ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • দিল্লি ডায়েরি: পর্ব ৬


    অরুণাভ সিংহ (October 1, 2021)
     

    পুজোর ভোগ, পুজোর দুর্ভোগ

    এবারেও মনে হচ্ছে হবে না।
    — থার্ড ওয়েভ?
    — সে তো আছেই। আসল কথা অন্য।
    — কী?
    — টাকা উঠবে না। চাঁদা যদি বা আসে, স্পনসরশিপ কই?
    — এই নিয়ে দু’বছর।
    — এত বছর হয়ে গেল দিল্লিতে, কোনওদিন তো পুজো মিস হয়নি!
    — মিস হওয়া তো দূরের কথা, একই পাড়ায় দিন দিন পুজোর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল। এখন আর সব পাড়ার নয়, সব ব্লকের নিজের নিজের পুজো।
    — ইস! তার মানে এবারেও মিজ টি ব্লক কম্পিটিশন হবে না।
    — ওটাই আসল মিস। বিজলি গ্রিল তো এক নম্বরেই খুলে ফেলেছে, আগের মতো ফিশ অরলি খেতে পুজোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
    — তবে বাবা ভিড় আর সহ্য হয় না। আর এত হিন্দি চতুর্দিকে, ওদিকে কর্মকর্তাও তো সব হচ্ছে বাঙালি। উনি আমার বাবা হচ্ছেন।
    — সে আর কী করা যাবে, তুই-আমি তো আর আদি বাসিন্দা নই, অর্গানাইজার সব তিন প্রজন্ম দিল্লিতে থাকে, বাংলা যে এখনও বলতে পারে এই যথেষ্ট।    
    — সেইজন্যই তো রাত বাড়লে পাড়ার আর্টিস্টদের বেসুরো গান। তাদের চান্সও দিতে হবে, পাশের বাড়ির লোক হচ্ছে।
    — হা-হা-হা।
    — হাসিস না, গা জলে যায়। কলকাতার পুজো মনে পড়ে যায়, ওহো!
    — কেন, সেবারে যে অঞ্জন দত্ত গাইল?
    — ওই একবারই। আজকাল তো আর চন্দ্রবিন্দু-ফিন্দু আসে না।
    — আসবে কী করে? কর্পোরেটদের আর টাকা আছে নাকি! বেশ কয়েক বছরই তো মুনাফা পড়তির দিকে।
    — ব্যাস, আবার তোর জ্ঞান দেওয়া শুরু হল তো?
    — না, কিন্তু কোভিডের কেসটা কী? আমরা টাকা তুলতে পারি আর না পারি, গর্মেন্ট তো পুজো করতে দিচ্ছে না, নাকি?
    — গত বছরের মতোই অবস্থা। কিন্তু বোধহয় ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এখন আবার কিছু হয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
    — গুরগাঁও, নয়ডা ওই সব দিকে কি হচ্ছে? ওদের তো দিল্লির নিয়ম মানতে হয় না।
    — গুরগাঁওতে তো গত বছরও হয়েছিল। অল্প লোক ঢুকতে দিচ্ছিল। বাকিটা লাইভ ব্রডকাস্ট।  
    — আচ্ছা, তাহলে ইন্টার‍্যাক্টিভ ডিজিটাল করলে কেমন হয়?
    — মানে? জুমে?
    — হ্যাঁ। চাঁদার টাকায় ওটা তো হয়ে যাবে।
    — আইডিয়াটা মন্দ নয় কিন্তু।
    — মা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ— সবাই আলাদা উইন্ডো।
    — একচালা হবে না, হেঁ-হেঁ।
    — …

    …তবে বাবা ভিড় আর সহ্য হয় না। আর এত হিন্দি চতুর্দিকে, ওদিকে কর্মকর্তাও তো সব হচ্ছে বাঙালি। উনি আমার বাবা হচ্ছেন।

    — সে আর কী করা যাবে, তুই-আমি তো আর আদি বাসিন্দা নই, অর্গানাইজার সব তিন প্রজন্ম দিল্লিতে থাকে, বাংলা যে এখনও বলতে পারে এই যথেষ্ট।    

    — সেইজন্যই তো রাত বাড়লে পাড়ার আর্টিস্টদের বেসুরো গান। তাদের চান্সও দিতে হবে, পাশের বাড়ির লোক হচ্ছে।

    — হা-হা-হা।

    — হাসিস না, গা জলে যায়। কলকাতার পুজো মনে পড়ে যায়, ওহো!

    — কেন, সেবারে যে অঞ্জন দত্ত গাইল?

    — ওই একবারই। আজকাল তো আর চন্দ্রবিন্দু-ফিন্দু আসে না।

    — আসবে কী করে? কর্পোরেটদের আর টাকা আছে নাকি! বেশ কয়েক বছরই তো মুনাফা পড়তির দিকে।


    — ফোনে কী দেখছিস?
    — হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, বলছে কিছু কিছু পুজো নাকি হচ্ছে। তবে সরকার এখনও পরিষ্কার জানায়নি।
    — আর কবে জানাবে বাওয়া? একাদশীর দিন?
    — সেটাই তো সমস্যা। তাই পাড়ার পুজোগুলো এগোচ্ছে না। ধর, কাজ শুরু করার পর যদি বলে হবে না? টাকা তো জলে যাবেই, পুজো কমিটির চাকরিও যাবে।
    — মন্দির-টন্দির? কালীবাড়ি? ওরাও করছে না?
    — ওরা তো গত বছরও করেছিল। ওই নমো নমো করে আর কি! নো জাঁকজমক। এবারও তাই। ওটা তো ধর্মের ব্যাপার, আসল জিনিস তো প্যান্ডেল-ভিড়-স্টল-খাওয়া দাওয়া-পি.এন.পি.সি.। দিল্লির পি.এন.পি.সি. আবার স্পেশাল, আমলা-মন্ত্রী-সম্পাদক-টাইকুন এদের ছাড়া কারো নিন্দে কেউ ধার ধারে না। একবার তো…
    — উফ সাইডট্র্যাক্‌ড হয়ে যাচ্ছিস। স্টিক টু দ্য পয়েন্ট।
    — হ্যাঁ তো, জুমে পুজো। হবে নাকি? ফেসবুক-ইউটিউবে লাইভ। আমেরিকার লোকেও কিন্তু দেখে নিতে পারবে।
    — করলে হয়। কিন্তু শোন, গত বছর গুরগাঁওতে নাকি এরকমই কিছু করেছিল, তার মানে এবারও করবে। ওদের কিন্তু টেক্কা দিতে হবে।
    — নো সমস্যা। ধর, গান। পৃথিবীর যেকোনও জায়গা থেকে আর্টিস্ট ধরতে পারি। আর প্রতিমা, সেও পাড়ায় আনার দরকার নেই।
    — সে সব তো বুঝলাম, কিন্তু ভোগের কী হবে? ভোগ ছাড়া পুজো হয় নাকি?
    — ভোগ তো সবচেয়ে সহজ। রান্না হবে, তারপর সুইগি-জোম্যাটোতে অর্ডার করলেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে। জুমের সামনে বসে বাড়িতেই খাবে লোকেরা।
    — তাহলে শোন, চাঁদাটাও ক্রাউড সোর্সিং প্ল্যাটফর্মে তুলে নেওয়া যায়।
    — ছ্যাবলামি করিস না। দিল্লির পুজোয় একদম ছ্যাবলামি হয় না।
    — তাহলে সিরিয়াসলি বল, গুরগাঁওর পুজোকে আমরা টেক্কা দেব কীভাবে?
    — উপায় একটাই। গ্ল্যামার।
    — অভিনেতা-অভিনেত্রী এনে? জুমে তো করাই যায়।
    — আরে ধুর, সে তো সবাই করে।  
    — তাহলে?
    — তাহলে ফ্যাশন শো। র‍্যাম্প ওয়াক। যে যার নিজের বাড়ি থেকে। ভাল জামাকাপড়গুলো তো পড়ে পড়ে পচছে, তা সবাই জুমেই না হয় একটু মডেলিং করে দেখাল।
    — তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
    — কেন?
    — চেহারা দেখেছিস প্রতিবেশীদের? ওরা গ্ল্যামারের গ্ল্যা জানে?
    — তবে কী করা?
    — ভাবছি। ভাবা প্র্যাক্টিস করছি। হা-হা।
    — কিন্তু…
    — আবার কী?
    — আমার মনে হয় পুজো হবে না দিল্লিতে সেরকম ভাবে।
    — কেন রে?
    — সবাই ছুটি নিয়ে পাহাড়ে কেটে পড়ছে তো। এখনও তো ওয়ার্ক ফ্রম হোম, কাজেই আটকে তো নেই। আমিও তো…
    — তুইও তো? তুই ছুটিতে যাচ্ছিস পুজোর মধ্যে? কলকাতার লোক হয়ে গেলি দেখছি, ‘আমি না পুজোয় একদম শহরে থাকতে পারি না’ টাইপ। তাহলে যে এতক্ষণ পুজো কীভাবে করা যায় সেই নিয়ে আলোচনা করলি?
    — টাইমপাস। তুই জানিস আমিও জানি, পুজো হবে না। বাঁশই পড়েনি। প্যান্ডেল ছাড়া ঢপের ডিজিটাল পুজো— ওসব গেটেড কমিউনিটিরা করুক। আমরা বরঞ্চ ‘আসছে বছর আবার হবে’ নিয়েই থাকি। 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook