ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নীলা-নীলাব্জ : পর্ব ১


    অনুপম রায় (April 15, 2024)
     

    সোমবার সকাল

    সোমবার সকালে, বাঘাযতীন মোড়ে নীলাব্জর দেখা হয়ে যায় নীলার সঙ্গে। নীলাব্জ নীলার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হালকা টোকা দেয়, ‘কী ম্যাডাম, চেনা যায়?’

    নীলা ভীষণ মন দিয়ে মোবাইল ফোনে ক্যাব বুক করার চেষ্টা করছিল। একটু চমকে ওঠে, ‘আরে নীলাব্জ তুমি?’

    নীলাব্জ : এই তো মিষ্টি কিনে ফিরছিলাম। তুমি কি অফিস…

    নীলা : হ্যাঁ, সাড়ে দশটায় একটা মিটিং আছে। আর দেখো, একটার-পর-একটা ক্যাব ক্যান্সেল করে দিচ্ছে।

    নীলাব্জ : তোমার মিটিংটা কি খুব ক্রিটিকাল? মানে কাটানো যায়?

    নীলা : অসম্ভব! ওটার জন্যই তো সারা উইকেন্ড প্রেজেন্টেশন তৈরি করলাম!

    নীলাব্জ : সে ঠিক আছে, তৈরি তো হয়েই গিয়েছে, সেকেন্ড হাফে নাহয়…

    নীলা হাসে, ‘তুমি কি পাগল হয়ে গেছ না কি?’

    নীলাব্জ : আরে মিটিং পিছিয়ে দিলে কি লোকে পাগল হয়ে যায় না কি? চলো শীতের সকালের রোদে ওই বারান্দায় বসে একটু আড্ডা দিই! তারপর নাহয় বেলা করে অফিস চলে যেয়ো।

    নীলাব্জ রাস্তার ধারের তিনতলা বাড়ির গোল বারান্দাটা আঙুল দিয়ে দেখায়। 

    নীলা : তোমার বাড়ি?

    নীলাব্জ : না, না, আমার না। কিন্তু বারান্দাটা সুন্দর না?

    নীলা : আরে সুন্দর তাতে কী? অন্য লোকের তো!

    নীলাব্জ : আরে অন্য লোকের তো কী? কী চমৎকার রোদ আসছে, ওই বারান্দাতে, বসতে ইচ্ছে করে না?

    নীলা : ইচ্ছে করলেই হল না কি নীলাব্জ?

    নীলাব্জ : আমি এখানে দাঁড়িয়ে তোমার সঙ্গে তর্ক করতে পারছি না, এসো এদিকে।

    নীলার হাত ধরে ওকে ওই গোল বারান্দা-বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে।

    নীলা : আরে, আরে! কী করছ তুমি! আমার অফিস! আমার মিটিং!

    নীলাব্জ : তুমি এখানে একটু দাঁড়াও, আমি সেটিং করে আসি।

    নীলা কিছু বলার আগেই নীলাব্জ স্মার্ট ভাবে কাঠের দরজা ঠেলে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে যায়। কিছুক্ষণ বাদে নীলার ফোন বাজে। নীলা অচেনা নাম্বার দেখে ভাবে ক্যাব ড্রাইভার; কিন্তু ওপাশে নীলাব্জ।

    নীলাব্জ : উঠে এসো, এক ঘণ্টার একটা সেটিং করতে পেরেছি।

    নীলা বুঝতে পারে না কী উত্তর দেবে। হালকা মাথা নেড়ে ঢুকে পড়ে অচেনা বাড়িটায়। তিনতলায় উঠে দ্যাখে হলুদ শাড়ি পরা এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে। নীলাকে বারান্দায় যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দেন। একটা বেডরুম পেরিয়ে যেতে হল। সেই ঘরে একজন বৃদ্ধ লেপমুড়ি দিয়ে উলটোদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে। নীলা ঘরে ঢুকে একটু থতমত খেয়ে যায়। বারান্দা থেকে নীলাব্জ ডাকে, ‘এই যে এদিকে এসো, বসো।’

    নীলা : কী হচ্ছে এটা নীলাব্জ?

    নীলাব্জ : আরে বাবা, রিল্যাক্স করো তো। অফিসে মেসেজ করে বলে দাও একটু দেরি হচ্ছে। এই মোড়াটায় বসো।

    নীলা : আরে এভাবে রিল্যাক্স করা যায়?

    নীলাব্জ : কীভাবে রিল্যাক্স করা যায়?

    নীলা : কাজের মধ্যে, দিনের শুরুতে কেউ রিল্যাক্স করে?

    নীলাব্জ : কেউ-এর ব্যাপার নয় নীলা। তুমি করতে চাও কি না? কে মাথার দিব্যি দিয়েছে তোমাকে যে সব কাজ শেষ করে রিল্যাক্স করতে হবে? কোন ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে? রিল্যাক্স করা একটা স্টেট অফ মাইন্ড। তোমার হাতে সুইচ। এখন রিল্যাক্স মোড অন।

    ভদ্রমহিলা হঠাৎ দু-কাপ চা নিয়ে ওদের তর্কের মধ্যে প্রবেশ করেন।

    নীলাব্জ : ধন্যবাদ মাসিমা, আমরা ঠিক এক ঘণ্টা বাদে কেটে পড়ব।

    ভদ্রমহিলা মাথা নেড়ে ভেতরে চলে যান।

    নীলা : আমি এভাবে রিল্যাক্স করতে পারি না।

    নীলাব্জ চায়ে চুমুক দেয়, ‘ওয়াক, থার্ড ক্লাস চা বানিয়েছেন।’

    নীলা : একে তো কার একটা বারান্দা জবরদখল করে জাঁকিয়ে বসে ঠ্যাং দোলাচ্ছ, চা করে দিয়েছেন, সেটা মুখে দিয়ে আবার নিন্দে করছ!

    নীলাব্জ : আরে খারাপকে খারাপ বলতে পারব না? আর তুমি কেন রিল্যাক্স করতে পারছ না? তুমি কি সার্জেন যে এখুনি অপারেশন না করলে রুগি মরে যাবে?

    নীলা : আমি একটা অফিসে কাজ করি নীলাব্জ! আমি একটা টিমের পার্ট! আমি না করলে…

    নীলা : কাজের মধ্যে, দিনের শুরুতে কেউ রিল্যাক্স করে?

    নীলাব্জ : কেউ-এর ব্যাপার নয় নীলা। তুমি করতে চাও কি না? কে মাথার দিব্যি দিয়েছে তোমাকে যে সব কাজ শেষ করে রিল্যাক্স করতে হবে? কোন ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে? রিল্যাক্স করা একটা স্টেট অফ মাইন্ড। তোমার হাতে সুইচ। এখন রিল্যাক্স মোড অন।

    নীলাব্জ : অন্য কেউ করে দেবে, এই তো বেসিক ভয়? করে দিলে দেবে। সে এগিয়ে যাবে। তোমার মাইনে একটু কম বাড়বে। ওর বেশি বাড়বে। কী যায় আসে?

    নীলা : শুধু কি মাইনে? দায়িত্ব বলে কিছু নেই? এরকম করলে আমার চাকরিটাই তো থাকবে না।

    নীলাব্জ : একটা মিটিং মিস করলে চাকরি থাকবে না? তুমি তো অফিস ছুটি নাওনি নীলা। জাস্ট এক-দু-ঘণ্টা দেরি। তাও রোজ না, হঠাৎ একদিন। একদিন তুমি একটা মিটিং মিস করেছ। তাতে কী হয়? কর্পোরেটরা মিথ্যে লেখে প্রফিট-লসের খাতায়। কিচ্ছু ক্ষতি হয়নি কারোর। তোমার ব্রেন ওয়াশ করে রেখেছে ওরা। পাঁচদিন গাধার মতো খেটে শান্তি হয়নি তোমার, আবার উইকেন্ডেও প্রেজেন্টেশন বানিয়েছ। কেন নীলা? না করলে কী হত?  

    নীলা : অনেক কিছুই হত! তুমি বুঝবে না! তুমি উন্মাদ এবং তোমার পাল্লায় পড়ে আজ আমার নিজের ক্ষতি হচ্ছে।

    নীলাব্জ : দেখো তোমার এই ইঁদুরদৌড়ে আমি তোমার থেকে খালি এক-দু-ঘণ্টা চেয়ে নিয়েছি। সোমবার সকালের দু-ঘণ্টা মাত্র। তাতে খুব বেশি পিছিয়ে পড়ার মেয়ে তুমি নও। ঠিক আবার পর পর দু-রাত জেগে মেক-আপ করে দেবে। আর এখন রিল্যাক্স কেন করতে পারবে না? তুমি তো জেনেই গেছ যে আগামী এক ঘণ্টা, এখন হয়তো সেটা কমে আধঘণ্টা হয়ে গেছে, তুমি আমার সঙ্গে এই বারান্দাতে বসে কাটাবে। তাহলে কেন নষ্ট করছ এই সময়টা ঝগড়া করে, দুশ্চিন্তা করে?

    নীলা : আরে মাথার উপর কাজ নিয়ে রিল্যাক্স করা যায় না নীলাব্জ। কতবার বলব, রিল্যাক্স মানুষ কাজ না শেষ করে করতে পারে না।

    নীলাব্জ : তোমার কাজের শেষ আছে? কোনও কিছুর শেষ আছে? কবে কোন কাজ শেষ হবে, তারপর তুমি রিল্যাক্স করবে, এটা কী লজিক? তুমি যদি কাজ করতে-করতে মরে যাও? তাহলে রিল্যাক্স কে করবে?

    নীলা : আমি কাজ করতে জন্মেছি, রিল্যাক্স করতে নয় নীলাব্জ।

    নীলাব্জ : হা-হা-হা! তাহলে গতমাসে গোয়া কেন গেছিলে বন্ধুদের সঙ্গে? শনিবার রাতে সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে মাল খেয়ে চিৎকার করছিলে কেন যে এখানেই থেকে যাব! আর ফিরব না কলকাতায়! তখন তো বসের বাপ-মা তুলে গালিগালাজও করছিলে।

    নীলা : সেটা একটা আলাদা ব্যাপার। আমি সারা সপ্তাহ ফাটিয়ে কাজ করি যাতে ওই ছুটিটুকু নিতে পারি। একটু আনওয়াইন্ড করতে পারি। নতুন এনার্জি নিয়ে আবার কাজে ফিরতে পারি। আর আই ডিজার্ভ দ্যাট ভ্যাকেশন। আমি আমার কাজটা যথেষ্ট ভালবাসি আর ভাল পারি। হ্যাঁ, আমি প্রোমোশন চাই। হ্যাঁ, আমি আমার কলিগদের থেকে এগিয়ে থাকতে চাই। বসের সুনজরে থাকতে চাই। এতে অন্যায় কী আছে? অসুস্থ হলে আমার হেল্‌থ ইনস্যুরেন্স কার্ডটা লাগবে। আমার পিএফের টাকাটার প্রয়োজন। আমি আর্ন করছি। কেউ মুখ দেখে আমাকে দিচ্ছে না এটা নীলাব্জ। আমি যেমন দেব, তেমন পাব। তোমার চাকরি নেই? টাকার দরকার নেই?  

    নীলাব্জ : আলবাত আছে। কিন্তু নীলা সোমবার সকালের মাত্র এক ঘণ্টা চলে গেলেও সেগুলো তোমারই থাকবে! এইটুকু তুমি মানতে চাইছে না কেন?

    নীলা : না, আমার ভাল লাগছে না।

    নীলাব্জ : এই দ্যাখো, ওই রিকশা চেপে একটা মা আর একটা বাচ্চা মেয়ে চলেছে। বাচ্চা মেয়েটা কাঁদছে। কেন কাঁদছে বলো তো?

    নীলা : জানি না, জানতেও চাই না।

    নীলাব্জ : তাহলে ওই পুলিশটাকে দ্যাখো। আজ মনে হয় ওর জন্মদিন। মুখটা কেমন বাংলার পাঁচের মতো করে দাঁড়িয়ে। নিশ্চয়ই ভাবছে শালা জন্মদিনের দিনেও ডিউটি দিতে হচ্ছে।  

    নীলা : ভাল লাগছে না নীলাব্জ। আর ঠিক দশ মিনিট বাদে আমি ক্যাব বুক করব।

    নীলাব্জ : আচ্ছা, করো আমি বাধা দেব না। রোদে তেমন তেজ নেই, আকাশটাও ধোঁয়া। ঋত্বিক ঘটকের একটা সংলাপ ছিল না, এখানকার আকাশটাও ধোঁয়া। কোন সিনেমা যেন? 

    নীলা : সব কিছু নিয়ে আলোচনা করার একটা সময় থাকে নীলাব্জ।

    নীলাব্জ : সোমবার সকালে এসব নিয়ে কথা বলা যায় না, তাই তো?

    নীলা : হ্যাঁ তাই। আমি উঠলাম।

    নীলাব্জ : বেশ। ভাল থেকো, আশা করি খুব শিগগির আবার দেখা হবে।

    দুজনেই উঠে ভেতরে যায়।

    নীলাব্জ : মাসিমা, আজকে এলাম। অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

    দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।

    নীলা : হাতে তোমার মিষ্টির প্যাকেটটা দেখছি না, ফেলে এলে না কি?

    নীলাব্জ : না, না, ওটা তো পার্ট অফ দ্য ডিল।

    নীলা : মানে?

    নীলাব্জ : ওই যে বারান্দায় বসে আমরা এক ঘণ্টা তর্ক করলাম। ক্যাশ প্লাস ইন-কাইন্ড ডিল।

    নীলা : তাহলে, এইসব আজগুবি জিনিস করতেও তো ক্যাশ লাগে।

    নীলাব্জ : ওমা, ক্যাশ লাগে না কে বলল? এইসব করার জন্যই তো ক্যাশ লাগে।

    নীলা : তাহলে আমার চাকরি, আমার ব্যস্ততাকে এত ছোট করে দ্যাখো কেন?

    নীলাব্জ : ছোট করে দেখি না তো…

    নীলা : ওই যে 8632, এই আমার ক্যাব চলে এসেছে। আজকে আসি।

    নীলাব্জ : বাই নীলা।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook