নীল কেটলি: পর্ব ৩
‘অনেক গাছপালা ছিল, নদী ছিল, সুড়কির রাস্তা ছিল, ধুলো ছিল, রেলব্রিজ ছিল, দিগন্ত ছিল। কিন্তু সুইৎজারল্যান্ড তো আর নয়। তবু আমার কাছে কেন যে আজও সেই ময়মনসিংহের অফুরান রূপ মায়াঞ্জনের মতো লেগে আছে!’ ময়মনসিংহের কথা।
‘অনেক গাছপালা ছিল, নদী ছিল, সুড়কির রাস্তা ছিল, ধুলো ছিল, রেলব্রিজ ছিল, দিগন্ত ছিল। কিন্তু সুইৎজারল্যান্ড তো আর নয়। তবু আমার কাছে কেন যে আজও সেই ময়মনসিংহের অফুরান রূপ মায়াঞ্জনের মতো লেগে আছে!’ ময়মনসিংহের কথা।

‘অনেক সময় গুরুকে দেখেছি জন্তু-জানোয়ার নিয়ে মাসের পর মাস মেতে থাকত। হঠাৎ, কোথাও কিছু নেই, একদিন গুরু বাড়িতে একটা কুকুর কোলে করে এসে হাজির। গীতাও অবাক, বাড়ির চাকর-ঝি দারোয়ানও অবাক।’ গুরু দত্তের খেয়াল।

‘আমাদের আগে-পরে তখনও এক খুনে সময় ছিল/ জাত-ধর্ম জিজ্ঞেস করত/ আমাদের পিছনে এক খুনে সময় এখন ধাওয়া করছে/ যা জাত-ধর্ম জিজ্ঞেস করে না,/ একেবারে খুন করে দেয়/ ভগবান জানে, এই ভাগাভাগি বেশি ভয়ের, না কি সেই ভাগাভাগি!’ করোনাকালে লেখা কবিতা।

‘কুকুরটার স্থান ও ডিউটি নির্দিষ্ট। মেজোভাই কালীপদদার বাঁজা বউ যখন জামাকাপড় শুকোতে দিতে বা তুলতে ছাদে ওঠে, তখন ঘেউ ঘেউ করতে হবে। কিন্তু দুবলা ভুলুর ডাকটা শুনতে লাগে ‘খেউউ, খেউউ’।’ নতুন গল্প।

‘মনে আছে তখন দুপুরবেলা। দুটো কি তিনটে বেজেছে। হঠাৎ বড়-বড় করে আওয়াজ হল। বাইরে চেয়ে দেখি বৃষ্টি পড়ছে। গুরুও চেয়ে দেখল, হ্যাঁ বৃষ্টি পড়ছে। গুরুর চোখে মুখে ছেলেমানুষের মতো আনন্দ ফুটে উঠল।’ গুরু দত্তের ছেলেমানুষি।

‘ও আমাকে বললে—/ নীল পাথরের মালা পরে থাকো কেন?/ আকাশ কি নীল, শুধুই নীল, / আকাশ আর নীলাকাশে আমাদের এখন কী দরকার?/ বর্ণ গন্ধ দৃশ্য হাসি ও অশ্রু সবই তো আমরা/ দুজন দুজনের মধ্যে খুঁজে পাই।/ তবে আকুল হবার কষ্ট কেন করবে?’ নতুন কবিতা।

‘হয়তো কোনো ছুটির দিন সেটা। স্টুডিওতে কেউ নেই। ফাঁকা সব। কিন্তু আমরা দুজনে গিয়ে বসতাম সেই ঘরে। চারদিকে অসংখ্য বই আর ম্যাগাজিন। তখন গুরু আর আমি একাকার হয়ে যেতাম গল্পের জগতের মধ্যে!’ বন্ধুত্বের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত।

‘এখনও এক-একবার ভাবি লোনাভালায় সেই দেড় মাস কী আনন্দে কেটেছে। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করার পর সবাই যখন বেলা দশটা-এগারোটা-বারোটা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে, আমি তখন আমার নিজের ঘরে বসে ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ লিখছি।’ লোনাভালার দিনযাপন।

১৯৬২ সালের ১১ই জুন। গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ছবি বিশ্বাসের। কিন্তু ‘কাঁচের স্বর্গ’ থেকে শুরু করে ‘চাওয়া-পাওয়া’— এমনকী ‘স্মৃতিটুকু থাক’ ছবির চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন তিনি। এই লেখার শেষ পর্বে উঠে এল সেই সময়েরই কিছু টুকরো মুহূর্তের কোলাজ।

‘গুরুর একটা ভালো গুণ ছিল— সে কখনও বেশি কথা বলত না। যখন অন্য লোক চুপ করে থাকত, সে-ও চুপ করে থাকত। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর হঠাৎ নিঃশব্দে কখন ঘর থেকে কাউকে না বলে চলে যেত।’ অন্য মেজাজের গুরু দত্ত।

ভারিক্কি, জমকালো আর দোর্দণ্ডপ্রতাপ— এই তিনটি শব্দের বাংলায় একটি সমার্থক শব্দ আছে— ছবি বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে অনেক সিনেমা করেছেন পরিচালক তরুণ মজুমদার এবং সেই সব অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর আখ্যানই তিনি তুলে ধরছেন। কয়েক পর্বে।

‘গুরু বললে— আমাকে ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবিটা করতে সবাই বারণ করেছে। এমনকী আমার স্ত্রী পর্যন্ত বারণ করেছে। কিন্তু আমি এ ছবি করবোই। আমি ভীষণ একগুঁয়ে মানুষ।… আমি কারো কথা শুনবো না। আমার নিজের মতেই আমি চলি।’ গুরু দত্তর মনমেজাজ।
This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.
©2025 Copyright: Vision3 Global Pvt. Ltd.