ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • আভিজাত্য তাঁর চারিত্র্য: শতবর্ষে অরুন্ধতী দেবী


    সুপ্রিয় রায় (April 27, 2024)
     

    ছায়াছবির জগতে মেয়েদের মূল পরিচয় আজও অভিনেত্রী হিসেবেই। সিনেমার জগৎ যেহেতু মূলগত ভাবে সমাজের বাইরের কিছু নয়, তাই সমাজের বৃহত্তর অংশে, উপস্থিতির হিসেবে যে-প্রান্তিকতা, এখনও যে-কোনও সাধারণ সরকারি-বেসরকারি অফিসে ঢুকলেই যা চোখে পড়ে, সিনেমার জগতেও কিছুটা তাই। সাংবাদিকতায় মেয়েদের সংখ্যা ইদানীং একটু বৃদ্ধির দিকে, তাও তুলনামূলক বিচারে টেলিভিশনেই বেশি; বিশেষ করে উপস্থাপক হিসেবে। সিনেমার দুনিয়াতেও মেয়েদের ক্যামেরার সামনে যতটা ব্যবহার করা হয়, পিছনে তার চেয়ে অনেকখানি কম। 

    ছায়াছবির পরিচালক হিসেবে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলে আমবাঙালি চট করে যে-নামটি বলবেন, সেটি অপর্ণা সেনের। সাম্প্রতিক কালের হিসেবে সেটা ঠিকই। অভিনয় ও পরিচালনা— এই দু’দিকের কথা একসঙ্গে উঠে পড়লেও তাঁর নামই আসবে। কিন্তু অভিনেত্রী, পরিচালক, সংগীত পরিচালক, এমনকী প্রযোজক ও গায়িকা বললে একটি নামই থেকে যাবে বোর্ডে। সেটি অরুন্ধতী দেবীর।

    ভাল অভিনেতা আমরা কাকে বলব, ইদানীং সেসব নিয়ে চর্চা হয় অনেক গভীরে গিয়ে। দেখা হয় একজন অভিনেতা কত বিচিত্র চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য চরিত্রচিত্রণ করতে পারেন, বা, কতরকম দক্ষতার প্রকাশ তাঁর কাজে থাকে। মাত্র কয়েক দশক আগেও অতটা খুঁটিয়ে না দেখে, বরং দেখা হত একটা বিশেষ গল্পে বিশেষ চরিত্রে তাঁকে মানিয়েছে কি না। পরিচালকেরা অনেক সময়েই চেহারা ও স্বাভাবিক ম্যানারিজম চরিত্রের সঙ্গে মানালে এবং ক্যামেরার সামনে সাবলীল হলে অভিনেতা নির্বাচন করতেন। একই অভিনেতাকে পরমহংস, হ্যামলেট ও সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে মানানসই হয়ে উঠে দক্ষতার অগ্নিপরীক্ষা সচরাচর দিতে হত না। এই টাইপকাস্টিং-এর সুবিধে হচ্ছে এই যে, নানা চরিত্রে নানা মুখের সমাহার হওয়ার সুযোগ বাড়ত এবং কোনও বিশেষ ছবির বিশেষ চরিত্রে কারও অভিনয় এতটাই জীবনসদৃশ হত যে, সেটা চিরকালের মতো মনে বসে থাকত। পাশাপাশি দর্শকের কাছে একটা সুমধুর অম্লান স্মৃতি হয়ে থেকে যাওয়ার সুযোগও হত। নানা রঙে মানানসইদের পক্ষে সেটা পাওয়া শক্ত, কেননা তাদের নিজেরই করা একটি চরিত্র আরেকটির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, মায়ার দৃষ্টির সুযোগ সেখানে ফিকে হয়ে যায়। 

    অরুন্ধতী দেবী অসামান্য স্মরণযোগ্য কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছেন যা তাঁর স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করেছে আমাদের কাছে। এর অন্যতম ‘ভগিনী  নিবেদিতা’, যার জন্য তিনি সে-সময়ের অন্যতম সেরা ও লোভনীয় পুরস্কার বিএফজেএ পান। প্রায় কাছাকাছি সময়ে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, ‘জতুগৃহ’, ‘বিচারক’ ও ‘হারমোনিয়াম’ ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলিকে চিরস্মরণীয় করেছে। এর বাইরেও ‘মহাপ্রস্থানের পথে’, ‘পঞ্চতপা’ , ‘নবজন্ম’-র মতো এক সময়ের চূড়ান্ত জনপ্রিয় ছবিতে মূল ভূমিকায় তাঁর অভিনয় সমাদৃত হলেও, কালের নিয়মে সেগুলি একালের দর্শকের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে।  

