কয়েকটি কবিতা
সুতো
তোমার কোনও কথায় পরিহিতা
সুতোয় বোনা কাহিনি এক-দু’টো
আমি যখন সময় তুলে নিতাম
মুহূর্তরা বন্দি ছিল মুঠোয়।
জাহাজ যেত নিরাভরণ জলে
শোকের ফুলে সাজাত বন্দরও…
পর্ণমোচী বিরহ-অঞ্চলে
তুমি তখন দুঃখ বিলি করো।
সেসব সময় দেখাও হতো ভারী
প্রণয়নত চাহনি, তার ওজন…
হ্যাঁ, ইদানীং একাও ঘুম পারি
এবং তুমি ছেড়ে আসাও বোঝো।
যখন ছিলে সহজ সমর্পিতা
হৃদয় থেকে আলগা ছিল সুতো।
আমি তখন সময় তুলে নিতাম
মুহূর্তরা বন্দি ছিল মুঠোয়।
সাজা
শান্তি ছুঁয়ে পাথর হওয়া পাখি
যুদ্ধ লেগে বন্ধ হওয়া বাজার
আমি এদের মধ্যিখানে থাকি,
বাতাসে পাই নাগরিকের সাজা।
কাদের শিশু ফেরেনি আর বাড়ি
হারিয়ে গেছে কাদের অভিভাবক…
আমি তাদের মধ্যপথচারী —
আমার যত ভাবনা, রক্তাভ।
এরই মাঝে দরজা খুলে দাঁড়াই
দেখি আকাশ কী রঙে লজ্জিত,
পায়ের নীচে ধ্বংস হওয়া পাড়া…
ছাদের কোণে পায়রাগুলি মৃত।
এসব কিছুই বদলে যাবে নাকি?
সেসব নিয়ে ভাবিত নই আজ আর।
আমি এদের মধ্যিখানে থাকি,
বাতাসে পাই নাগরিকের সাজা।
স্বরলিপি
তুমি তো আর নহো সমান্তরাল
মিলিত হও পথের শেষ রেখায়
গানের কাছে আমারও অন্তরা
বন্ধু সেজে দেখার কথা লেখায়।
তখন তারা বিহীন-স্বরলিপি
লাগামহীন সুরের সফলতা
নিখিলেশের সখা তো সন্দীপই।
মাঝে কেবল বদলে গেছে কথা।
শ্রোতারা অত বোঝে না ব্যাকরণী
শুধুই চায় মনের মতো নিমেষ…
পাল্টে নিই চেনা চোখের মণি,
নীলাভ যেই মিশেছে রক্তিমে।
তুমি তো আর নহো স্বয়ম্বরা
স্বরলিপিই স্থির করবে, কে কার…
গানের কাছে আমারও অন্তরা
বন্ধু সেজে দেখার কথা লেখায়।
বাগান
তরিবতের বিহনে মঞ্জরী
বাগানে মন শুকিয়ে রাখে ভিজে…
আমি তোমায় কথা-অবাক করি,
তুমি আমার নিন্দে করোনি যে!
শত্রু চায় ফুলের আমদানি
পরাগ তার মাধুর্য বিকিয়ে
শোধ করেছে বিষাদঋণখানি…
সন্ধেবেলা কুহকে তার বিয়ে।
তত্ত্ব যায় সবাইকে বোঝাতে,
বোঝে না কেউ মঞ্জরীর দ্বিধা
কথায় কাটা তোমার সংঘাতে
রচিত হয় আমারও সংবিধান।
তরিবতের অধীনে অন্তরীপ —
তফাত করে বাগানে আর বীজে…
আমি তোমায় কথা-অবাক করি,
তুমি আমার নিন্দে করোনি যে!