ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম: পর্ব ১২


    রূপম ইসলাম (March 10, 2023)
     

    পর্ব ১১

    ব্রহ্ম ঠাকুর কিশিমোতোর চোখের সামনে তাঁর জোব্বার আড়ালে লুকিয়ে রাখা ম্যাগাজিনটা মেলে ধরতেই গোটা গোটা অক্ষরে পড়া গেল একটা শিরোনাম—

    The Atomic Andaman— A hypothetical analysis by eminent anthropologist Prof. Lathika M. Subrahmanyum 

    ব্রহ্ম ঠাকুর বললেন— আমার বিশ্বাস, এই ম্যাগাজ়িনটা হঠাৎ চোখে পড়ে যায় বিলি গিলচারের। হয়তো তোকিয়ো থাকাকালীনই সে এটা দ্যাখে…

    কিশিমোতো হেসে বললেন— না না, ড: ঠাকুর। এতে কোনও রহস্য নেই। বাবা নিজেই তো এই পত্রিকার গ্রাহক। বিলি যখন আমায় বাবার ডায়রিটা ও কীভাবে ব্যবহার করছে তার সন্ধান দিতে আন্দামানের গোপন গবেষণাগারের কথা তুলল, আমিই ওকে এই লেটেস্ট ইস্যুটা দেখাই…

    ব্রহ্ম মাথা নেড়ে বললেন— আর এটা দেখার সঙ্গেসঙ্গেই বিলির মনে হয় বা তোমাদের দু’জনেরই মনে হয়, এই প্রবন্ধের লেখক লতিকাদেবীকে একবার যাচাই করে দেখতে হবে। প্রোফেসর লতিকা সুব্রহ্মণ্যম কি আদৌ এ অঞ্চলে লুকনো পারমাণবিক প্রতিক্রিয়কের ঠিকঠাক সন্ধান জানেন? নাকি স্রেফ আন্দাজে একটা ঢিল মেরেছেন? বাইরের কেউ এটার সঠিক লোকেশন জেনে ফেললে তো তোমাদের প্রকল্পের জন্য তা মোটেই সুবিধের ব্যাপার না! এটা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতেই বিলি লতিকাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। একলা এলে লতিকা তাকে গুরুত্ব দেবেন কেন? তার নাম তো বহির্বিশ্বে বিখ্যাত নয়! তাই মিটিং-এ সে নিয়ে এল গবেষক হিসেবে নামজাদা এরিক দত্তকে। বস্তুতপক্ষে, এরিকের সঙ্গে আলাপ করানোর টোপ দিয়েই সে মিটিংটার আয়োজন করতে পেরেছিল বলে আমার ধারণা। লতিকাদেবী আজ সারাক্ষণ যেভাবে এরিককে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছিলেন, তার থেকেই এ ব্যাপারটা আন্দাজ করছিলাম। তোমাকে সে প্রোজেক্ট-ব্যাকআপ হিসেবে রেখেছিল, এক্ষুনি তোমার কথা সবার কাছে প্রকাশ করতে চায়নি। তাই তোমাকে ওই মিটিং-এও রাখেনি। আমাকেও বাদ দিতে পারলে সে খুশি হত ঠিকই, কিন্তু সে জানত সেরকম কিছু হলে আমি আবার সন্দেহ-টন্দেহ করব। শেষ পর্যন্ত লতিকাদেবীর সঙ্গে কথা বলে সে যে কী বুঝল, তা জানি না। আমি তো মিটিংটার মাঝপথেই বেরিয়ে এলাম।

    ব্রহ্ম কথা বলা শেষ করে ম্যাগাজিনটার কয়েকটা পাতা উলটেপালটে দেখলেন। হঠাৎ যেন কী একটা জিনিস দেখতে পেয়ে তাঁর ভুরু কুঁচকে গেল ভীষণ। তিনি ম্যাগাজিনটা ফের তাঁর জামার মধ্যে ঢুকিয়ে ফেললেন চট করে।

    কিশিমোতোও একটু অন্যমনস্ক হয়ে কীসব চিন্তা করছিলেন। হয়তো তাঁর বাবার নিরাপত্তার কথাই তাঁর কাছে এখন মুখ্য হয়ে উঠছিল। ড: ব্রহ্ম ঠাকুরকে নিয়ে রস দ্বীপের গবেষণাগারে আসাটা বিলি গিলচার কী চোখে দেখবেন? এটা হঠকারী একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেল নাকি? এসব প্রসঙ্গ অবশ্য তিনি তুললেন না। গম্ভীরভাবে শুধু বললেন— ড: ঠাকুর, আমরা তীরে পৌঁছে গেছি। নৌকো থেকে এবার নামতে হবে।

    ব্রহ্ম ঠাকুর তাঁর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলেন একটু। বললেন— তুমি কী নিয়ে দুশ্চিন্তা করছ, আমি তা বুঝতে পারছি। কিচ্ছুটি ভেবো না। তুমি আমার বন্ধুপুত্র। তোমার কোনও ক্ষতি যাতে না হয়, আমি তার দায়িত্ব নিলাম।

    ১৬।

    আশ্চর্য যখন ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামল, তখন বাড়ির রক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা দু’জন পুলিশকর্মীর দ্বিতীয়জন রাতের খাবার খেতে গিয়েছে পাশের গলির দোকানে। প্রথমজন খেয়ে ফিরবার পরই সে খেতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সে জেনে নিয়েছে কী কী খাবার পাওয়া যাচ্ছে আজকে রাতের মেন্যুতে। অতএব অর্ডার দিতে তার দেরি হয়নি। আপাতত সে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে, এটা ধরে নেওয়াই যায়।

    বাড়ির সামনে পাহারায় থাকা পুলিশের সামনে যখন তার নতুন কেনা কালো রঙের অডি কিউ এইট গাড়িটা থেকে নেমে দাঁড়াল আশ্চর্য, বলা বাহুল্য পুলিশ মহোদয় সম্ভ্রম নিয়ে নড়েচড়ে উঠল। কিন্তু আশ্চর্যের চেহারা দেখেই তার আত্মারাম খাপছাড়া! এ আবার কে এল রে বাবা এত রাতে? তার দিকে বন্দুক তাগ করতে সে বাধ্যই হল বলা চলে। কারণ আর কিছুই না— আশ্চর্যের ছদ্মবেশ! ওই রাতের বেলা, জনহীন গলিতে— কিম্ভুতকিমাকার অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ভাল্লুকের মেকআপে আশ্চর্যকে দেখে ভয় পাওয়ারই তো কথা, পুরোদস্তুর গড়বড়ের আশঙ্কা সমেত! আশ্চর্যকে নিজেকে চেনাতে বেশ বেগ পেতে হল। তবে শেষমেষ ভবাদাই বিপত্তারণ হলেন। সুপারহিট ‘পলাতক’ ছবির চিত্রনাট্য থেকে বাছাই করে একটা ‘ভবতোষ লাহিড়ী ট্রেডমার্ক ডায়লগ’ ঠিকঠাক কায়দা মেরে বলতেই পুলিশ বাবাজীবন উঠে দাঁড়িয়ে একটা জবরদস্ত স্যালুট ঠুকে দিল। হ্যাঁ, এবার এই ‘এক বাক্যেই’ সে চিনতে পেরেছে বাংলা ছবির জনপ্রিয় তারকা আশ্চর্যকে।

    কিশিমোতোও একটু অন্যমনস্ক হয়ে কীসব চিন্তা করছিলেন। হয়তো তাঁর বাবার নিরাপত্তার কথাই তাঁর কাছে এখন মুখ্য হয়ে উঠছিল। ড: ব্রহ্ম ঠাকুরকে নিয়ে রস দ্বীপের গবেষণাগারে আসাটা বিলি গিলচার কী চোখে দেখবেন? এটা হঠকারী একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেল নাকি? এসব প্রসঙ্গ অবশ্য তিনি তুললেন না।

    আশ্চর্যের পকেটে চাবির ধুকপুকুনি বন্ধ হয়ে গেছিল। তবে উত্তেজনার বুক-দুরদুর তো ছিলই। ইয়েল লকে চাবি ঢুকিয়ে সামান্য কাঁপা হাতে দরজাটা খুলে সে ঢুকে পড়ল ব্রহ্ম ঠাকুরের বাড়ির উঠোনে। চেনা উঠোনটা পেরিয়ে দ্রুত সে কনসালটেশন রুমে ঢুকতে যাচ্ছিল, এমন সময় বাইরে থেকেই একটা জিনিস দেখে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল এক লহমায়। ঘরটার ভেতরটা অন্ধকার হলেও চাঁদের আলো উঠোনে ধাক্কা খেয়ে খানিকটা ঢুকে গেছে ভেতরে। সেই আবছা আলোয় ঠাহর করা যাচ্ছে, গাঢ় রঙের জামা-প্যান্ট পরা কে একজন যেন পড়ে আছে ছোট কফিমেকার আর কফিমাগগুলো রাখা টেবিলটার ঠিক সামনে।

    আশ্চর্যের সঙ্গে তো কোনও অস্ত্র নেই! সে ঘরটায় ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবছিল। একজন মাটিতে পড়ে আছে। কিন্তু সে পড়ল কীভাবে? ভেতরে তবে অন্য কেউও ছিল, নাকি এখনও আছে? সেই অন্য লোকটাই নিশ্চয়ই এই লোকটার পতনের কারণ!

    তবে একটা কথা ঠিক। যে পড়ে আছে সে বন্ধুস্থানীয় তো হতেই পারে না! বন্ধুস্থানীয় হলে চোরের মতো ওই ঘরটায় ঢুকবে কেন? আর তাকে যদি কেউ ফেলে দিয়েই থাকে, তাহলে সে নিশ্চয়ই প্রোজেক্ট বিটিটুকে ডিফেন্ড করছে। এসব নিয়ে সাত-পাঁচ ভাবছিল আশ্চর্য। তার মনে উঠে আসা এসব কথা কি এখন তাকে সাহস দেওয়ার জন্যই যুক্তি সাজাচ্ছে?  আশ্চর্য তা জানে না। কিন্তু এটা সে বুঝেছে, এই প্রোজেক্টের রক্ষণাবেক্ষণের একটা দায়িত্ব যখন সে পেয়েছে, এই ঘরে না ঢুকেও তার উপায় নেই। ব্যাপারটা যে কী, তা খতিয়ে দেখতেই হবে। যখন ঘরের চাবির স্বয়ংক্রীয় সিগন্যাল জেগে উঠে তাকে এখানে ডেকে এনেছে, তখন তো এটাই তার করণীয়!

    কফিমেকার রাখা টেবিলের উলটোদিকের অন্ধকার দেওয়ালটার দিকে চোখ রেখেই আশ্চর্য ঘরে ঢুকল। আর সঙ্গেসঙ্গেই দেখতে পেল দীর্ঘকায় ছায়ামূর্তিটাকে। 

    ছায়ামূর্তি সাদাটে হাতদুটি জাদুকরের ভঙ্গিতে শূন্যে ছড়িয়ে তাকে বজ্রগম্ভীর স্বরে ইংরেজিতে হুকুম দিল— হ্যানডস আপ। তুমি যেই হও, হাতগুলো মাথার উপর তুলে আমার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পড়ো।

    ছায়ামূর্তি কথাটা যখন বলা শুরু করেছিল, আতঙ্কে চমকে উঠেছিল আশ্চর্য। কিন্তু কথার মাঝবরাবর সে শিথিল হল। এই গলার অধিকারী লোকটাকে আশ্চর্য খুব ভাল করেই চেনে। তার থেকে সামান্য দূরে, অন্ধকারের মধ্যে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, সেই ছায়ামূর্তি ব্রহ্ম ঠাকুর ছাড়া আর কেউ হতেই পারেন না। কিন্তু— তাহলে ব্রহ্মদা ফিরে এসেছেন এর মধ্যেই? গতকালই তো গেলেন? ‘হ্যান্ডস আপ’ই বা বলছেন কেন? হাতে তো কোনও রিভলভারই নেই! ক্ষ্যাপা বুড়োর স্থূল রসিকতা? প্র্যাকটিক্যাল জোক? ইংরেজিতেই বা কথা বলছেন কেন হঠাৎ? 

    তারপরেই আশ্চর্য বুঝল, ব্রহ্ম নিশ্চয়ই তাকে চিনতে পারেননি। তার মেকআপটাই যত সমস্যার মূল! আর ‘হ্যান্ডস আপ’টা বলাটা নেহাতই মনের ভুল! সে তাড়াতাড়ি উল্লসিত এবং উত্তেজিত গলায় বলল— ব্রহ্মদা, আমি আশ্চর্য। এ বাড়ির চাবি হঠাৎ করে সিগন্যাল দিতে শুরু করল। তাই তড়িঘড়ি মেকআপ না তুলেই চলে এসেছি। ভাবতেই পারিনি আপনি এসে গেছেন এর মধ্যেই। প্রোজেক্ট বিটিটু-র আন্দামান মিটিং কেমন হল? সব ঠিকঠাক আশা করি?— বলতে বলতেই সে মুখের প্রস্থেটিক মেকআপ টেনে খুলতে আরম্ভ করল।

    মেকআপ খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আশ্চর্য লক্ষ করল না, তার কথাগুলো শুনে অন্ধকারের অতিথির মুখে ফুটে উঠেছে একটা গা ছমছম করা হাসি। এ হাসি এমন, যা হঠাৎ দেখলে বেশ অস্বস্তি হওয়ারই কথা। হয়তো লোকটি মনে মনে তখন ভেবেছে— ব্রহ্মের বেশবাস তাকে জায়গাটার সঙ্গে ভালই খাপ খাইয়ে দিয়েছে, মোটেই তাকে বেমানান লাগছে না এই ঘরে। লোকটা এ ব্যাপারে বেশ খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়েই মুখ নামিয়ে তার ডান হাতে পরে থাকা ঘড়ির মতো একটা ছোট্ট মেশিনে একটা বোতাম টিপল। হালকা ঝিঁঝিঁর ডাকের মতো একটা আওয়াজ শুরু হতেই আশ্চর্য সেই শব্দ শুনতে পেল। সে ফিরে তাকাল এদিকে।

    ১৭।

    রস আইল্যান্ডের যে দিকে নামছেন কিশিমোতো এবং ব্রহ্ম ঠাকুর, এদিকটা দ্বীপের উলটোদিক। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে এই দিক দেখা যায় না। পর্যটকরা এদিকে আসেন না। দিকটা পুরোটাই পাহাড়ি ঢাল আর জঙ্গলে ঘেরা। মেকশিফট একটা পাটাতন তৈরি করে দিল স্পিডবোটের চালক, নৌকোর মধ্যেই রাখা একটা বোর্ড, নৌকো আর পাড়ের মধ্যে লাগিয়ে দিয়ে। এভাবেই নৌকো থেকে নামতে হল। কিশিমোতো আগেই নেমে ব্রহ্মকে হাত ধরে সাহায্য করলেন নামতে। ব্রহ্ম ঠাকুর পাড়ে নেমে বুঝতে পারলেন না ঠিক কীভাবে এখান থেকে দ্বীপের ভেতরে যাওয়া যাবে। পুরোটাই তো খাড়াই পাহাড়ের গাছপালায় ঢাকা ঢালু অংশ!

    অন্ধকারের মধ্যে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, সেই ছায়ামূর্তি ব্রহ্ম ঠাকুর ছাড়া আর কেউ হতেই পারেন না। কিন্তু— তাহলে ব্রহ্মদা ফিরে এসেছেন এর মধ্যেই? গতকালই তো গেলেন? ‘হ্যান্ডস আপ’ই বা বলছেন কেন? হাতে তো কোনও রিভলভারই নেই! ক্ষ্যাপা বুড়োর স্থূল রসিকতা? প্র্যাকটিক্যাল জোক? ইংরেজিতেই বা কথা বলছেন কেন হঠাৎ? 

    ব্রহ্ম ঠাকুর ঢালে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছিলেন, হঠাৎ কিশিমোতো তাঁর কাছে সরে এসে গলা নামিয়ে বললেন— ড: ঠাকুর, আপনি কি আমার বাবার ডায়রিটা পড়েছিলেন? …উত্তরটা নিচু গলাতেই দেবেন, এখানে কেউ হঠাৎ আপনার গলা শুনতে পেলে বিপদ হতে পারে। আপনাকে যে আমি নিয়ে আসছি, তা আপাতত গোপন রাখাই ভাল। তারপর দেখি কী হয়। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।

    ব্রহ্ম নিচুস্বরেই বললেন— ওকে! তাই হবে। আর তোমার প্রশ্নের উত্তরটা হল— না। ডায়রিটা পড়বার সুযোগ   আমার হয়নি। ওঙ্গেদের আস্তানা থেকে সিনিয়র কিশিমোতোকে উদ্ধার করবার পর তিনি আমায় জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আন্দামানের জাপানি অধিগ্রহণের সময় যেসব জাপানি সৈন্য আন্দামানে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন তাঁর কাকা। সেই কাকা শুধু সৈন্য ছিলেন না, আসলে তিনি ছিলেন জাপানি ফৌজে থাকা এক বিজ্ঞানীর সহকারী। সেই কাকার মাধ্যমেই সিনিয়র মানে তোমার বাবা আন্দামানের উদ্ভট কিছু জিনিসের কথা জানতে পেরেছিলেন পরে। ওঙ্গেদের দ্বীপে সিনিয়র কিশিমোতো গেছিলেন ১০ ডিগ্রি চ্যানেলের রহস্যভেদ করতে, কাকা নাকি বলেছিলেন ওখানে গেলেই তিনি সে রহস্যের কিনারা করতে পারবেন। ওঙ্গেরা তাঁকে বন্দি করায় সে রহস্যের আর সমাধান পেলেন না সিনিয়র কিশিমোতো। তবে ফিরবার পথে আমায় বলেছিলেন, কাকার মাধ্যমে জানতে পারা ‘দ্বিতীয় এক রহস্য’ তিনি ভেদ করবেনই করবেন। একথা বলে তিনি অ্যাটোমিক রিঅ্যাকটরের সম্ভাবনার একটা আভাস আমায় দিয়েছিলেন। আর একটা ম্যাপ এক ঝলক দেখিয়েছিলেন। তার বেশি দেখাননি, কারণ তখন তো সদ্য পরিচয় হয়েছে তাঁর সঙ্গে! সেই ম্যাপে অবশ্য রস দ্বীপের নাম লেখা ছিল না।

    কিশিমোতো বললেন— আপনি যদি ম্যাপটা হাতে পেতেন, তবে ম্যাপে আঁকা দ্বীপের আকৃতি থেকেই বুঝে যেতেন ওটা রস দ্বীপেরই ম্যাপ ছিল। এবার আপনাকে আমি যে পথে নিয়ে যাব, সেটা একটা গোপন পথ। তবে বাবার আঁকা ম্যাপে এই পথের স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। এদিকে আসুন, হ্যাঁ হ্যাঁ, খুব সাবধানে…

    এখন সূর্য ডুবে গেছে। সমুদ্রের জলের রং এখন কালো, তাতে ফসফরাস ঝিকমিক করছে। সমুদ্রের ধার দিয়ে খানিকটা হেঁটে যেতেই অন্ধকারের মধ্যে একটা চৌকো জানালাহীন ছোট্ট সিমেন্টের খুপরি ঘরের আদল দেখা গেল । তাতে ঢুকবার একটা পথ আছে, নিচু একটা সংকীর্ণ ফোকর। কিশিমোতো বললেন— সাবধানে আসবেন ড: ঠাকুর। আপনি লম্বা মানুষ। মাথা বাঁচিয়ে।

    ভেতরে ঢুকে বোঝা গেল সেটা আসলে চৌকো নয়, একটা পাঁচকোনা আকৃতির ছোট্ট ঘর। চারটি দেওয়াল আছে, পাঁচ নম্বর দেওয়ালের জায়গাটা আসলে মাটির তলায় নেমে যাওয়া সিঁড়ি। কিশিমোতো বললেন— এই সিঁড়ি দিয়েই নীচে নেমে যেতে হবে। এটা একটা জাপানি বাংকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানি অধিকারের পর পুরো দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে এরকম অসংখ্য বাংকার তৈরি হয়েছিল। বেশিরভাগেরই ভূগর্ভস্থ কক্ষ এখন ভারত সরকার সিল করে দিয়েছেন। রস আইল্যান্ড পরিত্যক্ত দ্বীপ, তার উপরে এই দিকটিতে তো মানুষের পা পড়ে না, তাই এই বিশেষ বাংকারটি রয়েছে আগের মতোই। এটার সন্ধান সবার জানা নেই…

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook