ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম: পর্ব ৪


    রূপম ইসলাম (November 18, 2022)
     

    পর্ব ৩

    সামনের টেবিলে আশ্চর্যের ওয়েস্ট পাউচটা পড়ে রয়েছে। আশ্চর্য পাউচটার জ়িপ খুলে ভেতর থেকে একটা নোটপ্যাড বের করে আনল। নোটপ্যাডের মধ্যেই আলগোছে রাখা ছিল ছবিটা। ছবিটা সে চোখের সামনে তুলে ধরল।

    হলুদ হয়ে যাওয়া পুরনো ছবিটায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন— তরুণ এরিক দত্ত, তাঁর নিরুদ্দিষ্ট স্ত্রী রুথলীন এবং শিশুপুত্র রুহ্। এরিক বলেছেন, এই ছবিটা তাঁর কাছে ‘সাত রাজার ধন এক মানিক’। বলেছেন, এই ছবিটা ফেরত নিতেই তাঁকে ফিরে আসতে হবে আশ্চর্যের কাছে। আশ্চর্য ছবিটা রেখে দিল সামনের টেবিলটায়। ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে গিটারে সুর তুলল। কয়েকলাইন অজান্তেই বেরিয়ে এল তার মুখ দিয়ে। সে এখন ভাবছে তার দুই বৃদ্ধ বন্ধুর নিরাপত্তার কথা। ওঁরা যেন নির্বিঘ্নে আন্দামান অভিযান শেষ করে ফিরতে পারেন কলকাতায়।

    আশ্চর্য কয়েকটা লাইন গুনগুনিয়েই বুঝল এটা একটা নতুন গান। অনেকদিন পরে সে আবার একটা গান লিখছে। এই গিটারটা তো আসলে রক আইকন বান্টি ঘোষালেরই গিটার। ‘বন্দন ঘোষাল মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ থেকে শ্যুটিং-এর জন্য ধার করে আনা হয়েছে। আশ্চর্যের আজকের গান লেখাটা এই গিটারের জাদু-যোগাযোগ নয়তো? বান্টির আত্মা কি এখন ভর করেছে তার উপর? আশ্চর্য এর উত্তর জানে না। সে শুধু একটা পেন জোগাড় করে খসখস করে সামনের টেবিলে পড়ে থাকা নোটপ্যাডটায় লিখল—

    তবু জানি তুমি বড় হবে
    একদিন লুকিয়ে চুরিয়ে
    যৌবন কিনে ঠকে যাবে
    শৈশবটাকে বেচে দিয়ে
    বেঁচে থাকা আমার হল না
    তুই কি আমার হতে পারিস
    চোখে চোখ সরিয়ে না নিয়ে
    শূন্যতা শুষে নিতে পারিস…

    এরিক দত্তের স্ত্রী রুথলীন ছেলে রুহ্-কে সঙ্গে করে যখন বেরিয়ে গেছিলেন তাঁদের সাজানো সংসার ফেলে, তখন রুহ্-এর বয়স ছিল সবে বছর তিনেক। কীভাবে ছেলেটা বড় হয়েছে? সে কি আদৌ জানে, তার বাবাই বিখ্যাত সেই লেখক-গবেষক-অভিযাত্রী এরিক দত্ত? এদিকে বাবার কাছেও ছেলের সন্ধান নেই, বাবা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন পুরনো একটা ছবি। এসব কথা মাথায় ঘুরছিল বলে নিজে থেকে গানের লাইনগুলো বেরিয়ে এল এখন। লিখে ফেলে সে একবার পড়ে দেখল— কী রকম দাঁড়াচ্ছে। পড়বার পর আশ্চর্যের মনে হল কয়েকটা লাইন বেকার শোনাচ্ছে! অপ্রয়োজনীয় আবেগসর্বস্ব। ‘বেঁচে থাকা হল না’ মানে? ব্রহ্ম আর এরিক যেভাবে বাঁচেন, সেটা যদি বেঁচে থাকা না হয়, তবে বেঁচে থাকার মানেটা কী? তাছাড়া তাঁরা তো আন্দামানে গেছেন নেহাতই এক গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নিতে! ‘প্রোজেক্ট বিটিটু’ বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে কেমন পরিসরে চলবে— এই আলোচনা। দুর্গম কোনও অভিযানে তো পাড়ি দেননি! তাহলে অযথা মৃত্যুর কথা আসছে কেন? তাহলে কি আশ্চর্য মনেমনে ওঁদের এই অভিযান নিয়ে ভীত? শঙ্কিত?

    আশ্চর্যর মনে হল ‘বেঁচে থাকা আমার হল না’ লাইনটা তার দুর্বলতার প্রকাশ। সে লাইনটা কেটে ফেলতে যাচ্ছিল, এমন সময় ফ্লোর ম্যানেজার তাপস এসে তাকে জানাল— আশ্চর্য স্যর, শট রেডি।

    *****

    সারাদিনের কাজ শেষ করে আশ্চর্য যখন বাড়ি ফিরল, তখন রাত ন’টা বেজে গেছে। এখন তার বাড়িতে অন্য কেউ নেই, বাড়ির ‘ম্যান ফ্রাইডে’ মিহির ছুটি নিয়ে দেশের বাড়ি গেছে। ডিনারে আজ শুধু ফলাহারই করবে বলে ঠিক করল সে। কয়েকটা কলা, আপেল, নাশপাতি আর প্লাম নিল তার প্লেটে। ফল কাটার ছুরি দিয়ে কয়েকটা টুকরো করল আপেলের। তারপর কোমরের পাউচ থেকে বের করে নিল তার নোটপ্যাডটা। আপেলের টুকরোয় একটা কামড় দিয়েই তার মনে পড়ল সে গতকাল রাতের অভিযানে সমুদ্রের খুব কাছে পৌঁছে গেছিল। কিন্তু সমুদ্র দেখা তো হল না এই যাত্রায়!

    নোটপ্যাডে আশ্চর্য লিখল—
    তবুও তো তুমি বড় হবে
    ছেঁড়া মানচিত্র বিছিয়ে
    ঝুড়ি ঝুড়ি ঝিনুক কুড়োবে
    ছুটে যাবে নোনা পথ দিয়ে
    সমুদ্র আমার হল না
    দূরে দূরে বইল কি জলও
    ভেজা হাত সরিয়ে নিও না
    (তুমি) আমায় ভেজাবে বলো
    (তুমি) আমায় ভেজাতে চলো…

    এইটুকু লিখেই আশ্চর্যের খেয়াল হল— আপেল কাটা হলেও আগের আবেগে মাখোমাখো ফালতু লাইনগুলো কাটা হয়নি তো! ওই যে, ‘বেঁচে থাকা আমার হল না’— ওই লাইনগুলোর তো কোনও মানেই দাঁড়াচ্ছে না। সে তাড়াতাড়ি বাতিল করতে গেল লাইনগুলো।

    এরকম একটা সময়েই সে একটা মিষ্টি কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। কণ্ঠস্বরটি তার খুবই চেনা।

    — ওই লাইনগুলো খুব সুন্দর। কেটো না। থাকতে দাও ওগুলোকে।

    নিশাচরী। নীল রঙের শাড়ি পরে সে সামনেই বসে আছে। কিন্তু তার মুখ প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে মুখটা কোনও অস্বচ্ছ কাপড়ে ঢাকা।

    নিশাচরী বলল— তোমার মনে পড়ে আশ্চর্য, বহুদিন আগে কয়েকটা লাইন লিখেছিলে তোমার অবচেতনে বসত করা ‘মৃত্যুচেতনা’ নিয়ে—

    — লিখেছিলাম? তাই?

    — সে কী! মনে নেই? আমার তো দিব্যি মনে আছে লাইনগুলো—

    মৃত্যুচেতনা
    শান্তিতে থাকতে দিত না
    মৃত্যুচেতনা
    ভাল করে বাঁচতে দিত না

    আশ্চর্য, তুমি বলো আর নাই বলো, জীবনের শেষ স্টেশন তো মৃত্যুই। জীবনের পথে আমরা হেঁটে চলেছি কোনদিকে? মৃত্যুর দিকেই তো। তাহলে মৃত্যু নিয়ে আমাদের এত টালবাহানা কেন? এত ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কেন? কেন মৃত্যুর কথা বলা যাবে না? বরং আমি তো বলব, এই যে তোমার মৃত্যুচেতনা, মৃত্যুবোধ— এটাই তোমার শক্তি। অনেকেরই এই শক্তি নেই। নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে পড়ে এই শক্তি তুমি অর্জন করেছ। একে সামান্য ভেব না। এধরনের লাইন তোমার মতো করে আর কেউ লিখতে পারবে কি? মনে তো হয় না! আর কী জানো, এই মৃত্যুবোধ তোমায় আরও শক্তিশালী করবে। হয়তো তুমিই আটকে দিতে পারবে তোমার অতি ঘনিষ্ঠজনের নিশ্চিত মৃত্যু—

    টিং টং

    সদর দরজার কলিংবেল ঠিক এই সময়েই বেজে উঠে আশ্চর্যের তন্দ্রা ভাঙিয়ে দিল।

    ফলে একটা কামড় দিয়েই আশ্চর্য এলিয়ে পড়েছিল ঘুমে। এখন ডোরবেলের শব্দে তার সম্বিৎ ফেরে। সে বোঝে— না, নিশাচরী আসেনি। নিশ্চয়ই সে স্বপ্ন দেখছিল। তার বোধশক্তি ফিরতে ফিরতেই বেলটা আরেকবার বাজে। জোর করেই টলমলিয়ে উঠে সদর দরজার দিকে দৌড়য় আশ্চর্য। আইহোলে চোখ লাগিয়ে অবশ্য তাকে আবার শিউরে উঠতে হয়। এও কি তার ভেঙে যাওয়া স্বপ্নেরই ধারাবাহিকতা নাকি? স্বপ্নটা কি আদৌ ভেঙেছে, নাকি ভাঙেনি?

    আইহোলের পর্দায় সে দেখতে পেল, অন্ধকার রাতকে পেছনে রেখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভূতুড়ে অবয়ব। অবয়বের দেহ মানুষের মতোই। কিন্তু মাথাটা— উফ্ কী পৈশাচিক, কী বীভৎস!

    ৫।

    ব্রহ্ম ঠাকুরের মনে হল এত ছোট একটি দ্বীপপুঞ্জে এত রকমের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের মানুষের উপস্থিতির একটা সহজ কারণ তো এই অঞ্চলের সমুদ্রের, বিশেষ করে দশ ডিগ্রি প্রণালীর নিয়মিত প্রাকৃতিক অস্থিরতাবাহিতই হতে পারে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতো এই সমুদ্রেরও তো বদনাম কম নয়! ঝড়ঝঞ্ঝা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তিনি বললেন— আমার মনে হচ্ছে নানা ধরনের মানুষের জড়ো হওয়ার একটা বড় কারণ হল জাহাজডুবি। জাহাজডুবি হয়েছে এবং ভিন্ন প্রজাতির মানুষ সাঁতরে এসে আশ্রয় নিয়েছে এসব দ্বীপে। তারা আর ফিরে যেতে পারেনি। কালক্রমে বংশবিস্তার করেছে। তৈরি করেছে নিজেদের এক গোপন কলোনি।

    এরিক দত্তের স্ত্রী রুথলীন ছেলে রুহ্-কে সঙ্গে করে যখন বেরিয়ে গেছিলেন তাঁদের সাজানো সংসার ফেলে, তখন রুহ্-এর বয়স ছিল সবে বছর তিনেক। কীভাবে ছেলেটা বড় হয়েছে? সে কি আদৌ জানে, তার বাবাই বিখ্যাত সেই লেখক-গবেষক-অভিযাত্রী এরিক দত্ত? এদিকে বাবার কাছেও ছেলের সন্ধান নেই, বাবা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন পুরনো একটা ছবি।

    লতিকা সায় দিয়ে বললেন— ড: ঠাকুর, আপনি কথাটা এক রকম ঠিকই বললেন। জাহাজডুবির তত্ত্বটা এই মানবসমাগম রহস্য-ব্যাখ্যায় কাজে লাগানো হয়, অস্বীকার করব না। আসলে সত্যিই প্রচুর জাহাজডুবি হয়েছে এই অঞ্চলে। সেসবের নথি আছে। ১৮৪৪ সালে দুটো ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ ডুবেছে। তারও আগে ১৭৭৬-এর আশেপাশে ডুবেছে আরও বেশ কয়েকটি। কিন্তু এই ব্যাখ্যার গণ্ডগোলটা হল— এই সময় থেকে তো আর মানব-মিশ্রণটা শুরু হয়নি! কারণ তারও বহু আগে থেকেই এই অঞ্চলে অন্যরকম হিংস্র মানুষের উপস্থিতির বর্ণনা পাওয়া যায়। তাহলে কী করে নথিবদ্ধকালের জাহাজডুবিগুলো দিয়ে ব্যাপারটা জাস্টিফাই করব? আর যদি এই রহস্য সমাধানকল্পে আমাদের নথিবদ্ধ সময়েরও অতীতে পাড়ি দিতে হয়, সেই অতীতে কোনওরকম নৌযোগাযোগের সূত্রপাত আদৌ হয়েছিল কি?  আমার বক্তব্য হল, নিশ্চয়ই এখানকার নিয়মিত জাহাজডুবির শুধু কারণই নয়, একটা উদ্দেশ্যও রয়েছে। লুকনো আদিম এক উদ্দেশ্য। জাহাজডুবির জন্য দায়ী প্রাকৃতিক উগ্রতা, সেই উগ্রতার জন্য দায়ী আবার অন্য কিছু। সেই অন্য কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে একটা পুরনো এক্সপেরিমেন্টকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। বিভিন্ন প্রজাতির মানুষের যোগান যাতে বন্ধ না হয়, তার জন্যই নিয়মিত জাহাজডুবির প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক যোগান মোটেই জাহাজডুবি বাহিত নয়! তবে কে বা কী লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মানব প্রজাতির মিশ্রণের এই আদিম এক্সপেরিমেন্টের পেছনে? সে কি সেই এভার-ইলিউসিভ ‘ঈশ্বর’?

    এরিক বললেন— আমি ঠিক ধরতে পারছি না আপনি কী বলতে চাইছেন। আন্দামান এবং নিকোবরের মধ্যবর্তী ১০ ডিগ্রি চ্যানেলের সামুদ্রিক খরস্রোতের একটা ইতিহাস তো আছেই। গবেষকরা এ নিয়ে বরাবরই ভাবনাচিন্তা করে এসেছেন যে সমুদ্র কেন বরাবরই এতটা হিংস্র এ অঞ্চলে? এতটা দীর্ঘ সময়ে তো পৃথিবীর অনেক কিছুই বদলে যায়, এখনকার সমুদ্র-তাণ্ডব বদলালো না কেন? আপনি কি এ ব্যাপারেই নতুন একটা থিয়োরি পেশ করতে চাইছেন নাকি?

    প্রোফেসর লতিকা মুরুগান সুব্রহ্মণ্যম এরিক দত্তের দিকে তাকিয়ে রহস্য করে হাসলেন। একটু সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন— শুধু সমুদ্র হিংস্র? তা কিন্তু নয়। একটা প্রাগৈতিহাসিক এক্সপেরিমেন্টের সম্ভাবনার কথা সরাসরি বলবার আগে আমি আপনাদের মনে করাতে চাইব— ১২৮৬ সালে এই অঞ্চলের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বিখ্যাত অভিযাত্রী মার্কো পোলো কী বলেছিলেন। আমি আপনাদের শোনাতে চাইব তারও বহু আগে ৬৭২ খ্রীষ্টাব্দে চৈনিক বৌদ্ধভিক্ষু ইৎ সিং-কে কী বলেছিলেন পোড়খাওয়া নাবিকেরা।

    ব্রহ্ম ঠাকুর বললেন— ইয়েস, ওটা আমি জানি। ইৎ সিং-কে নাবিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আন্দামান হল ‘সবুজ নরক’। ওখানে গেলে কেউ ফিরে আসে না।

    বিলি গিলচার অনেকক্ষণ কোনও কথা বলেননি। চুপ করে সব শুনছিলেন আর পায়চারি করছিলেন। এবার একটা চেয়ার টেনে চুরুটটা ছাইদানে গুঁজে দিয়ে বললেন— মাফ করবেন, আমি যেটা জানতে চাইছি সেটা হচ্ছে— টু কাট দ্য লং স্টোরি শর্ট— এই দ্বীপগুলোয় কোথায় কী আশ্চর্য সম্পদ লুকনো আছে, তার কোনও বর্ণনা কি দিয়ে গেছেন কেউ? নতুন বা পুরনো কোনও রেকর্ড কি রয়েছে?

    লতিকা বললেন— পুরোটাই তো বলছি মি. গিলচার, একটু ধৈর্য ধরে শুধু শুনতে হবে। লং স্টোরিই শুনতে হবে, শর্ট কাট আমার পথ নয়। তাড়াহুড়ো করে কোনও মহান কার্যসিদ্ধি হয়েছে বলে তো আমার জানা নেই! শুনুন এটা—

    ফাইল থেকে তিন-চারটে কাগজের স্টেপল করা একটা গোছা টেনে বের করলেন প্রোফেসর লতিকা। তাতে চোখ বুলিয়ে নিতে নিতে বললেন— মার্কো পোলো লিখেছেন, এই যে, মূল কথাগুলোই শুধু শোনাচ্ছি, নির্যাসটুকু হল— এখানকার লোকেরা নির্দয়, সব্বাইকে এরা খেয়ে ফেলে সুযোগ পেলেই। এরা মূলত মাংসাশী, তবে অপরিচিত কিছু ফলও খায়। তাহলে মার্কোর এই লেখা থেকে আমরা এই অধিবাসীদের সম্পর্কে একটা হিংস্রতা এবং ক্যানিবলিজ়মের অভিযোগ পেলাম, যেটা যুগেযুগেই পাওয়া গেছে। এই তো, এই জায়গাটা দেখুন, অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হয়ে ড. বি এস গুহর সঙ্গে যৌথ গবেষণায় বিখ্যাত গবেষক লিডিয়ো কিপ্রিয়ানি লিখেছেন, শুধু জারোয়ারা কেন, ওঙ্গেরাও মানুষখেকো। তার মানে বুঝতে পারছেন তো? শুধু সমুদ্রই কিন্তু হিংস্র নয় এখানে!

    ব্রহ্ম ঠাকুর হাতে কফির মাগ নিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে একটু রুক্ষস্বরেই বললেন— লতিকাদেবী, আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে জানাচ্ছি, লিডিয়ো কিপ্রিয়ানি সঠিক লেখেননি। ওঙ্গে এবং জারোয়ারা মানুষখেকো নয়। এ ব্যাপারে আমার নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে বলেই বলছি। শুনলে আপনারা নিশ্চয়ই চমকে যাবেন…

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook