ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিস্মৃত প্রতিভা

    রাজীব চক্রবর্তী (March 13, 2025)
     

    ১৯২৬ সালে যখন তাঁর গান প্রথমবার গ্রামোফোন রেকর্ডে উৎকীর্ণ হচ্ছে, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১। সম্পন্ন ঘরের মেয়ে। বাবা আশুতোষ সোম, মা সরযূবালা। বাবার কর্মসূত্রে তাঁদের বাস তখন ঢাকায়। কিন্তু রেকর্ড করার জন্য ছোট্ট রাণুকে কলকাতায় আসতে হয়নি— হিজ় মাস্টার্স ভয়েসের ‘কর্মকর্তারা ঢাকাতে গিয়েই মেশিন ফিট করেছিলেন। টিকাটুলিতে সুশংয়ের রাজার একটি বাড়ি ছিলো। সেই বাড়িটিতেই যন্ত্র ফিট করা হয়েছিলো, সেখানে গিয়েই গান গেয়েছিলাম আমি।’ ব্যতিক্রমী ঘটনা। ওই একই দিনে ভবিষ্যতের আর-এক বিখ্যাত গায়ক রেণুকা (সেনগুপ্ত) দাশগুপ্তেরও গান রেকর্ড করা হয়েছিল। ভারতে গ্রামোফোন রেকর্ড আসার তৃতীয় দশক সেটা। ১৯০২-এর ৮ নভেম্বর কলকাতায় প্রথমবারের জন্য গ্রামোফোন রেকর্ডে গান ‘ধরে’ রাখার উদ্‌যোগ শুরু করে গ্রামোফোন অ‍্যান্ড টাইপরাইটার কোম্পানি— যেটি পরবর্তীকালে হিজ় মাস্টার্স ভয়েস নামে আমাদের দিনযাপনের অঙ্গ হয়ে উঠবে।

    কেমন ছিল প্রথম দিনের সেই রেকর্ডিং-এর অভিজ্ঞতা? তাঁর লেখাতেই সে-কথা ধরা আছে— ‘তখন মাইক ছিলো না, ধুতুরা ফুলের মতো দেখতে মস্তবড়ো এক চুঙির ভিতর মুখ দিয়ে গান গাইতে হতো।’ সে-সময়ে ইলেকট্রিক্যাল রেকর্ডিং ব্যবস্থা শুরু হয়নি, আয়োজন চলছে মাত্র। ফলে এইভাবেই রেকর্ডিং করাটা সে-সময়ের একমাত্র পদ্ধতি।

    আরও পড়ুন: আব্বাসউদ্দিনের সেই ইতিহাস হয়ে যাওয়া গান ‘আল্লা ম্যাঘ দে পানি দে’ প্রাণ পেয়েছিল গিরিন চক্রবর্তীর সুরেই! লিখছেন রাজীব চক্রবর্তী…

    যাঁর গানের কথা দিয়ে শুরু করলাম তিনি প্রতিভা সোম, ডাকনামে রাণু। বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে বিবাহের পরে প্রতিভা বসু নামে লেখক-পরিচয়ে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার ঘটনা তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। কবে থেকে তিনি গান গাইতে শুরু করলেন সে-স্মৃতি তাঁর ছিল না— ‘গান আমি কোথায় শিখেছিলাম কবে শিখেছিলাম সে আমার মনে নেই। জ্ঞান হয়ে থেকেই দেখছি বাড়িতে একটা ছোট্ট হারমোনিয়ম আছে। মা বাজাতেন। মায়ের দেখাদেখি আমিও প্যাঁ প্যাঁ করতে করতে কখন শিখে গেছি।’ বাড়িতে বাবা-মা দুজনেই গানের ভক্ত। তাঁরা চাইতেন মেয়ে গান করুক। যদিও নিয়ম মেনে গান শেখার ব্যাপারে রাণুর যে খুব একটা উৎসাহ ছিল তা নয়, তবে গান তাঁর সমগ্র সত্তা জুড়ে ছিল। যখন যা শুনছেন, সেটাই গলায় তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর একটা সহজাত ক্ষমতা ছিল, আর ছিল গানের প্রতি ভালবাসা। পরবর্তী জীবনে যখন তিনি গায়কের ভূমিকা থেকে সরে এসেছেন, তখনও গানের মধ্যেই ডুবে থাকতেন— স্মৃতিকথায় বলছেন এক জায়গায়: ‘নিজের গানের নামে জ্বর এলেও গান শুনতে তো ভালোবাসি! বস্তুত গান আমার প্রাণ। গান আমি বুঝি।’ এর পেছনে গানের প্রথাগত শিক্ষারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

    মা সরযূবালার সঙ্গে প্রতিভা

    ছোটবেলায় গান শিখতে তাঁর ভাল না লাগার একটা কারণ ছিল যে-কেউ এসে যখন-তখন তাঁকে গান গাইতে বলবেন, আর তাঁকে গাইতে হবে এমনটা তাঁর মোটেও পছন্দ ছিল না। গান তাঁর জীবনযাপনের অঙ্গ— তাকে তিনি যথেচ্ছ ব্যবহার করতে চাননি। তবে পরিবারের আয়োজনে তাঁর গান শেখায় ঘাটতি থাকেনি কোনও। ‘জীবনের জলছবি’ পড়লে জানা যায়— ‘আমার গান নিয়ে বাবার মনে মনে কিছু বাসনা ছিলো, সেটা তৃপ্ত করলেন তাঁরা। অনেক গান শিখে ফেললাম। কাকু মধ্যে মধ্যেই কোথা থেকে কাকে ধরে আনেন, তাঁরা এসেই একটা গান শিখিয়ে দিয়ে যান। আমাকে গান শেখানো বেশি কঠিন ছিলো না। একবার শুনলেই মনের মধ্যে ছাপা হয়ে যেতো সুরটা, হারমোনিয়মে তুলে নিলে আর ভোলবার কথা উঠতো না। গানের কথাও তৎক্ষণাৎ মুখস্থ হয়ে যেতো।’ বাবার বদলির চাকরির সূত্রে যখন যেখানেই গিয়েছেন, গানের শিক্ষা চলেছে তাল মিলিয়ে। তবে তাঁর বাবা যখন ঢাকায থিতু হলেন, সে-সময়েই গানের প্রথাগত তালিম শুরু হয় তাঁর।

    দিলীপকুমার রায়

    ঢাকার বিখ‍্যাত গানের শিক্ষক চারুচন্দ্র দত্ত রাণুর গানের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হলেন, বা বলা ভাল চারুবাবু রাণুকে গ্রহণ করলেন তাঁর ছাত্রী হিসেবে। চারুববুর কাছে গান শিখতে পারার সৌভাগ্য সকলের হত না। চারু দত্ত প্রথম দিন এসে রাণুকে কয়েকখানা গান শুনিয়ে বলেন— ‘শোনো খুকি, আমি কিন্তু খুব কড়া লোক, একশোজন ছাত্র বেছে বড়ো জোর পাঁচজনকে নিই।’ শর্ত রাখলেন, তাঁর শোনানো একটা গানের একটা লাইন যদি রাণু চারদিন পরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ঠিক-ঠিক শোনাতে পারে তবেই তিনি গান শেখাবেন। রাণুর ইচ্ছে না থাকলেও, মায়ের ইচ্ছে এবং তাড়নায় সে-তানপরিকীর্ণ গান রাণুকে গলায় তুলতে হল এবং চারুবাবুকেও ‘শিক্ষক হতে হলো’। রাণু যে খুব তাড়াতাড়িই চারুবাবুর আদরের ‘খুকি’তে পরিণত হবে, সে আর আশ্চর্যের কী! এই চারুবাবুর ‘অদ্ভুত সুললিত কণ্ঠে’ একদিন রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি কেমন করে গান কর হে গুণীʼ শুনেই রাণু আকুল হয়ে কেঁদে উঠবে— ‘সে জানে না এ কার গান, কেমন গান, বিচার বিতর্কের অতীত সে মন—তবে কোন্‌ অনুভূতিতে তার হৃদয়, তার মগ্ন্চেতনা এমন বিচিত্রভাবে সাড়া দিয়ে উঠেছিল?’ (‘রবীন্দ্রনাথের গান’, ‘ব্যক্তিত্ব বহুবর্ণে’) কিন্তু চারুবাবুর কাছে গান শেখার পর্ব বেশিদিনের নয়— চারুবাবুর হঠাৎ মৃত্যুতে তাতে ছেদ পড়ে।

    প্রতিভা লিখেছেন, সেই সময়ে ঢাকা শহরে সংগীত আর রাজনীতি ছিল সবচেয়ে উত্তাল করা দুটি ব্যাপার। লীলা নাগের নেতৃত্বে রাজনীতিতে-রাজনীতিতে শামিল হয়ে স্বদেশির কাজে টাকা তোলার আয়োজনে রাণু গান গাইতে যাচ্ছেন ‘লীলাদি যেখানে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানেই’— চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়ক অনন্ত সিংহের বিচারের জন্য টাকা তুলতে ঢাকার নবাব বাড়িতেও গান করেছেন। লীলা নাগের রাজনীতির শরিক হয়ে তখন গান শেখার প্রতি তাঁর মনোযোগ কমে এলেও ‘মা-বাবার যন্ত্রণায় গান ছাড়তে পারছি না’।

    প্রতিভা বসু, অল্পবয়সে

    চারু দত্তের মৃত্যুর পরে মেহেদি হোসেন নামে ঢাকার এক ওস্তাদের কাছে কিছুদিন ঠুংরিও শিখেছেন রাণু— মেহেদি হোসেনই একদিন রাণুর গান শুনে তাঁকে শেখাতে শুরু করেন। মেহেদি হোসেনের কাছে গান শেখাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না ওস্তাদের অসুস্থতার কারণে। এরই মধ্যে ঢাকার বলদার জমিদারবাড়ির অতিথি এলাহাবাদের ওস্তাদ ভোলানাথ মহারাজের কাছে গান শেখার শুরু হয় তাঁর। ভোলানাথ মহারাজ তাঁর হাতির দাঁতের কাজ করা তানপুরাটি রাণুকে উপহার দিয়েছিলেন যেটি তাঁর সহচর হয়েছিল বিবাহের পরেও।  

    প্রতিভার যে-ক’টা গান প্রথম রেকর্ডে তোলা হয়, তার মধ্যে অতুলপ্রসাদের ‘বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখিপাতেʼ গানটিও ছিল। সেই গান তাঁকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তুলল। নানা স্বদেশিসভায় নিয়মিত উদ্বোধন সংগীত, বন্দে মাতরম্‌ তাঁকে গাইতে হত। একবার এক স্বদেশিসভায় গান গেয়ে তিনি সরলা দেবীর নজরে আসেন। ফলে রবীন্দ্রনাথের ‘মায়ার খেলা’য় গান গাইতে সরলা তাঁকে সতদিনের জন্য নিয়ে আসেন কলকাতায়।

    নজরুল ইসলামের কাছে সংগীত অনুশীলনরত

    এর মধ্যে ১৯৩৫ সালে প্রতিভার একটি রেকর্ড বেরোল, যাতে তাঁর স্বরচিত কথা ও সুরে গানও ছিল একটি— ‘ওগো আমার সুন্দর প্রিয়তম’ (উলটো পিঠের গান ‘রোজ দিয়ে যাই একটি গানের ফুল’, কথা: ধীরেন মুখোপাধ্যায়। সেই রেকর্ড বেরোনোর পরে তাঁর গায়কখ্যাতি আরও বাড়ল। সঙ্গে চলেছে গান শেখা আগ্রার বিখ্যাত ওস্তাদ গুল মহম্মদ বা গোল মহম্মদের কাছে। (অজিতকৃষ্ণ বসুর ‘ওস্তাদ কাহিনী’-তে এই গুল মহম্মদের একটা খুব অন্তরঙ্গ পরিচয় ধরা আছে।) একটানা চার বছর তাঁর কাছে খেয়াল ঠুংরি শিখেছেন।

    এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর বাড়িতে এলেন সুরসুধাকর দিলীপকুমার রায়। বিদ্যাবত্তায়, বাচনে, পাণ্ডিত্যে, রূপে, কণ্ঠলাবণ্যে দিলীপকুমার তখন সারা বাংলার সেনসেশন। সত্যেন বসুর বাড়িতে দিলীপকুমারের প্রথম আসরের শ্রোতা রাণু। মুগ্ধ তিনি দিলীপের গান শুনে। দিলীপও তাঁর নাম জানেন রেকর্ডের কল্যাণে। শুরু হল দিলীপকুমারের কাছে গান শেখা। প্রতিভার কথায়— ‘দিলীপদা আমার বাংলা গানের গুরু হলেন।’ দিলীপকুমারের কাছে তিনি অজস্র বাংলা গান শিখেছেন— দিলীপের নিজের গান, দ্বিজেন্দ্রলালের গান, অতুলপ্রসাদের গান, আর সবচেয়ে বেশি শিখেছেন কাজী নজরুল ইসলামের গান। দিলীপ তাঁকে শিখিয়েছেন ‘কেমন করে কতটা গড়িয়ে মীড় দিলে লোকের মনে গিয়ে দাগ কাটে, কীভাবে গমক দিলে হৃদয় জেগে ওঠে, গানের ভাষাটাকে কেমন করে অর্থবহ করে তুলতে হয়, সব শিক্ষাই আমার তাঁর কাছে। ঐ মর্জিত শিক্ষিত পরিপূর্ণ যুবকটির কাছে আমার শুধু গানের শিক্ষাই হয়নি, কালচার শব্দের অর্থটাও আমি তাঁকে দেখেই ʼপ্রথমʼ জেনেছিলাম।’

    রবীন্দ্রনাথ, সমর সেন, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু ও কন্যা মীনাক্ষীর সঙ্গে প্রতিভা বসু

    দিলীপকুমারের কাছে রাণুর গানের সুখ্যাতি শুনে কাজী নজরুল নিজে ঢাকায় এলে প্রতিভার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে গানের পর গান শিখিয়েছেন। প্রথমদিন প্রতিভাদের বাড়িতে এসে গান শিখিয়ে চলে যাবার পরের দিন সকালে এসে হাজির নজরুল— ‘একেবারে ছটফট করতে করতে এসেছেন। রাত জেগে নতুন গান লিখেছেন তিনি, না শিখিয়ে থাকতে পারছেন না।’ সেদিন শেখালেন সদ্য-রচিত-তখনও-সুর-ঠিক-না হওয়া গান ‘আমার কোন্‌কূলে আজ ভিড়লো তরী, এ কোন সোনার গাঁয়/ভাঁটির টানে আবার কেন উজান যেতে চায়’। পরে কলকাতায় এসে গ্রামোফোন কোম্পানিতে নজরুলের গান তাঁরই ট্রেনিং-এ রেকর্ড করলেন প্রতিভা।

    প্রতিভার রবীন্দ্রনাথের গানের কথা আগেই বলেছি। ‘ব্যক্তিত্ব বহুবর্ণে’-র ‘রবীন্দ্রনাথের গানʼ-এ লিখেছেন— ‘খুব ছেলেবেলায় বাবার মুখে আরো অনেক গানের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না, শুকনো ধুলো যত’ আর ‘বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে’ গান দুʼখানি প্রায়ই শুনতে পেতাম। সে গানে বাবা টান দিলেই, আমার মন যেন কেমন করে উঠতো। এমন অদ্ভূত একটা মন-কেমন-করা ভালোলাগায় আমি অভিভূত হয়ে যেতাম যে অনেক সময় বড়রা পরস্পরে টেপাটেপি করে আমাকে লক্ষ করছে দেখতে পেয়ে লজ্জিত হয়ে সরে পড়তাম।’ রবীন্দ্রনাথের কাছেও তিনি গান শিখেছেন ১৯৩৪ সালে দার্জিলিং-এ। এর পেছনেও অবশ্য দিলীপকুমারের তাড়না ছিল। দার্জিলিং-এ থাকার সময়ে প্রতিদিন সকাল-সকাল গিয়ে গান শিখতেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। ‘আমি গেলেই তিনি আমাকে শেখাবার জন্য বই খুলে ধরে বলতেন ‘কোনটাʼ? তারপর একটার পর একটা গান প্রাণের সমস্ত আবেগ দিয়ে অক্লান্তভাবে গেয়ে যেতেন।’

    বুদ্ধদেব বসু-প্রতিভা বসু

    গানের সূত্রে কত মানুষের কাছে এসেছেন! আনন্দম‍য়ী মা, নলিনীকান্ত সরকার, ওস্তাদ আফতাবউদ্দিন, অনাথনাথ বসু… নামের তালিকা দীর্ঘায়িত করে লাভ নেই। অথচ এই মানুষটি আস্তে-আস্তে তাঁর গায়ক পরিচয়টি ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। গান তাঁর সঙ্গে থাকল ঠিকই, কিন্তু আমরা শ্রোতারা তার সঙ্গী হতে পারলাম না। কেন এই দূরে চলে যাওয়া?

    বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘আমাদের কবিতাভবন’-এ এর একটা কারণ বা কৈফিয়ত দিয়েছেন। একটু দীর্ঘ হলেও সেটি দিয়েই শেষ করি— ‘গ্রামোফোন-কোম্পানির উৎসাহ কমে যায়নি, কিন্তু বিয়ের পরে কয়েক বছরের মধ্যে রানুর গানের চর্চা শুকিয়ে গেলো। সে তোড়জোড় বেঁধে শুরু করেছিলো কয়েকবার, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে চালাতে পারেনি। নিয়মিত ওস্তাদের বেতন জোগাতে গেলে বাজার-খরচে টান পড়ে আমাদের, সাহিত্যিক-অধ্যুষিত হাস্যরোলমুখর ছোটো ফ্ল‍্যাতে খেয়ালের তান পাখা মেলতে পারে না। উপরন্তু অন্তরায় দাঁড়ালো আমাদের শিশু-কন্যাটি: রানু হার্মোনিয়ম খুলে গানের টান দিলেই সে ভয় পেয়ে তার মায়ের মুখ চেপে ধরে, জীবনের প্রবলতর ধ্বনির কাছে সুরশিল্পকে পিছু হঠতে হয়। হয়তো এও এক বাধা ছিলো যে আমি রাগসংগীতে বধির, এবং রানুর নিজেরও নেই সেই জেদ এবং উচ্চাশা, যার উশকানি বিনা প্রকৃতি-দত্ত ক্ষমতা একলা বেশি দূর এগোতে পারে না।’

     
      পূর্ববর্তী লেখা
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook