ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ৩৭


    বিমল মিত্র (November 12, 2021)
     

    পর্ব ৩৬

    বোধহয় সেই জন্যেই নানা-রকম কাজের মধ্যেও গুরু কাউকে-না-কাউকে সঙ্গে রাখতে চাইত। বোম্বাই থেকে যখনই মাদ্রাজে গেছে কাউকে-না-কাউকে সঙ্গে নিয়েছে। এক-একবার গীতাও গেছে সঙ্গে। অনেকদিন সকাল থেকে শুটিং চলেছে স্টুডিওতে, সঙ্গে গীতাও গেছে। গীতা চুপ করে ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু শুটিং দেখেছে বসে বসে। বসে বসে শুটিং দেখা আর শুটিং করা যে কি কষ্টকর, তা যারা ভুক্তভোগী তারাই জানে।
    গীতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম— আপনার কষ্ট কিসের? ভাবনা নেই, চিন্তা নেই, কেবল বসে থাকা! আপনি সঙ্গে থাকলে তবু গুরুর একটা কথা বলার লোক থাকে—
    গীতা বলতো— ওর কি লোকের অভাব আছে মনে করেন? চারদিক থেকে একগাদা লোক ওকে সবসময় ছেঁকে ধরে থাকে—
    — কিন্তু আপনার সঙ্গে অন্যলোকের তুলনা? আপনি হলেন গুরুর স্ত্রী, আপনাকে পেলে আর কাউকে চাইবে না গুরু। সব সময়েই গুরুর সঙ্গেই তো আপনার থাকা উচিত—
    গীতা বলত— আমি সঙ্গে থাকলেও ও তাস খেলতে বসবে, আমি থাকলেও এক গাদা লোকের ভিড় হবে। গুরুর সঙ্গে কথা বলবার সময় আমি কতটুকু পাই? সমস্ত দিনে-রাতে মিলে হয়তো এক ঘন্টা—
    বললাম— কেন? অত কম সময় কেন?
    গীতা বলেছিল— সকালবেলা ঘুম থেকে সেই যে শুরু হয় স্টুডিও, তারপর রাত্রে বাড়ি আসে, দুপুরবেলা ওর খাবার পাঠাই, এসেই তো আবার বন্ধু-বান্ধব। আর যদি কোনও বন্ধু বাড়িতে না আসে তো বই মুখে দিয়ে রাত তিনটে-চারটে। তাহলে কখন কথা বলব? আর কথা যদিই বা হয় তো ঝগড়া—
    আমি একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
    বললাম— ঝগড়া? কি নিয়ে ঝগড়া হয় আপনাদের?
    গীতা বলেছিল— আমাকে গুরু গান গাইতে দেবে না—
    — সে কি? আপনার গান শুনেই তো আপনাকে বিয়ে করেছিল গুরু?
    গীতা বললে— সে-সব কথা এখন ভুলে গেছে ও। একদিন আমাকে বিয়ে করবার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। সেদিন গরজটা ছিল ওর, আজ সেটা আমার গরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন ওকে বিয়ে করে আমিই অপরাধী হয়ে উঠেছি—
    — কিন্তু আপনার গান গাওয়াতে ওর আপত্তি কিসের?
    গীতা বললে— আপত্তি এই জন্যে যে গান গাইলে সংসার কে দেখবে?

    গীতা বলেছিল— আমাকে গুরু গান গাইতে দেবে না—
    — সে কি? আপনার গান শুনেই তো আপনাকে বিয়ে করেছিল গুরু?
    গীতা বললে— সে-সব কথা এখন ভুলে গেছে ও। একদিন আমাকে বিয়ে করবার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। সেদিন গরজটা ছিল ওর, আজ সেটা আমার গরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন ওকে বিয়ে করে আমিই অপরাধী হয়ে উঠেছি—
    — কিন্তু আপনার গান গাওয়াতে ওর আপত্তি কিসের?
    গীতা বললে— আপত্তি এই জন্যে যে গান গাইলে সংসার কে দেখবে?


    বললাম— কিন্তু আপনার সংসারে দেখবার কি আছে? আপনার লোকজন, চাকর-ঝি, কোন্টার অভাব?
    গীতা বললে— ও বলে আমি নাকি সংসার দেখি না। আমাকে সবকিছু দেখতে হবে—
    — কিন্তু আপনি তো সংসার দেখেন। আমি নিজের চোখে আপনাকে তরকারি কুটতে দেখেছি—
    গীতা বললে— আমি না হলে স্টুডিওতে কে লাঞ্চ পাঠায়?
    বললাম— তাছাড়া এতদিন আছি এখানে, আমি তো দেখছি আপনি সব কিছুই করেন— ছেলেদের স্কুলে পাঠানো, তাদের তদারক তো আপনিই করেন দেখেছি—
    গীতা বললে— কিন্তু ও শুনতে চায় না। আমি যে গান গেয়ে টাকা উপায় করব, সেটা ওর ইচ্ছে নয়। ও বলে আমাদের টাকার আর দরকার কি! আমার কত রকমের দায় তা জানেন? আমার ভাই আমেরিকাতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, তাকে টাকা পাঠাতে হয়। বাপের বাড়িতে আমার বিধবা মা বেঁচে আছেন, তাকেও আমি সাহায্য করি। এ সব টাকা কোত্থেকে আসে? আর গান গাওয়া কি খারাপ জিনিস?
    বললাম— কে বলেছে খারাপ জিনিস? আপনি কিছুতেই গান ছাড়বেন না। তাতে গুরু যা-ই বলুক। আমাকে যদি কেউ গল্প-উপন্যাস ছাড়তে বলে তাহলে কি আমি তা ছাড়ব?
    গীতা বললে— আপনি ওকে একটু বুঝিয়ে বলুন না— আমার কথা মোটেই শোনে না।
    বললাম— কালকেই আমি বলব। বলব, যাতে আপনার গান গাওয়ায় গুরু কোনও আপত্তি না করে—

    তার পরের দিনই আমি কথাগুলো গুরুকে বললাম।
    বললাম— আপনি গীতাকে গান গাইতে বারণ করেছেন কেন?
    গুরু প্রথমটায় আমার প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে গেল। তারপর সামলে নিয়ে বললে— গীতাই বুঝি আপনাকে বলেছে সব?
    বললাম— হ্যাঁ, কিন্তু গীতা গান গাইবে না তো আপনার রান্নাঘরে বসে ভাত রাঁধবে বলতে চান? সে-ও তো আর্টিস্ট, তারও তো নিজেকে প্রকাশ করতে ইচ্ছে হয়। আমাকে যদি কেউ গল্প-উপন্যাস লেখা বন্ধ করতে বলে, আমি কি সত্যিই বন্ধ ক্রে দেব?
    গুরু বললে— না বিমলদা, তা নয়, আমি যখন গীতাকে বিয়ে করেছিলুম, তখন গীতার খুব নাম ছিল গায়িকা হিসেবে, কিন্তু আস্তে-আস্তে সে নাম পড়ে গেল। এখন আর আগেকার মতন ওর সে গ্ল্যামার নেই—
    জিজ্ঞেস করলাম— কেন নেই?
    — চিরকাল কি সকলের গ্ল্যামার থাকে?
    বললাম— সেই রকম গ্ল্যামার না থাকুক কিন্তু এখনও তো গীতার গানের খুব সমাদর আছে! এখনও তো অর কল্ আসে চারদিক থেকে—
    গুরু বললে— তা আসে— কিন্তু ও বুঝতে পারে না যে ওর সে নাম আর নেই। যখন নাম কমে আসার দিকে হয়, তখন আর্টিস্টকে থামতে হয়, তখন চুপ করে যেতে হয়!
    গুরুর কথাটা যুক্তি-সঙ্গত! তবু বললাম— কিন্তু তা বলে এখনও তো এমন অবস্থা গীতার হয়নি যে গান গাওয়া একেবারে থামিয়ে দিতে হবে। আর চিরকাল যে সকলের খ্যাতি এক রকম থাকবে, তাও তো নয়। নাম কখনও বাড়ে কখনও কমে, এই-ই তো নিয়ম—
    গুরু বললে— দেখুন, ওর ভালোর জন্যেই আমি ওকে গান গাইতে বারণ করি। আমি তো চাই ওর নাম হোক—
    বললাম— না, আসলে আপনি চান না, যে গীতার আরো নাম, আরো খ্যাতি হোক—
    — সে কি! আমি তো সে রকম কথা কখনও ভাবিনি!
    বললাম— ভাবেননি হয়তো, কিন্তু মনে-মনে হয়তো আপনার সেই উদ্দেশ্যই ক্রিয়া করেছে। যখন আপনাদের বিয়ে হয়েছিল তখন ওর নাম ছিল বেশি, আর আপনার নাম ছিল কম। এখন উল্টো হয়ে গেছে। এখন তাই গীতা ভাবে তাঁর পতনের জন্যে আপনিই দায়ী।
    গুরু থমকে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বললে— কিন্তু আমি তো আমার প্রত্যেক ছবিতে এখনও ওকে প্লে-ব্যাকে গান গাইতে দিই—
    বললাম— আপনি কি মনে করেন সে আপনার মহানুভবতা?
    গুরু সে কথার উত্তর না দিয়ে বললে— জানেন, আমি একটা ছবি করেছিলাম ‘গৌরী’ নাম দিয়ে, সে ছবিটার নায়িকা ছিল গীতাই। তবে সে ছবিটা শেষ করিনি অন্য কারণে—
    বললাম— কেন? শেষ করলেন না কেন?
    গুরু বললে— ওই গীতার জন্যে!
    বললাম— কিন্তু গীতা তো বলে অন্য কারণে ছবিটা বন্ধ করে দিলেন—
    — কি কারণ বলে গীতা?
    বললাম— গীতা বলে ওয়াহিদা রেহমানের জন্যে?
    কথাটা শুনে গুরুর ফরসা মুখ-চোখ লাল হয়ে উঠল। তারপর একটু হেসে বললে— সেই কথা গীতা আপনাকে বলেছে?
    বললাম— হ্যাঁ, বলেছে গীতার সঙ্গে অভিনয় করতে নাকি আপনার মুড্ আসত না—
    গুরু বললে— মিথ্যে কথা! আসল কারণটা সবাই জানে! রাম সারিয়াকে তো আপনি চেনেন? তাকে জিজ্ঞেস করবেন কেন আমি ‘গৌরী’ বন্ধ করে দিয়েছিলাম— সেই আপনাকে সব খুলে বলবে। কয়েক লক্ষ্য টাকা নষ্ট করেছি কি আমি মিছিমিছি বলতে চান? আমার বহুদিনের সাধ ছিল যে একটা বাংলা ছবি করব। কিন্তু সে-সাধ আমার মিটল না। গীতাই সে-সাধে বাধ সাধল—
    আমি গুরুর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। ভাবলাম রামু সারিয়াকে জিজ্ঞেস করব আসল কারণটা।

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook