ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম: পর্ব ১৩


    রূপম ইসলাম (March 25, 2023)
     

    পর্ব ১২

    এই বাংকারের খোঁজ নিশ্চয়ই তাঁর কাকার থেকেই পেয়েছিলেন সিনিয়র কিশিমোতো?— টর্চের আলোয় ভাঙাচোরা সিঁড়িপথে এগোতে এগোতে জিজ্ঞেস করলেন ব্রহ্ম।

    — হ্যাঁ, বাবার ওই কাকা, মানে সম্পর্কে আমার যিনি ছোট-ঠাকুরদা, জাপানি সামরিক বিজ্ঞানীর সেই সহকারী— আসল ড্রয়িংটা তো তাঁরই করা। বাবা ওটা কপি করেছেন। ঠাকুরদা এই পথ দিয়ে একটা পরিত্যক্ত গির্জায় পৌঁছেছিলেন। সেখানে তিনি কিছু ট্রাইব্যাল মানুষের কঙ্কাল দেখতে পান। লোকগুলোর হাতের হাড়গুলো এমনভাবে বেঁকে ছিল যে বুঝতে অসুবিধে হয়নি, তীব্র কোনও শব্দের অভিঘাতে ওরা প্রত্যেকেই মৃত্যুর মুহূর্তে কানে হাত চাপা দিতে চেয়েছিল। এই দ্বীপে দীর্ঘদিন ধরেই যে কিছু না কিছু রহস্যজনক ব্যাপার-স্যাপার চলছিল তার আরও প্রমাণ ছিল বিভিন্ন ডকুমেন্টে। পরে বাবাও এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করেছিলেন।

    ব্রহ্ম ঠাকুর আক্ষেপ করে বললেন— এত পড়াশুনো করেও শেষ পর্যন্ত তোমার বাবা আর ফিরে আসতে পারলেন না এখানে। সেবারেই অভিযানের সব প্রস্তুতি হয়ে গেছিল, কিন্তু একটা পারিবারিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাঁকে তক্ষুনি ফিরে যেতে হয় জাপানে। পরে যে কেন আসতে পারলেন না…

    কিশিমোতো বললেন— আসলে তারপর অন্যান্য গবেষণায় জড়িয়ে পড়েন তিনি, আর সেসব বিষয়ে আমিও তাঁকে অ্যাসিস্ট করতে শুরু করি। উনি অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ আমার প্রতি, ফলে যে কাজগুলোয় আমি জড়িত নই, সেগুলো থেকে তাঁর মনোযোগ সরে যায়। এ ব্যাপারটা আমি এখন বেশ বুঝতে পারি।— কিশিমোতো এটুকু বলে  চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তাঁকে দেখে মনে হল— একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন তিনি। দুশ্চিন্তাও করছেন বাবাকে নিয়ে।

    ব্রহ্ম ঠাকুর ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এতগুলো সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে। তিনিও একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলেন এই সুযোগে। তারপর নিজেই চলা শুরু করলেন আবার। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিশিমোতোর দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টি হানলেন চলতে চলতেই।

    কিশিমোতোর সম্বিৎ ফিরল। চলা এবং বলা, দুটোই শুরু করলেন তিনি। বললেন— একবার কথায় কথায় বাবার মুখে ওঁর কাকার কথা শুনি আমি। যেটুকু শুনি, তাতে কৌতূহল হয়, আগ্রহ বাড়ে। তখন এই ডায়রিটা আমি পড়ি। তার মধ্যে বিশেষ করে একটা নোট পড়ে মনে হয়েছিল এদিকে একবার এলে হয়। কিন্তু আমি বাবার মতো অভিযানপিয়াসী নই, অনেকটাই ঘরকুনো গোছের! ফলে যা হওয়ার তাই হল। আমি জড়িয়ে পড়লাম ল্যাব-নির্ভর গবেষণায়, ডায়রিটার ঠাঁই হল জমানো কাগজের স্তূপে!— কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কিশিমোতো।

    ব্রহ্ম ঠাকুর কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন— কোন নোটের কথা বলছ তুমি? কী লেখা ছিল তাতে?

    কিশিমোতো বললেন— নোটটা লিখেছিলেন লেডি ডায়না ডাফ কুপার। লেডি ডাফ কুপার রস আইল্যান্ডে রাত কাটানো শেষ গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপিয়ানদের একজন ছিলেন। ১৯৪২ সালে লেখা তাঁর এই নোটে তিনি অবর্ণনীয় একটি অভিজ্ঞতার কথা জানান। এখানকার এক গির্জার মধ্যে অবস্থিত ভুতুড়ে কঙ্কালময় এক হলঘরের উল্লেখ তিনি করেছিলেন। সালটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তার মাধ্যমে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া আদিম মানুষদের উপর চালানো এক্সপেরিমেন্টের সময়টা বুঝতে পারা যায়। ১৯৪২ সালে এটা লেখা হচ্ছে অতএব ধরে নেওয়াই যায় ওই ঘরে কঙ্কাল জমেছিল তার অনেক আগে থেকেই। তবে ঘরটার উল্লেখ এর আগের কোনও নথিতে নেই।

    অন্ধকার সিঁড়িগুলো অনেকটা নীচে নেমে এসে মাটির তলার একটা করিডোরে মিশেছে। এখন সেই করিডোর ধরে এগিয়ে চলেছেন দু’জন অন্ধকারের অভিযাত্রী। কিশিমোতোর হাতে ধরা টর্চের আলোটুকুই তাঁদের কাছে এখন অন্ধের যষ্ঠি।

    ব্রহ্ম ঠাকুর বললেন— অবশ্যই আদিবাসীদের কঙ্কাল বহুদিন আগের ব্যাপারই হবে। আমি মনে করি ১৮৫৯ সালের অ্যাবারডিনের যুদ্ধের কারণই হল কিছু আদিবাসীর মৃত্যু, আর সেই মৃতদেহগুলোই পর্যবসিত হয়েছে ওই কঙ্কালগুলোয়। ইংরেজরা, যারা এই অঞ্চলের প্রশাসক হয়ে উঠতে চাইছিল কড়ায় গণ্ডায়, প্রশাসনের কায়দা হিসেবেই আদিম দ্বীপগুলোর সঙ্গে সখ্য স্থাপন করতে চেয়ে, রস দ্বীপে নিয়ে এসেছিল এই দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদেরই। তারপর তারা তাদের নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়, মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত। নানারকম রোগ প্রতিরোধক টিকা প্রয়োগ করেছিল তাদের উপর, তাদের ব্যবহার করেছিল গিনিপিগের মতো। এর মধ্যেই কোনও প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায়, যার মূলে আবার থাকতেই পারে কোনও অতিপার্থিব যোগাযোগ, এখানকার কোনও একটা কক্ষে, আগ্রাসী এক শব্দতরঙ্গের পাল্লায় পড়ল তাদেরই কেউকেউ। যারা বেঁচে গেল, তারা মনে করল, ওই দুর্ঘটনাটা আসলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়-টিপর্যয় নয়, সভ্য মানুষেরই ষড়যন্ত্র। পালিয়ে গেল তারা। পরে দল পাকিয়ে ফিরে এল আক্রমণ করতে। ফিরে এল প্রতিশোধ নিতে। প্রতিশোধ নিতে তারা সফলই হত, যদি দুধনাথ তেওয়ারি নামের একজন বিশ্বাসঘাতক ভারতীয়, যে কিছুদিন আগে ইংরেজদের কয়েদ থেকে পালিয়ে আদিম উপজাতির মানুষের কাছেই আশ্রয় পেয়েছিল, সে ডাবল ক্রস করে এবারে ইংরেজদের কৃপাধন্য হওয়ার লোভে ওদের হামলার খবর আগেই জানিয়ে না দিত প্রশাসনকে…

    কিশিমোতো সম্মতি জানিয়ে জাপানি কায়দায় মাথা হেলালেন ব্রহ্মের প্রস্তাবে। তারপরই দু’হাত উঁচু করে তুলে ধরে ব্রহ্ম ঠাকুর মৃদুমন্দগতিতে ঢুকে পড়লেন গির্জাটার খোলা প্রাঙ্গণে। পেছন পেছন রিভলভার হাতে চললেন কিশিমোতো জুনিয়র। কিন্তু এত সবের পরেও দৃশ্যটা, বা দৃশ্যের পরিস্থিতিটা— আদৌ সেরকম বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হল না।

    কথা বলতে বলতে ওঁরা এসে পৌঁছেছেন কয়েকধাপ সিঁড়ির সামনে। সিঁড়িগুলো বেশ চওড়া। সিঁড়ি দিয়ে প্রথমেই উঠে গিয়ে ধাপগুলির উপর টর্চের আলো ফেললেন কিশিমোতো, যাতে ব্রহ্ম সাবধানে পা ফেলতে পারেন। তবুও বিপত্তি হল। ব্রহ্ম সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারলেও উপরের জায়গাটায় কতগুলো ছড়িয়ে থাকা ইঁটে ঠোক্কর খেয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন। কিশিমোতো শেষ মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে তাঁকে ধরে ফেললেন। টাল সামলাতে সামলাতেই ব্রহ্ম অস্ফুটে বললেন— ওহ! এই ব্যাপার!

    কিশিমোতো দেখলেন, ব্রহ্ম এক টুকরো ইঁটকে ধরে রেখেছেন চোখের খুব কাছাকাছি।

    আসলে টাল হারানোর সময়ে প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় সামনের ভাঙা দেওয়ালটা খামচে ধরবার চেষ্টা করেছিলেন ব্রহ্ম। তার ফলে একটুকরো ইঁটের অংশ খুলে এসেছিল তাঁর হাতে। চোখের খুব কাছে নিয়ে গিয়ে সেটিই এখন পরীক্ষা করছেন তিনি। পরীক্ষা করতে করতে বিড়বিড়িয়ে কথাটা বলেই ইঁটটা হাত থেকে ফেলে দিলেন ব্রহ্ম। হাতের ধুলো ঝেড়ে নিয়ে ভাঙা দেওয়ালটার ধ্বংসস্তূপ পেরোলেন। পেরোতেই দেখা গেল, তাঁরা এসে উপস্থিত হয়েছেন এক বিশাল পরিত্যক্ত গির্জার উঠোনের প্রবেশমুখে । ব্রহ্ম বলে উঠলেন— তাহলে এই হল সেই গির্জা! যে গির্জার কথা উল্লেখ করেছিলেন লেডি ডায়না ডাফ কুপার…

    কিশিমোতো বললেন— এখান থেকে ডানদিকে খানিকটা এগোলেই আমরা পৌঁছে যাব আমাদের লক্ষ্যে। দেখতে পাব সেই ঐতিহাসিক ভূতুড়ে হলঘর। তবে খুউব সাবধান ড: ঠাকুর। হলঘরে ঢুকলে কোনও শব্দ যেন করবেন না। হলঘরের মধ্যে শব্দের মৃত্যু নেই। এমন আশ্চর্য শব্দকুহর পৃথিবীতে খুব কমই আবিষ্কৃত হয়েছে। ওখানে প্রাগৈতিহাসিক, এমনকী ভিনগ্রহী শব্দও সঞ্চিত কিন্তু সুপ্ত অবস্থায় আছে বলে আমাদের ধারণা। সেসব শব্দ জেগে উঠলে তা অসীম সৃষ্টি বা ধ্বংস— দুয়েরই কারণ হতে পারে। আপনাদের শাস্ত্রেই তো লেখা আছে বলে পড়েছি— ‘শব্দই ব্রহ্ম’! বিটিটু প্রকল্পের গোপন গবেষণার মূল অবলম্বন এবার এটাই!

    ডানদিকে সামান্য এগোতেই চাঁদের আলোয় দেখা গেল, গির্জার সামনের খোলা চত্বরে একটা হেলিকপ্টার দাঁড়িয়ে আছে। কপ্টারটাকে দেখেই ব্রহ্ম ঠাকুর একবার থমকে দাঁড়ালেন। খুব ভাল করে সেটিকে দেখে নিয়ে হঠাৎ পেছন ঘুরে— কিশিমোতো, এই নাও।— বলে সঙ্গেসঙ্গেই নিজের রিভলভারটা ছুড়ে দিলেন তাঁর দিকে। কিশিমোতো অস্ত্রটা লুফে নিতেই তিনি বললেন— আমার মনে হচ্ছে বিলি গিলচার এখানে এসে পৌঁছেছে আমাদের আগেই। ভালই হয়েছে। সরাসরি একটা হেস্তনেস্ত হবে। তবে তোমাকে আর আমাকে এবার একটু নাট্যাভিনয় করতে হবে। এই সিনে তোমার হাতে এই যন্তরটা থাকা জরুরি। বাকিটা আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, কী কী বলতে হবে তোমায়। সেটা উগরে দেওয়ার পর তুমি ফিরে যাবে পোর্ট ব্লেয়ারে। শোনো, আমার ধারণা এরিক দত্তের কোনও বিপদ ঘটেছে। এরিক দত্ত আর আমাকে বিলি গিলচারের নৃতত্ত্ব যাদুঘরে নিয়ে যাওয়ার একটা কারণ তো আগেই বলেছি। আরেকটা কারণও কিন্তু আছে— আর সেটা সাংঘাতিক। ওর চোখে আমরা হলাম গিয়ে খরচের খাতায়। তোমাকে সে নেপথ্যে রেখেছে কারণ তুমি আছ ওর গুডবুকে। এরিককে নিয়ে সে যে কী করেছে, কে জানে! অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এরিক আমাদের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমার সঙ্গে কথা বলেনি, এটা মোটেই কোনও স্বাভাবিক ঘটনা না।— ব্রহ্ম আক্ষেপে মাথা নাড়লেন।

    কিশিমোতো বললেন— কিন্তু এরিক যোগাযোগ করবেন কী করে? বিলি গিলচারের নির্দেশে ওই যোগাযোগ ব্যবস্থা তো আমি এই দ্বীপে বন্ধ করে রেখেছি, অতিরিক্ত নিরাপত্তাজনিত কারণে। বলা যায় না, এতজনের গ্রাহকযন্ত্র কাছাকাছি এলে ওটা হয়তো ‘ব্যালেন্স’-এর রেডারে ধরা পড়তে পারে, তাই—

    —ওহ। তাই নাকি? তবুও তোমায় বলছি, তুমি ফিরে গিয়ে যদি দ্যাখো এরিক ফিরে এসেছে, তাহলে তো ঠিকই আছে। তাহলে প্রমাণ হবে আমি ভুল ভেবেছি। কিন্তু যদি দ্যাখো সে ফেরেনি, তাহলে কী করবে বল তো? ভাল করে শুনে নাও কী করবে। তুমি একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। ওকে পোর্ট ব্লেয়ারের সবাই চেনে, ওর খোঁজ পেতে তোমার কোনও সমস্যা হবে না। লোকটা ‘ওঙ্গে চৌধুরি’— এই নামেই বিখ্যাত। তোমার বাবাকে যখন উদ্ধার করেছিলাম, সেই অভিযানে ওঙ্গে চৌধুরিই আমায় গাইড করেছিল। লোকটাকে খুঁজে বের করে ওর সঙ্গেই তুমি থাকবে। আশা করি বাকি নির্দেশ ওখানেই পৌঁছে দিতে পারব। তুমি নির্দেশ না পাওয়া অব্দি অপেক্ষা কোরো। কাল সারাদিনও যদি নির্দেশ না পাঠাই, বুঝবে আমি আর বেঁচে নেই। এবারের অভিযানে আমার মৃত্যুযোগ আছে, যা আমার জ্যোতিষ গণনা আমায় বলছে। কিন্তু কী জানো, নিজের সম্পর্কে গণনা পুরোপুরি কখনও মেলানো যায় না। তাই আমি ঝুঁকি নিয়েছি, নেবও। আমি এমনিতেই ঘাটের মড়া, কেন বেকার মৃত্যুকে ডরাব? আমি না ফিরলে, তোমার বাবার দোহাই, এই শয়তানি ষড়যন্ত্রের মুখোশ তুমিই খুলবে। এটা বন্ধ করবে। তোমাকে আমি দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। এই বৃদ্ধের কথা একটু মনে রেখ। ব্যস!

    ব্রহ্ম চট করেই কথা বলবার ধরনটা বদলালেন। একটু কৌতুকের রেশ মিশিয়ে এবার বললেন—  এইবারে তুমি আমার পিঠে এই রিভলভারটা ঠেকাও তো! আমাকে নিয়ে চলো বিলির দিকে। এতে তুমি বিলির চোখে সন্দেহমুক্ত হবে, এক্ষুনি তোমার বিপদের সম্ভাবনা যদিও বা কিছু থেকে থাকত, তা দূর হবে। আর শুনে নাও, তোমায় ঠিক কী কী বলতে হবে— ওরা কী প্রশ্ন করলে কী জবাব দেবে তুমি…

    আবার কিছুক্ষণ শলাপরামর্শ হল দু’জনের মধ্যে। কিশিমোতো সম্মতি জানিয়ে জাপানি কায়দায় মাথা হেলালেন ব্রহ্মের প্রস্তাবে। তারপরই দু’হাত উঁচু করে তুলে ধরে ব্রহ্ম ঠাকুর মৃদুমন্দগতিতে ঢুকে পড়লেন গির্জাটার খোলা প্রাঙ্গণে। পেছন পেছন রিভলভার হাতে চললেন কিশিমোতো জুনিয়র। কিন্তু এত সবের পরেও দৃশ্যটা, বা দৃশ্যের পরিস্থিতিটা— আদৌ সেরকম বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হল না।

    দৃশ্যটার বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ার কারণ কিন্তু কিশিমোতো নন, ড: ব্রহ্ম ঠাকুর নিজেই। পিঠে রিভলভার ঠেকানো, কিন্তু ব্রহ্মের মুখে কোনও অসহায়তার ছাপ নেই। তাঁকে দেখে বরঞ্চ মনে হচ্ছে— বৃদ্ধ মহাফুর্তিতে আছেন। ড্যাং-ড্যাং করে রাতের অন্ধকারে এগিয়ে চললেন তিনি। পেছন পেছন রিভলভার হাতে ঈষৎ কুঁজো হয়ে কিশিমোতো। ব্রহ্ম এগিয়ে চলবার মেজাজেই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন— পরবর্তী দৃশ্যের রাশ নিয়ন্ত্রক তিনিই। বাকিরা তো নেহাতই কুশীলব!

    অবশ্য ব্রহ্মকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা কেউকেউ এই বিষয়টা জানেন। ব্রহ্ম ঠাকুর বিশেষভাবে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন তখনই, যখন তাঁর হাতে নয়, তাঁর দিকে তাগ করা থাকে কোনও চকচকে রিভলভার।

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook