ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নীলা-নীলাব্জ : পর্ব ২


    অনুপম রায় (May 11, 2024)
     

    পর্ব ১

    ইনভেস্টমেন্ট

    চাঁদনি থেকে এসপ্ল্যানেডের দিকে চলেছে মেট্রোটা। পরের স্টপেই নামতে হবে নীলাকে। দরদর করে ঘামছে। এই ভিড় থেকে বেরোতে পারলে বাঁচে। স্টেশনে নেমে ঊর্ধ্বশ্বাসে হাঁটতে থাকে। কলকাতার এই ধাক্কাধাক্কিতে এখন অবশ্য সম্পূর্ণ অভ্যস্ত নীলা। সেই স্কুল-কলেজ থেকেই তো চলছে। হঠাৎ কানে আসে, ‘আরে নীলা! হন্তদন্ত হয়ে চললে কোথায়?’

    ডান দিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নীলাব্জ। হাতে বাদামভাজার প্যাকেট। ‘ও দিদি, চলুন না!’ পিছন থেকে ছাতার গুঁতো। নীলা জনস্রোতটার পাশ কাটিয়ে নীলাব্জর দিকে এগোয়।

    নীলা : তুমি এখানে?

    নীলাব্জ : পর পর তিনটে মেট্রো ছাড়লাম। যা ভিড়।

    নীলা : তাহলে কি ট্যাক্সি নেবে?

    নীলাব্জ : না, না এই তো পরেরটা… বাদাম খাবে?

    নীলা (দুটো বাদাম তুলে নেয়) : বাহ্‌! এখনও গরম দেখছি।

    নীলাব্জ : তুমি কোত্থেকে আসছ? পুরো ঘেমে গেছ তো! চলো, ওই দিকটা বসি।

    নীলা : আরে বসার টাইম নেই। আমাকে এখুনি লেনিন সরণি যেতে হবে।  

    নীলাব্জ : চলো, তাহলে আমিও যাচ্ছি তোমার সঙ্গে।  

    নীলা : মানে? তোমার কাজ নেই?  

    নীলাব্জ : হ্যাঁ, আছে তো। একটু পরে যাব।   

    নীলা : কীসে কাজ করো বলো তো তুমি? এরকম রিল্যাক্সড একটা চাকরি আমার-ও চাই!  

    এতক্ষণে স্টেশন থেকে বেরোনোর ভিড়টা কমে গেছে। ওরা ধীরেসুস্থে হাঁটতে হাঁটতে ফুটপাতে হকারদের রাজ্যে এসে পড়ে।

    নীলাব্জ : আমার অনেক রকমের কাজ আছে। একটা ট্র্যাভেল এজেন্সি আছে, একটা আই টি-র চাকরি আছে, একটা ওষুধের হোলসেল…

    নীলা : আই টি-র চাকরি আছে তো এরকম ফ্যা ফ্যা করে রাস্তায় ঘুরে বেড়াও কী করে? অফিস নেই?

    নীলাব্জ : না, ওয়ার্ক ফ্রম হোম আর টাইমিংটাও রাতের দিকের। আমার ঠিক ম্যানেজ হয়ে যায়, তুমি অফিস যাওনি আজ?   

    নীলা : আরে আমার একটা বাজে ব্যাপার হয়েছে। গত মাসে মায়ের একটা অপারেশান ছিল। সাড়ে তিন লাখ টাকা বিল হয়েছিল। ইনস্যুরেন্স-এ ক্যাশলেস হওয়ার কথা ছিল কিন্তু শয়তানগুলো সারাদিন অপেক্ষা করিয়ে সন্ধেবেলা ডিক্লাইন করে দিল। ব্যাস, আমাকে তখন পুরোটা আমার অ্যাকাউন্ট থেকে দিতে হল। মা-কে তো বাড়ি নিয়ে যেতে হবে! তারপর থেকে চিঠি লিখে চলেছি যাতে ওটা রিইম্বার্স করে দেয়। দিচ্ছি-দেব করে দেরি করেই চলেছে। এদিকে আমি একটা ফ্ল্যাট বুক করেছি, তার ইএমআই শুরু হয়নি কিন্তু বিল্ডারকে কিছু ডাউন পেমেন্ট করতে হবে। কয়েকটা ইন্সটলমেন্ট আছে। এখন যাচ্ছি অনুরোধ করতে যাতে একটা মাস একটু টাইম পাওয়া যায়।

    নীলাব্জ : বাপ রে! ভাল ঝামেলায় পড়েছ দেখছি। আরও লোন-টোন আছে নাকি তোমার?

    নীলা : গাড়ির একটা ছিল কিন্তু এখন আর নেই। গাড়িটাই বেচে দিয়েছি।

    নীলাব্জ : সে কী!  

    নীলা : তেল, ড্রাইভার, ইনস্যুরেন্স, ইএমআই— সব মিলিয়ে প্রচুর খরচা। একটা ইনভেস্টমেন্ট…

    নীলাব্জ : গাড়ি কোনও দিন ইনভেস্টমেন্ট হতে পারে না। সময়ের সঙ্গে দাম তো পড়ে। সোনা তো নয় যে দাম বাড়বে!

    নীলা : কেনার সময়ে বুঝতে পারিনি। কোভিডের পরে সব কিছু এমন আকাশছোঁয়া দাম হয়ে গেছে…

    নীলাব্জ : তার মধ্যে আবার ফ্ল্যাট কিনে বসলে?

    নীলা : ওমা! নিজের একটা বাড়ি থাকবে না?

    নীলাব্জ : এখন কোথায় থাকো?   

    নীলা : নিজেদেরই বাড়ি কিন্তু সেখানে অনেক সমস্যা।   

    নীলাব্জ : আমি বলতে চাইছি যে তোমার এত অল্প বয়সে একটা বিশাল হাউসিং লোনের বোঝা কাঁধে নেওয়ার কী দরকার?

    নীলা : এই বয়সেই তো করে রাখা ভাল, তাই না? ক’দিন একটু টানাটানি যাবে এই যা। সব-ই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।

    নীলাব্জ : ভবিষ্যতে কী আছে কেউ তো জানিই না, তাই বলে আজকের দিনটা নষ্ট করব কেন?  

    নীলা : এসব কী বলছ?   

    নীলাব্জ : খুব তো হেলথ ইনস্যুরেন্স করেছিলে মায়ের, বছরে বছরে টাকা দিয়েছিলে, কী হল এখন?  

    নীলা : কেন, তোমার নেই? কোম্পানি থেকে দেয়নি?  

    নীলাব্জ : এই ইনস্যুরেন্স পুরোটাই একটা স্ক্যাম। গোটা দেশ জুড়ে চলছে। হাসপাতালগুলো যেই দেখে লোকটার ইনস্যুরেন্স আছে, এক লাখ খরচা হলে তিন লাখের বিল ধরায়। পারলে পুরো লিমিটটাই ফুরিয়ে দেয়। যাতে আমাদের আবার নিতে হয়। আর না হলে তোমার মতো কেস। প্রথমে ক্যাশলেসটাতে না বলবে। তারপর বিভিন্ন কারণ বের করবে যাতে না দিতে হয়। ওরা তো বসেই আছে অজুহাত নিয়ে।  

    নীলা : তুমি করাওনি?  

    নীলাব্জ : অফিস থেকে একটা আছে কিন্তু আমরা কিছু বন্ধু মিলে একটা সিস্টেম বানিয়েছি। কারোর কিছু হলে সবাই ক্রাউড ফান্ড করে টাকা তুলি। এই তো কিছুদিন আগে আমার বন্ধুর মায়ের ছানি কাটা হল, আমরা সবাই চাঁদা তুলে করিয়ে দিলাম।  

    নীলা : এটা কিন্তু রিস্কি।

    নীলাব্জ : তার চাইতে ওই ইনস্যুরেন্স কর্পোরেটকে বিশ্বাস করতে বেশি ইচ্ছে করে?    

    নীলা : হ্যাঁ করে। তোমার যতসব আজেবাজে কথা।

    নীলাব্জ : মাসে কত কাটিং হচ্ছে হিসেব রেখেছ? তোমার তো ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তা, কতটা বাঁচাতে পারছ মাইনের?

    নীলা : তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা নেই?  

    নীলাব্জ : জানি না। তবে জীবনে এই টাকাপয়সা, চাকরি এগুলো আসল নয়। ইনভেস্ট করলে মানুষে ইনভেস্ট করো নীলা। সম্পর্কে ইনভেস্ট করো।
    নীলা : হাসালে নীলাব্জ।

    নীলাব্জ : দেখো নীলা, জীবন ভীষণ ছোট। আজ আমরা দুজন এসপ্ল্যানেডের মোড়ে ভিড় ঠেলে হাঁটছি, কালকেই সবকিছু বদলে যেতে পারে। আর কী ভাবে বদলাবে আমরা কেউ জানি না। তাই অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে কী লাভ? আমি মুহূর্তে বিশ্বাস করি। আমার কাছে এই সময়টা অনেক বেশি জরুরি। ২০৪০-এ আমার কত টাকা থাকবে, কোন বাড়িতে থাকব, আমার সত্যি কিছু যায় আসে না। আমাদের জীবন প্ল্যান মেনে চলে না।  

    নীলা : একটা বেসিক প্ল্যান তো থাকবে রে বাবা! SIP চলে না তোমার কোনও? মিউচুয়াল ফান্ড বা কিছুতে? আজকের এক লাখ টাকা, আগামী দশ বছরে পাঁচ লাখ হয়ে যাক তুমি চাও না?   

    নীলাব্জ : আর দশ বছরই যদি আমার না থাকে? আর দু-বছর বাদে যদি মরে যাই? তাহলে আজকের এই কষ্টের কী মানে?   

    নীলা : আরে, এভাবে কেউ ভাবে নাকি?

    নীলাব্জ : আমি তো এভাবেই ভাবি। আচ্ছা, তুমি যে এই ফ্ল্যাট কিনছ, কত টাকা এমনি নষ্ট হচ্ছে হিসেব করেছ? লোন নিয়েছ কত টাকার?

    নীলা : তোমাকে বলব কেন?

    নীলাব্জ : আচ্ছা বলতে হবে না। ধরে নিচ্ছি চল্লিশ লাখ। যা ইন্টারেস্ট পড়বে ফেরত দেবে প্রায় সত্তর লাখ।   

    নীলা : কী বলছ যা তা!

    নীলাব্জ : বাড়ি গিয়ে অঙ্ক কষে দেখো, তার বেশিই হবে। তার ওপর ৫% GST আর ৮-৯% রেজিস্ট্রি, মিউটেশন। এগুলো তো একদম ফালতু খরচা। কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকার তোলা তুলছে আইনত ভাবে।  

    নীলা : আমাকে তো সব মিলিয়ে একটা সংখ্যা বলেছে। এটাই তো সিস্টেম!  

    নীলাব্জ : গাধার খাটনি খাটা, ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া— আমাদের সব টাকা বের করে দিতে চায় আমাদের এই সিস্টেম।   

    নীলা : তো কী করবে? বিপ্লব?   

    নীলাব্জ : জানি না। তবে জীবনে এই টাকাপয়সা, চাকরি এগুলো আসল নয়। ইনভেস্ট করলে মানুষে ইনভেস্ট করো নীলা। সম্পর্কে ইনভেস্ট করো।

    নীলা : হাসালে নীলাব্জ।

    নীলাব্জ : ওহ্‌, সরি!    

    নীলা : মানুষে আমিও ইনভেস্ট করেছিলাম, তুমি কিছুটা জানো।  

    নীলাব্জ (একটু লজ্জা পেয়ে মাথাটা নামায়) : তোমার বিল্ডারের অফিস বোধহয় এসে গেছে।

    নীলা : পরদিন দেখা হলে কথা হবে। আজকে চলি। ভাল থেকো।

    নীলাব্জ : তুমিও ভাল থেকো।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook