ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ৩৬


    বিমল মিত্র (November 5, 2021)
     

    পর্ব ৩৫

    প্রথম-প্রথম মাদ্রাজে গিয়ে গুরুর স্বাস্থ্যের খানিকটা উন্নতি হল। একবার গুরুর সঙ্গে গীতাও মাদ্রাজে গেল। গুরু দত্ত আর গীতা দত্ত। সেবার অনেকদিন পরে গুরু আর গীতা একত্র হল। কিন্তু গেলে কি হবে। গুরু তো সারাদিন নিজের ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত। গীতা একলা হোটেলে সময় কাটায়। একদিন স্টুডিওতে গেল কিন্তু শুটিং দেখা তো আরো বিরক্তিকর। গুরু কখন কথা বলবে গীতার সঙ্গে। সারাদিনের টাইট শিডিউল-এর পরে ক্লান্ত গুরু। তখন গীতার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই কোত্থেকে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। বিরক্ত হয়ে গীতা যাওয়া বন্ধ করে দেয় গুরুর সঙ্গে। গীতা বলত— আমার এখানে একটুও ভালো লাগছে না। তুমি সারাদিন কাজ করো, আমি কি করব?
    – তা তুমি এলে কেন? না আসলেই পারতে—

    গীতা বললে— আমি কি করে জানব এখানে এরকম হবে? তোমার আমার সঙ্গে একটু কথা বলারও সময় নেই—

    গুরু বললে— তা নিজের কাজ করব না তোমার সঙ্গে গল্প করব—

    এরপরে গীতা যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল গুরুর সঙ্গে। এসব কথা গীতা নিজেই আমাকে বলেছিল একদিন।

    গুরুর মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারতাম। এ শুধু গুরুর নয়, মানুষ মাত্রেরই এই অবস্থা। তার মধ্যে কম-বেশি আছে। তবে যারা একটু বেশি আত্মসচেতন তারাই গুরুর মতন ছটফট করে। ঘুমের মধ্যেও তারা অশান্তির স্বপ্ন দেখে, শান্তির মধ্যেও তারা ভবিষ্যতের অশান্তির আভাস কল্পনা করে নিয়ে আঁতকে ওঠে। তাই সে বিনিদ্র। রাত্রে তার ঘুম আসে না। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়েও তার ঘুম আসে না। সেইজন্য বোধহয় সে সর্বক্ষণ কাজ নিয়ে মেতে থাকতে চায়। কাজ যদি না থাকে তো আমোদ করো, স্ফুর্তি করো। নিজেকে যতক্ষণ ভুলে থকত, ততক্ষণই শান্তি পেত সে।

    সেই কারণেই বোধহয় কোনদিকে দুশ্চিন্তা করবার যখন কিছু নেই, তখনও গুরু ছটফট করে, তখনও একজন সঙ্গী খোঁজে। মানুষের ভিড়ের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে আত্মবিস্মৃত হবার চেষ্টা করে।

    তা সেদিন যখন মানু ঘোষ আর আমি পাশে আছি সেই সময়েই হঠাৎ টেলিফোন এল পাশের ঘরের অ্যালবার্ট সিন্‌হার কাছ থেকে।  

    অ্যালবার্ট সিন্‌হা হচ্ছে বিখ্যাত চিত্রাভিনেত্রী মালা সিন্‌হার বাবা।

    গুরুর মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারতাম। এ শুধু গুরুর নয়, মানুষ মাত্রেরই এই অবস্থা। তার মধ্যে কম-বেশি আছে। তবে যারা একটু বেশি আত্মসচেতন তারাই গুরুর মতন ছটফট করে। ঘুমের মধ্যেও তারা অশান্তির স্বপ্ন দেখে, শান্তির মধ্যেও তারা ভবিষ্যতের অশান্তির আভাস কল্পনা করে নিয়ে আঁতকে ওঠে। তাই সে বিনিদ্র। রাত্রে তার ঘুম আসে না। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়েও তার ঘুম আসে না। সেইজন্য বোধহয় সে সর্বক্ষণ কাজ নিয়ে মেতে থাকতে চায়।

    অ্যালবার্ট সিন্‌হা আর তার স্ত্রী দুজনেই অমায়িক মানুষ। গুরুর সঙ্গে তার কোনও মিল নেই। না মিল স্বভাব-চরিত্রে, না মিল চালচলনে। সাংসারিক মানুষ হিসেবে তাদের দুজনেরই জনপ্রিয়তা অনস্বীকার্য। তাদের মেয়ে যেখানেই অভিনয় করতে গেছে, বাপ-মা সেখানেই সঙ্গে গেছে। বাপ-মা সারাদিন তাস খেলে, হেসে, গল্প করে কাটায়। আর মেয়ে অভিনয় করে। বিশেষ করে অ্যালবার্ট সিন্‌হাকে আমার খুব ভালো লাগত। স্টুডিওতে যেদিন যেতাম, আমি বসে গল্প করতাম তার সঙ্গে। ধর্মে খ্রিস্টান, কিন্তু জাতিতে সর্বজনীন। কেন তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন, তাও বলেছিলেন আমাকে। মাদ্রাজের স্টুডিওতে সমস্তক্ষণ আরামের সমারোহ। খাওয়া-দাওয়ার অফুরন্ত আয়োজন। যে যতবার ইচ্ছে ডাব কিংবা ঘোল খেতে পারে, কোনও কার্পণ্য নেই কোনও ব্যাপারে। শুটিংয়ের সময় মেয়ের অভিনয় দেখবার জন্য অ্যালবার্ট হাজির থাকতেন সব সময়ে। এক-একটা শট্‌ নেওয়া হয় আর বাপের দিকে চেয়ে মতামত চায়। বাপ মাথা নাড়েন অর্থাৎ– ভালো। বাপের সম্মতি না পেলে যেন মেয়ের মন খুশি হয় না।

    সেদিন প্রথম শুটিং আরম্ভ। অ্যালবার্ট খবর পেয়েছে যে গুরু পাশের ঘরে এসে উঠেছে। তাই টেলিফোন। আমি বললাম— আবার আড্ডা?

    গুরু বললে— চলুন না, দেখুন না কত রকমের মানুষ আছে পৃথিবীতে—

    অগত্যা যেতে হল। কুইন্‌স-হোটেলের সামনে অনেকখানি জায়গা জুড়ে একটা বাগান। বাগান পেরিয়ে তবে অন্য ঘরে যেতে হবে।

    রাত তখন দশটা। আমাদের খাওয়া হয়নি তখনও। গুরু সেই লুঙ্গি পরা অবস্থাতেই গিয়ে হাজির হল ওদের ঘরে। সঙ্গে আমিও গেলাম। ঘরে ঢুকে দেখি অ্যালবার্ট সামনের টেবিলে তাস ছড়িয়ে নিয়ে বসে আছে।

    অ্যালবার্ট বললেন— আসুন বিমলবাবু, তাস খেলা যাক—

    দেখলাম রীতিমতো তাস সাজিয়ে বসে আছে অ্যালবার্ট সিন্‌হা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তাস-ভক্ত মানুষ। গুরু নিজে তাস খেলতে বিশেষ পছন্দ করে না। আসলে কোনও কিছুতেই তার খুব আপত্তি নেই। তাস যদি খেলতে চাও তো খেল, আমার কোনও আপত্তি নেই। আবার যখন তোমার খেলতে ইচ্ছে করবে না, তখন আমিও উঠে পড়ব।

    অনেক দিন দেখেছি গুরুর নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছের কোনও প্রশ্ন বলে কিছু নেই। কেউ এসে বলল— চল গুরু, মাছ ধরে আসি— কেউ আবার এসে বলল, চল গুরু, রেস্‌ খেলে আসি। কেউ আবার এসে বললে— চল গুরু, মদ খেয়ে আসি—

    কিছুতেই গুরুর ‘না’ নেই। আমার কিন্তু বড় খারাপ লাগত। যখন দেখতাম গুরু তাস খেলতে খেলতে হাজার হাজার টাকা হেরে যাচ্ছে, তখন আমার ইচ্ছে হত বারণ করি। একদিন দেখলাম আমার চোখের সামনেই দুতিন হাজার টাকা গুরুর পকেট থেকে বেরিয়ে গেল।

    আমি জানতাম— আপনাকে সবাই ঠকিয়ে নিচ্ছে, বুঝতে পারছেন না?

    গুরু সেই রকম করে মিষ্টি করে হাসত। বলত— একটু লোকসান যাওয়া ভালো, শুধু লাভই করে যাব জীবনে, সেটা ঠিক নয়—

    আমি বলতাম—কিন্তু আপনাকে ওরা কি কেউ ভালোবাসে মনে করেন?

    – না-ই বা ভালোবাসল, আমি তো ওদের সঙ্গে মিশে খানিকক্ষণের জন্যে সব কিছু ভুলে থাকতে পারি— সেটা তো আমারই লাভ!  

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook