মতে টিকে থাকা, কঠোর তালিমের জন্য, নিজেকে তৈরি করার জন্য কত বছর কত সহস্র ঘন্টা রেওয়াজ করলেন, সেটা বিচার্য নয়। বরং, তাদের মনের মধ‌্যে এখন চলছে, নতুন রিল বানানোর জন‌্য কী ভাবা যায়। নতুন ভিডিও কন্টেন্টের জন‌্য কী এমন অভিনব উপস্থাপনা দেওয়া যায়। আর সেসব বানানোর জন‌্য পরিশ্রম না হয় করে নেওয়া গেল, কিন্তু তার জন‌্য প্রয়োজনীয় উপাদানবস্তু মিলবে কীভাবে, বা কোত্থেকে। আর সেখান থেকে ইউটিউবে ভিউ বাড়ানো বা ফলোয়ার বাড়ানোর ব‌্যবস্থাটাই বা কীভাবে হবে– এই হল এখন তাঁদের মূল ভাবনা। অনেক শিল্পীরই মনে হয় যদি তাঁরা এই সোশ‌্যাল মিডিয়ার দুরন্ত ঘূর্ণিতে যদি মাথাটা না গলাতে পারেন, তাহলে শিল্পীজীবনের না হবে শিল্প, না হবে খ‌্যাতি। 

    আমি হয়তো এই দোনামোনা ভাবকে একজন বর্ষীয়ান শিল্পীর চোখ দিয়ে দেখছি, যার কাছে এই পরিবর্তনটা হালের। তদুপরি, এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে, আমার জানতে ইচ্ছে করে, বুঝতে মন চায়, কীভাবে এই দাবিসমূহ একজন শিল্পীর শিল্পকে পুষ্টি দিতে পারে। গণপরিসরে এমন কোনও তথ‌্যের পরিসংখ‌্যান যদি থাকে, আমি দেখতে চাই। কিংবা, শিল্পীদের ধরে ধরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে চাই। অবশ‌্যই শিল্পীদের নাম গোপন করাই হবে যদি তাঁরা চান, এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

    যা হোক, এখন দেখা যাক ৩ থেকে ৫ মিনিটের একটা ভিডিও বানাতে গেলে কীরকম খরচ হতে পারে। ইউটিউব ঘাঁটতে গিয়েই দেখলাম, এই বিষয়েও একগুচ্ছ ভিডিও। তা এই লিঙ্কটাই দেখা যাক– https://www.youtube.com/watch?v=Cirx1awUgMI. ৩০ হাজার টাকা খরচ করে একটা ঠিকঠাক মিউজিক ভিডিও হয়ে যাবে, সম্পাদনা ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে। আর নয়তো ১ লাখ টাকা খরচ করাও যায়, যদি আরও ভাল গুণমানের চাহিদা থাকে। আর নয়তো যদি বিভিন্ন অ‌্যাঙ্গেলে একগুচ্ছ ক‌্যামেরার মাধ‌্যমে শুট করতে হয়, একটা অপূর্ব লোকেশন বেছে নিতে হয় বা কোনও বিশেষ মঞ্চ বানাতে হয়, যদি মেক-আপ আর্টিস্টও লাগে, সাজপোশাকের ঘনঘটাও থাকে– তাহলে খরচটা ১০ লাখের কাছাকাছি। যত আড়ম্বর, তত খরচ। ফেলো কড়ি মাখো তেল। এবার, মনে রাখবেন, এটা কিন্তু অনুমানভিত্তিক খরচের একটা গড় হিসেব। এবং সেখানে অডিওট্র‌্যাক ইতিমধ‌্যে রেকর্ডিং ও মিক্স করা হয়ে গিয়েছে। ক্লাসিকাল মিউজিকের ক্ষেত্রে শুটের আগে অডিও রেকর্ড করা তো সম্ভবই নয়। কারণ, লিপ সিঙ্কিংই হবে না। একটা খেয়ালের মধ‌্যে কতক্ষণ বিস্তার নেব, কোথায় থামব– সেটা তো বারবার এক হবে না। ফলে, ভিডিও শুট করতে গেলে কোনও লাইভ পারফর্মেন্সই ধরতে হবে, কিংবা অন‌্য কোনও জায়গাও হতে পারে। কিন্তু, অডিও রেকর্ডিংও তখনই হবে। ধরে নেওয়া যাক, ক্লাসিক‌্যাল মিউজিকের ক্ষেত্রেও একই খরচই লাগল। যদিও, এই হিসেবটা খুব একরৈখিক, কারণ সেখানে ভিডিও শুটের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচের কথা ভাবা হয়নি। এই যেমন, সহ-শিল্পীর পারিশ্রমিক, অডিও ইকুইপমেন্ট ভাড়া করা, স্টেজ সাজানো আর শৈলীসজ্জা, আরও বিভিন্ন এটা-সেটা খরচ ধরে নিন। 

    তা এই এত্তখানি খরচ সোশ‌্যাল মিডিয়া বা ইউটিউবে একটি মাত্র ভিডিও বানানোর লাগি! জানতে পারলাম, সোশ‌্যাল মিডিয়ায় চর্চিত থাকার জন‌্য, নিয়মিত এবং স্ট্র‌্যাটেজিময় পোস্ট রাখতেই হবে। তাহলে, একজন শিল্পী যদি সপ্তাহে একটা ভিডিও বানাতে চায়, তাহলে মাসে তার খরচ কত নিশ্চয়ই আমরা আন্দাজ করতে পারব। এবার কথা হল, তারপরেও কি এতসব ক্রিয়াকাণ্ড সেই শিল্পীর ভাগ‌্যের শিকে ছিঁড়বে? সাধারণত, উত্তর হল ‘না’। লোকের যদি ভাল লাগে, তাহলে যেমন ফলোয়ার সংখ‌্যা বাড়তে পারে, তেমনই সাপ-লুডোর মতো হুট করে নেমে যেতেও পারে সেই সব অনুগামী, যদি ভিডিও পছন্দ না হয়। এমনকী আরও আপত্তিকর লাগলে হপ্তা হপ্তা পোস্ট করার অনুমতিও চলে যেতে পারে, থমকে যেতে পারে। এমনকী সেসব না হয়ে যদি এমনিই হপ্তায় হপ্তায় পোস্ট দেওয়া না হয়, তাহলেও ফলোয়ার কমে যেতে পারে। 

    এবার নজর দেওয়া যাক একটি ভিডিও বানানোর জন‌্য ব‌্যয়িত সময় ও পরিশ্রমের দিকে। রাগনির্ভর একটা মিউজিক ভিডিও যদি হয়, সেখানে তো ১০ থেকে ৩০ মিনিট অবধি লাগবে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে সাজানো, টিউনিং, সেট রেডি করা, আলো ঠিক রাখা, সাউন্ড ঠিক জায়গায় রাখা– আরও নানাবিধ কাজের জন‌্য প্রায় কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। যেখানে শুট হবে, সেখানে পৌঁছনোর জন‌্যও সময় লাগবে, তার ওপর রয়েছে জামাকাপড়, চুল ঠিক করা, গয়নাগাটির বাহার, আরও বিবিধ সাজসরঞ্জামের তোড়জোড়। আমি দেখেছি, সোশ‌্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ উৎকৃষ্ট পোস্টার মাত্রই, সেখানে শিল্পীরা অপূর্ব সব শাড়ি, কুর্তা এবং আরও যা যা সাজ সরঞ্জাম হয়, সব নিখুঁত পরে আছে। গয়নার সঙ্গে মেয়ে শিল্পীটিকে মানাচ্ছে দারুণ, তার সঙ্গে নখপালিশ, মেক-আপ তো রয়েছেই। আর এই সমস্ত হচ্ছে একটা ভিডিওর জন‌্য। যেখানে সময় যাচ্ছে, পরিশ্রম যাচ্ছে, টাকা উড়ছে। তার জন‌্য হচ্ছে ব্র‌্যান্ড কোল‌্যাবরেশন, যারা আনবে শাড়ি, গয়না, মেক-আপ। এর পরিণতিতে যা হয়েছে, এমন পৃষ্ঠপোষক খুঁজতে গেলে শিল্পীকে সেই শর্তাবলি অনুযায়ী কাজে নামতে হবে। এটাও একটা বড় কাজ। জানতে পারলাম, তাই, শিল্পীর কেরিয়ারকে নতুন নতুন রং দেওয়ার জন‌্য এবং সঠিক দিশা দেখানোর জন‌্য বিভিন্ন এজেন্সিও রয়েছে। কিন্তু সেই পৃষ্ঠপোষকরা বা এজেন্সিগুলি কাজ করবে তখনওই, যখন তারা ভালরকম লাভের গুড় দেখতে পাবে এই যৌথতায়। 

    শেষমেশ এতগুলো টাকা, পরিশ্রম এবং ঠোকাঠুকি কোলাকুলি পেরিয়ে, শিল্পী কীসের নিশ্চয়তা পেল? কোনও গ্যারান্টি আছে কি যে, ভিডিও বা পোস্টটি লক্ষ লক্ষ ভিউ পাবেই বা সেই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে ভালরকম টাকা ফেরত আসবে, কিংবা এই ভিডিওর বদান্যতায় শো বা পারফর্মেন্সের বায়না আসবে? ব্যক্তিগত আলাপআলোচনায় বিভিন্ন শিল্পীর থেকে আমি জানতে পেরেছি, একটা মিলিয়ন ভিউয়ের ভিডিও থেকে একজন শিল্পী বড়জোর কয়েক হাজার টাকা পায় রেভিনিউ হিসেবে।

    শেষমেশ এতগুলো টাকা, পরিশ্রম এবং ঠোকাঠুকি কোলাকুলি পেরিয়ে, শিল্পী কীসের নিশ্চয়তা পেল? কোনও গ‌্যারান্টি আছে কি যে, ভিডিও বা পোস্টটি লক্ষ লক্ষ ভিউ পাবেই বা সেই স্ট্রিমিং প্ল‌্যাটফর্ম থেকে ভালরকম টাকা ফেরত আসবে, কিংবা এই ভিডিওর বদান‌্যতায় শো বা পারফর্মেন্সের বায়না আসবে? ব‌্যক্তিগত আলাপআলোচনায় বিভিন্ন শিল্পীর থেকে আমি জানতে পেরেছি, একটা মিলিয়ন ভিউয়ের ভিডিও থেকে একজন শিল্পী বড়জোর কয়েক হাজার টাকা পায় রেভিনিউ হিসেবে। আর সেখান থেকে নতুন আরও শো পাওয়া যাবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। 

    তাহলে, কী দাঁড়াল? কতটুকু অর্থ পৌঁছল শিল্পীর কাছে? একইসঙ্গে ভিডিও কন্টেন্টের থেকে টাকা উঠে আসার চাপ দিয়ে কতখানি অনিশ্চয়তার উৎকণ্ঠা আরোপিত হল সেই শিল্পীর উপর? এসব নিক্তি দিয়ে মেপে দেখলে বোঝা যাবে, এভাবে সময়, অর্থ, শ্রম খরচ করে কিচ্ছু লাভ হয় না, তালিম ও রেওয়াজের থেকে সরে যাওয়া ছাড়া। এই ঘনঘটায়, আড়ম্বর থেকে যদি কেউ টাকা কামায়, তাহলে সেই ভিডিওর লোকজন, কিংবা সোশ‌্যাল মিডিয়া সামলানো, পথ দেখানোর নামে বসে থাকা সেই এজেন্সিগুলো। এসবের মাঝে শিল্পী কিন্তু একইরকম চাপের মধ‌্যে, উৎকণ্ঠার মধ‌্যে থেকেই যায়। নিজের জীবন ও কাজের উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে টাকার অভাব তাকে তাড়িয়ে বেড়াতে শুরু করে আরও। আর হ‌্যাঁ, এই সমস্ত প্রচেষ্টার মধ‌্যে প্রত‌্যেকটা পদক্ষেপে আমরা যে জিএসটি দিচ্ছি, সেটা ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না। 

    তবে হ‌্যাঁ, খোরাকি লাগতে পারে, তবু বলি, মিলিয়ে নেবেন। এই প্রচেষ্টার কিন্তু একটা ভাল দিক নিশ্চিত আছে। আগামী দিনে দেখবেন, ইউটিউবে আপনার পকেট খসিয়ে বানানো ভিডিওর প্রত‌্যেকটা ভিউয়ের জন্য জিএসটি দিতে হচ্ছে, এমনকী জিএসটি দিতে হচ্ছে সেই তুমুল রেটে, এক-একটা ফলোয়ার অ্যাড হওয়ার জন্য! কী মনে হচ্ছে, সেই সময়টা শিল্পীদের জন্য ‘অমৃতকাল’, তাই না?

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook