অগ্রপথিক

Representative Image

যতদূর মনে পড়ে আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি, তখনই ‘ডিরোজিও’ শব্দটি প্রথমবার আমার কানে আসে। সাধারণ জ্ঞান অথবা ইতিহাস নাকি সাহিত্যের সূত্রে, সেটা আমার ঠিক মনে নেই; তবে যেটা মনে আছে, ক্লাসে সেদিন প্রত্যেককে ডিরোজিওর পুরো নামটি মুখস্থ ধরা হচ্ছিল। পড়া না পারার ভয়ে আমিও প্রাণপণে দুলে-দুলে মুখস্থ করেছিলাম, ‘হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও’। কে এই ডিরোজিও, কেনই-বা তিনি বিখ্যাত, এই বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে শুধু গোটা নামটি মুখস্থ রাখতে পারায় তারপর আমি দীর্ঘদিন আত্মতৃপ্তিতে ভুগেছি। তবে ঘটনাটি জানলে যিনি সবচেয়ে বেশি অখুশি হতেন, তিনি ডিরোজিও স্বয়ং। কারণ লেখাপড়া মানে তাঁর কাছে আর যাই হোক স্মৃতির লড়াই নয় কখনওই। শিক্ষার্থীর কাছে চিরদিন তাঁর আবেদন ছিল চেতনায়, মননে।  

২০৩১ খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিওর মৃত্যুর ২০০ বছর পূর্ণ হবে, মানে মেরেকেটে আর মাত্র ছ’বছর পর। অথচ দুই শতাব্দী আগে, অর্থাৎ উপনিবেশ-কালে প্রায় গোড়ার দিকেই মারা গেছেন যে-লোকটা, সেই লোকটার তুলনায় আজ এত বছর পরেও আমরা প্রায় সকলেই যারপরনাই ‘অনাধুনিক’। ওই যে কবিগুরু বলে গিয়েছেন, আধুনিকতার বিষয়টা ‘সময় নিয়ে নয়, মর্জি নিয়ে’।  জ্ঞানের, মানবিকতার যে ‘মর্জি’ ডিরোজিওর ছিল, তা আমরা ধরে রাখতে পারিনি কেউই। আচ্ছা, ডিরোজিও লোকটা ঠিক কে বলুন তো? শিক্ষক? কবি? সাংবাদিক? সম্পাদক? উত্তর হল এই সবকিছুই তিনি করেছেন তাঁর ক্ষুদ্র জীবনে, কিন্তু মানুষ হিসেবে ডিরোজিও এই পেশাগত সীমাকে এমনভাবে ছাপিয়ে গেছেন যে, বাঙালির নবজাগরণের ইতিহাস তাঁকে ছাড়া লেখা কার্যত অসম্ভব। 

আরও পড়ুন: বাংলা গদ্যের ধারায় পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার জমিটা তৈরি করেছিলেন অক্ষয় কুমার দত্ত! লিখছেন আশিস পাঠক…

উনিশ শতকের একেবারে শুরুতেই ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা শহরের মৌলালি অঞ্চলে নিজেদের বাসগৃহে ডিরোজিওর জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা। সেই দুশো বছরের পুরনো বাসভবনটি হয়তো আর নেই, কিন্তু স্থানটি এখনও সংরক্ষিত আছে বলে দাবি করেছেন একাধিক গবেষক।  বর্তমান ঠিকানা- ১৫৫, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড (সাবেক লোয়ার সার্কুলার রোড)। নিজের বাসভবনের খুব কাছাকাছি ধর্মতলার চাঁদনি অঞ্চলে ড্রামণ্ড সাহেবের স্কুল ‘ধর্মতলা অ্যাকাডেমি’তে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ১৪ বছর বয়সে স্কুল জীবন শেষ করেন ডিরোজিও। তার আরও বেশ কিছু বছর পর জড়িয়ে পড়েন তৎকালীন বাঙালির ইংরেজি শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিন্দু কলেজের সঙ্গে। যে-সময়ে শিক্ষক মানেই ছিল কাছে প্রশ্নহীন আনুগত্য, তাঁর উদ্যত বেতের সামনে নতমস্তক, তটস্থ শিক্ষার্থী; সেই সময়ে প্রাণখোলা বন্ধুর মতো অনন্ত উদারতা নিয়ে হিন্দু কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন ডিরোজিও। সময়টা ১৮২৬ সাল।   

কিন্তু ড্রামণ্ডের স্কুল ত্যাগ ও হিন্দু কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাঝে হেনরি ডিরোজিওর জীবনে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় আছে, যা কিঞ্চিত উপেক্ষিত ও কম আলোচিত বলেই মনে হয়। ১৮২৩-এ স্কুল ত্যাগের কিছুদিন পর তাঁর পিতা ফ্রান্সিস যে-কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন, সেখানে কেরানি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু এখানে বেশিদিন তাঁর মন টেকেনি। চলে যান মামাবাড়ি ভাগলপুরে। চাকরি নেন মামা আর্থার জনসনেরই নীলকুঠীতে। ভাগলপুরের গঙ্গা আর জঙ্গিরা পাহাড়ের প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপটে, কিশোর হেনরির মধ্যে কবি সত্তার স্ফূরণ ঘটে। 

একটা ১৫ বছররে শিক্ষিত কিশোর হঠাৎ শহর থেকে গ্রামের খোলামেলা জলবায়ুতে গিয়ে পড়লে দু’চার লাইন কবিতা লিখে ফেলতেই পারে। বিশেষত যখন ইতিহাসে তাঁর চিরস্থায়ী আসনটি ‘কবি’ হওয়ার কারণে নয়, তখন এই নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে কি? এক্ষেত্রে আছে। কারণ ডিরোজিওর সেই কবিতাগুলি নেহাতই সৌন্দর্যমেদুর, বায়বীয় রোমান্টিকতায় ভরপুর নয়, বরং অতি বাস্তব কিছু সমস্যা উঠে এসেছে তাঁর সেই সময়ের লেখা কাব্যে। ভাগলপুর থেকে কবিতা লিখে তিনি ‘ইন্ডিয়া গেজেট’-এর সম্পাদক জন গ্রান্টের কাছে পাঠাতেন ‘জুভেনিস’ ছদ্মনামে। ১৮২৭ এ প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পোয়েমস’, আর দ্বিতীয়টি প্রকাশিত হয় ১৮২৮ এ। শিরোনামটি দীর্ঘ, ‘দ্য ফকির অফ জঙ্গীরা; এ মেট্রিক্যাল টেলস অ্যান্ড আদার পোয়েমস’। 

এই ‘ফকির অফ জঙ্গীরা’ কাব্যটি সেই সময়ে দাঁড়িয়ে যথেষ্ট বৈপ্লবিক। সংক্ষেপে এর কাহিনিটি হল, নলিনী বলে একটি সদ্য বিধবা ব্রাহ্মণ কন্যাকে জীবন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে জঙ্গিরা পাহাড়ে থাকা এক মুসলিম দস্যু সর্দার এসে অপহরণ করে নিয়ে যায় মেয়েটিকে। পরে জানা যায় দস্যু নলিনীর পূর্ব পরিচিত। ফলত তাদের প্রেম ও বিবাহ হলেও কাব্যের শেষে নেমে আসে ট্র্যাজেডি। এই গোটা ব্যাপারটা মেনে নিতে না পেরে, নলিনীর পিতা নালিশ করে রাজমহলাধীশের কাছে। আক্রমণ করা হয় দস্যুর ডেরা, যুদ্ধ শেষে পাওয়া যায় দুটি মৃতদেহ। একটি দস্যু সর্দারের, অন্যটি তার দেহ আঁকড়ে পরে থাকা নলিনীর।

মনে রাখতে হবে, যে-সময়ে এই কাব্য লেখা, তখনও সতীদাহ নিবারণ আইন পাশ হয়নি, বিধবা বিবাহ প্রচলন তো অনেক দূরের কথা, তার ওপরে আবার বামুনের মেয়ের সঙ্গে কিনা ‘ম্লেচ্ছ’র বিয়ে! ভাবা যায়? উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকেই এতো কিছু ভেবে ফেলেছেন এই তরুণ? আজকের একুশ শতকেও কি ডিরোজিওর এই কাব্য-কল্পনা অনায়াসে বাস্তব হওয়া সম্ভব? রক্ষণশীলরা হয়তো ২০০ বছর আগের মতো এখনও একইভাবে ছেড়ে কথা বলবেন না!    

শুধু সতীদাহ বা বিধবা বিবাহই নয়, ডিরোজিওর কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে সমকালীন আরও নানা সমস্যার কথা। কখনও দাস প্রথা, কখনও জমিদারদের অত্যাচার নিপীড়িত মানুষরা তাঁর কবিতা থেকে কখনওই বাদ যাননি। মানুষের প্রতি অপার করুণা, প্রচলিত সমস্ত কিছুকে যুক্তির কষ্ঠীপাথরে যাচাই করে দেখা এবং প্রয়োজনে বাতিল করা— এই সমস্ত স্বভাব বৈশিষ্ট্য তিনি শুধু তাঁর কবিতাতেই আটকে রাখেননি, ছড়িয়ে দিয়েছিলেন হিন্দু কলেজে, তাঁর প্রিয়তম ছাত্রদের মাঝে। শোনা যায়, যখন ক্লাস নিতেন ডিরোজিও, তখন ছাত্ররাও তাতে সমানভাবে অংশ নিতেন। মুক্তমনা ডিরোজিও ধর্মীয়, নৈতিক, দার্শনিক বিষয় নিয়ে ক্লাসে তর্ক তুলতেন, আলোচনা করতেন খোলাখুলি। 

সমকালীন সংবাদপত্রে এইসময় ডিরোজিওকে নিয়ে বিস্তর কুমন্তব্য করা হয়। কখনও ‘সমাচার দর্পণ’ (নভেম্বর,১৮৩১) তাঁকে সম্বোধন করেছে ‘হায়াহীন ড্রজো ভায়া’ বলে; আবার কখনও বলা হয়েছে যে, কলকাতা শহরে ‘ড্রোজুর হেঙ্গাম’ বেঁধেছে। কেন সকলে তাঁর প্রতি এত বিরূপ? ঠিক কি হাঙ্গামা বেঁধেছিল কলকাতা শহরে? এই যেমন ধরুন, ‘হিঁদু’র ঘরের ছেলে ডিরোজিওর ছাত্ররা সমস্ত নিষিদ্ধ খাদ্য-পানীয় (গো-মাংস, পাঁউরুটি, বিস্কুট ইত্যাদি) গ্রহণ করছে, অনেক সময়ে সেই ভোজনের ভুক্তাবশেষ ছুঁড়ে ফেলছে কোনও নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের বাড়িতে। আবার কখনও পিতার সঙ্গে কালীঘাটে গিয়ে কালীমূর্তিকে বলছে ‘গুড মর্নিং ম্যাডাম’!

ইতিমধ্যেই ১৮২৮ এ ডিরোজিও এবং তাঁর ছাত্রদের উদ্যোগে তৈরি হল ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’। মানিকতলায় শ্রীকৃষ্ণ সিংহের বাড়িতে বসত এই সভার আসর। ঈশ্বরের অস্তিত্ব, পৌত্তলকতা, স্ত্রীশিক্ষা, হিউম, রীড, স্টুয়ার্টের দর্শন নিয়ে আলোচনা হত, যুক্তির জোরে প্রচলিত ধর্মের মুণ্ডপাত করা হত নিয়মিত। হিন্দু কলেজে পড়ে হিন্দুর ছেলের কিনা শেষে এমন ‘সৃষ্টিছাড়া’ আচরণ? অভিভাবকরা যারপরনাই চিন্তিত হলেন। রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ একেবারে ‘রে রে’ করে উঠল। শুরু হল ডিরোজিওর নামে কুৎসা রটানো। শোনা যায়, বৃন্দাবন ঘোষাল নামে এক ব্রাহ্মণ লোকের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাঁর নামে নিন্দে করে আসতেন।   

এরপরের ঘটনাটি সকলের জানা। হিন্দু কলেজ থেকে বিতাড়িত হন ডিরোজিও। অবশ্য ঠিক বিতাড়িত হননি। কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জানার পর হেনরি ডিরোজিও নিজেই পদত্যাগ করেন। যদিও তাঁর শুভাকাঙক্ষী প্রাচ্যবিদ উইলসনকে লেখা একটি দীর্ঘ চিঠিতে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন তিনি। মূলত তিনটি অভিযোগ ছিল ডিরোজিওর বিরুদ্ধে, প্রথমত তিনি ছাত্রদের ঈশ্বরে অবিশ্বাসী করে তুলেছেন, দ্বিতীয়ত তাদের পিতামাতার অবাধ্য হতে প্রশ্রয় দিয়েছেন আর তৃতীয়ত ভাই-বোনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কে তিনি স্বাভাবিক বলে প্রচার করেছেন। ১৮৩১-এর এপ্রিলে হিন্দু কলেজের পরিচালন সমিতির সভায় ডিরোজিওর বিরুদ্ধবাদী রাধাকান্ত দেব প্রমুখ একটি অভিযোগের পক্ষেও অকাট্য কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি বটে, কিন্তু সংখ্যাগুরু হওয়ায় ডিরোজিওকে পদচ্যুত করার প্রশ্নে জিতে যান তাঁরাই। 

সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিস্থিত ডিরোজিওর সমাধি-ফলক

ডিরোজিওর শিষ্যদের মধ্যে একেবারে প্রথমেই যাঁদের কথা আসবে তাঁরা হলেন— দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার, শিবচন্দ্র দেব, মহেশচন্দ্র ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী প্রমুখ। কিন্তু তাঁর শিষ্যদেরকে সরাসরি তিনি উগ্র বা অসহিষ্ণু কোন আচরণের জন্য প্ররোচনা দিয়েছেন এমন কোনও প্রমাণ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের বিরোধী ছিলেন না। তিনি যে-কোনও প্রচলিত ধর্মের প্রতি মোহ, অন্ধ-বিশ্বাসের বিরোধী ছিলেন। হিন্দু কলেজ ত্যাগের পর ডিরোজিও বেঁচেছিলেন আর আটমাস। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এই প্রতিভাবান তরুণের করুণ মৃত্যুর বৃত্তান্ত হয়তো অনেকেই জানেন। শেষ ক’টা দিন নিজেদের প্রিয় শিক্ষকের অক্লান্ত সেবা করেছিলেন সেকালের ইয়ংবেঙ্গলরা। মৃত্যু আসন্ন জেনে যে-উইল লিখেছিলেন ডিরোজিও, তাতে ঈশ্বর প্রসঙ্গের উল্লেখমাত্র নেই। প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম হলেও, মৃত্যুর ঠিক আগে, আগত পাদ্রীদের তিনি জানিয়ে দেন যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তিনি তখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি, তাঁর অনুসন্ধান চলবে।  

এহেন ডিরোজিওর ছাত্ররা পরবর্তীতে কেউ নিষ্ঠাবান খ্রিস্টান বা ব্রাহ্ম হয়েছেন, কেউ আবার ফিরে গেছেন হিন্দু ধর্মে। এই ‘নিষ্ঠা’ বা অন্ধ আনুগত্যের প্রতিই ছিল ডিরোজিওর তীব্র আপত্তি। বলাই বাহুল্য,কালের স্রোতে তাঁর সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি। নৈতিকতার দিক থেকে ডিরোজিয়ানরা শিরদাঁড়া সোজা রাখলেও, প্রায় কেউই ঈশ্বরের প্রশ্নে আজীবন সংশয়বাদী থাকেননি।

তাঁর শিষ্যদেরকে সরাসরি তিনি উগ্র বা অসহিষ্ণু কোন আচরণের জন্য প্ররোচনা দিয়েছেন এমন কোনও প্রমাণ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের বিরোধী ছিলেন না। তিনি যে-কোনও প্রচলিত ধর্মের প্রতি মোহ, অন্ধ-বিশ্বাসের বিরোধী ছিলেন।

ডিরোজিও মাত্র পাঁচ বছর হিন্দু কলেজে পড়িয়েছিলেন। ওই স্বল্পসময়েই শিক্ষাদানের যে-আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, তা নজিরবিহীন। তিনি চলে গেলেও, হিন্দু কলেজে তাঁর পড়ানোর রেশ থেকে গিয়েছিল বহুদিন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম। আজও ভারতবর্ষের বুকে যেখানেই যুক্তি-বুদ্ধি-তর্ক ও মননের পাঠ হয়, অনস্বীকার্যভাবে বলা যায় সেই সব পাঠের পূর্বসূরী আমাদের কলকাতার মৌলালির ‘এই সেদিনের ছোকড়া’ হেনরি ডিরোজিও। আজ, এই আকালেও যাঁরা স্বাধীন চিন্তা-চেতনায় বাঁচতে চান, তাঁদের কাছে আক্ষরিক অর্থেই তিনি ‘ডার্লিং’ বা প্রিয়তম।

ইউরেশিয়ান পর্তুগীজ পরিবারে জন্ম হয়েছিল তাঁর। তবু ভারতবর্ষকে মনে-প্রাণে নিজের স্বদেশ মনে করতেন। দেশপ্রেম নিয়ে তাঁর বিখ্যাত কবিতা, ‘টু ইন্ডিয়া মাই নেটিভ ল্যান্ড’ এ বারবার অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ভারতবর্ষকে স্মরণ করেছেন। এ কবিতা যে-সময়ে লেখা, তখনও এদেশের অধিবাসীদের মনে অখণ্ড ‘নেশন’ হিসেবে জাতীয়তার ধারণাই তৈরি হয়নি। অথচ তরুণ ডিরোজিও তখনই দেশপ্রেমে টগবগ করে ফুটেছেন। আসলে সব ক্ষেত্রেই তিনি বড্ড বেশি ‘অ্যাহেড অফ টাইম’।  আর সেই জন্যেই তিনি থেকে যাবেন আগামীতেও। কারণ তাঁর ‘স্বদেশ’বাসীর যে এখনও তাঁর মত করে ‘মুক্তমনা’ হওয়া বাকি!