    সব মিলিয়ে তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যা বেশ কমের দিকেই; এবং স্মরণীয় চরিত্রগুলি পর পর ভাবলেই বোঝা যায়, এক ধরনের স্মিত মিতবাক আভিজাত্য তাঁর অভিনীত বিশিষ্ট চরিত্রগুলির অভিজ্ঞান। এর থেকে এটাও আন্দাজ করা হয়তো ভুল হবে না যে, এই আভিজাত্য তাঁর চারিত্র্য; ছবিতে সেটিই ব্যবহৃত হয়েছে। খুব বড় মাপের পেশাদার অভিনেতাদের ক্ষেত্রে যেমন কখনওই অভিনেতা নিজে মানুষটি কেমন তা তাঁর অভিনীত চরিত্র দেখে আন্দাজ করা অসম্ভব ও বিপজ্জনক, অরুন্ধতী দেবীকে তাঁর করা চরিত্রগুলির মধ্যে আইডেন্টিফাই করা সহজ; বা, উলটোদিক থেকে বললে তাঁর পর্দাপার্সোনা ও ব্যক্তিবিভাকে আলাদা করা শক্ত এবং অপ্রয়োজনীয়। তাঁর বৈশিষ্ট্য যে-গাম্ভীর্যময় শিক্ষিত বাঙালি উচ্চমধ্যবিত্ত মনস্বিতা, সেটা এক ফেলে আসা সময়ের দর্পণ। ব্যক্তি-বাঙালির সবচেয়ে বড় ব্যাংকব্যালান্স যে-যুগে ছিল আত্মমর্যাদা, তিনি যেন সেই নাগরিকতার প্রতীক। এদিক থেকে দেখলে, এই ধরনের অভিনেতারা নিছক অভিনয়ের থেকে অনেক বেশি একটা ভূমিকা নিজেদের অজান্তেই নিয়ে থাকেন— সেটা একটা বিশেষ সময়ের প্রোটোটাইপকে সংরক্ষণের— যার ছাপ আজ থেকে তিন দশক আগেও সুপ্রচুর ছিল। 

    এই কারণেই ছবি বিশ্বাস আজও বিশেষ এক ধরনের অভিজাত পুরুষালি বাঙালিয়ানার শেষতম প্রতীক। সে তিনি ‘দাদাঠাকুর’, ‘সদানন্দের মেলা’, ‘ওরা  থাকে ওধারে’, ‘শেষ পর্যন্ত’ কিংবা ‘একদিন রাত্রে’ ছবিতে যতই বৈচিত্রময়তার পরিচয় দিন না কেন, সেগুলির জন্য তাঁকে আজও মনে রাখা হয় না; হয় তাঁর বিলুপ্তগোত্র বাঙালি রাজকীয়তার জন্য। অরুন্ধতীদেবীও তাই। উত্তমকুমারও যেমন ‘শেষ অঙ্ক’ ছবির খুনি, ‘যদুবংশ’ ছবির গনাদা, ‘স্ত্রী’ ছবির মাধব দত্ত, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবির ভূতনাথ চরিত্রে আশ্চর্য দক্ষতার পরিচয় দিলেও, তিনি আজও চিরকালীন তাঁর রোম্যান্টিক আবেদনে, তাঁর বাঙালিসুলভ হৃদয়বান শ্রদ্ধাপ্রবণ চরিত্রমালার জন্য—যা সিনেমার বা কাহিনির দাবি ছাপিয়ে একটা বিশেষ সময়ের, একটা বিশেষ সমাজের পুরুষের এক প্রোটোটাইপ, এক নড়েচড়ে বেড়ানো দলিল, যা আজ শুধু পর্দাতেই পাওয়া যায়। 

    আজ শতবর্ষীয়ান তিনি, বিস্মৃতির তলা থেকে বের করে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখার মতো আশ্চর্য বৈদগ্ধমণ্ডিত এক সময়পুত্তলিকা, একটা বিশেষ যুগের প্রতীক, যা আর কখনও ফিরে  আসবে না! 

    অরুন্ধতী দেবীর বাদবাকি পরিচিতিগুলির সঙ্গে এইখানেই তাঁর ব্যক্তিচরিত্রের মিল। যে-নতমূর্তি দার্ঢ্য তাঁর সহজাত, সে নিছক অভিনয়ে আটকে থাকার ও সেখানেই দৌড় শেষ করার নয়। ১৯৫২ সালে তাঁর প্রথম ছবি কার্তিক চটোপাধ্যায়ের ‘মহাপ্রস্থানের পথে’, যা হিন্দিতে ‘যাত্রিক’ নামেও জনপ্রিয়। তখনও কলকাতা শহর হিন্দি ছবি তৈরির এক উৎস-ইন্ডাস্ট্রি। পাঁচের দশকে ছবি করেছেন অনেক, যদিও কখনওই বছরে একটি বা খুব সামান্য ক্ষেত্রে দুটির বেশি নয়। এই সময়ে তাঁর কাজ দেবকীকুমার বসু এবং অসিত সেনের ছবিতেও। এই দশকেরই শেষের দিকে, ১৯৫৯ সালে তিনি তপন সিনহা পরিচালিত ‘বিচারক’ ছবির প্রযোজক, যেখানে তিনি উত্তমকুমারের বিপরীতে নায়িকাও বটে। নায়িকাজীবনের সূত্রপাতের সপ্তম বছরেই প্রযোজনা, এও ব্যতিক্রম বইকি!

    পাঁচের দশকের মাঝামাঝিই তাঁর ব্যক্তিজীবনে গভীর ভাঙাগড়া। প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিছুদিনের সংসার। প্রভাতবাবু তখন অতিবিখ্যাত এক চিত্র-পরিচালক এবং তাঁর জনপ্রিয় ছবির নায়িকা অরুন্ধতী দেবী। এইখানটিতে দাঁড়িয়ে একবার অতীতে তাকিয়ে দেখে নেওয়া যায় তাঁর পূর্ব জীবন, যেখানে বরিশালি পরিবারের দাপট ও মেধা নিয়ে তিনি হাজির হচ্ছেন শান্তিনিকেতনে। বিশ্বভারতীতে সংগীত বিভাগে তাঁর শিক্ষা শৈলজারঞ্জন মজুমদারের মতো কিংবদন্তীর কাছে। সুরুচিসম্পন্ন এই মানুষটি সিনেমার জগতে নিছক অভিনেত্রী হয়ে যে আটকে থাকবেন না, সেটাই যেন তাঁর জীবননাট্যে মানানসই। সাধারণত একটু ক্লাসিক চরিত্রে তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। ১৯৬৪ সালের ‘জতুগৃহ’ ছবিতেও বিবাহবিচ্ছিন্ন অথচ নাটকীয় অভিমানী নন, বরং প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে হঠাৎ রেলস্টেশনে অনেকটা সময় কাটাতেও স্বচ্ছন্দ, একসঙ্গে বসে খানিকটা যেন বন্ধুবেশেই ফিরে দেখা ফেলে-আসা জীবনকে, আবার সামান্য কিছু বিমর্ষ ও দ্বন্দ্বমুখর ক্ষণ কাটিয়ে ফের আত্মাভিমানের মোড়কে ফিরে আসা, এরকম চরিত্রে তাঁর মতো সহজে মানিয়ে নেওয়া আর কার পক্ষেই বা সম্ভব হত! ঘটনাচক্রে না কি সচেতন সিদ্ধান্তে জানি না, এইখানটিতে এসেই তাঁর নায়িকাজীবনের দাঁড়ি, যার দৈর্ঘ্য মাত্র বারোটি বছর। এর দু’বছর আগেই ’৬২-তে, ‘ভগিনী নিবেদিতা’ ছবিতে তাঁর আইকনিক চরিত্রচিত্রণ। তখন তাঁর আটত্রিশ বছর। ঠিক চল্লিশে এসে নায়িকার মেক-আপ তুলে ফেলবেন তিনি এবং এর ঠিক তিন বছর বাদে তুলে নেবেন পরিচালকের ভাবনাটুপি। প্রথম ছবি আশ্চর্য মায়াময়। বিমল করের ‘খড়কুটো’ অবলম্বনে ‘ছুটি’। নতুন নায়ক-নায়িকা নন্দিনী মালিয়া ও মৃণাল মুখোপাধ্যায়ের সমাহারে এই বিষণ্ণ-বিধুর নীচুপর্দার পরিমিত প্রকাশের ছবির চিত্রনাট্য ও সংগীত পরিচালনা তাঁরই। গানগুলিও পুরনো কালের গানকে নবজন্ম দিয়ে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে চিরকালীন। প্রকৃত প্রস্তাবে ‘আমার জীবন নদীর ওপারে’ বা ‘আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা’— এগুলিই বাংলার প্রথম রিমেক। 

    তপন সিনহার মতো জনপ্রিয় তথা আইকনিক চলচ্চিত্রকারের জীবনসঙ্গী তিনি, নিজের প্রতিভা ধামাচাপা দিয়ে পরিচালকের জীবনস্মৃতি লেখাই এদেশের বিচারে যাঁর কাছে প্রত্যাশিত, সেই তিনি নিজেই রুচিস্নিগ্ধ ছবি পরিচালনায় এলেন, এবং এলেন পেশাদার হিসেবেই। একবার নয়, বার বার। তপনবাবুর মতোই নানা রঙের সুভদ্র বিনোদন তাঁরও অভীষ্ট, তাই তাঁর দ্বিতীয় ছবি রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে, ‘মেঘ ও রৌদ্র’। এ-ছবিতে মূল চরিত্রে আবারও নবীন অভিনেতা স্বরূপ দত্ত, সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতে পরিচিত কণ্ঠের বাইরে গিয়ে তাঁর নির্বাচন মান্না দে। সে-ছবিতে মান্না দে-র খোলা গলায় গাওয়া ‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’ আজও জনপ্রিয় এবং অবশ্যই মান্না দে-র দীর্ঘ জীবনে গাওয়া শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসংগীত। ব্যতিক্রমী এই পরিচালক মেজাজ বদলে পরের ছবি করলেন তিন বছর বাদে, ‘পদিপিসীর বর্মিবাক্স’। স্বাদবদলের দিক থেকেও তপন সিনহার সঙ্গে তাঁর মেজাজের মিল লক্ষণীয়। তাঁরই ঘরানার সমর্থক, কিন্তু স্বতন্ত্র। এ এমন এক শিল্পদাম্পত্য, যা এদেশে খুবই বিরল। 

    একটা বড় সময়ফাঁকের পর, ‘জতুগৃহ’তে উত্তমকুমারের সঙ্গে অভিনয়ের বারো বছর পরে শেষ একবার ক্যামেরার সামনে এলেন তিনি, এক বিরল করুনমধুর প্রৌঢ়সুন্দর স্নিগ্ধ চরিত্রে, তপন সিনহার ‘হারমোনিয়াম’ ছবিতে। ওই ছবির ছোট্ট বালিকাটি যেভাবে বার্ধক্যসীমার কাছটিতে এসে বাবার কিনে দেওয়া হারিয়ে-ফেলা হারমোনিয়ামটি ফিরে পায়— সেই স্মৃতিমেদুর ক্ষণটিতে যেটুকু বন্ধুত্ব পায় অনিল চ্যাটার্জি অভিনীত সমমনস্ক মানুষটির কাছে— যেখানে এই হারমোনিয়ামটির হাতবদলের সূত্রে আমরা অনেকগুলি বিচ্ছিন্ন কিন্তু সংশ্লিষ্ট কাহিনি, জীবন ও ট্র্যাজেডি পাই— বাংলা ছবিতে তার জুড়ি বিরল। এই চরিত্রে তাঁকে ছাড়া কাউকে ভাবাও যায় না। পাশাপাশি এখানে এসেই পেয়ে যাই তাঁর গাওয়া ‘মন বলে আমি মনের কথা জানি না’ এবং ‘কেন বঞ্চিত হব চরণে’ গানদুটি। এই শেষ অভিনীত ছবিটিতে এসে যেন ওই বরিশালের গ্রামীণ মিষ্টতা, সম্পর্কের ও বন্ধনের ছায়া, যৌবনে শান্তিনিকেতনে পাওয়া সংগীতচর্চার মধুর শেষ রেশ এসে ছুঁয়ে যায় তাঁকে। 

    তপন সিনহার সঙ্গে তাঁর এখানেই আশ্চর্য মিল! বিষয়বৈচিত্রের জোরে দুজনেই আলাদাভাবে সম্পূর্ণ তারকাবিহীন সাহিত্যগন্ধী ছবি করেছেন, করেছেন নিজের-নিজের ছবির সংগীত পরিচালনাও। অথচ কখনও যৌথভাবে নয়, দুই সমমনস্ক পেশাদারের মতো, দুটি সমান্তরালে বয়ে যাওয়া নদীর মতো, যেন ‘জতুগৃহ’ ছবির নায়ক-নায়িকার মতোই, এক সম্মান ও ভালবাসাময় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নিয়ে।

    আটের দশকে বাংলায় হিন্দিঘেঁষা স্থূলরুচির ছবির চল শুরু। এরই মধ্যে করা তাঁর শেষ দুটি ছবি ‘দীপার প্রেম’ এবং ‘বকুল’। প্রথম ছবিটিতে তাঁকে পরিচিত সূক্ষ্মতায় পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়টি বিরলদৃষ্ট। তাঁর যুগচিহ্নিত আভিজাত্য তখন সেকেলে। সে-সময়ে আড়ালে যাওয়ার সময় তাঁর, খোদ রবিঠাকুরের তত্ত্বাবধানে ‘ডাকঘর’ ও ‘মায়ার খেলা’য় অভিনয় করা মানুষটির পক্ষে তো জন্মগত ও অধিগত কবচকুণ্ডল তাঁর আভিজাত্য, তাকে নামিয়ে রাখা সম্ভব নয়! আজ শতবর্ষীয়ান তিনি, বিস্মৃতির তলা থেকে বের করে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখার মতো আশ্চর্য বৈদগ্ধমণ্ডিত এক সময়পুত্তলিকা, একটা বিশেষ যুগের প্রতীক, যা আর কখনও ফিরে  আসবে না! 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook