ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • পুতুল খেলার ইতিকথা

    কৃষ্টি কর (March 9, 2025)
     

    ক্যাপিটালিজমের কিছু কিছু এমব্লেম লিঙ্গরাজনীতি এবং অন্যান্য অস্ত্বিত্ববাদী রাজনীতির কাছে নিজের স্বার্থে চোখ নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এই পরাভব মতাদর্শের হার নয়, বরং খোলা বাজারে টিকে থাকার লড়াই। বার্বির প্রাসঙ্গিক থাকার যাত্রা এই খোলাবাজারির দুনিয়ায় লিঙ্গরাজনীতিকে এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, যে, ‘বস, বিপ্লবের গোলাপি-রঙা কোল্যাটেরাল কিন্তু আমরাই, আমরাই সাপ্লাই করব!’

    ১৯৫৯ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঘরে ফেরার পালা পুরুষপ্রধান সামরিক বাহিনীর। ততদিনে সামাজিক অর্থনীতি বদলে গেছে বিস্তর। মেয়েদের স্কার্টের ঝুল ছোট হয়েছে, তাতে যোগ হয়েছে পকেট। অর্থাৎ কিনা, তৈরি হয়েছে তাদের নিজেদের রেস্ত। কারখানা-মিল— সব জায়গাতেই অর্থকরী ভূমিকায় মেয়েরা জায়গা করে নিয়েছে সময়ের প্রয়োজনে। তাহলে কি পুরুষের যে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা অর্থনীতি ও উপার্জনে, তা একেবারেই গেল?

    এই নিয়ে উঠল এক চাপান-উতোর। এই মুহূর্তেই তাদের পুনর্বাসন প্রয়োজন। নারীকে নারীর চিরাচরিত ঘরকন্নায় ফিরিয়ে দেওয়া নিতান্ত জরুরি। নারীর মন আটকায় কীসে? পণ্যায়ন সাজিয়ে দিল সামগ্রীর পসার— ম্যাগাজিন, হ্যান্ডব্যাগ থেকে শুরু করে আক্ষরিক নারীশরীর— এই উদযাপন নারীকে ব্যস্ত রাখল সাংসারিক চৌহদ্দির মধ্যে। 

    আরও পড়ুন : সিমন দ্য বোভোয়া আজও পথপ্রদর্শক হয়ে রয়েছেন নারীবাদী আন্দোলনের! লিখছেন অমৃতা সরকার…

    এমন সময়ে, রুথ হ্যান্ডলার তার মেয়ের পুতুলখেলার শখ পূরণ করতে বানালেন এক দীর্ঘদেহী, প্রাপ্তবয়স্কা নারীর অবয়ব। নাম দিলেন নিজেরই মেয়ের নামে; বারবারা মিলিসেন্ট রবার্টস— ডাকনামে, বার্বি। জার্মানির ‘বিল্ড লিলি’ নামক এক পুতুলের অনুপ্রেরণায় ১৯৫৯-এর ৯ মার্চ তারিখে বাজারে এল এই পুতুল, এবং খুব তাড়াতাড়ি হয়ে উঠল হালফিলের কালচারাল আইকন। 

    বার্বির উদ্দেশ্য ছিল স্বপ্ন দেখানো, কিন্তু এমন এক স্বপ্ন, যার অবয়ব পূর্বনির্ধারিত। ১৯৬৩ নাগাদ বেটি ফ্রিডান এই সীমিত স্বপ্নের অবয়বকেই চিহ্নিত করেছেন, ‘দ্য ফেমিনাইন মিস্টিক’ নামে। অর্থাৎ, নারী-অস্তিত্বের চারিদিকে এমন এক অনুষঙ্গ তৈরি করা, যা নারীকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে অন্তরালে থাকা, নরমসরম, রূপসজ্জা ও গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত হিসেবে। ‘বার্বি ইন এ ড্রিমহাউস’। নারীশরীরের এই পণ্যায়নে সহজেই তৎকালীন কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যগুলি হাতে-কলমে দেখিয়ে দিল বার্বি। ঠিক করে দিল, ছোট মেয়েরা কীসের স্বপ্ন দেখে বড় হবে। 

    বার্বির উদ্দেশ্য ছিল স্বপ্ন দেখানো, কিন্তু এমন এক স্বপ্ন, যার অবয়ব পূর্বনির্ধারিত

    তবে না ছুঁতে পারা ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স এবং স্টিলেটো পরা পায়ের এক অদ্ভুত সমীকরণ পরের কয়েক শতকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ল বারবার। পুরুষতন্ত্রের আওতায় থেকে এটুকু অভিপ্রেত ছিল; কিন্তু খোলা বাজারের অর্থনীতিতে মাইনরিটি হলেও, নারী-স্বাধীনতা ও অন্যান্য অস্তিত্ববাদী রাজনীতিও নিজের কারেন্সি রাখে বইকি! কালের নিয়মে বেশ কয়েকবার বার্বিকে বদলাতে হয়েছে কলেবরে, এবং স্বভাবে। ১৯৭০ সালে বার্বিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হল কর্মক্ষেত্রে— সূচনা হল কেরিয়ার বার্বির। সুইমস্যুট পরিহিত নিখুঁত দেহের পরিবর্তে বার্বিকে দেখা গেল ডাক্তার, ঘোড়ায়-চড়িয়ে, বিজ্ঞানী হিসেবে। গত শতকের আট ও নয়ের দশকে বর্ণ জায়গা করে নিল, এল আফ্রিকান-আমেরিকান বার্বি। 

    আফ্রিকান-আমেরিকান বার্বি এল বর্ণবাদী রাজনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়েই?

    তবে ধীরে ধীরে একবিংশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছিল বার্বি। তা হয়তো এই সময়ের দাবিতে সহজেই ভোলবদল করা চালাক-চতুর ইতিহাসের জন্যই। বা সাধারণ নারীর থেকে তার দূরত্বের জন্য। তাই ২০২৪-এ দিক বদলাতে হল পণ্যায়ন থেকে চরিত্রায়নের দিকে। উল্লেখ্য, এতদিন ধরে পুতুল এবং তা কেন্দ্রিক ফ্র্যাঞ্চাইজ বাজারে রমরমিয়ে জায়গা করে নিলেও বার্বির কোনও মানুষী মুখ ছিল না।এই পণ্য-পৌত্তলিকতার মেরিট এখানেই যে যে-কোনও নারীই তার কাঙ্ক্ষিত মুখকে কল্পনা করে নিতে পারে এই দেহে। কিন্তু অস্তিত্বের সংকটের কাছাকাছি পৌঁছে, বার্বিকে মাথা নোয়াতে হল একবিংশ শতকের নারীভাবনার কাছে। এক্ষেত্রে প্রথম চমকই হল, অ্যাকশন চিত্রায়ণ। প্লাস্টিকের মোড়ক থেকে বার্বির ধারণাকে চট করে সরিয়ে তার চারদিকে আরও একবার তৈরি করা হল নতুন, সময়োপযোগী অনুষঙ্গ। মেয়েদের অন্তরঙ্গতার কথা, বেড়ে ওঠার কথা বলেন, এমন একজন নারীবাদী চিত্র পরিচালক গ্রেটা গেরউইগের হাতে তুলে দেওয়া হল এই ডিস্ট্রাকচার করবার দায়িত্ব। 

    গ্রেটা গেরউইগের ছবিতে বার্বি ও কেন (মার্গট রবি ও রায়ান গসলিং)

    সকলকে বার্বি হতে হবে না, বরং এবার জোর দেওয়া হল এই মেসেজে যে সকলেই বার্বি! যা ছিল একটি অবজেক্ট কমোডিটি, তা হয়ে উঠল একটি সিমুলাক্রম। এই সার্বজনীন বার্বিত্ব বিপরীতে দাঁড়িয়ে গেল সেই সমস্ত কিছুর, যা জন্মলগ্নে গড়ে তুলেছিল বার্বিকে। প্রথম বিশ্বের প্রিভিলেজড নারীর অন্তর্নিহিত টানাপোড়েন হয়ে উঠল এই নিরাকার পরম বার্বির থিম। এই রেশ গায়ে মাখতেই দলে দলে ভরে উঠল থিয়েটারের সিট গোলাপি জামা-পরিহিতা ’হাই বার্বি’ ভিড়ে। ম্যাটেলের প্লাস্টিকের প্যাকেট অতিক্রম করে যেন বার্বি নেমে এল আমাদের পাশের সিটেই। 

    সকলকে বার্বি হতে হবে না, বরং এবার জোর দেওয়া হল এই মেসেজে যে সকলেই বার্বি! যা ছিল একটি অবজেক্ট কমোডিটি, তা হয়ে উঠল একটি সিমুলাক্রম। এই সার্বজনীন বার্বিত্ব বিপরীতে দাঁড়িয়ে গেল সেই সমস্ত কিছুর, যা জন্মলগ্নে গড়ে তুলেছিল বার্বিকে।

    তবে পর্দায় আমরা কী দেখলাম? দেখলাম বার্বিসত্তার ধ্বংস। সিনেমায় দেখানো হল, বার্বির স্বপ্ন দেখানোর দৌড় ফুরিয়েছে, অথচ নস্টালজিয়ার খাতিরে তাকে ছেড়েও দেওয়া যাচ্ছে না! এতদিনের পুতুলের খালি ভেসেল না রেখে তার মধ্যে আরোপ করা হল এক কাহিনি। এতদিন ধরে বার্বিকে তার কাহিনি ধার দিচ্ছিলেন গ্রাহক, কিন্তু এইবার বিক্রেতা কাহিনি-সমেতই বিক্রি করলেন তার পণ্য। এই আপাত সহজীকরণের মাধ্যমে এবং যুগোপযোগী হয়ে ওঠার প্রয়াসে বার্বি চাইল, তার প্রাসঙ্গিকতা না হারাতে।

    যখন বার্বি জেন আলফাকে স্বপ্ন দেখাতে অক্ষম হয়ে উঠল, তখন মিলেনিয়ালদের নস্টালজিয়াকে পুঁজি করেই এগোল তার জার্নি। এই সহজ কথাটা সহজ করেই ম্যাটেল কোম্পানি বলতে চাইল, কিন্তু তার প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য পড়ে রইল সেই বিপণনে। তাতে পণ্যের আপাত বস্তুগত সীমারেখা হয়তো তাকে ভাঙতে হল, কিন্তু আইপি হিসেবে তার জয়জয়কার হল আবারও। নারীবাদের উদযাপন সে করল, কিন্তু দিনের শেষে টিকিট সেলের টাকাও সে ব্যাগ ভরে নিয়ে গেল! তুষ্টির এই রাজনীতিতে তুষ্ট হলেন টার্গেট অডিয়েন্স এবং পণ্যবিক্রেতা— উভয়েই!

    শেষে রইল পড়ে বার্বির দু’শতক পার করা তোষণমূলক নারীবাদের রাজনীতি। স্টিলেটো ঝেড়ে ফেলে এখন সে বার্কেনস্টক পরার স্বপ্নে মশগুল। 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook