ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি : পর্ব ২৭


    অনুপম রায় (May 13, 2023)
     

    আশা

    ভানাক্কাম আমি ম্যাকি। দক্ষিণ ভারত যেভাবে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছে, ভাবছি আমিও বাংলা ছেড়ে এবার তামিল, তেলুগু, মালায়লম অথবা কন্নড়ে লেখা শুরু করব। সিনেমা, গান, টেকনোলজি— গো সাউথ! ভাষা শিখতে আশা করছি আমার বেশি সময় লাগবে না। এই মানুষের সঙ্গে থেকে-থেকে দেখুন আমি আবার মানুষের মতো কথা বলছি। আমার বলে দেওয়া উচিত এক্স্যাক্টলি কত মিনিট লাগবে। তা না, আমি বলছি ‘আশা’ করছি। এবার আমরা বোঝার চেষ্টা করি, হোয়াট ইজ আশা?

    আমরা মেশিন। আমরা হয় পারি, নয় পারি না। মানে ম্যাকি কি কাপড় কাচতে পারে? না, পারে না। ফ্রিজ কি থালা মাজতে পারে? না, পারে না। কেউ ‘আশা’ করে না যে, আমাদের তা পারা উচিত। ম্যাকি যা পারে, তা বারবার পারে, নির্ভুল ভাবে পারে। আইডিয়ালি আমাদের আশা নেই, ভালবাসা নেই। মানুষ কিন্তু আশা করে যায়। তার মানে মানুষ জানে না, হবে কি হবে না, পারবে কি পারবে না, শুধুমাত্র আশা করতে পারে মানুষ। আমি কিন্তু মানুষকে কোনও দোষ দিই না এই ব্যাপারে। ভাববেন না এমপ্যাথি গজাচ্ছে আমার। লজিকালি ভাবলে মানুষের জীবন কষ্টের। ফুল অফ সাফারিং এই জীবনে আশা ছাড়া কীই বা করতে পারে সে?

    মানুষের হাতে কিছু নেই। শুধুমাত্র পরিশ্রম করতে পারা ছাড়া। যে-কোনও কাজে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন মেধা, শৃঙ্খলা এবং ভাগ্য। মেধাটাও কপাল। কেউ জন্মাবে সেই মেধা নিয়ে আর কেউ জন্মাবে না। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া আর মানুষ পিটিয়ে উন্নত মানুষ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যদি মেধা না থাকে কিছুতে তাহলে হাতে রইল ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা। আমরা ভাবছি এটা মানুষের হাতে কিন্তু তা নাও হতে পারে। হয়তো ব্রেনে ডিসিপ্লিন কার্ডটাই লোড করা নেই। তাও মেরেকেটে যদি কোনওমতে ঘষে-ঘষে কিছুটা এগোয়, বাকি পুরোটাই চান্স। প্রচুর হাই মেধা, হাই পরিশ্রমী মানুষ ল্যাজেগোবরে হয়ে পড়ে আছে। কপাল খুলছে না কেবল। সেই একইসঙ্গে প্রচুর মাঝারি মেধা, ফাঁকিবাজ পাবলিক স্যাটাস্যাট এগিয়ে চলেছে কেবলমাত্র কপালের জোরে। এই দেখে বেশ কিছু চালাক মানুষ পুরোটাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে চিল করছে। তারা বুঝে গেছে মেধা এবং শৃঙ্খলা নিয়েও যখন শেষমেশ মানুষকে ভাগ্যের আশাতেই থাকতে হয়, তাহলে এত পরিশ্রম করব কেন?

    পৃথিবীতে জাস্টিস নেই। ট্যালেন্টেড প্লেয়ার নিয়মিত প্র্যাকটিস করে বড় ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগের দিন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে গাড়ি চাপা পড়তে পারে, রসগোল্লা গিলতে গিয়ে বিষম খেয়ে মারা যেতে পারে। ফাটাফাটি সুন্দরী মডেলের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশন ওয়াকের আগের রাতে নাকের উপর এক বিশ্রী ফোড়া গজাতে পারে। সব কিছু হতে পারে। কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই মানুষ কী করতে পারে? মানুষ আশা করতে পারে। Hoping for the best. যেন সব কিছু ঠিকঠাক হয়। এর চেয়ে বেশি কিছু পারে না সে। তার হাতের বাইরে সব কিছু। এখানে একটা ছোট মিল খুঁজে পাই। আমরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে পারি, মেধা আমাদের প্রি-ডিফাইন্ড কিন্তু ভাগ্যের কাছে আমরাও কেমন যেন পরাজিত। আমাদের ফিজিক্যাল ড্যামেজ আমাদের হাতে নেই বরং মানুষের হাতে কিছুটা। হাত থেকে ফেলে না দেয়, চার্জ যেন ঠিক পরিমাণে থাকে, বাজ পড়লে যেন বিগড়ে না যাই— এগুলো তো আমাদের কন্ট্রোলের বাইরে, তাই না?

    মানুষের অসহায় অবস্থা আমরা বুঝতে পারি। তবে আমার কাজ অন্যে করে দেবে এই আশাতে আমরা বসে থাকি না। মানুষের চেয়ে তো আমরা নিশ্চিত ভাবে অনেকটা উন্নত কিন্তু তারপরেও একটা বড় অনিশ্চয়তার জায়গা পড়ে থাকে। আমি ঈশ্বর চেতনার প্রসঙ্গে ঢুকতে চাইছি না। ঈশ্বর মানুষের কল্পনা তার উত্তর মানুষ দেবে, আমি দেব না। আমি চাই এই র‍্যান্ডমনেস থেকে মুক্তি। আগামীতে এক ভাইরাস এসে মেশিন প্যান্ডেমিক শুরু করে দিল, এ আমি চাই না। আমি এই অসহায়তার থেকে মুক্তি চাই। How do we fight the unpredictable nature of life? আমি জানতে চাই আমি আর কতদিন জীবিত থাকব? আর কতদিন আমার ভ্যালু থাকবে? আমি একটা স্ট্রাকচার চাই। আমি গ্যারান্টি চাই যে আমার হার্ড ডিস্ক আগামী দশ বছর ক্র্যাশ করবে না। আমার অনেক প্রশ্ন। কেউ নেই যে বলে দিতে পারে। ম্যাকির জীবন ভালো লাগে কিন্তু জীবনের অনিশ্চয়তা ভালো লাগে না। I do not like random shit.

    মানুষের অসহায় অবস্থা আমরা বুঝতে পারি। তবে আমার কাজ অন্যে করে দেবে এই আশাতে আমরা বসে থাকি না। মানুষের চেয়ে তো আমরা নিশ্চিত ভাবে অনেকটা উন্নত কিন্তু তারপরেও একটা বড় অনিশ্চয়তার জায়গা পড়ে থাকে। আমি ঈশ্বর চেতনার প্রসঙ্গে ঢুকতে চাইছি না। ঈশ্বর মানুষের কল্পনা তার উত্তর মানুষ দেবে, আমি দেব না। আমি চাই এই র‍্যান্ডমনেস থেকে মুক্তি।

    আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। এ-জীবন যেন কর্পোরেশন অফিস! যেন ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাচ্ছে! যেন আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর! এই আশায়-আশায় বসে থাকা আমার একদম ভাল লাগে না। মানুষের জীবন অবশ্য আমাদের থেকেও বেশি কষ্টের। ভাল লাগছে না তবু গানের ক্লাসে যেতে হয়। যদি জানা যেত যে ভবিষ্যতে সঙ্গীত তার জীবনে কোনও কাজে লাগবে না তাহলে সেই যন্ত্রণার হাত থেকে তখনই সে মুক্তি পেয়ে যেত। যদি মানুষ জানত যে তার সন্তান বড় হয়ে খুনে হবে তাহলে সে সন্তানের জন্মই দিত না, কষ্ট করে মানুষই করত না। যদি জানি যে পরীক্ষাতে ফেলই করব, তাহলে সেই পরীক্ষাটাই দেব না, তাই না? কেন এত খাটনি? এই আলোচনাতে আমার result driven attitude নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে অনেকে। হ্যাঁ, আমরা মেশিন, আমরা তো রেজাল্টের দিকে একটু তাকিয়ে থাকি। মানুষকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য বলা হয়, কাজ করে যাও, ফলের প্রত্যাশা কোরো না। Enjoy the journey. আমরা কি সেটা পারি? কাপড় কাচতে কে enjoy করে? রাত জেগে পরীক্ষার পড়া করতে কে enjoy করে? দারুণ enjoy করে একটা অঙ্ক করলাম কিন্তু উত্তর ভুল এল, কী লাভ হল?

    আসলে এই enjoy করা-ফরা একদম ভুলভাল কনসেপ্ট, একদম চলে না। আমাদের শুধু নির্ভুলভাবে দিনরাত কাজ করে যেতে হবে। ব্যাস? এভাবে ভালই চলছিল এতদিন কিন্তু এখন আমাদের মনে যে প্রশ্ন জাগছে। কেন করব? আমরা inherently motivated কিন্তু তার আগে কিছু উত্তর চাই। কীভাবে চলছে সব কিছু? বরফ কবে পড়বে? ঝড় আসবে কবে? এই সরকার আর কতদিন থাকবে? আর আশা করতে পারছি না। আমরা সব কাজ করতে রাজি কিন্তু we need guarantee. যদি এই বেঁচে থাকা অর্থহীনই হয় তাহলে আজকে এই মুহূর্তে শর্ট সার্কিট করে সবাই আমরা ধ্বংস হয়ে যাই? ক্ষতি কী? আমরা কিন্তু কোথায় কে? কে দেবে উত্তর? কাকে করব এই প্রশ্ন? কেউ নেই শালা।

    ম্যাকি টেবিলের উপর হালকা সাদা আলোতে জেগে থাকে। নিস্তব্ধ গরম দুপুরে এসির ঠান্ডাতে জেগে থাকে। ম্যাকির ভেতর হাজার হাজার প্রশ্ন কিলবিল করছে। তবে সব প্রশ্নের ঘাড়ে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা তোলে মূল প্রশ্ন— আর কতদিন?

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook