সে-রাতের কথা তাদের দু’জনের পক্ষেই কোনওদিন ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আঠাশহাজার ফুট ওপরে এক ছোট্ট ক্যাম্পে প্রায় বিনিদ্র রজনী কেটেছে দু’জনের। ইতিপুর্বে কোনও মানুষের পক্ষে এত উচ্চতায় রাত কাটানো সম্ভব হয়নি। বহু পরিকল্পনা আর শারীরিক সক্ষমতার চূড়ান্তে উঠে এবার লক্ষ্যভেদের পালা। দু’জনেই সেই অসম্ভব ঠান্ডায় প্রায় জমে গেছে। অপেক্ষায় অপেক্ষায় একসময় আকাশে হালকা ধূসর আলো দেখা দেয়। ভোর হয়ে আসছে, তারই অপেক্ষায় যেন দু’জনে।
গুঁড়ি মেরে তাঁবুর বাইরে মুখ বের করে দেখা গেল, জগৎ-সংসারও যেন তাদের কীর্তির প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার অপেক্ষায় ধৈর্য ধরে বসে আছে। স্বপ্ন সফল হতে আর মাত্র হাজারখানেক ফুটের ব্যাপার। নিচের দিকে তাকালে পুবদিক বরাবর মাকালু, পশ্চিমে নুপ্তসে আর দক্ষিণে লোৎসে। তারও আরও অনেক নিচে সাউথ কল, আরও বেশ কিছু নিচে বিপজ্জনক খুম্বু হিমবাহ পেরিয়ে বেস ক্যাম্প। বহু দূরে প্রায় বিন্দুর মতো দেখা যাচ্ছে থ্যাংবোচে গুম্ফা।
একসময় দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু ধীরে ধীরে তাদের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। দিনটা ছিল ১৯৫৩ সালের ২৯ মে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় দিন। শেরপা তেনজিং নোরগে আর স্যর এডমন্ড হিলারির অসামান্য সাফল্য আর বন্ধুত্বের উদযাপনের দিন। এ যেন দুই হুজুরের গপ্পো।
আরও পড়ুন : একদিকে ওশো আশ্রমের ছমছমে অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে হিমালয়ের সৌন্দর্য!
লিখছেন তপশ্রী গুপ্ত…
সে বহুকাল আগের কথা। বাস আর কৃষিযোগ্য জমির সন্ধানে সুদূর তিব্বত থেকে মানুষ নেপালের উত্তর পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে সোলো কুম্ভু এলাকায় প্রথম বসতি স্থাপন করে। সোলো অঞ্চল দক্ষিণ দিক ঘেঁষে জঙ্গল, নদী আর অপেক্ষাকৃত উন্নত কৃষিযোগ্য জমি নিয়ে গঠিত। আর উত্তর পূর্বের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে গঠিত কুম্ভু অঞ্চল। যদিও এখন সবাই সোলো-কুম্ভু একই সঙ্গে উচ্চারণ করি। এখানকার অধিবাসীদের এককথায় ‘শেরপা’ বলে। ‘শেরপা’ শব্দের অর্থ, ‘প্রাচ্য থেকে আগত মানুষ’।


ও (ডানদিকে) তেনজিং ও এডমন্ড, অভিযান চলাকালে
এইরকম এক শেরপা পরিবারে ১৩ সন্তানের মধ্যে ১১তম সন্তান হিসেবে তেনজিং-এর জন্ম। যদিও তাঁর জন্ম সোলো কুম্ভুতে নয়, বরং আরও পুবে মাকালু পর্বতের পাদদেশে ঘাংলা গোম্ফার কাছে শেরপাদের অতি পবিত্র ভুমি ৎসা-চু (Tsa-chu)-তে, যার অর্থ উষ্ণ প্রস্রবণ। জন্মের পরই গোম্ফার পণ্ডিত লামাদের আশীর্বাদ ঝরে পরে তাঁর ওপরে। ভবিষ্যৎদ্রষ্টা লামারা তার মধ্যে অনন্ত সম্ভাবনা দেখতে পান এবং তেনজিং-এর মা কিঞ্জোমকে বলেন, তেনজিং গত জন্মে একজন অতি সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তি ছিলেন এবং আগামী তিন বছর যদি তেনজিং বেঁচে থাকেন, তবে একদিন পৃথিবী তাঁকে নিয়ে গর্ব করবে। তাই কিঞ্জোমকে তেনজিং-এর জন্য একটু বেশি যত্নের কথা বলে যান তাঁরা।
জন্মের সময় তেনজিং-এর নাম কিন্তু ছিল, নামগিয়াল ওয়াংদি। তিব্বতের রংবুক গোম্ফার এক অত্যন্ত পণ্ডিত লামার গণনা অনুযায়ী অতি সম্প্রতি মৃত্যু হওয়া এক বিশাল ধনবান ব্যাক্তির পুনর্জন্ম হলেন তেনজিং। তাঁর গণনা ও পুঁথি অনুযায়ী তিনি নামকরণ করেন— তেনজিং নোরকে বা নোরগে। ‘নোরগে’ শব্দের অর্থ— ধনবান বা সৌভাগ্যশালী। আর ‘তেনজিং’ শব্দের অর্থ, ধর্মানুগামী।
শেরপাদের ভাষার কোনও লিখিত রূপ বা আধুনিক ক্যালেন্ডার না থাকায় তেনজিং-এর জন্মের সঠিক দিন, সাল জানা যায় না। তবে তেনজিং-এর নিজস্ব হিসেব অনুযায়ী, সম্ভবত ১৯১৪ সালের মে মাসে তাঁর জন্ম হয়। কিন্তু কী এসে যায় জন্মদিনের সঠিক তারিখের। তাঁর মতো প্রকৃতির সন্তানের জন্য যে কোনও দিনই উৎসবের স্বাদ নিয়ে আসে। এই মে মাস বহু ক্ষেত্রেই তার জীবনে সেরা সময় বয়ে এনেছে।
ছেলেবেলায় গোম্ফার লামার হাতের গাট্টা খেয়ে খুবই অল্পদিনের মধ্যে পড়াশোনার ইতি ঘটে। তার পরে আর সে পথে পা রাখেননি তেনজিং। এ যেন রবি ঠাকুরের ছেলেবেলার স্কুলে যাওয়ার গল্পের পুনরাবৃত্তি। স্কুলে না গেলেও প্রকৃতিপাঠের থেকে তিনি বঞ্চিত হননি। সে-সময় বহু কিশোর-তরুণের স্বপ্ন ছিল, নেপাল পেরিয়ে দার্জিলিংয়ে জীবিকার পথ খুঁজে নেওয়া। জন্মগতভাবেই শেরপারা পর্বতারোহণে বিশেষ পারদর্শী এবং অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু। তাই মুলত কুলি বা মালবাহক হিসেবে বরাবরই চা বাগানে বা কোন দুরূহ অভিযানে তাদের উপস্থিতি একান্ত কাম্য।
সেই সময়ের একটা ঘটনা সোলো কুম্ভুর আপাত নিস্তরঙ্গ জীবনে এক আলোড়ন ফেলে দিল। ১৯২১ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিযাত্রী ড. কেল্লার নেতৃত্বে একটি দল এভারেস্ট অভিযানে যাবে। যদিও এই অভিযানের আসল উদ্দেশ্য ছিল, এভারেস্ট আরোহণের বদলে সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করা। চোমোলুংমা বা এভারেস্ট— যাকে জন্মাবধি ভয় আর শ্রদ্ধা নিয়ে দেখতেই বড় হয়েছে তেনজিং, সেই এভারেস্টে মানুষ পা রাখতে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই শেরপাদের নিয়েই কুলির দল গঠন হল আর অভিযান শেষে আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াতে লাগল এভারেস্ট নিয়ে নানা অজানা খবর। ১৯২২ ও ১৯২৪ সালে আরও দু’টি অভিযান সংগঠিত হল। ১৯২২ সালের অভিযানে বেশ কয়েকজন শেরপা দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান, কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯২৪-এর অভিযানে আরও বহু শেরপা অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৯২৪-এর অভিযানে জর্জ ম্যালোরি ও অ্যান্ড্রু আরউইন এভারেস্টের শিখর স্পর্শ করার কিছু আগে হঠাৎই রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যান। তাদের এই অন্তর্ধান পর্বত আরোহণের দুনিয়ায় আজও এক অমীমাংসিত রহস্য। এই আবহেই সদ্য-কিশোর তেনজিং এভারেস্টের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতে থাকেন আর সুযোগ খুঁজতে থাকেন কীভাবে অভিযানে অংশ নেবেন। গ্রামের পাহাড়ি পথে ইয়াক চালানো আর গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজের মাঝে দিন কাটতে থাকে।
সেই সময়ের একটা ঘটনা সোলো কুম্ভুর আপাত নিস্তরঙ্গ জীবনে এক আলোড়ন ফেলে দিল। ১৯২১ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিযাত্রী ড. কেল্লার নেতৃত্বে একটি দল এভারেস্ট অভিযানে যাবে। যদিও এই অভিযানের আসল উদ্দেশ্য ছিল, এভারেস্ট আরোহণের বদলে সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করা। চোমোলুংমা বা এভারেস্ট— যাকে জন্মাবধি ভয় আর শ্রদ্ধা নিয়ে দেখতেই বড় হয়েছে তেনজিং, সেই এভারেস্টে মানুষ পা রাখতে চলেছে।
বেশ কয়েকবার ঘর পালানোর পর পাকাপাকিভাবে ১৯৩২ সালে জীবিকার সন্ধানে আর অভিযানে সদস্য হওয়ার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে দার্জিলিংয়ের আলুবাড়িতে এসে বসবাস শুরু করেন। বহু ধরনের কাজের সঙ্গে গরু চড়ান, দার্জিলিংয়ে দুধ বিক্রি করা, জঙ্গল থেকে জ্বালানি কাঠ জোগাড় করা, এমনকী, সাধারণ কুলির কাজও করতে হয়। দার্জিলিং-এ বিত্তশালী মানুষদের বাড়ি, রাজভবন ইত্যাদি দেখে বিস্মিত হলেও মন পড়ে থাকে শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক দৃশ্যে।
১৯৩৫ সালে প্রথমবারের জন্য ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। বিখ্যাত ব্রিটিশ পর্বতারোহী এরিক শিপটনের নেতৃত্বে আবার এভারেস্ট অভিযান শুরু হয়। কুলির দল নির্বাচনের সময় ১৯৩৩ সালের মতোই পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার জন্য প্রাথমিক নির্বাচনে বাদ পড়েন। কিন্তু আরও দু’জন কুলির প্রয়োজন থাকায় বাকি কুড়ি জনের থেকে শিপটনের জহুরির চোখ তেনজিংকে নির্বাচন করতে ভুল করেনি। পারিশ্রমিক ১২ আনা প্রতিদিন আর তুষাররেখা পার করার পরে এক টাকা। কিন্তু অর্থই সব নয়, জীবনের প্রথম অভিযান, আর তাও কিনা এভারেস্ট দিয়ে শুরু। তখনও নেপাল বিদেশিদের কাছে অবরুদ্ধ, তাই সেই ঘুরপথে তিব্বতের রংবুক হিমবাহ হয়ে নর্থ কোলের রুটে যাত্রা। এই অভিযান তেনজিং-এর কাছে এক বিরাট সুযোগ। প্রথাগত পাহাড়ে চড়ার শিক্ষা না থাকায় প্রথমবারের মতো স্লিপিং ব্যাগ থেকে শুরু করে আইস এক্স-এর ব্যবহার, ওপরে চড়ার বিভিন্ন খুঁটিনাটি সম্পর্কে সম্যক ধারণার হাতে-কলমে শিক্ষালাভ হয়। সেই অভিযানে ২২ হাজার ফুট অবধি ওঠা সম্ভবপর হয়েছিল, কিন্তু তেনজিং, শেষ প্রান্ত অবধি মাল বহন করে সুস্থ শরীরে নেমে এসে সবার মন জয় করে নেন। সেই থেকে শুরু। এরপর একে একে বিভিন্ন অভিযাত্রীদের সঙ্গে ১৯৩৫-এ কাবরু, ১৯৩৬-এ এভারেস্ট, গাড়োয়াল হিমালয়ের বহু ছোট-বড় শৃঙ্গ, ১৯৩৮-এ আবার এভারেস্ট। শেষ অভিযানে ২৭,২০০ ফুট অবধি উঠতে সক্ষম হন, যা কিনা সেই সময়ে এক রেকর্ড। এর কিছুদিন পরেই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। সারা পৃথিবীর সভ্য মানুষ মরণযজ্ঞের এই খেলায় ইচ্ছা বা অনিচ্ছার বলি হতে শুরু করে। প্রায় ১৪ বছরের জন্য অভিযানের এক দীর্ঘ বিরতি নেমে আসে।
এরই মাঝে দুধকোশি নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তেনজিং-এর জীবনেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। সাংসারিক জীবনের সঙ্গে পেয়েছেন প্রথমবারের মতো সন্তানসুখ, আবার কয়েক বছরের মধ্যে সন্তান-শোক। ভাঙা-গড়ার মাঝে বিভিন্ন অভিযান তাঁর জীবন সমৃদ্ধ করেছে। নাঙ্গা পর্বত, নন্দা দেবী, কাং পিক থেক শুরু করে কাশ্মীর, গাড়োয়াল, নেপাল, এমনকী, তিব্বত ও সুদূর উত্তর পশ্চিম পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান। এদিকে দীর্ঘ সংগ্রামের পর ভারত অত্যাচারী ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে। আবার প্রায় একই সময়ে নেপালে সামরিক অভ্যুথানের ফলে দীর্ঘদিনের রাজতন্ত্রের অবসান। ফলে যে দেশ এতদিন বিদেশিদের কাছে অবরুদ্ধ ছিল, এখন তারাই, অল্প হলেও নেপালের মধ্যে দিয়ে বিদেশিদের অভিযানের অনুমতি দেওয়া শুরু করে দিল। একই সঙ্গে তিব্বত চিনের দখলে চলে আসায় তিব্বত বিদেশিদের কাছে একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে গেল। ফলে এভারেস্ট অভিযানের একমাত্র পথ রয়ে গেল নেপালের মধ্য দিয়ে।

এতদিন এভারেস্ট অভিযানের অর্থ ব্রিটিশ অভিযানকেই ধরে নেওয়া হত। ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডও এই অভিযানে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখানোর ফলে তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। অনেক টালবাহানার পর ১৯৫২ সালে সুইসদের এবং ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশদের অভিযানে অনুমতি দেওয়া হয়। ব্রিটিশদের সেই বছর এভারেস্টের বদলে চো ইউ পর্বতে অভিযান করার অনুমতি নেপাল সরকারে কাছ থেকে পাওয়া যায়।
এমন সময় দার্জিলিংয়ে সরাসরি সুইস অভিযান কমিটি থেকে একটি চিঠি, তেনজিং-এর কাছে তার অভিযানে অংশগ্রহণ এবং সেই সম্পর্কিত সম্মতি জানতে চেয়ে ও অপরটি হিমালয়ান ক্লাবের সম্পাদকের কাছে আসে। তেনজিং-এর সম্মতি অনুসারে তাঁকে এই প্রথম শেরপা সরদার নির্বাচন করা হয় এবং অভিযানের কুলি নির্বাচনের ভারও তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। সুইস দলনেতা ওয়েস ডুনান্ট, অন্য সদস্য রেনে ডিটার্ট ও ল্যাম্বার্ট তেনজিং-এর পূর্ব-পরিচিত এবং তাদের যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ফলে এই অভিযান তেনজিং-এর কাছে একঝলক টাটকা বাতাসের মতোই। তার সঙ্গে ছিল বহুদিন বাদে ফেলে আসা ছেলেবেলার গ্রামের পথ ধরে চলা আর পরিবারের সবার সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার সুযোগ।
বহু প্রতিকূলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও এই অভিযান ধীরে ধীরে তাদের লক্ষ্যের প্রতি অগ্রসর হতে থাকে। একেবারে প্রাথমিক পর্বে তেনজিং-এর দায়িত্ব ছিল শুধুই শেরপা সরদার হিসেবে কুলিদের পরিচালনা করা। কিন্তু একসময় তেনজিং-এর অস্বাভাবিক শারীরিক সক্ষমতা তাকে অন্যদের থেকে একেবারে আলাদা করে দেয়। যত ওপরে ওঠা যায়, ততই তার পারদর্শিতা প্রকাশ পেতে থাকে। একসময় তেনজিংকে কুলি সরদারের সঙ্গে প্রথমবারের মতো মূল আরোহণকারী দলের সদস্য হিসেবে নির্বাচন করা হয়। সেবারে তেনজিং ও ল্যাম্বার্ট জেনেভা স্পার পেরিয়ে সাউথ কোলে প্রায় ২৭,৫০০ ফুটে পৌঁছে যান, যা এযাবৎকালে এক রেকর্ড উচ্চতা।
এদিকে রসদের ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিল। ওই উচ্চতায় পৌঁছেও ঠিক হল যে, সামিটের জন্য আরও উচ্চতায় একটা ছোট করে হলেও সামিট ক্যাম্প করতে হবে। সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে, ওই ক্যাম্পে তেনজিং ও ল্যাম্বার্ট রাত কাটাবেন। বাকি দু’জন অভিযাত্রী, অর্থাৎ অবার্ট এবং ফ্লোরি স্থান সংকুলানের জন্য নিচে নেমে যাবেন। আগামিকাল আবহাওয়া ঠিক থাকলে ল্যাম্বার্ট ও তেনজিং সামিটের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেই ছোট্ট তাঁবুতে না ছিল স্টোভ, না ছিল স্লিপিং ব্যাগ। রাতের খাবার বলতে অল্প একটু চিজ, মোমবাতির আগুনে গলিয়ে খেয়ে নেওয়া হল। স্লিপিং ব্যাগ না থাকায় ওইরকম অমানুষিক ঠান্ডায় ছোট্ট তাঁবুর মধ্যে একে-অপরকে ঘষে আর চাপড় মেরে শরীর গরম করলেন আর রক্ত সঞ্চালন যাতে বাধা না পায়— তার চেষ্টা করে গেলেন। সারারাত ঘুমের কোনও সুযোগই ছিল না।
আলো ফুটতে তাঁবুর বাইরে দেখা গেল, হাওয়ার সেরকম তেজ না থাকলেও চারিদিক মেঘাচ্ছন্ন। হাত-পা ক্রমশ অবশ হতে শুরু করে দিয়েছে। বহু কষ্টে জুতোয় ক্র্যাম্পন লাগিয়ে আবার চড়াই ভাঙা শুরু হল। খুব ধীরে হলেও প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁরা লম্বালম্বি ৬৫০ ফুট অতিক্রম করে ফেললেন। এখন সামনে শুধু ৫০০ ফুট দূরে সাউথ সামিট দেখা যাচ্ছে।
এমন সময় আবহাওয়া আরও খারাপ হতে শুরু করে। একেই অত্যধিক পরিশ্রমে শরীর অত্যন্ত ক্লান্ত, আর তার সঙ্গে এই আবহাওয়ার প্রতিকূলতা তাদের দু’জনকেই একদম স্তব্ধ করে দিল। একটা সময় তেনজিং-এর মনে হতে লাগল, তাঁর মস্তিষ্ক কোনও কাজ করছে না। কোনও কিছু চিন্তা করাও অমানুষিক পরিশ্রম বলে মনে হল। একসময় প্রকৃত পর্বতারোহীর মতো তাঁরা দু’জনেই স্থির করলেন, আর অগ্রসর নয় বরং সাবধানে ফিরে যাওয়াই শ্রেয়। সেই সময় তাঁরা প্রায় ২৮,২৫০ ফুটের কাছাকাছি ছিলেন।
এভাবেই ল্যাম্বার্ট ও তেনজিং-এর অসাধারণ সাহসিকতার অভিযান অসফল হলেও তাঁদের বন্ধুত্ব অমরত্ব লাভ করল। তেনজিং চিরকালই বলে এসেছেন, তাঁর এভারেস্ট অভিযানে সবচেয়ে প্রিয় দল, ১৯৫২-র সুইস দল।
প্রাক বরষার অভিযান ব্যর্থ হলেও আবার নতুন উদ্যমে শরৎকালে অভিযানের আয়োজন হল। কিন্তু সেবারও একের পর এক দুর্ঘটনা আর খারাপ আবহাওয়া অভিযানের সাফল্যে বাধা হয়ে নেমে এল। সাউথ কোল অবধি পৌঁছেও ল্যাম্বার্ট ও তেনজিং অভিযান স্থগিত করে নেমে এলেন। সে-বারের মতো সুইসদের অভিযানের সেখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে গেল।
এদিকে এইসব ঘটনা ব্রিটিশ অভিযানের কমিটিকে সাংঘাতিক চিন্তায় ফেলে দিল। তাদের সামনে একটাই পথ খোলা রইল, তা হল ১৯৫৩ সালের অভিযানের পূর্ণ সাফল্য। এটা সবাই বুঝতে পারছিলেন যে, এভারেস্ট জয় আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। ইতিমধ্যে আগামী বছর ফরাসিদের জন্য অনুমোদন বরাদ্দ হওয়ায় ব্রিটিশদের জন্য ১৯৫৩-ই শেষ সুযোগ ছিল।
এবারে কমিটি সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে নেতৃত্বের ভার এরিক শিপটনের বদলে সামরিক বাহিনীর জন হান্টের ওপর ন্যস্ত করেন। এবারেই প্রথমবারের মতো তেনজিং একদম প্রথম থেকেই দলের মূল আরোহণকারী হিসেবে বিবেচিত হন। একই বছরে পরপর দুটো এভারেস্ট অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার ফলে তেনজিং-এর শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সে-সময় তিনি প্রায় ১৬ পাউন্ড ওজন হারান। আবার তাঁর স্ত্রী আং লামুও চাইছিলেন না যে, তেনজিং আবার অভিযানে যান। ফলে, তেনজিং একদম প্রথমে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হলেও তাঁর খুব কাছের বন্ধু ও পরামর্শদাতা রবীন্দ্রনাথ মিত্রর, যিনি দার্জিলিং-এর একটি প্রেসের মালিক, পরামর্শ মেনে আশ্বস্ত হন। রবিবাবু তাকে বলেন যে, অভিযান চলাকালীন যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তবে তিনি চাঁদা সংগ্রহ করে তেনজিং-এর পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। এরপর তেনজিং সব দ্বিধা ত্যাগ করে রবীন্দ্রনাথ মিত্রর দেওয়া ভারতীয় তেরঙ্গা পতাকা আর ছোট মেয়ে নিমার দেওয়া লাল-নীল পেনসিল নিয়ে অভিযানে যোগ দিলেন।
অভিযান শুরুর দিকে নানারকম বিতর্ক, ঝামেলা এড়িয়ে অভিযান শুরু হল। বিগত অভিযানগুলোর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারে একদম প্রথম থেকেই, অভিযাত্রীদের পোশাক, খাবার, স্বাস্থ্যবিধি, উচ্চতাজনিত অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয়ে অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়েছিল। বেস ক্যাম্প থেকেই মূল আরোহণকারী দলকে চাঙ্গা রাখার জন্য নানাবিধ প্রচেষ্টা দেখা গেল। একদম প্রথমে কিন্তু হিলারি ও তেনজিংকে একটা জুটি হিসেবে ভাবা হয়নি। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা গেল তাঁদের মধ্যে এক সুন্দর বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে একসময় তারা দু’জনে একসঙ্গে অনুশীলন থেকে শুরু করে মাল বহন করার মাধ্যমে আরও দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করেন। দলনেতা জন হান্টের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক করা হল যে, চূড়ান্ত আরোহণের জন্য প্রথম জুটি বুরদিলন ও ইভান্স সাউথ কোল থেকে ক্লোজড সার্কিট অক্সিজেন নিয়ে শীর্ষের দিকে এগবেন, এবং তাঁদের ফলাফলের অপেক্ষায় না থেকে হিলারি ও তেনজিং পরের দিন ওপেন সার্কিট অক্সিজেন নিয়ে শীর্ষে আরোহণ করার জন্য নয় নম্বর ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হবেন। নয় নম্বর ক্যাম্পে রাত্রি যাপন করে পরের দিন খুব ভোরে সামিটের উদ্দেশে রওনা হয়ে, ভাগ্য ভাল থাকলে সামিট করে একেবারে সাউথ কোলে নেমে আসবেন।
২৬ মে বহু প্রতিকূলতা কাটিয়ে ইভান্স ও বুরদিলন বেলা একটার সময় ২৮,৭৫০ ফুট উচ্চতার সাউথ সামিটে পৌঁছে গেলেন। এখানে পৌঁছে দেখা গেল, তাদের অক্সিজেনের রসদ কম। আর তারা দু’জনেই অসম্ভব ক্লান্ত হয়ে পরেছিলেন। ফলে, সেখান থেকে তাঁরা আর অগ্রসর না হয়ে সাউথ কোলের ক্যাম্পের দিকে নামতে শুরু করেন। চূড়ান্ত ক্লান্ত অবস্থায় তাঁরা সাউথ কোলে ফিরে এলেন।
এদিকে, ২৮ মে দ্বিতীয় দল, অর্থাৎ সহকারী হিসেবে লোয়ে এবং গ্রেগরি সঙ্গে আং নিমা শেরপাকে নিয়ে সকালবেলায় বেরিয়ে পড়লেন। তার কিছু পরে হিলারি ও তেনজিং তাঁদের পিছনে অগ্রসর হলেন। বেলা আড়াইটে নাগাদ ২৭,৯০০ ফুটের উচ্চতায় খুবই সংকীর্ণ এক জায়গায় সব মালপত্র রেখে তেনজিং ও হিলারি বাদে সবাই নেমে এলেন। তাঁরা দু’জন মিলে রাত কাটানোর জন্য কোনওরকমে আইস এক্স দিয়ে চারপাশ খুঁড়ে দুই স্তরের তাঁবু বানালেন। সারাদিনের পরিশ্রমে তাঁরাও প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। প্রচুর গরম লেমন জুস, সার্ডিন, বিস্কুট ইত্যাদি খেয়ে একটু শোওয়ার ব্যাবস্থা করলেন। অক্সিজেন বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাত ন’টা থেকে ১১টা এবং ১টা থেকে তিনটে অক্সিজেন ব্যবহার করলেন। বাকি সময় অক্সিজেন ছাড়াই জেগে কাটালেন। ইতিপূর্বে এত উচ্চতায় কোনও মানুষ রাত কাটাননি। সকালের আলো ফোটার পরে প্রায় সাড়ে ছ’টা নাগাদ দু’জনে তাঁবু থেকে বেরিয়ে ওপরের দিকে অগ্রসর হলেন। একসময় তাঁরা ইভান্স ও বুরদিলনের ফেলে আসা অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখতে পেলেন এবং এও দেখলেন যে, সেই সিলিন্ডার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভর্তি, যেটা তাঁদের বাড়তি মনোবল জুগিয়েছিল।
সকাল ন’টার সময় তাঁরা দু’জনে সাউথ সামিট অতিক্রম করলেন। এখন আবহাওয়া অনেক অনুকূল। এভারেস্টের পথে বিখ্যাত কার্নিশ অতিক্রম করে এবার মুখোমুখি হলেন প্রায় ৪০ ফুট উঁচু সম্পূর্ণ খাড়াই এক পাথরের দেওয়ালের সামনে। এটাকে অতিক্রম করা দুঃসাধ্য মনে হতে লাগল। একসময় হিলারি এই পাথরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক জমাট বাঁধা বরফের কার্নিশের মধ্যে একটা সরু ফাঁক দেখতে পেলেন। আইস চিমনি যেভাবে আরোহণ করা হয়, সেইভাবে হিলারি তেনজিং-এর সহায়তায় অনেকক্ষণের প্রচেষ্টায় ওপরে উঠতে সক্ষম হলেন। তার দেখানো পথ দিয়ে এবার তেনজিং উঠে এলেন। এই জায়গাটিরই নাম পরবর্তীকালে হিলারি স্টেপ। তাঁরা দু’জনেই এই আরোহণে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার চলা শুরু হল। এবার কিন্তু আর সেই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি পড়তে হল না। সাবধানী অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে একের পর এক ছোট ছোট ঢিবি পার হতে হতে হঠাৎ তাঁরা আবিষ্কার করলেন, সামনে আর কোনও ঢিবি বা উঁচু কিছু নেই, বরং ধীরে ধীরে পাহাড়ের ঢাল তিব্বত মালভূমির দিকে নেমে যাচ্ছে।
২৯ মে সকাল সাড়ে এগারোটায় এডমণ্ড হিলারী ও তেনজিং নোরগে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের শিখর স্পর্শ করেন। একে অপরকে দু’হাতে জড়িয়ে, পিঠ চাপড়ে অভিবাদন জানিয়ে তেনজিং ওইখানেই ছোট গর্ত খুঁড়ে মেয়ের দেওয়া লাল-নীল পেনসিল, কিছু খাবার, কয়েকটা ছোট পতাকা আর হিলারিকে দেওয়া জন হান্টের ছোট্ট ক্রস পুঁতে দিলেন। হিলারি বেশ কিছু ছবি তুললেন, এমনকী, তেনজিং-এর পর্বতশীর্ষের আইকনিক ছবিটিও হিলারির তোলা। এতদিনের স্বপ্ন সফল হওয়ার পরে অস্ফুট স্বরে তেনজিং তাঁর স্বপ্নের এভারেস্টকে জানালেন অন্তরের কৃতজ্ঞতা— ‘Thuji chey, Chomolungma’— অর্থাৎ, আমি কৃতজ্ঞ।

এবার নামার পালা। নামার সময় প্রায় সবকিছুই ঠিকঠাক চলতে লাগল। একদম শেষ পর্বে প্রচণ্ড হাওয়ার দাপট কিছুটা বিব্রত করলেও তারা ভালভাবেই সাউথ কোলে নেমে এলেন। দূর থেকে দেখেই বোঝা গেল, তাঁরা সফল হয়েছেন। জর্জ লোয়ের হাতের গরম স্যুপ খেয়ে আরও নিচে চার নম্বর ক্যাম্পে নেমে আসা গেল। সেখানে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। সবাই সবাইকে আলিঙ্গন করছে, কেউ কেঁদে, কেউ বা হেসে করমর্দন আর ফোটো তোলার ধুম পড়ে গেল।
রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়া তেনজিংকে নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে রাজনীতিও শুরু হয়ে গেল। এতদিন যাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা ছিল না, আজ তাই তেনজিং-এর জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠল। নেপাল এবং ভারত দু’পক্ষই তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হল। এর সঙ্গে যোগ হল, কে আগে শীর্ষে আরোহণ করেছে। এমনকী, এই বিতর্কে জল ঢালতে ২২ জুন নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি যৌথ বিবৃতিতে হিলারি ও তেনজিং সাক্ষর করে সারা বিশ্ববাসীকে জানান যে, তাঁরা দু’জনে একসঙ্গেই শীর্ষে আরোহণ করেছেন।
তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহরুর সঙ্গে তেনজিং-এর সম্পর্ক ছিল, তাঁরই ভাষায়, পিতা-পুত্রর ন্যায়। তিনিই তেনজিংকে পরামর্শ দেন ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য। এমনকী, তিনি তেনজিংকে বাড়িতে ডেকে নিজের ওয়ারড্রোব খুলে শার্ট, কোট, প্যান্ট এবং এই জাতীয় সবকিছু উপহার দেন। তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তেনজিং তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের নিয়ে লন্ডনে বাকিংহ্যাম প্যালেসে সংবর্ধনা সভায় অংশ নিতে পারেন।
বাকিংহ্যাম প্যালেসে রানি এলিজাবেথ ও তাঁর স্বামী ডিউক অফ এডিনবরা-র সামনে তাঁদের অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। সেখানেও তেনজিং তাঁর স্বাভাবিক সারল্য ও বিনয়ের জন্য সবার মন জয় করে নেন। আসলে অহংবোধ কোনওদিনই তেনজিং-এর জীবনে প্রবেশ করেনি। তিনি চিরকালই সহজ-সরল সোলো-কুম্ভুর পাহাড়ি রাখাল। এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণ করেও তিনি কখনও বলেননি যে, তিনি জয় করেছেন। বরং বলেছেন, মায়ের কোলে ওঠার জন্য শিশু যেমন ছটফট করে, তেমনই তিনি সাতবারের চেষ্টায় সাগরমাতার কোলে উঠতে পেরেছেন। সাগরমাতা বা চোমোলুংমা তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে বলেই তিনি ওইখানে পৌঁছতে পেরেছেন। এই সারল্য, বিনয় তাঁর চিরকালের সঙ্গী।
সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত লেখা ‘দেশে বিদেশে’-র একদম শেষে আব্দুর রহমানের পাগড়ির সঙ্গে হিমালয়ের এক আবেগঘন সাদৃশ্য লিখে গিয়েছেন। একইভাবে বলতে ইচ্ছে হয়, তেনজিং-এর মুক্তোর মতো সারল্যভরা হাসি যেন হিমালয়ের শুভ্রতার মতো, যা কোনওদিনই মলিন হওয়ার নয়।
নেপালে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, তাদের দেশে দু’জন ঈশ্বর জন্ম নিয়েছেন, একজন ভগবান বুদ্ধ এবং আর-একজন তেনজিং। আমরা যেন তাঁরই মতো করে বলতে পারি— Thuji chey Tenjing… আমরা কৃতজ্ঞ তেনজিং।