সপ্তাহখানেক আগেকার কথা। অফিস থেকে বেরিয়ে মদ খেতে যাব, অচেনা নম্বর থেকে একটা ফোন, ‘হ্যালো, দাদাবাবু বলচেন? আমি হারুর বউ। আমার হারুটো কাল চলি গেল গো…’ বলে ভয়ংকর কান্না। ফোনের এপাশ থেকে ঘাবড়ে গিয়ে বলি, ‘হারু? আপনি কে বলছেন?’ ‘চিনলা না গো দাদাবাবু, চকবাজারের কার্তিকের বউ আমি! আমার হারুটো…’ আরও নানা কথা বলে যায় সেই মহিলা কণ্ঠ। পুরোটা শুনি না। মূল কথাটা তো জানা হয়ে গেল! এখন সব পরিষ্কার। পুরুলিয়ার কার্তিক চেল আর আমাদের মধ্যে নেই। সেই কার্তিক! রোগা ছিপছিপে চেহারা, কাঁচাপাকা চুল; সারাদিন নখ খাওয়া আর টোটো চালানো— এই ছিল ওর রুটিন। কার্তিকের ডাকনাম যে হারু, আমি তা জানতাম না। জানতাম না এও, ওর বউ কবে ফিরে এসেছে ওর কাছে। আমার নম্বরই-বা পেল কোথা থেকে?
ওপাশের কান্নার স্বর আর জট-পাকানো কথাস্রোত একটু শান্ত হলে জিজ্ঞাসা করি, ‘কী হয়েছিল হারুর? তুমি আমার নম্বর পেলে কোথায়?’ কার্তিক ওদের সাংসারিক জটিলতা নিয়ে যেসব কথা আমায় বলেছিল, সে-প্রসঙ্গ তুললাম না কিছু। তোলা উচিতও নয় এই সময়ে। যা চিরস্থায়ী নয়, তা নিয়ে অযথা খোঁচাখুঁচি করতে বিরক্তই লাগে আজকাল। হারুর বউ বলে, ‘কাল এগারোটা দিকি খোবর পাই, হারু টোটো নি ধাক্কা দিছি লরিকে। উ লাকি লেশায় ছিল। শ্যামলা বলেছে… এখন আমি কই যাই দাদা, কন!…’ কার্তিক নেশা করেছে? অবাক লাগে! শ্যামলকে আমিও চিনতাম, রামরাজাতলার ছেলে। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন পুরুলিয়ায়। কার্তিকের জিগরি দোস্ত। নাইটগার্ডের চাকরি করে। আমায় খুবই দাদা-দাদা করত এক সময়ে। বহুদিন কথা হয় না। ‘আচ্ছা, তুমি শান্ত হও, আমি শ্যামলকে ফোন করছি এখুনি’, এই বলে ফোনটা রেখে দিই। কার্তিকের বউয়ের কী যেন নাম? বলেওছিল একবার। ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। বেলা। এই বেলাকে আমি চিনতাম অন্যভাবে। অন্য চোখে। যে-কারণে আর চেনা যাচ্ছে না ওকে এখন। শ্যামলকে ফোন করতে গিয়ে দেখি সুইচড অফ। সেদিন আর কথা হয় না আমাদের।
২
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বেসরকারি একটা প্রজেক্টে আমাকে পুরুলিয়া যেতে হয়। মাস ছয়েক ছিলাম। শহরের মধ্যেই, চকবাজারের কাছে ছিল আমার আস্তানা। সারাদিন কাজেকর্মেই কেটে যেত এদিক-সেদিক; সন্ধের পর একটা চায়ের দোকানে অল্প বসে বাড়ি ফিরে আসতাম। আস্তে-আস্তে দু-একজন স্থানীয় বন্ধুবান্ধব হচ্ছিল ঠিকই, তবু কোথাও যেন মেলাতে পারছিলাম না নিজেকে। ভাবতাম, কবে আবার কলকাতা ফিরে যাব। কফি হাউসের আড্ডার জন্য মনকেমন করত। তারই মধ্যে ঘটনা ঘটল আরেকটা। আমি প্রেমে পড়লাম এক পঞ্জাবি মেয়ের। অরুণা সাহানি। আমার চেয়ে বয়সে বছর দুয়েকের বড়ো। সেও ওই প্রজেক্টে কাজ করত। এত মিষ্টি করে হেসে-হেসে কথা বলত, আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম। যাক গে, সে-কথা। মূল প্রসঙ্গে আসি।
আরও পড়ুন: সন্মান্ত্রানন্দর গল্প ‘গুপ্তচর’
অরুণা আর আমি একদিন ঠান্ডার মধ্যে অনেকটা মদ খেয়ে রাস্তায় বেরিয়েছি। বেশ রাত তখন। কুকুর চেঁচাচ্ছে। হাঁটতে-হাঁটতে অনেকটা দূর চলে গেছি। কথা ছিল, অরুণাকে ওর বাড়ি ছেড়ে ফিরে আসব। কিন্তু হল কী, হঠাৎই অরুণা মাথাঘুরে পড়ে গেল মাঝরাস্তায়। আমিও তো মদ খেয়ে আছি, সামলাব কী করে! আশেপাশে কাউকে দেখতেও পাচ্ছি না। বীভৎস অবস্থা। মিনিট কুড়ি ওইভাবে কাটানোর পর একটা টোটো পেয়ে কোনওরকমে বাড়ি ফিরি। অরুণা সে-রাতটা আমার কাছেই থেকে যায়। পরদিন সকালে বাজার করতে বেরিয়ে দেখি সেই টোটোওয়ালা বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে। একগাল হেসে প্রশ্ন করে, ‘দিদি, ভাল আছে? যদি আপনাদের দরকার হয়, কাল সারারাত এখানেই ছিলাম তাই!’ প্রথমে থতমত খেলেও, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দু-এক কথা চালাচালি করি সেই টোটোচালকের সঙ্গে। ওই প্রথম আমার সঙ্গে কার্তিকের দেখা। কার্তিক চেল।
কার্তিককে পেয়ে আমাদের ভালই হয়েছিল। আমাদের মানে আমার আর অরুণার। সময় পেলেই ওর টোটোয় চেপে ঘুরে বেড়াতাম। মাঠঘাট, বনবাদাড়ে এমনিই ঘুরে বেড়ানো। লক্ষ্যহীন, তাড়াহীন। রাঁচি রোড ধরে বহুদূর চলে যাওয়া। প্রেম মানুষকে কী করে দেয়, হ্যাঁ! মনে-মনে ভাবতাম, কয়েকদিন আগেও আমার যেখানে মন টিকছিল না, সেই আমিই অরুণার প্রেমে ভেসে কোথায় চলে যাচ্ছিলাম কে জানে! কার্তিকও এমন ভাব করত, যেন ও আমাদের জন্যই রেডি হয়ে থাকে সব সময়ে। ফোন পাওয়ামাত্রই চলে আসত। তবে মাঝে-মাঝে লক্ষ করতাম, অরুণা আর আমি একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে টোটোয় বসে থাকলেই, ও কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করত। শেষে একদিন না থাকতে পেরে বলেই ফেলল, ‘দাদা, আপানাদের ভালবাসা করতে দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায় গো! কান্না আসে জোর। বউটা আজ ছেড়ে চলে গেল ছ-বছরের ওপর…!’
সেইদিনের পর থেকে আমরা পারতপক্ষে একসঙ্গে ওর টোটোতে উঠতাম না। যদিও কার্তিক আর আমার যোগাযোগ থেকেই গেছিল। মাঝে-মাঝে চায়ের দোকানে ও আসত। কথা হত। এভাবেই চলছিল। কোনও একটা অজ্ঞাত কারণে কার্তিকের ওপর আমার মায়া পড়ে গেছিল। বাড়িতে ভাল-মন্দ কিছু হলে ডেকে খাওয়াতামও। ও বুঝত সেটা। মাঝে-মাঝে অভিমান করে বলত, ‘আর তো ক-টা মাস, চলে গেলে কি আর কার্তিককে মনে থাকবে দাদা!’
৩
কার্তিককে কোনওদিন ওর বউয়ের কথা কিংবা পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করিনি। একদিন নিজেই ও শুনিয়েছিল ওর জীবনের করুণ কাহিনি। যা-যা বলেছিল, সেটুকুই লিখছি।
কার্তিকের বাবা চাকরি করতেন পুরুলিয়ারই কোনও এক স্কুলে। ওদের আদি বাড়ি বাঁকুড়ায়। ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে, ওরা দুই ভাই বাবার সঙ্গে বেড়াতে আসে পুরুলিয়ায়। স্কুলেই বাবার সঙ্গে থাকে। চুরাশির অক্টোবরে ইন্দিরার মৃত্যুতে স্কুল-প্রিন্সিপাল বাড়ি চলে যান। যাওয়ার আগে নির্দেশ ছিল তাঁর: ‘আমি না আসা অবধি ছেলেদুটো যেন এখানেই থাকে!’ তিনি ফেরেন পঁচাশির মাঝামাঝি। এসেই প্রথম প্রশ্ন: ‘বাচ্চারা কিছু চুরি-টুরি করেনি তো?’ না শুনে অবাক হন খুবই। তাঁর অনুপস্থিতিতে অল্প-মাইনে-পাওয়া বাবার ছেলেরা চুরি করবে, এটাই যেন তাঁর কাছে প্রত্যাশিত ছিল। এরপরে ডাক পড়ে কার্তিকের। সে যে বিশ্বাস অর্জন করেছে! ফলে, ওই স্কুলেই চাকরি হয়ে যায় তার।
২০০৬ সালে আসে নতুন ম্যানেজমেন্ট। তারা বলে, ‘তোকে আর রাখা যাবে না রে!’ কারণ জানতে চাওয়ায় দেগে দেওয়া হয় ‘চালচোর’ বলে। চুরির অপবাদে চাকরি হারায় কার্তিক। তারপর থেকে কলের মিস্ত্রি হয়ে, দিন কাটতে থাকে তার। এই সময়ে বিয়েও হয়। সে রামকিঙ্কর বেইজের নাম জানে। বাঁকুড়ার লোক। জানে যামিনী রায়ের কথাও। ভাসা-ভাসা। পুরুলিয়ার রুক্ষ আবহাওয়ায় তার মনকেমন বাড়তে থাকে। বিয়ে করেও, ঘরে মন টেকে না। নিঃসঙ্গ লাগে। এবং তার কাছাকাছি সময়েই বাজারে ঢোকে ফেসবুক।
কার্তিক তিন-চার বছর পর ফেসবুক জয়েন করে। বন্ধু হয় তার। হাজার-হাজার বন্ধু। সুদূর বেনারস থেকে ছাতনা— তার হাতের মুঠোয়। বাড়িতে এসেও ফেসবুকে ডুব। নেশা বাড়তে থাকে। বউ চেঁচায়। চলে উপেক্ষা। একদিন যখন অশান্তি চরমে, বউ হুমকি দেয়, হয় সে থাকবে নয় ফেসবুক। দুখি কার্তিক তার এক বন্ধুকে সব খুলে বলে। বন্ধু পরামর্শ দেয়, ‘তুই আমার বাড়িতে এসে ফেসবুক করিস। বাড়িতে এসব করার দরকারই-বা কী!’ কার্তিকের এই পরামর্শ পছন্দ হয়ে যায়।
দিন গড়াতে থাকে। কলের কাজ রোজ থাকে না যেহেতু, কার্তিক ঘুম থেকে উঠেই বন্ধুর বাড়ি চলে যায়। বন্ধু চলে যায় চাকরিতে। সারা বাড়িতে বন্ধুপত্নী-সহ কার্তিক। আমাদের নিঃসঙ্গ কার্তিক। মুদি দোকানে কিংবা অন্যান্য জায়গায় বন্ধুপত্নীর সঙ্গে তাকে একসঙ্গে দেখা যেতে থাকে। চারপাশে কথা ওঠে। হাওয়া গরম হয়ে যায়। কার্তিকের বউ একদিন কার্তিকের অনুপস্থিতিতে সেই মেয়েটিকে গিয়ে দু’ঘা দিয়ে আসে। তার ধারণা হয়, কার্তিককে সে ছিনিয়ে নিচ্ছে তার কাছ থেকে। এদিকে কার্তিক এই ঘটনায় জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। বউকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়, রাগের মাথায়। মন তিক্ত হয়ে ওঠে।
এক মাস। দু’মাস। তিন মাস। ভাল কি লাগে একা! কার্তিক বন্ধুর কাছে গিয়ে ক্ষমা চায়। বলে, ‘আর ভাল লাগে না রে! কিছু একটা পরামর্শ দে। লকডাউনে কাজকম্মও নেই, বউও ছেড়ে চলে গেল, এটা কি একটা জীবন!’ বন্ধু সেবারে যে-পরামর্শ দেয়, তা মোক্ষম। সে বলে, ‘তুই একটা টোটো কিনে নে। তাহলে তোকে সারাদিন বাইরেই থাকতে হবে! কী করছিস, বউ দেখবে না। লোক এলে গাড়ি চালাবি, বাকি সময়টা ফেসবুক!’এর চেয়ে ভাল পরমার্শ আর হয় না। কার্তিক তাই করে। কিন্তু তাতেও বউ নাকি আর ফেরেনি ওর কাছে।
কার্তিক যখন কথাগুলো বলছিল, খেয়াল করছিলাম ওর চোখের কোণদুটো চিকচিক করছে। আরও বলেছিল সে, তার বউ নাকি সঞ্জয় দেওঘড়িয়া নামে এক কারখানার ম্যানেজারের সঙ্গে প্রেম করে। কার্তিককে দেখিয়ে-দেখিয়ে। এমনকী কার্তিকের সামনেই কয়েকবার… ইত্যাদি-ইত্যাদি। আমি সেদিন কোনও কথা বলতে পারিনি। কীই-বা বলতাম! কয়েক মাসের জন্য অচেনা জায়গায় গিয়ে কোর্টের বিচারপতির ভূমিকায় নামা শোভা পায় না। তার চেয়েও বড় কথা, দু’জন প্রাপ্তবয়স্কের সম্পর্কের জটিলতায় ঢুকে কারও পক্ষ নেওয়া মূর্খেরই কাজ নয় কি?
দিন গড়াতে থাকে। কলের কাজ রোজ থাকে না যেহেতু, কার্তিক ঘুম থেকে উঠেই বন্ধুর বাড়ি চলে যায়। বন্ধু চলে যায় চাকরিতে। সারা বাড়িতে বন্ধুপত্নী-সহ কার্তিক। আমাদের নিঃসঙ্গ কার্তিক। মুদি দোকানে কিংবা অন্যান্য জায়গায় বন্ধুপত্নীর সঙ্গে তাকে একসঙ্গে দেখা যেতে থাকে। চারপাশে কথা ওঠে। হাওয়া গরম হয়ে যায়।
কার্তিক কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে উঠে গেছিল সেদিন। আমিও তারপর পুরুলিয়া ছাড়ি মাস দুয়েকের মধ্যেই। অরুণা চলে যায় পঞ্জাব। মাঝে-মাঝে ওই সময়টার জন্য মনকেমনই করত, যখন অরুণা ফোনে কথা বলতে-বলতে কেঁদে ফেলত। কার্তিকও দু’চারবার ফোন করেছে। এ-কথা সে-কথার পর অবধারিতভাবে একবার-না-একবার বলতই, ‘আসুন না গো, কতদিন দেখা নেই! দেখতে মন চায় দাদা!’ আমি নিজে থেকে কখনও ওকে ফোন করিনি। হাজার ব্যস্ততা তো ছিলই, কিন্তু এটাই সত্যি যে, কার্তিককে ফোন করার প্রয়োজনীয়তা বা টান কোনওটাই অনুভব করিনি ফিরে এসে। তারপর তো এই সংবাদ ফোনে! মনটা বিষণ্ণই হয়ে উঠেছিল কিঞ্চিৎ।
৪
শ্যামলকে ফোনে পেলাম কয়েকদিন পরে। কথা হল অনেকক্ষণ। এবং ফোনে সেদিন সে যা বলল, আমি প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরেও করেছি কি? জানি না। কত কথাই তো থাকে, যা বিশ্বাস করতে মন চায় না; তবু বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধ্যে দোল খেতে-খেতে বিশ্বাস করতেই ইচ্ছে করে। কার্তিকও মরে গিয়ে আমায় এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ঠেলে দিয়ে গেল। শ্যামল কথায়-কথায় জানায়, বেলা আর কার্তিকের প্রেম করে বিয়ে। বেলা যেমন পাগলের মতো কার্তিককে ভালবাসত, কার্তিকও সেরকমই ভালবাসত বেলাকে। তবে সমস্যা শুরু হয় বিয়ের পর। যৌনতা করার সময়ে কার্তিক কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে থাকত। বেলা বুঝতে পারত না। সন্দেহ হত, কার্তিকের নির্ঘাত অন্য কাউকে পছন্দ। নিশ্চয়ই সে ফেসবুকে লুকিয়ে-লুকিয়ে অন্য মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে। এই নিয়ে অশান্তি, তুলকালাম। বেলা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। আর আসেনি। মারা যাওয়ার খবর পেয়ে এসেছে। কান্নাকাটি করছে। শ্যামলকে বাধা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, ‘সত্যিই কি কার্তিকের অন্য কাউকে পছন্দ ছিল, শ্যামল?’ শ্যামল বলে, ‘না দাদা, পছন্দ হবে কী করে! ও যে পুরুষদের পছন্দ করত। অনেক পরে আমায় বলেছে ও সেই কথা। বছর দুয়েক হল অল্প-অল্প নেশা করাও শুরু করেছিল; উইতেই তো যা সর্বনাশ হবার…।’
সব ওলটপালট হয়ে গেল আমার। কার্তিক তাহলে আমাকে যা বলেছিল, সব মিথ্যে? কেনই-বা সে বলেছিল আমাকে ওই ধরনের কথা! বেলা সম্পর্কে যা-যা সে বলেছিল, তা তো শ্যামলের বয়ানের সঙ্গে মিলছে না। কাকে বিশ্বাস করব আমি? শ্যামল না কার্তিক? বেলার ফোন করে ‘আমার হারুটো কাল চলি গেল গো’ বলে কান্নাকে কীভাবে দেখব আজ থেকে? অরুণাকেও এত সব কথা কখনও খুলে বলা হয়নি। অপ্রয়োজনীয় বলেই বলিনি হয়তো। কিন্তু অরুণার সামনেই, ওই একবারই কার্তিক বলেছিল, ‘দাদা, আপানাদের ভালবাসা করতে দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায় গো! কান্না আসে জোর। বউটা আজ ছেড়ে চলে গেল ছ-বছরের ওপর…!’
কেন কান্না পেত কার্তিকের, আমি কি কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছি!