ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মেডিসিনারি : পর্ব ৫

    শান্তনু নন্দী (February 12, 2025)
     

    ডাক্তারির ডায়েরি

    প্রথম যখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন বা এমডি-র পরীক্ষা দিই, তখন বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। রেজাল্ট বেরনোর পর দেখলাম, আমরা কয়েকজন অকৃতকার্য হয়েছি। আমার তখন যিনি গাইড, তিনি ছিলেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পরেই। তাঁর সঙ্গে গেলাম দেখা করতে। তিনি বললেন, ‘পরীক্ষা তো তুমি ভালই দিয়েছ। তোমার পাশ করারই কথা ছিল। কিন্তু আমিই ফেল করে গেলাম।’এ-কথার সম্পূর্ণ অর্থটা তখন অনুধাবন করিনি। পরে বুঝেছি বা জেনেছি, এই বিভাগে নানাবিধ রাজনীতি হত, এখনও হয়তো হয়। তারই শিকার হয়েছিলেন আমার সেই শিক্ষক। যখন বেরিয়ে আসি, তখন উনি আমায় ডেকে বলেছিলেন, ‘খুব শীঘ্রই আমি হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট হয়ে যাব। ফলে পরের বার তুমি যখন পরীক্ষা দেবে, তখন আমিই তোমার পরীক্ষক। কোনও একজনও যদি পাশ করে, সেটা হবে তুমি।’ যে আত্মবিশ্বাস সেদিন পেয়েছিলাম, তার তুলনা হয় না। সেই কারণেই এই ঘটনাটা আজও মনে আছে।

    মনে আছে আশ্চর্য ভালবাসার কথাও। ড. এস এন রায়, যাঁর কাছে আমি কাজ শিখেছি বলা চলে, এমডি পাশ করার পরে একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। উনি ছিলেন কার্ডিওলজিস্ট। এটা-সেটা বলার পর, এক সময়ে জানতে চাইলেন, কীভাবে আমি প্র্যাকটিস করার কথা ভাবছি ইত্যাদি। আমার কথা শুনে যে-উপদেশ তিনি আমায় দিয়েছিলেন সেদিন, তা আমি আজও মেনে চলার চেষ্টা করি বেদবাক্যের মতো। ওঁর প্রথম কথা ছিল, আমি যেন এমনভাবে চিকিৎসা করি, যাতে রোগীরা আমার নিজের হয়। যদি গাছতলাতে বসেও চিকিৎসা করি, তা-ও রোগীরা আমার কাছেই আসবে। দ্বিতীয় বলেছিলেন, অর্থের পিছনে ছুটো না, একদিন অর্থ তোমার পিছনে ছুটবে। তৃতীয় হচ্ছে, আমি যেন নিজেকে সবসময়ে আপডেটেড রাখি। উনি যে-মেশিনে ইসিজি করতেন, সেই মেশিনটা সেদিন আমায় দিয়ে দিয়েছিলেন। এই স্নেহ ভুলি কী করে! মেশিনটা আজ অচল, কিন্তু আমি রেখে দিয়েছি কাছে। ফেলিনি।

    আরও পড়ুন : উদ্বেগের পরিস্থিতির মধ্যে এক রোগীর তরুণী আত্মীয় বলে উঠলেন, ‘আরে! সিধু না!’ পড়ুন সিধু-র কলমে মেডিসিনারি-র চতুর্থ পর্ব…

    একজন ডাক্তারের নিষ্ঠা কী হতে পারে, তাও দেখেছি। আমি তখন ইইডিএফ-এ কর্মরত। এক শনিবারের সন্ধেবেলা, খুব খারাপ অবস্থায় একজন রোগী ভর্তি হলেন। পরীক্ষা করে দেখা হল, লিভারে বড়সড় ফোড়া। তক্ষুনি মিলিয়ে দিতে না পারলে জটিলতা বাড়বে। সমস্যা একটাই, কাউকেই ওই সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। যাকেই বলি, সে-ই ব্যস্ত। শেষে ভাগ্য করে পেয়ে গেলাম সার্জেন ডি পি ঘোষকে। হাসপাতাল থেকে ওঁর কাছে ফোন গেল প্রথমে। তারপর পরিচয় দেওয়াতে উনি রাজি হলেন। আমার সঙ্গে ওঁর তখন আলাপ নেই। যাই হোক, উনি আসাতে অপারেশন হল এবং সেই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেলেন। অনেক বছর পর আমি স্যরকে জিগ্যেস করেছিলাম, ‘শনিবার বিকেলে তো কেউ আসে না, আপনি এলেন কেন?’ উনি বলেছিলেন, ‘একজন সদ্য এমডি পাশ করা ছেলে যদি ওই ধরনের জটিল রোগীকে চিকিৎসা করার সাহস দেখাতে পারে, তাহলে অপারেশন করার সাহসও আমার দেখানো দরকার।’ শিক্ষণীয় কথা, সন্দেহ নেই।

    ১৯৮৮ কি ’৮৯ সাল। এমবিবিএস পাশ করেছি সদ্য। হাউসস্টাফ হিসেবে রামকৃষ্ণ মিশনের আইসিসিইউ-তে একদিন রাউন্ড দিচ্ছি, দেখি সত্যজিৎ রায় এসেছেন। ওঁর এক আত্মীয় সেখানে ভর্তি। কথা-টথা বলে উনি যখন ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, একদম কোণের দিকের বেড থেকে একজনের গলা শোনা গেল, ‘এই যে মানিক, এদিকে একটু শুনে যাও।’ আমরা অবাক। সবারই এক ভাবনা, রোগী নির্ঘাত ভুলভাল বকছে। সত্যজিৎবাবু কিন্তু দাঁড়িয়ে গেলেন। ওঁকে দেখলাম ওই রোগীর দিকে হেঁটে যেতে। কথাও বললেন। পরে অবশ্য জেনেছিলাম, ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের যা সম্পর্ক, তাতে উনি ভুল কিছুই বলেননি। ভুল ভেবেছিলাম আমরাই! সত্যজিৎবাবুর সঙ্গে সময় কাটানোটাই একটা অভিজ্ঞতা জীবনে। উনি নির্দিষ্ট একটা সময়ে আসতেন, এবং আমারই দায়িত্ব ছিল ওঁকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা। ঘণ্টাখানেক থাকতেন উনি। আমিও পাঠভবনের ছাত্র শুনে আমার সঙ্গে একটা অন্যরকমের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছিল। আজও মনে আছে, নানা বিষয়ে ওঁর অনন্ত প্রশ্ন। নতুন কিছু জানার জন্য কী পরিমাণ আগ্রহ একজনের থাকতে পারে, সেটা ওঁকে দেখে বুঝেছিলাম।

    ১৯৮৮ কি ’৮৯ সাল। এমবিবিএস পাশ করেছি সদ্য। হাউসস্টাফ হিসেবে রামকৃষ্ণ মিশনের আইসিসিইউ-তে একদিন রাউন্ড দিচ্ছি, দেখি সত্যজিৎ রায় এসেছেন। ওঁর এক আত্মীয় সেখানে ভর্তি। কথা-টথা বলে উনি যখন ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, একদম কোণের দিকের বেড থেকে একজনের গলা শোনা গেল, ‘এই যে মানিক, এদিকে একটু শুনে যাও।’
    আমরা অবাক।

    সত্যজিৎ রায়

    একবার এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমাদের কাছে ভর্তি প্রায় মাসখানেক ধরে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বের করা যাচ্ছে না। রামকৃষ্ণ মিশনের নিয়ম ছিল সারাদিনে রোগীরা কে কেমন থাকেন, তা নির্দিষ্ট একটা সময়ে রোগীর বাড়ির লোকদের জানানো। অনেক বড় ইউনিট ছিল যেহেতু, খুব ভিড় হত। সব হয়ে যাওয়ার পর, দেখতাম দু-জন মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। একজন বড়, অন্যজন খুবই ছোট। বাবা কীরকম আছে, জেনে তারা চলে যেত। কোনও সময়েই আমরা ভাল খবর দিতে পারতাম না। অনেক জটিলতা পার করে সেই ভদ্রলোককে সুস্থ করে তুলেছিলাম যদিও, কিন্তু সেটা বলার কথা নয়। বলার কথা যা, তা এই, অনেক বছর পরে আমার এক বন্ধু আমাকে জানায়, এক মহিলা আমার নাম করছিল তার কাছে। যে-নাম সে জানায়, আমি চিনতে পারি না। পরে জানতে পারি, ওই যে সেই ছোট মেয়েটা বাবার চিকিৎসার কারণে হাসপাতালের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকত, ওই মেয়েটির কথাই আমার বন্ধু আমায় বলছে। পৃথিবী যে গোল, সেদিন আরও একবার টের পেয়েছিলাম।

    আরও একটা গল্প এই প্রসঙ্গে বলি। আমি যখন শুরুর দিকে প্র্যাকটিস করছি, সেই সময়ে দক্ষিণ ভারতের এক দম্পতি আসতেন আমার কাছে। দেখতাম, ওঁরা যখনই দেখাতে আসতেন, সঙ্গে আসত ওঁদের মেয়ে। যাই হোক, কয়েক বছর পর ওঁরা বম্বে চলে যান। তারও পরের কিছু বছর যোগাযোগ ছিল। একটা সময়ে তা-ও ছিন্ন হয়ে যায়। অনেক বছর বাদে ওই দম্পতি একদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে জানান, ওঁদের মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে চায় কিন্তু লজ্জায় কাছে আসতে পারছে না। কারণ কী? জানা গেল আসল ঘটনা। ওই মেয়েটি কোন এক অজানা রহস্যে ছোটবেলায় আমায় আমির খান ভাবত। তাই এত লজ্জা! অবশেষে সে ভেতরে আসে, কথাও হয়। কিন্তু যে-আমির খান তার কল্পনায় ছিল, তাকে সে পায় না। মাথায় চুল কম, ভুঁড়ি হয়ে যাওয়া আমাকে দেখে সে যে কী পরিমাণে হতাশ হয়েছিল, ভাবলে খারাপই লাগে! সেদিন মনে হয়েছিল, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে আরেকটু নজর দেওয়া উচিত ছিল।

     
      পূর্ববর্তী লেখা
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook