ছবিতে আগুন

reference image of mathchbox

একটি জনপ্রিয় প্রবাদে শোনা যায়, ইংরেজরা নাকি এ-দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময়ে, দু’টি জিনিস দিয়ে গেছিলেন; একটি সিভিল সার্ভিস, অন্যটি ভারতীয় রেল। কিন্তু, সমকালের মানুষের কাছে ইংরেজদের থেকে প্রাপ্তির হিসাব ছিল অন্য।

উনিশ শতকের একজন নামজাদা দারোগা গিরিশচন্দ্র বসু, তাঁর সময়ে, যুগ পরিবর্তনের মূল্যায়নে নেমে, নিজের স্মৃতিকথায় বলেছিলেন, এমনই দু’টি ঘটনা হল, বাংলায় ছাপাই পঞ্জিকা আর দেশলাই কাঠির ব্যবহার। এই দু’টি উপাদান কীভাবে যেন বদলে দিল শহর-গ্রামের সীমানাভেদী দু’টি অবস্থানকে। বদলে যেতে থাকল মানুষের জীবনযাত্রার নানাদিক।

সময়কে যে নিজের হাতের মধ্যে ধরা যায়— তারই নজির, ছাপাই পঞ্জিকা, আর আগুনকেও যে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে লাগানো যায়, তার নজির দেশলাই। কিন্তু, দেশলাইয়ের ব্যবহারিক দিক থেকে একটু মুখ ফেরালেই দেখতে পাওয়া যায়, সে-দেশলাইয়ের বাক্স ও তার রকমারি অলঙ্কৃত সচিত্র অবস্থা। যাকে স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ বলেন, ‘কৌটোর বুকে বাণী’।

আরও পড়ুন: সমুদ্রকে শাসন করতে চাওয়ার ইচ্ছে থেকেই পুড়ে যায় রাম-সীতার সুখী সংসার!
লিখছেন জগন্নাথদেব মন্ডল

এই বাণী-রূপের সন্ধানে যাওয়ার আগে, ফিরে দেখা যাক— দেশলাইয়ের পুরাণ-কথা। মোটামুটি নানা মতভেদের মধ্যেই বলা যায়, ১৬৮০ নাগাদ হাউক উইৎস নামের একজন ভদ্রলোক প্রথম নরম কাঠকে চিড়ে, তাতে গন্ধকের প্রলেপ লাগিয়ে আধুনিক দেশলাইয়ের প্রাচীন রূপকে নির্মাণের চেষ্টা করেন। যদিও, এরপরে ১৮০৫ নাগাদ সেই রূপের থেকে একটু সরে এসে, রাসায়নিক পদ্ধতি নির্ভর দেশলাই বানাতে এগিয়ে আসেন জঁ চাসেল। তাঁর প্রচেষ্টা সাধুবাদ যোগ্য, তবু সেটি ছিল কিঞ্চিৎ বিপজ্জনক। কারণ, সেখানে একটি বোতলে থাকত, অ্যাসিডের দ্রবণে ভেজানো কিছু অ্যাসবেস্টের টুকরো, আর সে-সঙ্গে দেওয়া হত রাসায়ানিক মাখানো কাঠি; দু’টিকে এক করলেই জ্বলে উঠত আগুন। কিন্তু রাসায়নিক ও কাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মুশকিল, জন ওয়াকার সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করলেন ১৮২৬ নাগাদ। তাঁকেই আধুনিক দেশলাইয়ের জনক বলা হয়।

তাঁর নির্মিত দেশলাই, রাসায়ানিক আবৃত কাগজ এবং কাঠিতে মাখানো একটি বিষয়, যেখানে সেটি আরেকটি রাসায়ানিকের সঙ্গে ঘর্ষণের মধ্যে দিয়ে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যেত। ইংরেজিতে যার নাম হল ‘ফ্রিক্‌শন ম্যাচ’।

সভ্যতার মূল চাবিকাঠি, চাকা ও আগুনের আবিষ্কার। সেই আগুনকে মানুষ নিজের প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রিত ও পকেটস্থ করতে পারল— সভ্যতার চাকায় ভর করে এতখানি পথ পেরিয়ে এসে। সেটাতে আরও বিপ্লব এনে দিল ফসফরাসের আবিষ্কার। যাকে কেন্দ্র করেই এক্কেবারে পকেট-বন্ধু অক্ষতিকর দেশলাই নির্মাণ সম্ভব হয়ে উঠল ১৮৫৫ নাগাদ ইউরোপের উপনিবেশিক দেশগুলিতে। সেখানে যা হয়, জাহাজ বোঝাই হয়ে মাস দশের মধ্যেই তার খবর ছড়িয়ে পরে অন্য উপনিবেশেও।

১৮৫০ নাগাদ নানা পত্রপত্রিকা ঘাঁটলে অবাক হতে হয়, সে-সময়ে দেশলাই ও লুসিফার নির্মিত দেশলাইয়ের কলাকৌশল নিয়ে কত না কৌতূহল মানুষের। সেই কৌতূহল নিবৃত্তিতে কলম ধরছেন একেরপরে এক সম্পাদক, এই বিষয়ে লেখা বেরোচ্ছে ‘এডুকেশন গেজেট’, ‘সাপ্তাহিক বার্তাবহ’ কিংবা ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’-র মতো পত্রিকায়। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, ‘দেশলাইয়ের স্তব’ শিরোনামে একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্য।

জনমানসে এত কৌতূহল কেন, উত্তর মেলে এর অনেক আগেই, যে দেশলাই এসে পৌঁছেছে ভারতের বন্দরে-বন্দরে। জেমস ডগলাসের স্মৃতিকথা থেকে পাওয়া যায়, ১৮৩২ নাগাদ বোম্বাই শহরে তিনি দেশলাইয়ের আগমন দেখেছিলেন।

আর আমাদের ‘কল্লোলিনী কলিকেতা’য় পাওয়া সবচেয়ে পুরনো নজির হিসাবে মিলেছে ১৮৫২-র কথা। তাও আবার, কলিকাতা পুলিশের একটি রেকর্ড থেকে। সেখানে দেখা গেছে, একটি চোরাই দলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মালের মধ্যে পুলিশের লোকজন পেয়েছিলেন একটি দেশলাই বাক্স।

দেশলাই তো হল, তার ওই বাক্স কি কথা বলে? অবাক হলেও সত্যি, কথা শুধু নয়, বলে ইতিহাস। একটি নিতান্ত ক্ষুদ্র সামাজিক দলিল হিসাবে নিজেকে কালের কাছে হাজির করতে সদা সচেষ্ট সে নিজেই। একটি খুব পরিচিত উদাহরণ দিয়ে সেই ‘কৌটোর বুকের বাণী’র হদিশ করা যাবে।

‘জীবনস্মৃতি’তে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘স্বদেশে দিয়াশলাই প্রভৃতির কারখানা স্থাপন করা আমাদের সভার উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা ছিল।’ কিন্তু, সে-দেশলাই পরীক্ষামূলক তৈরির প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, ‘ভারত সন্তানদের উৎসাহের নিদর্শন বলিয়াই যে তাহা মূল্যবান তাহা নহে- আমাদের এক বাক্সে যে খরচ পড়িতে লাগিল তাহাতে একটি পল্লীর সম্বৎসরের চুলা ধরানো চলিতো।’

দেশলাই তৈরির একটি দিগদর্শনকারী উদ্ধৃতি এটি। রবীন্দ্রনাথ কথিত দেশলাই-নির্মাতা সমিতির প্রসঙ্গে না গেলেও স্বদেশি আন্দোলনকে সামনে রেখে, দেশীয় দেশলাই নির্মাণের দিকটি ভারতের দেশলাইয়ের ইতিহাসে একটি প্রথম ঘর্ষণে স্ফুলিঙ্গের মতো ঘটনা।

কমবেশি ১৯০৫-এর পর থেকেই অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের থেকে দেশবাসীর মধ্যে যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ দেখা দিয়েছিল, সে-আঁচেই প্রয়োজন হয়েছিল, তুচ্ছ বিষয়ের মধ্যেও দেশবাসীকে জাগ্রত করার ক্ষেত্র সন্ধান। এমনিতেই, বাঙালির রান্না করার পদ্ধতির নানা পরিবর্তন এসেছিল দেশলাইয়ের হাত ধরে। সূর্যাস্তের পরমুহূর্তগুলো হয়ে উঠেছিল অনেকটাই সুদীপ্ত। মুছে গিয়েছিল প্রায় দিন ও রাতের ব্যবধান। যেন বলা যায়, গিরীশবাবুর কথায়, বাঙালি মফস্সল থেকে শহর কলিকাতায় পেয়েছিল, ফিনিক্সের ডানার আলো— আগুন নিয়ন্ত্রণী সুযোগ এনে দিয়েছিল দেশলাই।

দেশলাইয়ের এহেন গ্রহণযোগ্যতা বুঝিয়ে দিল, শুধু নিত্যপ্রয়োজনেই নয়, বিজ্ঞাপনে, প্রচারেও এটি হয়ে উঠতে পারবে একটি হাতিয়ার। বাঙালি বেছে নিল এই সুযোগ। মোটামুটি ১৯১০ নাগাদ ভারতে দেশলাই উৎপাদন শুরু হয়েছিল, তাও অনেকটাই জাপানি অধিবাসীদের হাত ধরে।

কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে, তামিলনাড়ুতে মূল দেশলাই নির্মাণের কার্যালয়গুলি চালু হতে থাকে, যা আজও দেশের অন্যতম দেশলাই নির্মাতা গোষ্ঠীভুক্ত অঞ্চল। কিন্তু, স্বদেশি আন্দোলনের কালে বিশেষ করে সুইডেন ও জাপান থেকে নির্মাণ হয়ে ও পরে জাপানি কারিগরি সহায়তায় এ-দেশেই তৈরি হতে শুরু করে দেশলাই। তেমনই কিছু কোম্পানি ছিল হিন্দুস্থান ম্যাচ কোম্পানি, ঊষা ম্যাচ কোম্পানি, ক্রাউন ম্যাচ কোম্পানি, বীরভূম ম্যাচ কোম্পানি ইত্যাদি।

তখনকার দেশলাই হত পাতলা কাঠের, তার ওপরে, সামনের দিকে আঠা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হত লেবেল।  ছাপাখানার প্রথম যুগে তখন এই লেবেল ছাপা হত কাঠের ব্লকে ছাপ তুলে। ফলে এখানে রঙের আধিক্য তেমন থাকত না। সে-সময়ে ছবি ছাপা হত এক রঙা বা দুই রঙা চিত্রে। পরে সে-জায়গায় এল লিথোগ্রাফ। এতে সুবিধা হল বহুবর্ণ ব্যবহারের।

এই প্রথম পর্বে দেখা মেলে দেশলাইয়ের বাক্সে লেখা ‘স্বদেশী দিয়াশলাই কলিকাতায় প্রস্তুত’, ‘স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার’, ‘স্বাধীনতা সম সুখ নাই’, ‘নিরুৎসাহ হয়ো না বাঙালী’ কিংবা ‘বিদেশী পণ্য বর্জন ও স্বদেশী পণ্য গ্রহণ’।

বোঝাই যাচ্ছে, স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীকে বার্তা পৌঁছে দিতে এ-রকম দেশলাই বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। দেশলাইয়ের অন্তরে আসন পেতে এই-ই ছিল বিজ্ঞাপনের প্রথম সূত্রপাত। ক্রমে এ-ধরনের জনসচেতনতামূলক বার্তাবহ দেশলাইয়ের সংখ্যা এবং বিচিত্র ব্যবহার বাড়তে থাকে। বর্তমানের দেশলাইয়ের ছাপা সম্পূর্ণটাই অফসেট নির্ভর হয়ে উঠেছে। এ-জন্য, এতে এখন আলোকচিত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে, পূর্বের হাতে আঁকা ছবির পরিবর্তে। এমনই, হোমলাইটের বিশেষ একটি দেশলাই আছে। অন্ধকারে দৃশ্যমান করার জন্যে বিশেষ রাসায়ানিকের ব্যবহারও দেখা যায়।    

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বঙ্গীয় দিয়াশলাই কার্যালয়ের নির্মিত ‘মুক্তি সংগ্রাম’ নামের দেশলাইটির কথা। সে-সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রিয় হয়ে উঠেছিল এই দেশলাই। পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবিও পাওয়া যাচ্ছে এই দেশলাইতে। যেমন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বিবেকানন্দ, শিবাজী, চিত্তরঞ্জন দাস, বাল গঙ্গাধর তিলক, বল্লভভাই প্যাটেল প্রমুখ। অধুনা দুস্প্রাপ্য একটি দেশলাইতে পাওয়া যাচ্ছে, বন্দেমাতরম লেখার সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও। সে-সঙ্গে বাজারে আসছে পতাকা, চরকা, অশোক চক্র, ভারতমাতা, হিন্দ মাতা, স্বরাজলক্ষ্মী, জয়ন্তী, গঙ্গা, কালী, লক্ষ্মী- ইত্যাদি নানাবিধ নকশা। এগুলির অনেকগুলিই বিদেশে বানানো হত- যেমন সুইডেন বা জাপানে। তবে, ক্রমে দেশীয় নির্মাতারা স্বনির্ভর হয়ে উঠতে থাকে। তখনকার একটি দেশলাইতে একদিকে চরকা ও অন্যদিকে কামানের ছবি ছাপা হত। সঙ্গেই আছে নেতাজির ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’র ব্যবহার করা দুষ্প্রাপ্য দেশলাই- যার একদিকে নেতাজির ছবি, অন্যদিকে চরকা আঁকা পতাকা।

মজার বিষয়, সে-সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিষয়গুলিও কিন্তু এসেছে দেশলাই লেবেলে। যেমন, প্রথম ভারতীয় টকি ‘আলম-আরা’র ছবিও উঠে এসেছিল দেশলাইতে। তাছাড়া, পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয় হয়েছে নার্গিস অভিনীত ব্লকবাস্টার ছবি ‘মাদার ইন্ডিয়া’, মিঠুন চক্রবর্তীর ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, অমিতাভ-ধর্মেন্দ্র-সঞ্জীবকুমার-হেমা-আমজাদ অভিনীত ‘শোলে’, অমিতাভের ‘কুলি’, ঋষি কাপুর-ডিম্পলের ‘ববি’, দেব আনন্দের ‘গাইড’—তালিকাটি অনেক বড়।

চলচ্চিত্রের সঙ্গেই দেশলাই বিজ্ঞাপনে এসেছে চলচ্চিত্র তারকাদের ছবি। রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন, শ্রীদেবী, রাজকুমার, মিঠুন চক্রবর্তী, প্রভাস এমন আরও অনেকে। উত্তমকুমারের ছবি দেওয়া দেশলাইটি দুস্প্রাপ্য। হলিউডের যে-শিল্পীর ছবি এ-দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে তিনি চার্লি চ্যাপলিন। এসেছে ‘জুরাসিক পার্ক’এর দৃশ্যও। ছাপা হয়েছে জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের ছবিও। এদের মধ্যে আছেন সুনীল গাভাসকার, কপিল দেব, চেতন শর্মা, বিশ্বনাথ, সৌরভ গাঙ্গুলি, ধোনি প্রমুখ। উল্লেখ্য, ’৮৩-তে কপিল দেবের নেতৃত্ব ভারত বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই খেলোয়াড়দের ছবি দিয়ে দেশলাই প্রচারের চল হয়েছে বেশি। এছাড়া আইপিএল, টি২০, চ্যাম্পিয়ন, উইন, বিশ্বকাপ বা বিশ্বকাপের ট্রফির ছবিও ছাপা হয়েছে দেশলাইতে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বঙ্গীয় দিয়াশলাই কার্যালয়ের নির্মিত ‘মুক্তি সংগ্রাম’ নামের দেশলাইটির কথা। সে-সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রিয় হয়ে উঠেছিল এই দেশলাই। পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবিও পাওয়া যাচ্ছে এই দেশলাইতে। যেমন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বিবেকানন্দ, শিবাজী, চিত্তরঞ্জন দাস, বাল গঙ্গাধর তিলক, বল্লভভাই প্যাটেল প্রমুখ।

আমাদের এখানে উইমকোর টেক্কা, হর্স, শিপ, হোমলাইট খুব জনপ্রিয় ব্যান্ড। দক্ষিণ ভারত থেকে প্রতিনিয়ত নতুন-নতুন ছবিযুক্ত দেশলাই আসছে বাজারে। এ-সব ছবিতে প্রতিফলিত হয়ে চলেছে সাম্প্রতিক নানা বিষয়। যা সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়। তবে একটা কথা, মেট্রোপলিটন শহরের মানুষ কিন্তু হঠাৎ করে নিজস্ব ব্র্যান্ড ছাড়া অন্য কোন ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করেন না। ফলে, নতুন ‘মার্কা’গুলি রমরমিয়ে চলে মফস্‌সল বা গ্রামের দিকে।

সামাজিক সচেতনতার প্রসঙ্গ উঠলে, অনেকগুলি বিজ্ঞাপনের কথা বলতেই হয়। যেমন রঙ কোম্পানি বা কলকাতা পুলিশ বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজোর সময় দেশলাইতে লিখে দেন, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন’এর মতো বার্তা। কখনও দেখা যায়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভোটের সময় প্রার্থীকে ভোটদানের আবেদন জানিয়ে সেই বার্তাসহ দেশলাই বিতরণ করা হচ্ছে প্রার্থীর জন্য নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্র এলাকায়। দেশলাইতে লেখা থাকে ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’, ‘বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করুন’, ‘রক্তদান মহৎ দান’ ইত্যাদি নানাবিধ সামজিক বার্তা।  

স্বল্প পরিসরে দেশলাইতে বিজ্ঞাপনের কিছু কথা তুলে ধরা গেল। বাকি রয়ে গেল পাহাড় প্রমাণ। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘দেশলাই কাঠি’ লেখায় – ‘আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি/ এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না।’ কিন্তু ‘দেশলাই’ হিসাবে আমার জন্য বা আমাকে নিয়ে রয়েছে বিস্তৃত এক জগৎ। কেউ কি আমার খোঁজ রাখে!