ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • খাবারের ধরনধারণ মানুষ চেনায়


    সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় (February 11, 2023)
     

    শেফ বিকাশ খান্না— এই নামটা বললে প্রায় সবটাই বলা হয়ে যায়। আঁতেল থেকে আমজনতা, তাঁকে কোনও না কোনও ভাবে চেনে। বেশির ভাগ চেনে পৃথিবীবিখ্যাত শেফ হিসেবে। কারণ তাঁর ঝুলিতে ছ-ছ’টা মিশেলিন স্টার (খাদ্য-দুনিয়ায় যা অস্কার পাওয়ার সমান)। তা ছাড়া অনেকে চেনেন লেখক হিসেবে। অন্তত খান তিরিশেক বই লিখেছেন। তৈরি করেছেন প্রচুর তথ্যচিত্র। এবং সেই সব বই এবং তথ্যচিত্রের বিষয় কিন্তু কেবলমাত্র খাবারের জগতে আটকে নেই। কেবল ভারতীয় টেলিভিশনে নয়, বিদেশি অন্যান্য অনেক টেলিভিশন চ্যানেলে নিজের শো করেছেন, অতিথি হিসেবে, বিচারক হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন। না না, তালিকা এখানেই শেষ নয়। তৈরি করেছেন ভারতের প্রথম ফুড মিউজিয়াম, মণিপাল-এ। যে কলেজ থেকে তিনি পড়াশোনা করেছেন, সেখানে। এবং তিনি একজন সিনেমা পরিচালক। তাঁর পরিচালিত তথ্যচিত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত সব ফিল্ম-ফেস্টিভ্যালে। তাঁর পরিচালিত ‘দ্য লাস্ট কালার’ সিনেমাটি প্রথম দেখানো হয় সিনেমার মক্কা কান ফিল্মোৎসবে। এমনকী ছবিটি অস্কার দৌড়েও ছিল। তাঁর দ্বিতীয় পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে এখন। মুখ্য ভূমিকায় শাবানা আজমি। 

    এ তো গেল তাঁর কৃতিত্বের লিস্টি। কিন্তু তিনি নিজের কৃতিত্ব অর্জন করার পাশে পাশে বহুদিন ধরে করে চলেছেন সমাজসেবার কাজ। বিকাশ খান্না “সাউথ এশিয়ান কিডস ইনফিনিট ভিশন” ফাউন্ডেশন চালু করেন যাতে সুনামি ত্রাণ, উপসাগরীয় উপকূলের হারিকেন-এর মতো ভয়ানক বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যে মারাত্মক সমস্যাগুলি তৈরি হয়, সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া যায়।

    এপ্রিল-২০২০তে কোভিড চলাকালীন, তিনি “ফিড ইন্ডিয়া” উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। যে উদ্যোগে পেপসি, ইন্ডিয়া গেট, কোয়াকার ওটস, হায়াত রিজেন্সির মতো বড় সংস্থাগুলি সাহায্য করেছিল, যা  ভারতে অভাবীদের কাছে খাদ্য সরবরাহ করেছিল। 

    তিনি তৈরি করেছিলেন ভিশন অফ প্যালেট— এমন একটি কর্মশালা যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাদ, গন্ধ এবং সুগন্ধের অনুভূতি সম্পর্কে শিক্ষিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

    কেন হঠাৎ বিকাশ খান্নাকে নিয়ে এতগুলো কথা? কেবলই প্রশস্তি কেন হবে তাঁকে নিয়ে? 

    উচিত প্রশ্ন। উত্তরে বলা যেতে পারে, এই ভূমিকা খানিকটা ধরতাই বলা যেতে পারে। তাঁর দিগন্ত এতটাই বিস্তৃত যে তাঁর একটা পরিচয় দিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার ছাপা অন্য়ায় হবে। শেফ বিকাশ খান্নার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল কলকাতা লিটেরারি মিট ২০২৩-এ। তিনি এসেছিলেন তাঁর নতুন বই ‘ইমাজিনারি রেন’ নিয়ে আলোচনা করতে। এই বইটি সিনেমা হতে চলেছে। সিনেমাটির নাম ভূমিকায় শাবানা আজমি। সাক্ষাৎকারের উত্তরগুলো শুনে যদি মনে হয় আচমকা একজন শেফ-এর এমনধারা সব উত্তর কেন? তাই এত বড় গৌরচন্দ্রিকা। 

    খাবারই তো আমাদের জীবনের দর্শন তৈরি করে দেয়। নিজেদের শেকড় ছড়ানোর শুরু তো বাড়ির খাবারের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়। একজন মানুষ ছোটবেলায় চারবেলা, বিভিন্ন ঋতুতে কী খাচ্ছে এবং কী ভাবে খাচ্ছে, কোথায় খাচ্ছে মানে লঙ্গরখানায় না বিয়ে বাড়িতে, কার কার সঙ্গে খাচ্ছে, সবই একটা মানুষের ভাবনা-চিন্তায় প্রভাব ফেলে। খাবার হল সবচেয়ে শক্তিশালী একটা মাধ্যম যা কখনও কখনও অস্ত্রও হয়ে ওঠে। খাবারের ইতিহাসই নির্ধারণ করে দিতে পারে আমাদের বিবর্তন, সভ্য সমাজে আমাদের অবস্থান, আমাদের সংবেদনশীলতা, অন্যের প্রতি আমাদের আচরণ

     ‘ইমাজিনারি রেন’ বইটি নিয়ে আলোচনা সময় বার বার অ্যক্টিভিজম-এর কথা উঠে আসছিল, উঠে আসছিল সামাজিক গণ্ডির কথা, সামাজিক ন্যায়ের কথা। সেই সঙ্গে তাঁর সংবেদনশীলতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল আলোচনার প্রতিটি ধাপেই। তাই যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ভেতরে এত অ্য়াক্টিভিজম-এর জ্বলুনি নিয়ে কী করে প্লেটে এমন মোহময় সব শিল্প তৈরি করেন? না কি আপনি ব্যক্তিগত ব্যাপার আর পেশাদারী ব্যাপারের মধ্যে অনায়াস যাতায়াত করতে পারেন। বললেন, ‘অ্য়াক্টিভিজম তো আমার অন্তরের ব্যাপার। যে কোনও অন্যায় আমায় সব সময় উদ্বেল করে তোলে। আর তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া তো আমি জোর করে দেখাই না। আমার ভেতর থেকে আসে। আর খাবার বানানোটাও আমার ভেতর থেকে আসে। আমি বানিয়ে বানিয়ে না কিছু তৈরি করতে পারি, না বলতে পারি। তা হলে আমায় নিজেকেই অস্বীকার করতে হয়। আর কে বলতে পারে, কখন কোন ভাবনা আমার খাবার তৈরি করার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। সেটা যে সব সময় উগ্র হতে হবে এমন তো কোনও কথা নেই। ফলে আমার ভেতরে অন্য়ায়ের বিরুদ্ধে তীব্রতাও যেমন থাকে, তেমনিই খাবারে নতুনত্ব আনার তাগিদও থাকে, স্বাদ যাতে চরমে পৌঁছয় তার আকাঙ্ক্ষাও থাকে। আর এই সবগুলো মিলিয়েই আমি। 

    তবে হ্যাঁ, নিউইয়র্কে আমার ‘‘জুনুন’’-রেস্তোরাঁয় মানুষজন যখন মাসের পর মাস অপেক্ষা করে, কিংবা নিজের প্রাইভেট জেট নিয়ে এসে, বা বহু মাস নিজের মাইনে থেকে সেভ করে একটা টেবিল বুক করে খাবার খেতে আসে, তখন তাঁদের তুষ্ট করাটাই আমার প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আমি চেষ্টা করি, যাতে আমার ব্যক্তিগত কোনও কিছুই তাঁদের প্রার্থিত স্বাদ থেকে কোনও ভাবে বঞ্চিত না করে।’

    আসেল মানুষের নিজের মধ্যে তো অনেকগুলো প্রকোষ্ঠ থাকে, তার মধ্যে অনায়াস যাতায়াত থাকলেই বোধহয় এমন উচ্চতায় পৌঁছনো যায়, যেখানে বিভিন্ন সত্তাকে সচেতনভাবে আলাদা করতে হয় না। জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘খাদ্য-প্রবৃত্তি থেকে কি মানুষের জীবনের দর্শন বোঝা যায়?’ হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন, ‘আরে খাবারই তো আমাদের জীবনের দর্শন তৈরি করে দেয়। নিজেদের শেকড় ছড়ানোর শুরু তো বাড়ির খাবারের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়। একজন মানুষ ছোটবেলায় চারবেলা, বিভিন্ন ঋতুতে কী খাচ্ছে এবং কী ভাবে খাচ্ছে, কোথায় খাচ্ছে মানে লঙ্গরখানায় না বিয়ে বাড়িতে, কার কার সঙ্গে খাচ্ছে, সবই একটা মানুষের ভাবনা-চিন্তায় প্রভাব ফেলে। খাবার হল সবচেয়ে শক্তিশালী একটা মাধ্যম যা কখনও কখনও অস্ত্রও হয়ে ওঠে। খাবারের ইতিহাসই নির্ধারণ করে দিতে পারে আমাদের বিবর্তন, সভ্য সমাজে আমাদের অবস্থান, আমাদের সংবেদনশীলতা, অন্যের প্রতি আমাদের আচরণ। আর এই সবই তো আমাদের জীবনের দর্শন। জীবন-দর্শন বলে তো আলাদা করে কিছু হয় না। একটা মানুষের জীবনযাপনের পদ্ধতিতেই তাঁর জীবন-দর্শন প্রতিফলিত হয় আর সেখানে শিক্ষার থেকে খাবারের অবদান কিছু কম নয়।’   

    এমন সাবলীলভাবে দর্শনের কথা প্রকাশ করে গেলেন সেলিব্রেটি শেফ, একবারও মনে হল না তিনি লাইমলাইটে থাকার সময়ও অন্যরকম কিছু ভাবেন। প্রশ্ন করলাম, ‘এই যে অত বড় সাম্রজ্য, এ তো কেবল ফুড-আর্ট কিংবা ওয়েলবিয়িং-এ সীমাবদ্ধ নয়, কখনও মনে হয় না এই সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী খোঁজা দরকার?’ হোহো করে হেসে উঠলেন। বললেন, ‘এ বাবা! উত্তরাধিকারী খুঁজতে হবে, এমন বুড়ো হয়েছি না কি? ও সব কথা এখনও ভাবিনি। আমি সে সব ভাবার পক্ষে নেহাতই তরুণ।’ সত্যিই তাই তাঁর নিয়ত তারুণ্য়ই তাঁর সৃষ্টির জগতকে ক্রমশ বিস্তৃত করে চলেছে। এখনও সাম্রাজ্য বিস্তার শেষ হয়নি। এখনও বিকাশ খান্নার বহু ম্য়াজিক দেখা আমাদের বাকি রয়ে গিয়েছে।  

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook