শুধু কবিতার জন্য : পর্ব ৩৪

১.

শিশুর নরম দেহ পায়ের তলায় এল কত –
আমরা কেউ থামলাম না তাও।

খাবারের পাশাপাশি রাখতে হবে খিদের নেশাও,
এ বিষয়ে সকলে সম্মত।

সমুদ্র আর একটু দূরে। আঁশটে, লাল ঢেউয়েরা উদ্যত…
সন্ধে নামছে। শেষবারের মতো।

আমরা এসে দাঁড়িয়েছি আজ এই পৃথিবীর শেষে।

মাংস দিয়ে তৈরি মাটি
যত দূর চোখ যায়, ফুটে আছে ছোট বড় ক্ষত…

এত খাদ্য পার করে এসে
আমাদের জিভ আজও রক্তের স্বাদের সামনে নত।

২.

হতাশা সমস্ত খেতে পারে।
সর্বভুক এই অন্ধকার।

বহু ঢাল বেয়ে বেয়ে অবশেষে খাদের কিনার।

অস্ত্রের আওয়াজ নেই, নেই আঘাতের কোলাহল
মাটি মিথ্যে হয়ে গেছে। মন থেকে বিষিয়ে গেছে জল।

যখন তফাত ছিল ষড়যন্ত্রে, শাসনে, বিদ্রোহে
সে কোন অতীতকাল পার…

এই কি যথেষ্ট নয়, ঝলসে যেতে যেতে এই গ্রহে
দেখা হল তোমার আমার?

৩.

একদিন সমস্ত পাখি কাঠ হয়ে ফুটে থাকবে গাছে।

একদিন সমুদ্রগুলো ভারী হয়ে উঠবে মৃত মাছে।

একদিন লুটিয়ে পড়বে দলে দলে পশু আর
খসে যাবে ঘাস থেকে, পোকারা।

প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ যারা।

একদিন সমস্ত জল, সব জমি দখল করবে
ঝাঁকে ঝাঁকে জঙ্গি আর সেনা…

মানুষ ছাড়া তো অন্য কোনও প্রানী বাংকারে বাঁচে না।

৪.

সমুদ্র থেকেই উঠে এসেছিল একদিন, কুয়াশা
গলায় হিসহিস শব্দ। অথচ কী পরিষ্কার ভাষা –

বলেছিল, ‘এখনও সময় আছে, ফিরে যাও।
শেষে পুড়বে নিজেরই আঙুল…’

সে-কথা শুনিনি আমরা কেউ।

একদিন ঝাঁপিয়ে পড়ল শব্দহীন অতিকায় ঢেউ।

ক’হাজার বছরের কত কিছু মুহূর্তে তামাশা।

কেবল ঝিনুক হয়ে বালিতে বিছিয়ে থাকল
আমাদের ছোট-বড় ভুল।

৫.

আমি আজও খুঁজে ফিরছি আমার কয়েকশো কাটা হাত

তুমিও তো হাতড়ে মরছ কই গেল ক’হাজার চোখ

সকাল হবে না আর, এত নীচে নেমে গেছে রাত…
অথচ একদিন এই মানুষই তো চেয়েছিল,
মানুষে মানুষে দেখা হোক

তোমার চুলের গন্ধে ছেয়ে গেল কত মহাদেশ
আমার পায়ের ছাপ পড়ে থাকল কত গমখেতে
কত কী হওয়ার ছিল, অথচ এভাবে হল শেষ
দেখাও হল না যেতে যেতে।

এই গ্রহে আগুনই প্রবীণ।

দিগন্ত ছাড়িয়ে যাওয়া ছিন্নতার এই উৎসবে
আমাদের যদি আর দেখা না-ই হয় কোনওদিন –

তোমার চোখের সঙ্গে আমার হাতের দেখা হবে।

৬.

বৃষ্টি নয়। মেঘ করলে বোমা পড়ে সিরিয়া, ইরাকে।
প্রতি পূর্ণিমায় বুদ্ধ বামিয়ানে ভেঙে যেতে থাকে।

পাথরের গুঁড়ো আর পোশাকের টুকরো ওড়ে গরম হাওয়ায় –
কেউ কেউ এরই মধ্যে আকাশের দিকেও তাকায়।

ভাবে যুদ্ধ শেষ হবে
কাচের জানলার সামনে ঠিক থমকে দাঁড়াবে কামান

ভেতরে অপেরা শিখছে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে
সেও মানুষেরই তৈরি গান।

কিন্তু ততক্ষণে এই আকাশের রং তো লোহিত।
শেষ দৃশ্য নেমে আসছে। যবনিকা সকলেরই চেনা।

নিজের বিরুদ্ধে আজ মানুষের একটাই জিত –

ধ্বংস হয়ে যাবে, তবু পিয়ানোকে ভেঙে ফেললে
সুর ছাড়া কিছুই বেরোবে না!