ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ৪৩


    বিমল মিত্র (December 24, 2021)
     

    পর্ব ৪২

    সূর্য লাডিয়ার ট্রাঙ্ককল পেয়েই আমি তৈরি হয়ে নিলাম। সেইদিনই সূর্য লাডিয়ার ভাই বুলু লাডিয়া আমার বাড়ি এসে হাজির। তার পরদিনই সকালবেলা আমার যাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে দিলে। সে-সব কথা আমি আগেই বলেছি। কিন্তু তখন আমি জানতাম না যে গুরু দত্তের সংসারে কোন্‌ পরিস্থিতির মধ্যে গিয়ে পড়ছি।

    বাইরে থেকে তখন তাদের কিছুই বোঝবার উপায় নেই। দুজনেই তখন বেশ হাসিমুখ। আমি কি অবস্থায় সেখানে পৌঁছুলাম, তাও আগে লিখেছি। যাঁরা শুরু থেকে পড়ে আসছেন, তাঁরা তা জানেন। আমি প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। প্রতিদিন সকাল হয়, আর আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি। সংসারের দৈনন্দিন কোলাহল-কলরব কানে আসে। রতন সকালে আমার ঘরে এসে প্রাতঃকালীন জলযোগ দিয়ে যায়। মনে-মনে ভাবি— বাঃ, বড় চমৎকার সংসার। নিরুদবেগ-নির্ঝঞ্ঝাট।

    কিন্তু তখন কি আর জানতাম যে তাঁর কিছুদিন আগে অত বড় একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে এই সংসারের মধ্যেই? একই সঙ্গে খেতে বসি রাত্রে, এক ঘন্টার মতো গল্প করি। তারপর খাওয়া চুকিয়ে অনেকক্ষণ ধরে আলোচনা করি। কিন্তু একদিন কেমন হঠাৎ নজরে পড়ল যে গীতা আমাদের সঙ্গে খেতে বসে বটে, কিন্তু গুরুর সঙ্গে কোনও কথা বলে না। খাওয়ার পর যখন আমরা হলঘরে বসে আলোচনা করি, তখন গীতা এসে বসে না আমাদের আসরে। প্রথমে ভাবলাম হয়তো ঘুম পায় তার। ঘুমোতে যায় নিজের ঘরে। তারপরে সেই আলোচনা এত দীর্ঘ হয়, যে কথা বলতে-বলতে রাত তিনটে বেজে যায়, ভোর চারটে বাজে ঘড়িতে, তাও আমাদের দুজনের কারো খেয়াল থাকে না।

    প্রথমবার সাত দিন পরেই কলকাতার চলে আসি। আর সাত দিন পরে যখন আবার পালি হিল-এ ফিরে গেলাম তখন রাত দশটা। সেই রাত্রে কি ঘটল, আগেও লিখেছি।

    কিন্তু আমার অবর্তমানে যে কি ঘটল, তাও পরে শুনেছি রামু সারিয়ার কাছে। সে এক মর্মান্তিক দাম্পত্য জীবন। প্রতিদিন গুরু সকালবেলা চলে যায় স্টুডিওতে। ‘চৌধবী-কা-চাঁদ’ তখন তোলা শেষ হয়ে গেছে। এডিটিং-এর পালা তখন। গুরুস্বামী সমস্ত দিন অফিসে চুপ করে বসে থাকে। গুরু দত্ত তিনতলার এডিটিং রুমে বসে একমনে কাজ করে। আর গেলাসের পর গেলাস হুইস্কি এনে দেয় রতন।

    গুরুস্বামী মাঝে-মাঝে এসে বলে— গুরুজী, আপনি বাড়ি যাবেন না?

    গুরু যেন হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়। মনে পড়ে যায় যে তারও ঘর আছে, বাড়ি আছে, সংসার আছে। বলে— তুম্‌ চলা যাও, ম্যায় পিছে যায়েঙ্গে।

    সত্যিই যখন গুরু বাড়ি ফিরে যায় তখন আর সে গুরু দত্ত নয়। তাকে নিয়ে আর কোনও স্ত্রীর কোনও প্রয়োজন থাকতে পারে না। সত্যিই তখন সে চরিত্র খারাপ করে ফেলেছে। সত্যিই তখন যেন সে সংসার ত্যাগ করেছে। তখন যে সে বাড়ি ফিরে আসে তা শুধু অভ্যাসের বশে। আর কিছু নয়। গীতার হয়তো রাগ হয়ে যায়। গীতাও তো মানুষ, তারও তো রাগ-দ্বেষ-হিংসা-অভিমান-অনুভূতি থাকতে পারে। তার মনে হয় এ কাকে সে বিয়ে করেছে?

    তারপর সত্যিই যখন গুরু বাড়ি ফিরে যায় তখন আর সে গুরু দত্ত নয়। তাকে নিয়ে আর কোনও স্ত্রীর কোনও প্রয়োজন থাকতে পারে না। সত্যিই তখন সে চরিত্র খারাপ করে ফেলেছে। সত্যিই তখন যেন সে সংসার ত্যাগ করেছে। তখন যে সে বাড়ি ফিরে আসে তা শুধু অভ্যাসের বশে। আর কিছু নয়। গীতার হয়তো রাগ হয়ে যায়। গীতাও তো মানুষ, তারও তো রাগ-দ্বেষ-হিংসা-অভিমান-অনুভূতি থাকতে পারে। তার মনে হয় এ কাকে সে বিয়ে করেছে? এ তো সে নয় যে তাকে দিনের পর দিন প্রেম-পত্র লিখেছে, এই লোকটাই কি সেই গুরু দত্ত, যে একদিন গীতাকে দেখতে না পেলে ছটফট করেছে, ছুটে গিয়েছে তার সান্তাক্রুজের বাড়িতে। ছুটে গিয়ে একেবারে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। মা-মা বলে একেবারে গীতার মায়ের কাছে গিয়ে ছোট ছেলের মতো বসে পড়ল— কতদিন দেখিনি মা, আমার কথা একটুও মনে পড়ে না, তাই না?

    বলে গীতার মার কোলে শুয়ে পড়ে মাথা রেখে।

    গীতার মা পরম স্নেহে গুরুর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দেন।

    গীতা ভাবে কোথায় গেল সেই দিনগুলো। সত্যিই কি সেই ভালোবাসার দিনগুলো জীবনে এসেছিল? যদি এসেই ছিল তো কোথায় হারিয়ে গেল?

    বিয়ের পর প্রথম ছ-বছর পরিপূর্ণ সুখে কেটেছে। তারপর থেকে যে সেই অশান্তি শুরু হয়েছে তার যেন শেষ নেই। অশান্তির আগুনে জ্বলে পুড়ে বাঁচাটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে। এর থেকে যেন কিছুতেই নিষ্কৃতি নেই।

    মানসিক অশান্তি গুরুর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। সারাদিনের পরিশ্রমের পর রাত্রে বিছানায় শুলে যেটুকু ঘুম আসে, সে সুখটুকুও বুঝি গুরুর প্রাপ্য ছিল না। ঈশ্বর, তুমি গুরুকে সব দিয়েছিলে, মানুষ যা-কিছু চায় তা তাকে দিতে তুমি কার্পণ্য করনি। কিন্তু একটু ঘুম? এক টুকরো ঘুম যদি গুরুকে দিতে তো তোমার কি এমন লোকসান হত। তোমার দানের তো তুলনা নেই। তুমি দিতেও যেমন নিতেও তেমনি! কিন্তু এতই যদি দিলে তাকে তো তার ঘুমটা কেন কেড়ে নিলে?

    অনেক কষ্টে সেদিন বোধহয় সে-রাত্রে ঘুম এসেছিল গুরুর। বড় অমূল্য সে-ঘুম। প্রায় যখন রাত দুটো তখন হঠাৎ পায়ে কিসের ছোঁয়া লেগে গুরু চেঁচিয়ে উঠেছে—কে? কে?

    গীতা বলে উঠল—আমি—

    —আমি তো ওখানে কি করছ?

    গীতারও সে রাত্রে ঘুম আসছিল না। বললে— ঘুম আসছে না—

    গুরুর সহ্যক্ষমতা তখন শেষ-সীমায় চলে গেছে। বললে— ঘুম যদি না আসে তো আমি কি করব!

    গুরু আর থাকতে পারল না। বলল— তুমি বেরিয়ে যাও—

    —কোথায় বেরিয়ে যাব?

    —যেখানে খুশি। যাও বেরিয়ে। আমাকে একটু ঘুমোতে দাও—

    —কিন্তু আমার যে ঘুম আসছে না—

    —তোমার ঘুম আসছে না তো আমি কি করব?

    আর তারপরেই সেই মর্মান্তিক বিপর্যয়টা ঘটল। সেই চরম দুর্যোগটা। গুরু আর গীতার জীবনের দুর্যোগ। গুরুর মনে হল কেউ যেন তার গালে সজোরে চড় মারলে! গুরু দত্ত সমস্ত রাত ঘরের মধ্যে ছটফট করতে লাগল। যে-মানুষ ঘুমের জন্যে কাতর, একটু ঘুমোতে পারলে যে-লোক বেঁচে যায়, সেদিন তার সেই অমূল্য ঘুম বাষ্পের মতো উবে গেল। আর ঘুম এল না সারারাত।   

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook