ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • শব্দের হাজারদুয়ারি

    শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় (March 16, 2025)
     

    বাঙালির অভিধান-প্রাপ্তির শুরুর দিনগুলিতে ইউরোপীয়দের উদ্যোগ সুমুদ্রিত হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। সেই কবে— ১৭৪৩ সনে পর্তুগালের অতলান্তিক ছোঁয়া লিসবোয়া নগরীতে ছাপা মনোএল্‌-দা-আস্‌সুম্পসামের পর্তুগিজ-বাংলা শব্দকোষ থেকে এর সূচনা। শুরু থেকেই বাংলা ভাষার অভিধানচর্চার বড় অংশটাই একক উদ্যোগের পরিশ্রম-লাঞ্ছিত। সংঘের শরণে আমাদের ঘোর অনীহা। যদিও পাশ্চাত্যের ছবি ঠিক উলটো পথে হেঁটেছে গত একশো বছরে। উনিশ শতকেই বাংলা অভিধান নিয়ে রকমারি উদ্যোগ চোখে পড়তে থাকে। আর, বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই আমাদের হাতে এসে গেছে সুবলচন্দ্র মিত্র, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের অভিধান; ক্রমে প্রকাশিত হয়েছে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ও। এই সব বিপুলকায় গ্রন্থের পাশে ‘আধুনিক বঙ্গভাষার’ ছিপছিপে একটি অভিধান সংকলন করেছিলেন রাজশেখর বসু— ‘চলন্তিকা’ (১৯৩০)। চলন্তিকা শব্দের অর্থ সম্ভবত তার আগে কোনও অভিধানে সংকলিত হয়নি, রাজশেখর বাধ্যত নিজের অভিধানে ‘চলন্ত’ আর ‘চলা’র মাঝে ‘চলন্তিকা’-র জন্য একটি এন্ট্রি তৈরি করে লিখলেন¾ ‘অল্প কথায় চলিত শব্দার্থ’।    

    অভিধান এক আশ্চর্য বৈপরীত্যের সুষমায় মণ্ডিত। এর ব্যবহার আটপৌরে কিন্তু জন্মরহস্য জটিল ও কঠোর নিয়মবদ্ধ। এই বই কাচের আলমারির শোভাবর্ধক নয়, কেজো। অনপুটডাউনেবলও নয়, এর ব্যবহার ইনএভিটেবল। বংশপরম্পরায় বইয়ের তাকে থেকে যাওয়া অন্ধের যষ্টি। সবটা পড়ে না কেউ, প্রয়োজনে দেখে নেয়। অভিধানে কী দেখে মানুষ? চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন চারটি জিনিসের কথা— শব্দের ব্যুৎপত্তি, শব্দার্থের ব্যাখ্যা, ঠিক বানান এবং উচ্চারণ। আর ‘চলন্তিকা’র মলাটে প্রায় বিজ্ঞাপনের মতো যে-কথাগুলো ছাপা আছে সেটা পড়তে গিয়ে যদিও কখনো সুকুমার রায়ের ‘নোট বই’ কবিতার কথা মনে পড়ে যায় তাহলে বলতেই হবে— এহ বাহ্য! প্রচ্ছদ অনুযায়ী ‘চলন্তিকা’য় যেসব প্রশ্নের মীমাংসা আছে, সেগুলি হল—

    “ ‘ক্রন্দসী, খেশ, নাখোদা, পরিপ্রেক্ষিত, সমাবর্তন, সাকী’—মানে কি? ‘অসম্ভব, অসম্ভাব্য: নিমিত্ত, হেতু; লিখন, লেখন’—অর্থের প্রভেদ কি? ‘পাঁচফোড়ন, মহাপাতক, ষোড়শোপচার’—কি কি?

    আরও পড়ুন: অটোমেটিক রাইটিং বলে কিছু হয় না, বিশ্বাস কর‍তেন মতি নন্দী! লিখছেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়…

    ‘তুঙ্গভদ্রা, ত্রিগর্ত’—কোথায়? ‘শিয়া, সুন্নী’—তফাত কি? ‘খ্রীষ্টাব্দ, সংবৎ’—পরস্পর সম্বন্ধ কি? ‘তোলা’—কত গ্রেন ? ‘কাদাখোঁচা, হিঙ্গুল’—ইংরেজীতে কি? ‘কাঁচকড়া, যবক্ষার, সুর্মা’—কি জিনিস?

    ‘আরতি, উলঙ্গ, মিনতি’—সংস্কৃত কিনা? ‘ভাগাড়, পেরেক, মিস্ত্রী’—কোন্ ভাষা হইতে আসিয়াছে? ‘কেরানী’ না ‘কেরাণি’? ‘জন্মিল’ না ‘জন্মাইল’? ‘উলটে’ না ‘উলটিয়ে’? ‘বললে’ না ‘বল্ল’? ‘উনান, উনন, উনুন’—কোন্‌টি সাধু, কোন্‌টি চলিত?”

    ‘Abstract, antiseptic, budget, data, heredity, parabola, refraction, civil supply’—বাংলা কি? ”

    ‘চলন্তিকা’ প্রকাশের পর ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ সালে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘এতদিন পরে বাঙলা ভাষার অভিধান পাওয়া গেল। পরিশিষ্টে চলন্তিকায় বাঙলার যে সংক্ষিপ্ত ব্যাকরণ দিয়েছেন তাও অপূর্ব হয়েছে।’ এই কথাগুলি রবীন্দ্রনাথ পছন্দের লেখকের পিঠ চাপড়ে দেবার জন্য লিখেছিলেন বলে মনে হয় না। বাংলা ভাষার আঁতের কথা নিয়ে তাঁর ভাবনাও নতুন নয়। এমনকী সেই ‘বালক’ পত্রিকার সময়েও তিনি বাংলা ভাষার শব্দার্থ নিয়ে ভেবেছেন। পৌষ ১২৯২-এর ‘বালক’-এ পাঠকদের উদ্দেশে জানানো হয়েছিল— “বালকের যে-কোনো গ্রাহক ‘হুজুগ’, ‘ন্যাকামি’ ও ‘আহ্লাদে’ শব্দের সর্বোৎকৃষ্ট সংক্ষেপ সংজ্ঞা (definition) লিখিয়া পৌষ মাসের ২০ শে তারিখের মধ্যে আমাদিগের নিকট পাঠাইবেন তাঁহাকে একটি ভালো গ্রন্থ পুরস্কার দেওয়া হইবে। একেকটি সংজ্ঞা পাঁচটি পদের অধিক না হয়।” ফাল্গুন সংখ্যায় তিনি এই প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহণকারীদের উত্তর নিয়ে লেখা গদ্যটিতে বলেন,  ‘ঐ কথাগুলি যখন ব্যবহার করি তখন কাহারো বুঝিবার ভুল হয় না, অথচ স্পষ্ট করিয়া অর্থ জিজ্ঞাসা করিলে ভিন্ন লোকে ভিন্ন অর্থ বলিয়া থাকেন।’ বাংলা ভাষা নিয়ে এই সংকট তিনি খুব অল্প বয়সেই বুঝেছিলেন। সংকটটা ভাষারও নয়, ভাষাচর্চার বললেই ঠিক হয়। আর রাজশেখরের প্র্যাগমেটিক অ্যাপ্রোচের সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের মতের বেশ মিল ছিল। প্রসঙ্গত বলে রাখা উচিত, ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানানবিধির কাজেও রাজশেখর বসু-ই ছিলেন সভাপতি। এই বানানবিধি বেরুলে রবীন্দ্রনাথের সেই অঙ্গীকারও ভোলার নয়— ‘বাংলা বানান সম্বন্ধে যে নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট করিয়া দিলেন আমি তাহা পালন করিতে সম্মত আছি’।

    ‘চলন্তিকা’য় কী করতে চাইছিলেন রাজশেখর? একটা ছোট অভিধান সংকলন করা তাঁর লক্ষ্য ছিল, যেটিকে সহজে নাড়াচাড়া করা যায়। যে-যে প্রয়োজনে আমরা অভিধান দেখি তা ‘বিনা বাহুল্যে সাধিত’ করাটাও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেছেন যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়, বা যারা আধুনিক চলিত ভাষা সম্পর্কে ততটা পরিচিত নয় তারাও যাতে এই অভিধান কাজে লাগাতে পারে।  

    রাজশেখর ভাষা নিয়ে কাজ করলেও ভাষা-মৌলবাদী ছিলেন না। তিনি জানতেন আজকে যাকে ‘মৌখিক বিকৃতি’ বলে আমরা পাশে সরিয়ে রাখছি, কাল তা হয়তো অবলীলায় প্রবেশ করবে চলিত বাংলার খোপে, তাই এ-বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না টেনে সময়ের অনুগামী হতে চেয়েছিলেন তিনি। সময়ের অনুগামী, কিন্তু চলতি হাওয়ার পন্থী নয়। তাই তাঁর অভিধান থেকে তুলনায় অপ্রচলিত শব্দ একেবারে বর্জিত হয়নি, নতুন পরিভাষার সঙ্গেই ঠাঁই পেয়েছে পরিশিষ্টে।

    ‘চলন্তিকা’য় গুরুত্ব পেয়েছে সে-সময়ের বাংলা সাহিত্যে ‘প্রচলিত ও প্রচলনযোগ্য’ শব্দাবলি। তিনি পাঠককে এ-কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ‘চলিত’ বাংলা আর ‘মৌখিক’ বাংলা আসলে এক নয়— ‘চলিতভাষা সাধুভাষার তুল্যই লৈখিক বা সাহিত্যিক ভাষা’। রাজশেখর ভাষা নিয়ে কাজ করলেও ভাষা-মৌলবাদী ছিলেন না। তিনি জানতেন আজকে যাকে ‘মৌখিক বিকৃতি’ বলে আমরা পাশে সরিয়ে রাখছি, কাল তা হয়তো অবলীলায় প্রবেশ করবে চলিত বাংলার খোপে, তাই এ-বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না টেনে সময়ের অনুগামী হতে চেয়েছিলেন তিনি। সময়ের অনুগামী, কিন্তু চলতি হাওয়ার পন্থী নয়। তাই তাঁর অভিধান থেকে তুলনায় অপ্রচলিত শব্দ একেবারে বর্জিত হয়নি, নতুন পরিভাষার সঙ্গেই ঠাঁই পেয়েছে পরিশিষ্টে।

    ‘চলন্তিকা’র জন্য আরেকটি জরুরি কাজ করতেই হত রাজশেখরকে— ‘শব্দের জাতি’ নির্ণয়। সে-কাজটিতে তিনি সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ও.ডি.বি.এল (ওরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ)-এর সাহায্য নিয়েছিলেন। সুনীতিকুমার রাজশেখরের মতোই রবীন্দ্রনাথের নিকটজন। বাংলা ভাষাচর্চায় সুনীতিকুমারের তাক লাগানো বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৬ সালে। ‘চলন্তিকা’য় সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ নিয়ে সংকলকের সামনে খুব জটিলতা কিছু ছিল না, যতটা ছিল অসংস্কৃত শব্দ নিয়ে। অসংস্কৃত মানে— ‘অপভ্রষ্ট, সংস্কৃতজাত, বৈদেশিক, মিশ্রিত, দেশজ বা অজ্ঞাত মূল শব্দ’।

    অন্যদিকে শব্দের অর্থ লেখার সময়ে একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ কীভাবে সাজানো হবে তা-ও ভাববার বিষয় ছিল। রাজশেখর এক্ষেত্রে ‘চলন্তিকা’য় খানিকটা সাবজেকটিভ। তিনি প্রচলন অনুসারে শব্দার্থের ক্রম স্থির করেছেন। যেমন, ‘অসংগত, অসঙ্গত’ এন্ট্রিতে অর্থ সাজানো হয়েছে— ‘অনুপযুক্ত, বেখাপ। যুক্তিবিরুদ্ধ, অন্যায্য।’ সহজেই অনুমেয়, কেন এই সাজানোকে সাবজেকটিভ বলতে চাইছি। এছাড়া সংকলকের অন্য কিছু করারও উপায় ছিল বলে মনে হয় না। অভিধান খুব দেড়ে-কষে বিজ্ঞানসম্মত হতে চাইলেও ভাষার অন্তরাত্মায় যে চিরকালই অসম্ভবের সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে থাকে। তাই রাজশেখর নিজেই লিখেছেন ‘চলন্তিকা’য় এর ব্যতিক্রম কম নয়। আবার অভিধানের আকার ছোট করার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শব্দের পদ পরিচয় অনুল্লিখিত থেকে গেছে। যেখানে সংশয় হতে পারে বলে সংকলকের মনে হয়েছে, সেখানেই পদের পরিচয় সন্নিবিষ্ট হয়েছে। তবে সবচেয়ে কঠিন ছিল বাংলা ক্রিয়াপদকে সামলানো। ইংরেজির তুলনায় বাংলায় ক্রিয়ার বিভক্তি অনেক বেশি। তাই ইংরেজিতে ক্রিয়ার সমস্ত রূপ অভিধানে দেখানো বা সূত্রাকারে নির্দেশ করা যায়। কিন্তু রাজশেখর বাংলায় সে-কাজ করবেন কী করে? বাংলা ভাষায় সাধু-চলিত, পুরুষ-বচন, গুরু-সামান্য-তুচ্ছ প্রয়োগ, কালের ভেদ, অনুজ্ঞা, ণিজন্ত প্রয়োগ, কৃদন্ত প্রয়োগ— কী নেই? তাই তিনি ক্রিয়ার অর্থ বোঝাতে প্রচলিত প্রথা মেনে একটি কৃদন্ত পদ দিয়েছেন, তারপর বন্ধনীর মধ্যে ধাতু ও গণ-সংখ্যা লিখেছেন। ‘চলন্তিকা’র শেষে ক্রিয়ারূপ-প্রকরণে মুখ্য বাংলা ধাতুগুলিকে কুড়িটি বিভিন্ন গণে ভাগ করা হয়েছে। সেই প্রকরণে বাংলা ক্রিয়াপদের নানারূপ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। জ্ঞানেন্দ্রমোহন, হরিচরণে এই তালিকা নেই, কিন্তু ‘চলন্তিকা’য় আছে। যদিও পরবর্তীকালের অনেক অভিধানেই এই ধাতু ও ক্রিয়াপদের তালিকা থাকে।

    শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে রাজশেখর বসু

    অন্য সব ক্ষেত্রের মতোই অভিধানকারেরও মনোগঠনই কাজের অভিমুখ নির্দেশ করে। ভাষা-ভাবুক মণীন্দ্রকুমার ঘোষের সঙ্গে রাজশেখরের কথালাপ পড়ে রাজশেখরকে বানান নিয়ে খানিক জবরদস্তি-পন্থী মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ১৯৫৮ সালে রচিত ‘গ্রহণীয় শব্দ’ নামে একটি ছোট্ট লেখায় ভাষা ও তার বদল নিয়ে রাজশেখরকে যথেষ্ট ভারসাম্যবাদী লাগে। ওই লেখায় তিনি বলছেন—

    ‘বাঙলা ভাষা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। তার এক কারণ, বাঙালীর জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অর্থাৎ নূতন বস্তু নূতন ভাব নূতন রুচি নূতন আচারের প্রচলন। অন্য কারণ, অজ্ঞাতসারে বা ইচ্ছাপূর্বক ইংরেজী ভাষার অনুকরণ। মৃত ভাষা ব্যাকরণের বন্ধনে মমির মতন অবিকৃত থাকতে পারে, কিন্তু সজীব চলন্ত ভাষায় বিকার বা পরিবর্তন ঘটবেই। আমাদের আহার পরিচ্ছদ আবাস সমাজব্যবস্থা আর শাসনপ্রণালী যেমন বদলাচ্ছে, তেমনি শব্দ শব্দার্থ আর শব্দবিন্যাসও বদলাচ্ছে।’

    গোঁড়ামি যাদের মজ্জাগত তারা বদল মানতে পারবে না এ খুবই স্বাভাবিক। তাই বলে অন্ধবিশ্বাস তাড়াতে গিয়ে হুজুগে গা ভাসাতেও রাজশেখরের অনীহা। তাই তিনি সবসময়ে চেয়েছেন মাতৃভাষার শব্দ, শব্দের অর্থ বা প্রয়োগকে বুঝে নিয়ে ব্যবহার করতে। বিশ শতকের আধুনিক বাঙালির এই অন্বিষ্ট জ্ঞানচর্চার অন্যত্রও দেখা যায়। প্রয়োজনে একটু আঁটো ভাব এনে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজও করেছেন রাজশেখরের মতো মানুষেরা। ‘চলন্তিকা’ সেই মানসিকতারই ফসল। ভাষাবিজ্ঞান-ঘটিতনানা বিষয়ের বেড়া টপকে দীর্ঘকাল যা বাঙালির রেডি-রেকনার ছিল।

    সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে বাংলা ভাষার ব্যাকরণে, বিশেষ করে বানানরীতিতে ফের বদল এসেছে। আজ রাজশেখরের বানানো শব্দ-প্রাসাদ খানিক জরাগ্রস্ত। কিন্তু শব্দের সেই হাজারদুয়ারিতে পা রাখলে টের পাওয়া যায় তার এককালের বৈভব। ‘চলন্তিকা’ বৃদ্ধ হলেও বাঙালির কাছে তার পরামর্শের মূল্য কমেনি। এমন অভিধানের শেষ শব্দটিও মন কেড়ে নেওয়ার মতোই— ‘আনন্দদায়িকা’।

     
      পূর্ববর্তী লেখা
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook