নিগ্রহ ও ভুল বিগ্রহ
নারী-নিগ্রহ নিয়ে বহু ছবিই হয়েছে, কিন্তু ‘দ্য টেল’ (The Tale, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: জেনিফার ফক্স, ২০১৮) ছবিটা অন্যরকম, কারণ এখানে নায়িকা (জেনি) নিজেই বিশ্বাস করে না যে সে নিগৃহীতা। ১৩ বছর বয়সে একটা গল্প লিখে সে স্কুলে জমা দিয়েছিল। সেটা এতদিনে তার মা খুঁজে পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে ফোন করে। জেনি এখন অধ্যাপিকা এবং তথ্যচিত্র-নির্মাতা, সত্য ও তার উপস্থাপনা নিয়ে তার কারবার। তার সেই কৈশোরের গল্পে লেখা ছিল এক বয়স্ক পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা। সেই অধ্যায়টাকে সে তার জীবনের এক আশ্চর্য আনন্দময় পর্যায় বলেই মনে করত। ওই বয়সে সে ঘোড়ায় চড়া শিখতে যেত এক সুন্দরী যুবতীর কাছে, সেখানে তাদের দৌড় অনুশীলন করাত এক সুদর্শন পুরুষ। ওই মহিলা আর পুরুষের একটা প্রণয়সম্পর্ক ছিল (মহিলা বিবাহিতা, পুরুষ বিবাহবিচ্ছিন্ন), সেটা তারা নিজেরাই জেনিকে বলে, কারণ জেনিকে তারা মনে করে অত্যন্ত সমঝদার এবং বুদ্ধিমতী, পরিণতমনস্কা। এরপর এক সময় জেনি সপ্তাহান্তে নিয়মিত ওই মহিলার বাড়ি থাকত। একরাতে, পুরুষটি তাকে নিজের কাছে রেখে দেয় এবং নানাবিধ প্রশংসার পর জামাকাপড় খুলতে বলে। কোনও জোর করে না বটে, মিষ্টি কথাবার্তাই বলে মৃদু স্বরে, কিন্তু ইঙ্গিত দেয় যে, সে নিশ্চয় সাধারণ মেয়েদের মতো রুদ্ধমনা নয়, তার ভাবনা নিশ্চয়ই সংস্কারমুক্ত ও আধুনিক। তারপর থেকে নিয়ম হয়ে যায় তাদের প্রণয় ও শারীরিক সম্পর্ক। প্রাপ্তবয়স্কদের দলে গৃহীত হওয়ার লোভ, ছকভাঙা ও প্রগতিশীলা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেনিকে এই সম্পর্ক স্থাপনের দিকে দ্রুত টেনে নেয়। প্রায়ই সঙ্গমের পর জেনি বাথরুমে গিয়ে বমি করত। এ নিয়ে তার প্রেমিক হাসাহাসিও করত, হয়তো সে গর্ভিণী হয়ে গেছে, তবে কিনা, সে তো ঋতুমতীই হয়নি, ফলে সেই ভয় এখনও নেই।
একটা দেখা করার দিনে সকালেই জেনির পেটব্যথা করে বমি হতে থাকে, তার মা সেদিন তাকে যেতে দেয় না এবং কয়েক ঘণ্টা পর ঘুম থেকে উঠে জেনি বুঝতে পারে, তার শরীরে আর কোনও অস্বস্তি নেই। সে বোঝে, তার শরীর তাকে নিষেধ করছে এই সম্পর্ক রাখতে, বলতে চাইছে এতে তার প্রকাণ্ড উদ্বেগ ও বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছে (যা তার মন বহু ডালপালা দিয়ে ঢেকে রেখেছে), এবং সে ফোন করে সম্পর্ক ভেঙে দেয়। পুরুষটি তাতে কাঁদে এবং এরপর বহুদিন চিঠিপত্রে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। মেয়েটির কাছে এই স্মৃতি ছিল মহার্ঘ, এই প্রেম তার কাছে ছিল দামি ও পেলব। সুদর্শন ও সুসংস্কৃত এক মানুষের সঙ্গে সম্মত ও সাগ্রহ মিলনের এক অধ্যায়, তাদের বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও কাছাকাছি আসার (ও সমাজকে তোয়াক্কা না করার) আখ্যান। কিন্তু মা গল্পটা খুঁজে পাওয়ার পর, এবং ১৩ বছরের মেয়েকে ৪০ বছরের পুরুষ যৌনভাবে ভোগ করেছে জেনে, জেনির এখনকার পুরুষ-সঙ্গী এটাকে স্রেফ ধর্ষণ হিসেবে অভিহিত করার পর, সে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। তথ্যচিত্র-নির্মাতা হিসেবে তার কাজ তো আস্তরণ সরিয়ে ঘটনার নির্যাস নিষ্কাশন। সে ওই সময়টা যাদের সঙ্গে কাটিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। এবং স্মৃতিকেও নতুন করে যাচাই করতে থাকে।
আরও পড়ুন : গর্ভপাত নিয়ে জরুরি প্রশ্ন তুলে দেয় এই ছবি!
চন্দ্রিল ভট্টাচার্যর কলমে ‘ছায়াবাজি’ পর্ব ৪২…

ছবিটা নারীর নিগ্রহ নিয়ে, স্মৃতি নিয়েও বটে। জেনির ফ্ল্যাশব্যাক প্রথম যখন শুরু হয়, তখন তাকে আমরা ১৩ বছর বয়সে একটু বড়সড় চেহারার মেয়ে হিসেবেই দেখি। তারপর মা’র কাছে বসে অ্যালবাম দেখার সময় জেনি আবিষ্কার করে, ওটা তার ১৫ বছরের চেহারা, ১৩-য় সে অনেক বেশি ছোটখাটো ও বালিকা গোছের দেখতে ছিল। তার মানে স্মৃতি তার নিজের কাছে সম্পর্কটা কিছুটা স্বাভাবিক দেখাবার জন্য তার একটু বেশী নারীসুলভ চেহারাটা বেছে নিয়েছিল। তারপর থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে তাকে আগের চেহারার বদলে বালিকা-চেহারাতেই আমরা দেখি (এমনকী, আগের ফ্ল্যাশব্যাকের কিছু অংশও এই নতুন চেহারায় দেখিয়ে দেওয়া হয়। স্মৃতি যে আমরা নিজেরাই অনেকাংশে নির্মাণ করি, তাকে এমন সিনেমা-গত ভাবে দেখানোর অভিনব ছাঁদ অত্যন্ত বিরল)। অপ্রাপ্তবয়সির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন তখন আমাদের চোখে আরও বিসদৃশ লাগতে থাকে। এক-আধটা ঘটনার সূত্রে আমরা এও দেখি, জেনির মা এই পুরুষের সঙ্গে তার এ ধরনের সম্পর্কের কথা আন্দাজ করেছিলেন (সে ছোট্ট জেনিকে নিতে আসে যখন, মা’র জন্য ফুল আর বাবার জন্য উপহার আনে) কিন্তু বাবা হেসে উড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাপারটাকে আর আমল দেননি। জেনির দিদিমা দেখে ফেলেছিলেন ওই পুরুষের সঙ্গে জেনির ওষ্ঠচুম্বন, বকেওছিলেন মেয়েটিকে, কিন্তু তারপর কাউকে কিছু বলেননি। আর ক্লাসে গল্পটা শোনার পর শিক্ষিকা জিজ্ঞেস করেন, এটা তুমি কী করে লিখলে? জেনি বলে, বানিয়ে। শিক্ষিকাও অমনি আশ্বস্ত হয়ে কাহিনি রচনার বহু ধরন নিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন। গল্পের শেষ পাতায় লিখে দেন, ‘এখানে যা লিখেছ, তা যদি বাস্তব হত, তাহলে আমি বলতাম বয়স্করা তোমার শৈশবের সুযোগ নিয়েছে…’। মানে, সত্যটার ধারেকাছে এসে পড়ে প্রাপ্তবয়স্কেৃরা দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে পালাতে পারলে বাঁচে, মেয়েটিকে রক্ষা করার চেয়ে তাদের অধিক ঝোঁক অস্বস্তি এড়ানোর দিকে।
তা-ই হয়, আমাদের শত সংসারে আমাদের শিশুকন্যার নিগ্রহ আমরা ‘চুপ চুপ’ রবে চাপা দিতে উন্মুখ হই, আত্মীয়টির (বা অনাত্মীয় শিক্ষকটির) মুখোমুখি হই না, কী দরকার বাবা শান্তি বিঘ্নিত করে, হইচই বাগালে সকলেরই ঝঞ্ঝাট। স্মৃতির অনেকগুলো স্তর এতদিন চাপা পড়েছিল, নায়িকার চেষ্টায় তারা পর পর খুলে যেতে থাকে এবং নায়িকা বোঝে, সেই পুরুষ (এখন প্রবল বিখ্যাত কোচ) আসলে এক অপরাধী, নারী-শিকারী, অনেকের সঙ্গেই এমন করেছে। সেই ধর্ষকের এক বিরাট পুরস্কার পাওয়ার দিনে নায়িকা পার্টিতে যায় ও তার মুখোমুখি হয়ে সবার সামনেই কিছু স্পষ্ট ও তিক্ত কথা বলে উঠতে পারে, এও বলে সে তাদের যৌনতার প্রতিটি মুহূর্তই ঘেন্না করেছে, তারপর বাথরুমে বসে কোনওমতে নিজেকে সামলাতে থাকে, আর তার পাশে বসে থাকে ১৩ বছর বয়সের সে। এতদিনে স্মৃতির বিশ্বাসঘাতকতা, সত্য আড়াল করে লাবণ্য-সিনারি টাঙানোর প্রকল্প ঘুচে যায়, নিজেকে না ভুলিয়ে নায়িকা নিজের নিগ্রহের দিকে তাকাতে পারে ও একরকম তিরস্কার নিক্ষেপ করে উঠতে পারে অত্যাচারীর প্রতি।
যা লক্ষণীয়, ছোটবেলায় জেনি গল্পে লেখে, ওই মহিলা ও পুরুষের প্রেমের অংশী হতে পেরে সে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করছে। যখন সে ওদের ছেড়ে দূরে থাকে, মনে হয় পৃথিবীটা যেন কাঁপছে, সে এই পৃথিবীর ধার থেকে পড়ে যাবে। সে মনে করে, এই ঘটনা তার জীবনে এক বিশেষ মাধুর্যের সন্ধান দিয়েছে। ছবিতে আমরা ইঙ্গিত পাই, মহিলা পুরুষ ও জেনি একসঙ্গে যৌনতাও করে। অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে (সেও পুরুষটির এক প্রেমিকা) ওদের চারজন মিলে যৌনতারও কথা ছিল, শেষ অবধি হয়নি। সময়টাকে মেয়েটির রোমাঞ্চময়, থরথরে ও প্রবল স্বতন্ত্র হিসেবেই মনে ছিল, জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান হীরকখণ্ডের একটা। এই যে প্রেমে ও খুশিতে ভরা রোদ্দুরগুলোকে সহসা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল ঝুরঝুর করে খসে যাচ্ছে পোকায় কাটা গুঁড়ো, এ আশ্চর্য ভাবনা (তার মূল কারণ এটি পুরোপুরি সত্যি, জেনিফার ফক্স নিজের জীবন অবলম্বনেই ছবিটি তৈরি করেছেন)। এবং সিনেমায় প্রায়ই প্রাপ্তবয়স্ক জেনি (তার কল্পনায়) তথ্যচিত্রের সাক্ষাৎকারেরই ঢঙে প্রশ্ন করে অতীতের সেই সুন্দরী ঘোড়সওয়ারি-শিক্ষিকাকে, যে নিতান্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে সপ্রতিভ উত্তর দেয়, আসল কথার পাশ কাটিয়ে কাটিয়ে। তাকে যখন জেনি বলে, তুমি আমায় বাঁচাওনি কেন, সে বলে, আমায়ও তো কেউ বাঁচায়নি। জেনি নিজের ১৩ বছরের সেল্ফ-কেও প্রশ্ন করে, সেই ছোট্ট জেনি বলে, নোটবই বা গল্পে কী লেখা আছে তা বড় কথা নয়, ঘটনা যা ঘটেছিল তাতে পবিত্র নিটোল প্রেমই ছিল, কোনও অন্যায় সুবিধেগ্রহণ ছিল না। সে আদৌ শিকার নয়, বরং প্রেমকাহিনির নায়িকা, পুরুষটিই বরং ভেঙে পড়েছিল সে সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার পর। আর পুরুষটিকে যখন প্রশ্ন করে, সে বলে, বালিকা জেনির মধ্যে সে যে নবীনতা ও জীবন-কৌতূহল আবিষ্কার করেছিল তা কেউই করেনি। সে-ই কি জেনিকে বাঁচায়নি পানসে, স্থূল পরিবার (ও তাদের জরদ্গব ভাবনা) থেকে?
তা-ই হয়, আমাদের শত সংসারে আমাদের শিশুকন্যার নিগ্রহ আমরা ‘চুপ চুপ’ রবে চাপা দিতে উন্মুখ হই, আত্মীয়টির (বা অনাত্মীয় শিক্ষকটির) মুখোমুখি হই না, কী দরকার বাবা শান্তি বিঘ্নিত করে, হইচই বাগালে সকলেরই ঝঞ্ঝাট। স্মৃতির অনেকগুলো স্তর এতদিন চাপা পড়েছিল, নায়িকার চেষ্টায় তারা পর পর খুলে যেতে থাকে এবং নায়িকা বোঝে, সেই পুরুষ (এখন প্রবল বিখ্যাত কোচ) আসলে এক অপরাধী, নারী-শিকারী, অনেকের সঙ্গেই এমন করেছে।
এই দৌড়-প্রশিক্ষক নাগাড়ে বলত, একগামিতা, বিবাহ, প্রথাগত পরিবার কীভাবে মানুষকে পিছিয়ে দেয়, কীভাবে পাতিত্বে বন্দি রাখে। যখন কোচ ও মহিলা ছোট জেনিকে বলেছিল তাদের গোপন সম্পর্কের কথা, জেনি ভেবেছিল, এমন একটা গোপন কথা আমাকে বিশ্বাস করে বলল, ওরা কী করে জানল আমি কখনও এই বিশ্বাসের অমর্যাদা করব না, কথাটা ফাঁস করব না অভিভাবকদের কাছেও? ওরা আমাকে সমকক্ষ মনে করে! এতটা মূল্য সে তাদের বিশাল পরিবারে কখনও পায়নি। বাড়িতে থাকতে ছোট মেয়েটার ভাল লাগত না, সারাক্ষণ ভাইবোনদের ঝগড়াঝাঁটি, দিদিমা বাড়িতে থাকায় বাবার রাগ, বাড়িময় শুধু শাসন আর ধমক আর নিষেধ। আর কোচ ও মহিলা জেনির সাহিত্যচর্চার প্রশংসা করত, কোচ বলত সে নিজেও একজন কবি। এই দুজনের কাছে জেনি পেত সম্মান আর মুক্তি। তারা নিয়মিত তাকে চিঠি লিখত, তোমার দৌড়ের অভ্যাসটা বজায় রেখো, নতুন নতুন বন্ধু কোরো, তারা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বুঝদার বাবা-মা, পরম বন্ধু, প্রেমসঙ্গী। জেনি তাদের কাছে বলত, মা-বাবা কিচ্ছু বোঝে না, আমার মনে হয় আমি ওদের কাছে অদৃশ্য, আমার অস্তিত্বই নেই। উত্তরে পুরুষটি বলত, ওরা জীবনকে ভয় পায়। তুমি বাঁচতে ভয় পেও না। এসো আমরা আমাদের একটা পরিবার গড়ে তুলি, যেখানে শুধু সততা আর প্রেম থাকবে। এই দোসর-দার্শনিক-দিশারি সেজেই পুরুষ বালিকাটিকে বিছানায় নিয়ে যায়, বালিকার শরীর তখনও তৈরিই হয়নি যৌনতার জন্য, তবু সে আক্ষরিক অর্থেই গা-জোয়ারি প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যায় কাঁচা দেহে। কিন্তু সারাক্ষণ শান্ত চোখে স্নিগ্ধ কথা বলে, তাকে ‘অন্যরকম’ হতে উদ্বুদ্ধ করে, বারবার জিজ্ঞেস করে বালিকা তাকে ভালবাসে ও বিশ্বাস করে কি না। যেন কোনও বাধ্যতা নেই, যেন ছোট মেয়েটির ইচ্ছেরই স্বাভাবিক পরিণাম এই নগ্নতা ও ঝটাপটি। সত্যিই, প্রথম রাতে পুরুষটি তাকে রুমির প্রেমের কবিতা দেয় জোরে আবৃত্তি করার জন্য, তার ফাঁকে বলে বালিকাটি অন্য সকলের চেয়ে কত আলাদা, কত গভীর, কত নিখুঁত। কতকগুলো বুদ্ধু কমবয়সি ছোকরার হাত থেকে সে এই অনন্য মেয়েটিকে বাঁচাতে চায়। তারপর বলে, তুমি কি আমায় তোমায় দেখতে দেবে?
সেই জন্যই জেনির অধুনা-প্রেমিক যখন বলে, এটা ধর্ষণ, বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য, জেনি বলে, সত্তরের দশকে আমরা এভাবে ভাবতাম না, এটা একটা জটিল সম্পর্ক, এই মানুষগুলো আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। প্রেমিক বলে, কিন্তু তোমাকে বুঝতে হবে তুমি এর সমান-অংশী নও, তুমি এদের শিকার, তুমি সাফাই গেও না। জেনি চিৎকার করে বলে, তোমার বা অন্য কারও আমাকে ভিকটিম বলার অধিকার নেই, আমি মোটেই ভিকটিম নই। কিন্তু জেনির ক্লাসে এক ছাত্রী যখন বিবরণ দেয়, তার প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয় এক প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে এবং সেই আদরে ছিল প্রবল কোমলতা, তখন জেনির মুখটা বিহ্বল হয়ে ওঠে। যে তথ্যচিত্রটা এখন জেনি বানাচ্ছে, তাতেও একজন বলে, কমবয়সি মেয়েরা অনেক সময় বোঝে না তারা নিগৃহীতা হচ্ছে, কারণ তাদের অনেকেরই যৌনাঙ্গে আরামদায়ক স্পর্শ ভালই লাগে। আরেকজন যখন বলে, তার (শৈশবে নিগ্রহের ফলে) প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে কোনও পুরুষের সঙ্গেই যৌনতায় রাগমোচন হয় না (একা থাকলে মাঝে-মাঝে হয়), তখন সাক্ষাৎকার নিতে নিতে জেনি বলে, এ ব্যাপারের সঙ্গে নিগ্রহের যোগ নেই, আমি তো নিগৃহীতা হইনি, কিন্তু আমারও বহু বছর লেগেছে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ফলে অর্গ্যাজম-এ পৌঁছতে। কিন্তু এখন, নিজের ঘরে বসে এই ফুটেজ দেখতে দেখতে জেনির মনে হয়, সে নিজের মনকে বহুকাল চোখ ঠেরে চলেছে, নিগ্রহ যে তার গোটা পরবর্তী জীবনেই দগদগে কালশিটে ফেলে রেখেছে, তা সে অস্বীকার করতে আর পারবে না। ছবি তাই শুধু নিগ্রহের বিরুদ্ধে নয়, নিগ্রহকে চেনার সতর্ক চেষ্টা সম্পর্কে, এবং নিজের স্মৃতিকে ঘুরিয়েফিরিয়ে বিচারের কাম্য অভ্যাস সম্পর্কেও।



