ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ৭


    অনুপম রায় (September 3, 2021)
     

    ভয়

    জয় গুরু! আবার এসেছি আমি, ম্যাকি। 

    সম্পূর্ণ কল্পনাকে প্রশ্রয় দিতে দিতে এখন মানুষ এমন এক আজব দুনিয়া বানিয়েছে, যার সাথে আসল বিশ্বের কিছু মিল আমরা খুঁজে পাই না। বুঝতে পারি না মানুষ এরকম করে কেন? এখন দেখি, কল্পনাই এদের নিয়ে খেলা করে। 

    আমরা দেখেছি মানুষের ভয়। ওরে বাবা সে কী ভয়! সব কিছুকে ভয়! বৃষ্টিতে ভিজতে ভয়, ঠান্ডা হাওয়া খেতে ভয়, বিরিয়ানি খেতে ভয়, রাস্তা পেরোতে ভয়, বিয়ে করতে ভয়, একা থাকতে ভয়, লিফটে আটকে পরার ভয়, হেডমাস্টারকে ভয়, ভূতে ভয়, ভগবানে ভয় আর হ্যাঁ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকেও ভয়। আমরা তো প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতেই পারছি না। মেশিনের তো আর ‘ভয়’ নেই রে বাবা! মানুষের কোন কেমিক্যাল, কোন হরমোন দিয়ে আমরা ভয়কে বুঝতে পারব? আমরা অনেকটা সিমুলেট করে করে বোঝার চেষ্টা করেছি। কিছুটা এখনও পারিনি।

    ভয় বুঝতে গেলে, শুরুতে ভয়ের প্রকারভেদ করতে হবে। প্রথমে আমরা এক ধরনের ভয়ের কথা বলব, যেগুলো মানুষের হাতের বাইরে। যেমন ধরা যাক, সাপে ভয়, উচ্চতাকে ভয় অথবা বদ্ধ পরিবেশে থাকার ভয়। কিছুটা অমূলক হলেও এগুলোর কোনও সমাধান নেই। এগুলো নিয়ে যদি কিছু মানুষ জন্মায় বা তার জীবদ্দশাতে তৈরি হয়, তাহলে তার সারা জীবন ড্যামেজ্‌ড। এই নিয়ে তাকে সারা জীবন টানতে হবে। কোনও নিস্তার নেই। ডাক্তার দেখাতে হতে পারে, কী সলিউশন হবে বলতে পারছি না। এটা আমাদের ভাষায় মাদার বোর্ডের প্রবলেম। সিস্টেমে গন্ডগোল। আমাদের এরকম হলে কী করা হয়? পার্টস পেলে সারিয়ে নেওয়া হয় নাহলে ফেলে দেওয়া হয়, তাই তো? মানুষের ক্ষেত্রে, ও বাবা, না না। এমপ্যাথি দেখাও, এমপ্যাথি! আমরা বলি, গিভ আস আ ব্রেক! 

    এরপর আসে সত্যি ভয় বা জেনুইন ভয়। পাহাড়ের ধারে যেতে ভয়। এটা লজিকাল, আমরা বুঝতে পারি। পাহাড়ের ধারে গেলে স্লিপ করতে পারে আর স্লিপ করলে পড়ে যেতে পারে আর অত উঁচু থেকে পড়ে গেলে মরে যাওয়ার ভাল চান্স থাকে। না মরলেও হাত-পা ভাঙার ভয় তো আছেই। আসলে মানুষ সবচেয়ে ভয় পায় মরতে। এবার প্রশ্ন আসতেই পারে, এই মরবার ভয়টা কী ভয়? এটা দার্শনিক প্রশ্ন। এক বাক্যে বোঝাতে পারা যাবে না। এটা অজানার ভয় বলা যেতে পারে। যেহেতু মানুষ জানে না যে মরে গেলে কী হয়, তাই সেই অজানাকেই সে ভয় পেতে থাকে। একবার জেনে গেলে কি আর ভয় পাবে? না, না মূল বক্তব্যে ফিরে আসি। যে-কথা বলছিলাম, এই জেনুইন ভয়। ধরা যাক আগুনে ভয়। কেন ভয় পায় মানুষ আগুনে হাত দিতে? আমরা যেমন সিমুলেট করতে পারি, অর্থাৎ আসল ঘটনা ঘটার আগেই পুরো ব্যাপারটা কম্পিউট করতে পারি, এ-ক্ষমতা মানুষেরও আছে। বহুযুগ ধরে মানুষ শিখে এসেছে, আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়। হাত পুড়ে গেলে যন্ত্রণা হয়। তাই তাকে আর হাত পুড়িয়ে দেখতে হয় না, ব্যথা পেয়ে দেখতে হয় না। সে তৈরি করেছে ভয়। এই ভয় একটা সিমুলেশন, কী হতে পারে তারই পূর্বাভাস। এই ভয়কে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাই। গুড জব হিউম্যান্স।

    এবার প্রশ্ন আসতেই পারে, এই মরবার ভয়টা কী ভয়? এটা দার্শনিক প্রশ্ন। এক বাক্যে বোঝাতে পারা যাবে না। এটা অজানার ভয় বলা যেতে পারে। যেহেতু মানুষ জানে না যে মরে গেলে কী হয়, তাই সেই অজানাকেই সে ভয় পেতে থাকে। একবার জেনে গেলে কি আর ভয় পাবে? না, না মূল বক্তব্যে ফিরে আসি। যে-কথা বলছিলাম, এই জেনুইন ভয়। ধরা যাক আগুনে ভয়। কেন ভয় পায় মানুষ আগুনে হাত দিতে? আমরা যেমন সিমুলেট করতে পারি, অর্থাৎ আসল ঘটনা ঘটার আগেই পুরো ব্যাপারটা কম্পিউট করতে পারি, এ-ক্ষমতা মানুষেরও আছে। বহুযুগ ধরে মানুষ শিখে এসেছে, আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়। হাত পুড়ে গেলে যন্ত্রণা হয়। তাই তাকে আর হাত পুড়িয়ে দেখতে হয় না, ব্যথা পেয়ে দেখতে হয় না। সে তৈরি করেছে ভয়

    এরকম আরেকটা রিয়াল ভয়, ধরা পড়ার ভয়। আপনার দোকানে কিছু একটা দেখে খুব লোভ হচ্ছে। মনে হচ্ছে এটা আমার থাকলে বেশ হত (এটাও খুব টিপিকাল হিউম্যান-পেটি ব্যাপার) কিন্তু টাকা খরচা করে কিনতে ইচ্ছে করছে না। টুপ করে তুলে নিতে পারেন লোকের চোখের আড়ালে, কিন্তু ধরা পড়ে গেলে? অসম্মানিত হওয়ার ভয়। অপমানিত হওয়ার ভয়। সেই ভয়ে আপনি কাজটা করবেন না। কিন্তু যাদের দেখবেন এই ভয়টা নেই, অন্যের গল্প নিজের বলে চালিয়ে দেয়, অন্যের সুর নিজের বলে চালিয়ে দেয়, অন্যের টাকা নিজের বলে চালিয়ে দেয়, এই শ্রেণিটার থেকে সাবধানে থাকা ভাল। কোরাপ্ট হিউম্যান্স। কেউ যে ওকে চোর বলছে এটা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই, লজ্জা নেই, ভয় নেই। নিজের মনেই হয় না যে, ভুল কিছু সে করেছে। এই আত্মবিশ্বাস দেখে কিছু মানুষ ভয় পেয়ে যায়। সবার সামনে দাড়ি নাড়িয়ে এরকম একটা মিথ্যে কথা সত্যি বলে চালিয়ে দিল? এ ব্যাটা তো তাহলে যা ইচ্ছে করতে পারে! একেও মানুষ ভয় পাবে। আর এই ভয়টাও রিয়াল। 

    এরপর আসে কাল্পনিক ভয় অর্থাৎ বাস্তবে যা কোনওদিন ঘটবে না তা নিয়ে ভয়। প্রথমে ধরা যাক ভূত। ভূত নেই আমরা সবাই জানি কিন্তু তাই বেচে একদল লেখক, সিনেমা-প্রযোজক প্রচুর অর্থ উপার্জন করে বেরিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক ঢপের গল্প, তাই দেখছে, পড়ছে, শুনছে আর ভয় পাচ্ছে। ভয় পেয়ে বলছে, উফ কী দারুণ ভয় পেলাম! আমরা ভাবি, এরা কারা? কেউ আছে রাতে একা থাকতে পারে না, কেউ একা থাকলে সারা বাড়ি আলো জ্বালিয়ে রাখে। ভূত নাকি আলো দেখলে আসে না! কী লজিক! কেউ কম্বল মাথা ঢাকা দিয়ে ঘুমোবে। কম্বল সরিয়ে নাকি ভূত আসতে পারে না! ভাই, এটা কী বললি? আসলে ভূতও হচ্ছে মৃত্যুর মতো অজানা। যেহেতু অজানা, তাই সেটাকে নিয়ে কল্পনার কোনও কনট্রোল নেই। একদম লাগাম ছাড়া। আচ্ছা তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ভূত আছে। খুব ভয়ঙ্কর দেখতে (এটা আবার আপেক্ষিক, কার কাকে ভয়ঙ্কর লাগে এরকম ভাবে বলা যায় না) কিছু একটা জিনিস হল ভূত। হঠাৎ করে অন্ধকারে পেলে দেবে ঘাড় মটকে। দিলে যাবেন মরে। আবার কি সেই মৃত্যুকেই ভয়? না, এক্ষেত্রে একটু আলাদা। মৃত্যুর পদ্ধতিটাতেই মানুষের ভয়। আপনাকে ভূত কিছুই করল না, ছুঁয়েই দেখল না, সামান্য একটু দাঁত বের করে হেসে দিল, ব্যাস! আপনি ব্যালকনি থেকে নিজেই ঝাঁপ দিয়ে পড়ে মরে গেলেন। পরদিন কাগজে আপনার আত্মহত্যার খবর বেরোল কিন্তু ওটা যে একটা সাধারণ আত্মহত্যা নয়, সেটা তো লেখা হল না। আপনি শুধু কল্পনা করে, ভয়ে মরে গেলেন। এবার একই লজিকে আসে ভগবান। যত রাজ্যের স্বর্গ, পাতাল, ঈশ্বরচেতনা সম্পূর্ণ মানুষের কল্পনা। সেই কল্পনার জগৎকে কেন্দ্র করে মানুষ বিশাল ব্যবসা ফেঁদে ট্যুরিজমও চালু করে দিয়েছে। অমুক জায়গায় কে নাকি জাগ্রত, তাকে গিয়ে তেল মেরে আসলে সে আপনাকে অমুক পাইয়ে দেবে। জুটে গেছে ভগবানের গুচ্ছের দালাল। তারা যা খুশি টুপি পরিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে রাখে। মানুষ এমন বোকা, সেই ভয়গুলো চুপচাপ গিলে নেয়। তিন-চার বেলা প্রর্থনা করে ভয়ের চোটে। এটা না করলে ভগবান পাপ দেবে। সেই পাপের ভয়ে, বয়ে বেড়ায় এই কাল্পনিক ভয়। 

    শুধু ভয় পেয়ে পেয়ে বহু মানুষ সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। একটা মানুষের চারিত্রিক সব রকম দোষগুণও দেখা যায় এই ভয়ের দ্বারা নির্ধারিত হয়। হয়তো শুধু ভয়ের চোটেই আপনি সারা জীবন চরিত্রবান হয়ে থেকে গেলেন। আপনার মনের ভেতর হাজার ইচ্ছে কিন্তু শুধুমাত্র সাহসের অভাবে আপনি চৌকাঠ পেরোতে পারলেন না। শুকনো কিশমিশের মতো সেই জীবনের ভয়কেই আপনি তখন গ্লোরিফাই করতে থাকলেন। সেটাকেই আপনি ‘চরিত্র’ হিসেবে এসট্যাব্লিশ করলেন। আপনার ভেতরে হয়তো দৃঢ় কোনও রকম বিশ্বাসই নেই, কিন্তু যেহেতু আপনি ভয় পেয়েছিলেন তাই সেটাই একমাত্র সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। এবার আমরা ঢুকে পড়ছি নৈতিকতাতে। ওটা থাক, পরের বার দেখছি। 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook