শুধু কবিতার জন্য: পর্ব ৪৬

Srijato Poetry

কয়েকটি কবিতা

পরাগ

নিরন্ন লোকের সামনে রেখেছি তোমার ফুলদানি।
এবার মরসুমে কিছু কূটফুল ফুটে যাবে জানি
তবে সমাধান হবে আমাদের জটিল হৃদয়।

হাজার প্রশ্নের সামনে সশরীর কামান, বন্দুক
এবং গলার থেকে খুলে নেওয়া মণিহার, সুখ
গোয়েন্দা জানিয়ে গেছে, যারই হোক, সে তোমার নয়।

তোমার বাগান তাই জামিন সাজায় বারে বারে
নতুন কুঁড়ির গন্ধে সেনা আসে উপোসের ধারে
তাদের ছাউনি জুড়ে কী আল্পনা! কোজাগরী বুঝি?

চাঁদে যে বিদেশি মুদ্রা লেগে আছে সুহানা সুহানা
আমার খিদের দেশে খাদ্যের প্রসঙ্গ তোলা মানা…
সুতরাং এই পুষ্পে বরণ করেছি রুটিরুজি।

কেবল এই মানচিত্র দূর থেকে শতছিন্ন লাগে
সেলাইয়ের দাগগুলি জেগে থাকে, নিহত পরাগে।

ব্যবসা

আজ এই বাজার বড় মধুবালা হল, প্রিয়লাল
সমুদ্রের হাওয়া যদি খবর উড়িয়ে আনে কাল—
যুদ্ধজাহাজের মন দেখি যদি সে-রুমালে মোড়া

তুমিও উতলা রোদে ধাতুর উত্তাপ বিক্রি রেখে
ছোট মাছ চারে তুলবে, ছোট যিশু টাঙাবে পেরেকে
পর্যটক বেছে বেছে নাটকের তুমুল মহড়া

দেওয়া যাবে বটে। কেউ কাহাকেও চেনে না, এরূপ
খবরের বিনিময়ে সংলাপের বদলে সে চুপ,
এরকমই দৃশ্যগুলি। তুমি, প্রিয়লাল, মাধুকরী

এ-বাজারে বেড়ে খ্যালো। ভাঙা টেলিভিশনের মতো
মৃত চরিত্রের রাশি, ঢেলে দাও বালিতে বিগত
আমি ডাক শুনে শুনে মড়কের পাখিটাখি ধরি।

যা কিছু বিরহ, শ্রেষ্ঠ। যা কিছু মিলন, কানে শোনা।
আমাদের ব্যবসায় ভালবাসা হোর্ডিং কোরো না।

জানেমন

চল্লিশ চোরের মধ্যে একজন জানেমন ছিল।
যমুনার সংলাপ, ‘অহো প্রিয়ে, তবে কে মরিল?’
এই শুনে সাড়া দেয়, ধরা পড়ে। খবরে প্রকাশ।

ততক্ষণে মোহরেরা পাড়ায় উড়ন্ত তুলারাশি
এবং বিবিধ বাড়ি নিয়তির চরম তল্লাশি
যতক্ষণ নাহি মেলে সন্দেহের সুচতুর লাশ।

অপরাধ হাতে হাতে ভাগ হতে দু’সেকেন্ড লাগে।
নিখিল ব্যানার্জিসম যে বা যারা তুখোড়, বেহাগে,
রহস্য নিজের দলে বরাবর তাদেরই রাখেন।

ঢেউ ওঠে পাতা পাতা, বইয়ের দু’ধারে সাদা বালি
তোমার কাগজ চেনে মৃদু বিষাদের কর্মখালি
এদিকে যে-কোনও মর্মে যুগে যুগে ক্ষুব্ধ নেটিজেন।

এরই মধ্যে, সে বালক, জানেমন, বহু রাস্তা পার
সোনালি রাগের সুরে ঝলসে ওঠে ডুবন্ত সেতার!  

বেসাতি

সে তুমি হাজারবার ডাকলে আমি তিনবার তাকাব।
তারই মধ্যে একবার উত্তমের মতো মাচো, ব্রাভো।
বাকি দুই দু’টি পক্ষী, উড়ে যাবে স্টেটাসের দিকে।

কমেন্ট, শেয়ার বাড়বে। এ-লগ্নিতে মুনাফা বিস্তর।
আলো জ্বেলে ভাড়া দেবে, তোমার ওই দু’চোখের ঘর…
আমি স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত কবিতা দেব লিখে।

এমনই প্রেমিক জানবে, পাড়া দেবে তীব্র হাহাকার
থ্রিলারের বই দেবে শ্রী শ্রী দেবানন্দ পাঠাগার
তবু তুমি আমারে পাবে না ডেকে, অ্যায়সান অহং।

চিঠি এসে পড়ে থাকবে, মেসেজের পাহাড় দু’হাতে
আমি একটি ক্ষীরচাঁদ ভাসাব নদীর ধারাপাতে…
প্রেমের দোকান খুলে নাম রাখব ‘হার্ট অ্যান্ড কোং’।

তুমি প্রিয়ে, খরিদ্দার, কবে আসবে বেসাতির ভানে
চতুর্থ চাহনি, মন, বাঁধা আছে আমার দোকানে।