ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম: পর্ব ২১


    রূপম ইসলাম (May 27, 2023)
     

    এরিকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে  সুড়ঙ্গটা থেকে বাইরে বেরিয়ে, চৌকো গর্তটায় হাত ঢুকিয়ে একটা লুকনো লিভারে টান মেরেছিলেন বিলি গিলচার। ঘরঘর শব্দ করে পাটাতনটা আবার দেওয়ালের চেহারা নিয়েছিল, নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে এরিক দত্তের একলা রাতযাপনের সূচনা করে দিয়ে।

    এরিক দত্তের ডান হাতের কনুইয়ের কাছে একটা লুকনো আর্ম ব্যান্ড রয়েছে। এটা বিটিটু প্রোজেক্টের নেতৃস্থানীয়দের সুপারসোনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরিক তাড়াতাড়ি আর্মব্যান্ডটা খুলে তাতে কয়েকটা বোতাম টিপতে আরম্ভ করলেন। অবশ্য মিনিট দুয়েক ওটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেই বুঝলেন, বৃথা চেষ্টা। সিস্টেমটা পুরোপুরি অফ করে রাখা হয়েছে। এটা তো করতে পারেন একমাত্র ড. কিশিমোতো! তার মানে কি কিশিমোতোও এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার?

    এরিক দত্ত অভিযাত্রী। সাধারণত জামার উপর তিনি পরে থাকেন আট পকেটের একটা হাতকাটা ওয়েস্টকোট। এখনও সেটাই তাঁর পোশাক। এই জামার বিভিন্ন পকেটে নানা জিনিস রাখা আছে। বিস্কুট, ছোট জলের বোতল, লাইটার, ‘শ্বেতশুভ্র’ সিগারেট, মোমবাতি, ছোট টর্চ, মশা তাড়ানোর এবং পোকামাকড় মারবার স্প্রে, সাপের জন্য কার্বলিক অ্যাসিডের শিশি, আতস কাচ। আর জামাটার ভেতর দিকে একটা লুকনো হোলস্টারে লাগানো একটা রিভলভার।

    এতক্ষণে এরিক বুঝলেন তাঁর বিপদের মাত্রাটা। ব্রহ্ম ঠাকুর অবশ্য আজ দুপুরের মিটিং-এর মাঝখানেই বেরিয়ে গেছিলেন। তিনি কি কিছু আঁচ করেছিলেন? তাঁর হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া কি কোনও তদন্তের স্বার্থে? নাকি তাঁকেও কিডন্যাপ করেছে বিলি গিলচারেরই লোক? এরিক আর কিচ্ছু ভাবতে পারলেন না। তাঁর খালি মনে হতে লাগল— ডাক্তারের বড় বিপদ। বড় বিপদ। আজ রাতটা ভালয় ভালয় কাটলে হয়।

    এরিক দত্ত অভিযাত্রী। সাধারণত জামার উপর তিনি পরে থাকেন আট পকেটের একটা হাতকাটা ওয়েস্টকোট। এখনও সেটাই তাঁর পোশাক। এই জামার বিভিন্ন পকেটে নানা জিনিস রাখা আছে। বিস্কুট, ছোট জলের বোতল, লাইটার, ‘শ্বেতশুভ্র’ সিগারেট, মোমবাতি, ছোট টর্চ, মশা তাড়ানোর এবং পোকামাকড় মারবার স্প্রে, সাপের জন্য কার্বলিক অ্যাসিডের শিশি, আতস কাচ। আর জামাটার ভেতর দিকে একটা লুকনো হোলস্টারে লাগানো একটা রিভলভার। এরিক বিলিকে লাথিটা মারতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান নিজেই, তখনই তাঁর রিভলভারটা ছিটকে পড়ে গেছিল দূরে। এবার তাঁর পকেটের ছোট্ট টর্চটা জ্বালিয়ে তিনি অন্ধকারের মধ্যে পড়ে যাওয়া রিভলভারটা তুলে নিলেন। তারপর পায়ের সদ্য লাগা চোটের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে গেলেন বন্ধ দরজাটার শিকগুলোর দিকে।

    গুলি করে কি লক ভেঙে ফেলা সম্ভব? নাহ! উপায় নেই। দরজার লকটা রয়েছে এরিকের নাগালের একেবারে বাইরে, ঘরটার বাঁদিকের দেওয়ালে, অনেকটা দূরে লাগানো। সেলুলার জেলের বন্দিদের প্রত্যেকটা ঘরেই এই একই ধরনের তালা লাগানোর কায়দা, এরিকের মনে পড়ল এই বিশেষ লকিং ব্যবস্থার কথা তিনি পড়েছিলেন আন্দামান-ভ্রমণ বিষয়ক একটা লেখায়। তাহলে রিভলভারটা এখন কোন কাজে লাগবে? হ্যাঁ, বিলি গিলচার যখন আগামীকাল ফিরে আসবে, তখন তার সঙ্গে একটা মোকাবিলা করতে হবে। এরিক ঠিক করলেন, আপাতত রিভলভারটা লুকিয়ে ফেলা দরকার। বলা যায় না, বিলি যদি হঠাৎ ফেরত আসে?

    ভাল করে মশা আর কীটপতঙ্গ নাশক স্প্রে করে নিলেন এরিক। কার্বলিক অ্যাসিডও ছড়ালেন চারিদিকে, যদিও ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে সবে, সাপের শীতঘুম আরও কিছুদিন চলবার কথা। তবে বিস্কুট খেলেন না। এই ঘরটায় বড় ইঁদুরের আস্তানা থাকা অসম্ভব কিছু নয়। ইঁদুর আক্রমণ করলে তাদের ঠেকানোর জন্য বিস্কুট রেখে দেওয়া দরকার। বিস্কুট তখন আত্মরক্ষার অস্ত্রের কাজ করবে। পাশাপাশি বিস্কুটের গন্ধ ছড়ানোরও কোনও প্রয়োজন নেই এই মুহূর্তে। একটা রাত খিদে সহ্য করে থাকা এরিকের পক্ষে মারাত্মক কিছুই না।

    *****

    সেদিন রাতটা এভাবেই নানা রকম চিন্তা ভাবনায় আর ছোটখাটো ব্যবস্থা নিতেনিতে শেষ হয়ে গেছিল। মোমবাতি জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেছিল— জেগে থাকতে থাকতে শেষমেষ ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এরিক। আসলে বাইরে দিনের আলো ফুটল যখন, তখনই পোকামাকড়, ইঁদুর আর চামচিকের উপদ্রব বন্ধ হল, এরিক ঘুমোলেন। ভেতরে তো মিশকালো অন্ধকার, সকাল হলেও বাইরের আলো ঢুকবার কোনও ব্যবস্থাই নেই। ভেন্টিলেশন একটা আছে কোথাও, নইলে তো দমবন্ধ হয়ে মরবার কথা। তবে তেমন কোনও বাতাস ঢোকা বা বেরনোর পথ রাতের অন্ধকারে খুঁজে পাওয়ার কোনও উপায়ও তো ছিল না।

    ড. কিশিমোতো গুছিয়ে বসেছেন ওঙ্গে চৌধুরির বাড়িতে। ওঙ্গের ব্যবহার খুবই আন্তরিক এবং সহজ। যেন বহুদিনের যোগাযোগ, অথচ দেখা হয়নি, এমন এক গুরুজনের স্নেহমাখা ভঙ্গিতেই ওঙ্গে চৌধুরি বললেন— বুঝলে জুনিয়র, তোমার বাবা এবং ব্রহ্ম ঠাকুর, দু’জনই পুরোদস্তুর পাগলা লোক।

    মেঝেতে শুয়েছিলেন এরিক। ঘুমোচ্ছিলেন রাত জাগবার ক্লান্তিতে। একটু পরেই অবশ্য তাঁকে উঠে পড়তে হল। ঘুম ভেঙে গেল প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণের শব্দে। না জানি আবার কী নতুন বিপদ ঘনাল! —ভাবতে ভাবতে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন এরিক দত্ত।

    ২৭।

    ড. কিশিমোতো গুছিয়ে বসেছেন ওঙ্গে চৌধুরির বাড়িতে। ওঙ্গের ব্যবহার খুবই আন্তরিক এবং সহজ। যেন বহুদিনের যোগাযোগ, অথচ দেখা হয়নি, এমন এক গুরুজনের স্নেহমাখা ভঙ্গিতেই ওঙ্গে চৌধুরি বললেন— বুঝলে জুনিয়র, তোমার বাবা এবং ব্রহ্ম ঠাকুর, দু’জনই পুরোদস্তুর পাগলা লোক। তোমার বাবার ব্যাপারে যেটা মনে আছে— তাঁর থেকেই শোনা এসব কথা, তিনি তাঁর কাকার কাছে কিছু পুরনো রহস্যের খোঁজ পান। আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মধ্যবর্তী ১০ডিগ্রি চ্যানেলের যে ব্যাপক প্রাকৃতিক অশান্তি, ঝড়ঝঞ্ঝা— এগুলোর উৎস হিসেবে ওঙ্গেদের দ্বীপে লুকিয়ে থাকা কিছু একটা জিনিসের কথা বলেছিলেন তাঁর কাকা। বলেছিলেন আরেকটা দ্বীপের কথাও, সেই দ্বীপটায় কোনও মানুষ থাকে না। তোমার বাবার একটা ব্যাপার ছিল, তিনি সহজ বিষয়ে পরে হাত দেওয়ায় বিশ্বাস করতেন। অ্যাটিচিউডটা ছিল, কঠিনটা আগে মিটিয়ে নিই, সহজ তো সবাই পারবে। আমার মতে দুর্গম অভিযানের ক্ষেত্রে এটা একটা ভুল হিসেব। আসলে বাজে ওভার-কনফিডেন্স! সবসময় আগে সহজ অঙ্কটা করে নিতে হয়। কঠিনটায় হাত দিতে হয় সহজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। এই ভুলের মাশুল তাঁকে দিতে হয়েছিল।

    একটা বড় মালবাহী জাহাজ আন্দামান থেকে নিকোবরে যাচ্ছিল খাবার এবং অন্যান্য দরকারি জিনিসপত্রের যোগান নিয়ে। সিনিয়র কিশিমোতো সেই জাহাজ থেকে ওঙ্গেদের দ্বীপের কাছাকাছি ডিঙি নৌকো নিয়ে নেমে পড়েন। জাহাজের কর্তৃপক্ষের কাছে বন্ডে সই করেই নামেন, যে এতে তাঁদের কোনও দায়িত্ব নেই। তাঁর কাছে কয়েকদিনের সার্ভাইভাল কিট ছাড়া আর কিছুই প্রায় ছিল না। কথা ছিল, সাতদিন পর জাহাজ যখন এই পথে ফিরবে, তখন ওইখানে এসে ভোঁ শব্দে সিগন্যাল দেবে। তাঁর জন্য আধঘন্টা জাহাজটা নোঙর ফেলে অপেক্ষা করবে মাঝসমুদ্রে। তিনি ডিঙি নিয়ে ফেরত আসবেন। সাতদিন পরে কথামতো জাহাজ এল। সিগন্যালও দিল। সিনিয়র কিশিমোতো কিন্তু ফিরে এলেন না।

    — আপনার সঙ্গে ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের যোগাযোগটা কী করে হল?

    কয়েকজন পুলিশকর্তার সঙ্গে নাকি অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে তাঁদের চটিয়েছিলেন, ফলে এটা নিয়ে পুলিশও মাথা ঘামাচ্ছে না। আমার বৈজ্ঞানিক অভিযানে আগ্রহ আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ওই জাপানি লোকটির কী হল, তা জানতে চাই। ওঙ্গেদের দ্বীপে যেতে হলে আপনার সাহায্য চাওয়া ছাড়া তো উপায় নেই। আপনি তো ওঙ্গে-বিশারদ! আপনি আমায় সাহায্য করুন, অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে।’

    — তুমি আজ যেভাবে এলে, হুবহু একইভাবে। তফাতের মধ্যে আমি এখন রিট্যায়ার করেছি, তখন ওই সব নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। ঠাকুর এসে বলল— ‘আমি এফবিআই-এর লোক। ওদের হয়ে একটা অলৌকিক খুনের রহস্য সন্ধানে এসে এখানকার অনেক লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলাম। সেই কথাবার্তার সূত্রেই জানতে পেরেছি এখানে একটা রহস্যজনক অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটাই এখন আমায় টানছে বেশি। একজন খ্যাপাটে জাপানি বিজ্ঞানী ওঙ্গেদের দ্বীপে গিয়ে আর ফেরত আসেননি। তিনি যাওয়ার আগে পুলিশের বারণ শোনেননি। কয়েকজন পুলিশকর্তার সঙ্গে নাকি অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে তাঁদের চটিয়েছিলেন, ফলে এটা নিয়ে পুলিশও মাথা ঘামাচ্ছে না। আমার বৈজ্ঞানিক অভিযানে আগ্রহ আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ওই জাপানি লোকটির কী হল, তা জানতে চাই। ওঙ্গেদের দ্বীপে যেতে হলে আপনার সাহায্য চাওয়া ছাড়া তো উপায় নেই। আপনি তো ওঙ্গে-বিশারদ! আপনি আমায় সাহায্য করুন, অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে।’ আমার ঠাকুরকে দেখেই ভাল লেগে গেছিল। আমি ওঁর সঙ্গে অভিযানে বেরিয়ে পড়লাম।

    — আপনার সঙ্গে কোনওদিন যে বাবাকে নিয়ে গল্প করবার সুযোগ হবে, ভাবিনি। তা আমার তো এখানে পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। আপনি যদি ব্যস্ত না থাকেন, তবে এই অভিযানের গল্পটা কি বিশদে শুনতে পারি?

    — খুব বেশি পুংখানুপুংখ বলতে পারব না। অনেকদিন আগের ঘটনা। যতটুকু মনে আছে, সংক্ষেপেই বলতে পারি। তবে তার আগে বলো, ব্রেকফাস্টে কী খাবে? চলো একসঙ্গে দু’জন মিলে হাত লাগিয়ে নাশতাটা বানিয়ে ফেলি। জানো তো, অভিযানে বেরনোর প্রথম শর্ত হল, পেটটা ভর্তি থাকা চাই। সারাদিনে খাওয়ার সুযোগ আর নাও মিলতে পারে। আর খিদে কিন্তু মাথা খারাপ করে দেয়। প্রচণ্ড খিদে পেলে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা যায় না, ফলে সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে যায়।

    কিশিমোতো জুনিয়র এবং ওঙ্গে চৌধুরি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। অ্যাবারডিন মার্কেট একটা জনবহুল ব্যস্ত এলাকা। এই সকালেই জায়গাটা লোকজনের ভিড়ে গমগম করছে। সবরকম জিনিসই পাওয়া যায় এখানে। এক মনোহারি দোকান থেকে ডিম রুটি কিনে নিলেন দু’জন। বাড়িতে আলু পেঁয়াজ মশলাপাতি চা ইত্যাদি আছে, কিন্তু দু’জন খাওয়ার মতো ডিম আর রুটি ছিল না। বাড়ি ফিরে দু’জন মিলে তৈরি করে ফেললেন অমলেট আর টোস্ট। ওঙ্গে চৌধুরি মুচমুচে করে আলু ভাজলেন। সেসব আর চায়ের পেয়ালা নিয়ে দু’জন বসে পড়লেন খাবার টেবিলে।

    আমাদের ওখানে গিয়ে প্রথম দু’দিন লুকিয়ে থাকতে হবে সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে। লুকিয়ে থেকে দেখতে হবে ওঙ্গেদের মতিগতি এখন ঠিক কেমন। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে প্রচুর পুঁতির মালা এবং দেশলাই। রংবেরঙের পুঁতির মালা ওঙ্গে মেয়েদের খুব পছন্দ।

    চায়ে একটা চুমুক দিয়ে আবার স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন চৌধুরি। বললেন— আমি ব্রহ্ম ঠাকুরের অনুরোধ শুনে তাঁকে বললাম, ‘এটুকু তোমায় বলি, অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হয়ে লিডিয়ো কিপ্রিয়ানি নামের সাহেব ওঙ্গেদের বেকার বদনাম করেছেন। ওঙ্গেরা মানুষখেকো নয়। এমনকী জারোয়ারাও নয়। তবে ওদের শান্তি বিঘ্নিত হলে ওরা ছেড়ে দেওয়ার লোকও না। এই হারিয়ে যাওয়া জাপানি, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওখানে অ্যাটাক করেনি তো? দু’চারজন ওঙ্গে যদি মারা যায়, ঝাঁকেঝাঁকে ওঙ্গেরা চলে এসে সেক্ষেত্রে ওই জাপানি সাহেবের দফারফা এর মধ্যেই করে দিয়েছে।’ ঠাকুর বলল, ‘চৌধুরি, আমি সত্যি বলছি, এব্যাপারে অতিরিক্ত কিছুই জানি না। এখানকার পুলিশের রেকর্ডে আমি লোকটার ছবি দেখেছি। আমি একটু আধটু ফেসরিডিং জানি। লোকটার মুখের কাঠামো দেখে আমার মনে হয়েছে, লোকটা মারকুটে না, শান্তিপূর্ণ। ওঙ্গেদের দ্বীপে গিয়ে বন্দুক দিয়ে তাদের মারবে, এরকম লোক হয়তো এ নয়। আন্দাজে মনে হয়, লোভী ব্যক্তিও না। ওখানে গেছে সে কিছু গোপন জ্ঞান অর্জনের জন্যই। এবার তুমি বলো, তুমি আর আমি যদি এখন ওঙ্গেদের দ্বীপে গিয়ে হাজির হই, কী কী ঘটতে পারে?’ আমি ঠাকুরকে বললাম, ‘সম্ভাবনা অনেক রকম। জাপানি বিজ্ঞানী যদি মারাত্মক শত্রুতা করে থাকেন, তবে আমরা আক্রান্ত হব। কাজেই প্রথমেই দেখা দিলে চলবে না। আমাদের ওখানে গিয়ে প্রথম দু’দিন লুকিয়ে থাকতে হবে সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে। লুকিয়ে থেকে দেখতে হবে ওঙ্গেদের মতিগতি এখন ঠিক কেমন। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে প্রচুর পুঁতির মালা এবং দেশলাই। রংবেরঙের পুঁতির মালা ওঙ্গে মেয়েদের খুব পছন্দ। আর দেশলাই পেলে ওদের আগুন জ্বালাতে সুবিধে হয়। দ্যাখো ঠাকুর, ওদের সঙ্গে আমার এমনিতে সম্পর্ক ভালই। কিন্তু গলায় গলায় ইয়ারি-দোস্তি তো নেই! আমায় এখনও ওরা সভ্য লোকেদের একজনই ভাবে। এবার জাপানি বিজ্ঞানী যদি গণ্ডগোল পাকিয়ে থাকেন—‘

    গল্প বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎ ব্যাঘাত ঘটাল দরজায় দুম দুম করে করাঘাতের শব্দ। দু’জনই চমকে উঠলেন। কিশিমোতো জুনিয়র দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। দেখা গেল দু’জন অচেনা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। একজন সুঠাম দেহের সুদর্শন তরুণ। আর অন্যজন—মাথায় কালো ফেট্টি পরিহিত এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। তরুণটি উদগ্রীব হয়ে কিশিমোতোকে জিজ্ঞেস করল— ওঙ্গে চৌধুরি কি এখানেই থাকেন?

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook