সিনেমাটা দেখতে দেখতে কতবার যে বালি ঢুকে গেল চোখে! চোখ করকর করে উঠল, গালে, ঠোঁটের কোণে লেগে রইল সমুদ্দুরের নুন… সমুদ্রের হাওয়ায় উড়ে যায় অনেক পরত, বেরিয়ে পড়ে হারিয়ে যাওয়া, হেরে যাওয়া কাঙাল, তুলতুলে মন। এই ‘উবের কুল’, ‘স্ট্রং’ হয়ে ওঠা এই বিশ্বনাগরিক আমরা, কাতর হয়ে উঠি নিখাদ বাঙালি আটপৌরে স্নেহ-র জন্য হারিয়ে যাওয়া একটা সমাজ, আর মরে যাওয়া সেই সব প্রজন্মগুলির জন্য, যারা মুখঝামটা দিয়ে বলতে পারত, ‘যাবে টা কোথায়, দেখছ না কোথাও জায়গা নেই, ব’সো এখানে’, অথবা, ‘মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে সাতদিন পেটে কিছু পড়েনি, আবার রাগ দেখানো হচ্ছে।’
তপন সিংহ-র ছবিতে যেভাবে মধ্যবিত্ত বঙ্গজীবন ধরা পড়েছে, তেমনটা আর কারও ছবিতে পাইনি। তার চরিত্ররা রোজকার মধ্যবিত্ত দুঃখসুখগুলি নিয়ে ঘ্যানঘ্যান-প্যানপ্যান করে না কখনও, বরং তারা যেমন ডাকাবুকো, তেমন আত্মচেতনাময় আর ততটাই রসিক। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ‘সেন্স অফ হিউমার’-এর কোনও তুলনা হয় না, আর তপন সিংহর ছবিতে ‘হিউমার’, সিনেমার হৃদয়ের ধুকপুকুনির মতো। ‘নির্জন সৈকতে’ দেখতে গিয়ে হেসে-কেঁদে একশা হলাম। মনে হল, এই তো আমার ‘বাংলা সিনেমা’, এর পাশে সত্যিই কপালে হাত ঠেকিয়ে, দরকার হলে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায় আজীবন।
আরও পড়ুন : মৌসুমী ভৌমিকের এই গানে ভেসে আছে সমুদ্র, তাকে এড়াব কী করে? লিখছেন শ্রীজাত…
ক্যালেন্ডার ভরে কতরকম ‘দিন’ বা ‘দিবস’ যে ছোট-বড় ফুলের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফুটে রয়েছে, তার নেই ঠিক। ‘বিশ্ব সমুদ্দুর দিবস’-এর কথা জানা ছিল না, কিন্তু শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনটা ভাল হয়ে গেল। আহা, এই কংক্রিটময় চৌখুপি জীবনে, এই ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হর্ন দেওয়া বেঁচে থাকায় ৮ জুনটি সমুদ্রের জন্য রেখেছে তো মানুষ, সমুদ্রের তো এ কম পাওয়া নয়! বছর বছর বেড়ে চলেছে সমুদ্রের তাপমাত্রা, বছর বছর সমুদ্রে জমা হচ্ছে প্লাস্টিকের স্তর। জলচর জীব প্রকৃতির কোনও অমোঘ নিয়মে মৃত্যুর সময় চলে আসে ডাঙায়। মনে আছে, কয়েক বছর আগে এমনই এক সমুদ্রতটে শুয়ে থাকা মৃত হাঙরের পেট থেকে বেরিয়েছিল কিলো কিলো প্লাস্টিক। খবরের কাগজে সেই ছবি দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল, আমাদের তো কোনও জবাবদিহি করতে হল না ওর কাছে, ওর এই মরে যাওয়ার কাছে! ইউনাটেড নেশনস্-এর প্রবর্তিত ‘ওয়ার্লড ওসিয়ানস ডে’, আজকের এই খাবি খাওয়া পৃথিবীতে একটি দরকারি উদ্যোগ। এই বছর ফ্রান্সে হচ্ছে এই উদযাপন, এবারের বিষয়— ‘ওয়ান্ডার: সাসটেইনিং হোয়াট সাসটেইনস্ আস’, ‘বিস্ময়: তাকে বাঁচানো, যা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে’।
পাহাড় বেশি ভাল লাগে না সমুদ্র?— এ-হেন আবশ্যিক প্রশ্নের উত্তর আমার দিতে দেরি হয় নি কোনওদিন, পাহাড় ভাল লাগলেও, সমুদ্রের প্রতি আমার প্রেমটা রীতিমতো সর্বনাশা। সমুদ্র ঘিরে গড়ে ওঠা প্রায় প্রত্যেকটি ছবিই আমার ভারি প্রিয়। সমুদ্র তার আকাশ-ছাপানো বিস্তার নিয়ে, কোন অতল থেকে উঠে আসা কালের গম্ভীরার মতো গুমগুম গর্জন নিয়ে, রহস্য নিয়ে, স্থান-কাল-পাত্র এক করে সব সৃষ্টিশীল মানুষকেই পাগল করে তুলেছে বলে মনে হয় আমার। কী কী সব ছবিই না গড়ে উঠেছে সমুদ্রের শব্দ, গন্ধ, বাতাস গায়ে মেখে, বার্গম্যানের ‘পারসোনা’, এঞ্জেলোপোলাস-এর ‘ইটারনিটি অ্যান্ড আ ডে’, পোলানস্কি-র, ‘কুল-দে-সাক’— আরও কত কত আশ্চর্য সব কাজ। তেমনই এক অত্যাশ্চর্য কাজ, তপন সিংহর সিনেমা ‘নির্জন সৈকতে’।


কালকূট-এর ক্লাসিক একটি উপন্যাস থেকে তপন সিংহ বানিয়েছিলেন ছবিটি ১৯৬৩-তে, ওপরে যে ক’টি বিশ্ব চলচ্চিত্র-র নাম বললাম, সেই সব ক’টির আগে। কালকূট-এর উপন্যাস নিয়ে কাজ করা সহজ না, ভ্রমণমূলক, গভীর দার্শনিক, বড় ক্যানভাসের কাজ— অনেক ঘটনা, অনেক চরিত্রকে ঘিরে এক দেশ ঘুরে বেড়ান একলা পথিকের জার্নাল। সোলো ট্রিপ আসলে সোলো হয় না কখনওই, আর সেটাই হচ্ছে সোলো ট্রিপ-এর মজা— একা একা ঘুরে বেড়ানো মানুষদের পথে পথে জুটে যায় বন্ধু, উঁকি মেরে যায় অন্য জীবন, গল্প— যে কোনও অভিচারীর জন্য প্রত্যেকটি মোড় নিয়ে আসে কোনও না কোনও নতুন মোড়, তৈরি হতে থাকে পথে খুঁজে পাওয়া মানুষ আর গল্পের বুনটে একটি দারুণ নকশিকাঁথা। সিনেমার দু’টি ঘণ্টায় এর ব্যপ্তি এবং বোধ প্রকাশ করা রীতিমতো অসম্ভব এক পরীক্ষা।
তপন সিংহ একমাত্র পরিচালক, যিনি সেই কাজটি করেছেন অনবদ্যভাবে। ‘নির্জন সৈকতে’ প্রথম দেখে ‘হাঁ’ হয়ে গিয়েছিলাম। এত ছবি নিয়ে এত আলোচনা, এত কথা হয়, কিন্তু ‘নির্জন সৈকতে’ নিয়ে তেমন কথা হয়,না, অথচ ছবিটি এই আজকের দিনেও যেন সময়ের থেকে দু-পা এগিয়ে থাকা কাজ। এ-ছবিতে কালকূট-এর লেখকটি ঝোলায় দু’টি জামা আর একদিস্তে কাগজ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন, গন্তব্যহীন এই যাত্রার আকর্ষণ সমুদ্র, পুরী। তীর্থে তার কৌতূহল নেই, তার টান বালিয়াড়িতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সারি, যার কোনও শেষ নেই, না আছে কোনও শুরু। এই টানও অমোঘ! একে এড়ানো মুশকিল।

একটা সময় ব্যাগে ব্যাগে ঘুরত একটি চটি বই, সেই খিটখিটে বুড়ো সান্টিয়াগো-র গল্প, হেমিংওয়ে-র ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’। সমুদ্র ধ্বংস করে দিতে পারে তার প্রেমিককে, তবু হয়তো শুধুমাত্র সমুদ্রের প্রেমেই ধ্বংস হওয়া সাজে। আমাদের লেখকও সেই সমুদ্র-টানে, আচমকা বেরিয়ে পড়ে আচমকাই ট্রেনে চেপে বসে, পুরীর এই ট্রেনের কামরায় জড়ো হয়েছে একটি ছোটখাটো ভারতবর্ষ আর চারটি বাঙালি বিধবা নারী, চার বয়সের চার বিধবা আর তাদের একটি বিষণ্ণ, তরুণী ভাসুরঝি। তার নিরাভরণ, বেরঙিন সাজ, করুণ মুখ, রুক্ষ মেজাজ দেখলে মনে হয়, যেন সেও বিধবা। এদের সঙ্গে তীর্থযাত্রায় জুটে পড়েছে সেও। আসলে তীর্থে বা সমুদ্রে, কোনওটিতেই মেয়েটির কোনও উৎসাহ নেই, সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার চেনা শহর, রাস্তা, গলি, ঘর, মানুষগুলির কাছ থেকে যেগুলি তাঁকে ক্রমাগত মনে করিয়ে দেয় তার ভেঙে যাওয়া প্রেমের কথা। যে ভালবাসাকে ঘিরে তার জীবন, সেই ভালবাসার মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার কথা। রেণু (শর্মিলা ঠাকুর), ব্রেক-আপের ধাক্কায় টালমাটাল, বেরিয়ে পড়েছে পথে। আর কে না জানে, পথেই তো দেখা হয় আরও অনেক পথে নামা মানুষের সঙ্গে, ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া আঘাত আর অপমান বিলীন হয়ে সমুদ্রের বিশালতায় আর পথে দেখা হওয়া ঠিক মানুষটির সাহচর্যে।
জনপদের জটিলতার আওতার বাইরে উদার সমুদ্রের কাছে এসে মনের আগলগুলিও ভাঙতে থাকে আস্তে আস্তে। পালাতে পালাতে গন্তব্য আপনিই এসে ধরা দেয় মানুষের কাছে। একলা ভবঘুরে পথিক, পূর্ণিমার রাতে জ্যোৎস্না-ধোয়া কোনারক মন্দিরে, সমুদ্রতীরের পাগল হাওয়ায় ভালবাসে। পথের গল্পে জুটে যায় কত না কত মন দেওয়া-নেওয়া, হয়তো সেইসব ভালবাসার গল্পে নিটোল, যথাযথ শেষ নেই কোনও, কিন্তু যা আছে, তা প্রকৃতির মতোই পবিত্র।

‘নির্জন সৈকতে’ দেখে প্রথমবারই অবাক হয়েছিলাম। ১৯৬৩-তে এমন একটি ছবি তপন সিংহ বানিয়েছিলেন, যার কেন্দ্রে চার বিধবা মেয়ের নিজেরা নিজেরা তীর্থে বেরিয়ে পড়া। ১৯৯০-২০০০ অবধিও সিনেমায়, বিশেষত বাণিজ্যিক ছবিতে মূলত মেয়েদের খালি ভালবাসায় কাচের ওপর নাচতে দেখেছি, লজ্জায় রাঙা হয়ে মুখ লোকাতে দেখেছি, ধর্ষিত হতে হতে কাচ ভেঙে লাফিয়ে পড়া নায়কের হাতে উদ্ধার হতে দেখেছি, এবং শেষমেষ টকটকে সিঁদুর মাথায় গৌরবান্বিত হতে দেখেছি। ছোট যখন ছিলাম, খুব অবাক হয়ে ভাবতাম, এই মেয়েগুলো কারা? এরা কেন এমন? এদের তো চিনি না। খানিক বড় হয়ে বুঝতে পারলাম, প্রশ্নটা হওয়া উচিত, এই লেখক, পরিচালকরা কারা? এরা কেন এমন? এরা কি মেয়েদের চেনে? দীর্ঘ পঁচিশ বছরে সিনেমা, সিরিজের বিষয় ভাবনা পালটেছে। পালটেছে চোখ বা দেখা। ইদানীং আবার দেখি, প্রায় সব সিরিজই নারীকেন্দ্রিক। কিছু বছর আগে ‘ফোর শট্স’, ‘ফোর মোর শটস্’ নিয়ে বেশ হইচই হল, হওয়ারই কথা, ভাল কাজ, কিন্তু তবু ‘নির্জন সৈকতে’ দেখতে দেখতে হাসি পেয়ে গেল যেন। ১৯৬৩-তে বানানো তপন সিংহর এই ছবিটি আজও ‘ফোর শটস্’-কে চার-চার আট গোল দিতে পারে।
এক তো এই গল্প চার অতি সাধারণ, রোজকার চেনা মহিলার গল্প, দ্বিতীয়ত, পুরো ছবিতে তাদের বিচরণ এমনই অনায়াস, যা আলাদা করে উচ্চকিত কোনও স্টেটমেন্ট তৈরি করে না। তাদের ‘দুনিয়া জাহান্নামে যাক’ বলে এই বেরিয়ে পড়া নিয়ে কোনও সোচ্চার ঘোষণা বা লম্ফঝম্প নেই। তারা যেন সমুদ্রের মতোই সহজ এবং সাহসী। আস্তে আস্তে তারাও হয়ে উঠছে ততটাই অভিচারী, বেহিসেবি— শিখে নিচ্ছে নিজেদের ভালবাসতে, নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকতে, রান্নাঘর থেকে ভাঁড়ারঘরের চৌহদ্দির বাইরের যে বিশাল পৃথিবী, তার খোঁজে বেরিয়ে পড়তে অথচ নিজেকে ভালবাসতে শিখে অন্যকে ভালবাসতে ভুলে যায়নি তারা। মায়া তাদের ছেড়ে যায়নি কখনও, ভালবাসতে পারার ক্ষমতা, আপন করে নিতে পারার যে অনাবিল শক্তি, যে নারীর ধমনিতে বহমান— তা এই পথের জার্নালকে দিয়েছে সেই জীবনবোধ, যা কালকূট-এর উপন্যাসগুলিতেই ফিরে ফিরে দেখা যায়।
এই চার মহিলা, চার কিংবদন্তি অভিনেত্রী— ছায়া দেবী, ভারতী দেবী, রেণুকা রায় আর রুমা গুহঠাকুরতার অভিনয় দেখে ভুলে যেতে হয় এরা আসলে পেশাদার অভিনেত্রী। মনে হয়, এরা যেন কোনও তথ্যচিত্রের চরিত্র। ভাল অভিনেতা দুইরকম হয়— এক, যাঁরা দারুণ অভিনয় করেন, আর দুই, যাঁরা অভিনয় করেনই না। ‘নির্জন সৈকতে’ দেখতে দেখতে গর্ব হয়, কেয়া বাৎ! এঁরা ছিলেন আমাদের বাংলা সিনেমার সব চরিত্রাভিনেতা।
আসলে তীর্থে বা সমুদ্রে, কোনওটিতেই মেয়েটির কোনও উৎসাহ নেই, সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার চেনা শহর, রাস্তা, গলি, ঘর, মানুষগুলির কাছ থেকে যেগুলি তাঁকে ক্রমাগত মনে করিয়ে দেয় তার ভেঙে যাওয়া প্রেমের কথা। যে ভালবাসাকে ঘিরে তার জীবন, সেই ভালবাসার মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার কথা। রেণু (শর্মিলা ঠাকুর), ব্রেক-আপের ধাক্কায় টালমাটাল, বেরিয়ে পড়েছে পথে। আর কে না জানে, পথেই তো দেখা হয় আরও অনেক পথে নামা মানুষের সঙ্গে, ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া আঘাত আর অপমান বিলীন হয়ে সমুদ্রের বিশালতায় আর পথে দেখা হওয়া ঠিক মানুষটির সাহচর্যে।
আমাদের লেখকটিকে নিয়ে কী-ই বা বলতে পারি! তবে বরাবরই দেখেছি ভবঘুরে, উদাসী, পৃথিবীর গতে বাঁধা নিয়মের বাইরে থাকা মানুষদের ভালবেসে ফেলে অন্যরা, কারণ, সবারই মনের অনেক তলায় হয়তো ঘাপটি মেরে বসে থাকে একটি বাঁধনহীন, বেপরোয়া, নিজের নিয়মে বাঁচতে চাওয়া একটা মানুষ— কিন্তু সবাই তো সবার মতো হতে পারে না। শেকড়বাকড়হীন পথভোলা পথিক হওয়া অত সোজা না। অনিল চট্টোপাধ্যায় এমন এক অভিনেতা, যিনি জীবনের শেষ সময়ে হয়তো গ্রাসাচ্ছাদনের তাগিদে কিছু বি-গ্রেড ফিলিমের ভিলেন-টিলেনও হয়েছেন, অথচ সেই ছবিতেও তাকে একটি নিখাদ শিক্ষিত, সৎ, ভাল মানুষ মনে হয়েছে। তপন সিংহর কাস্টিং নিয়ে কথা হবে না— এ-চরিত্রে অনিল চট্টোপাধ্যায়ই সেরা।
তপন সিংহ সেই মায়েস্ত্রো ফিল্মমেকার, যাঁর কথা রায়-ঘটক-সেনের ব্র্যাকেটে উঠে আসেননি কখনও। বাঙালি যাঁদের নিয়ে নাচে, শুধু তাঁদের নিয়েই নাচতে থাকে। অথচ, তপন সিংহই সেই ফিল্মমেকার, যাঁর ঝুলিতে আছে বাংলা ছবির সবচেয়ে বলিষ্ঠ, নির্ভীক বিষয় নিয়ে ছবি। চলচ্চিত্রের ভাষায়, নিজের স্বকীয় তর্জমায় এই পরিচালক বাংলা এবং হিন্দি ভাষায় এমন সব ছবি বানিয়েছেন, যেগুলি আবার করে দেখার, বোঝার, চর্চার সময় এসেছে। ‘আদালত ও একটি মেয়ে’-র মতো বিষয় নিয়ে এমন একটি কোর্টরুম ড্রামা বিশ্ব-চলচ্চিত্রের দরবারে আজও বিরল। তাঁর প্রত্যেকটি ছবি একটি বিশেষ মাত্রার। ‘এখনই’, ‘এক ডক্টর কি মওত’, ‘আপনজন’, ‘হারমোনিয়াম’, ‘আতঙ্ক’— আরও কত ছবি এই মুহূর্তেও যেমন শক্তিশালী, তেমন বাঙ্ময়। ‘নির্জন সৈকতে’-ও তেমনই একটি ছবি, সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা চিরকালীন একটি সিনেমা যা শেষ হয় একটি মেয়ের নিজের স্বাধীন পথ বা পছন্দ বেছে নেওয়ায়। ভালবাসার পরিণতি -টরিণতির মতো ধ্যাড়ধ্যাড়ে সমাপ্তিতে কোনও অত্যুর ফিল্মমেকারই কোনওদিন পাত্তা দেয়নি, এখানেও রেণু বালির পদরেখা ধরে তার নিজের পথচলাটি শুরু করল সিনেমার শেষে, সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে।