ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ২১


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (December 18, 2021)
     

    কুকুর পুষলে ফাইন

    ডগি নোংরা, বিল্লি মিচকে, পাখি বিষ্ঠার ভাণ্ড, তাদের তুমি ঘরে ঢোকাও, কী অসৈরণ কাণ্ড! প্রায় এই গোছেরই বিল আসতে চলেছে ইরানে, বাড়িতে জন্তু পোষা বারণ। সত্যি বলতে, এই পোষা ব্যাপারটা কী? খামখা একটা জানোয়ারকে নাওয়াচ্ছি খাওয়াচ্ছি আদর বর্ষাচ্ছি, যাতে সে ক্রমাগত অনুগত প্রীতিময় ও জুলজুল হয়ে উঠতে পারে? মানুষ নিজেকেই মনোযোগ দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না, হঠাৎ যেচে-পেড়ে অন্য প্রাণীকে জীবনের অংশী করছে কেন? সে সারাক্ষণ পাশে কাউকে চায়? না পদতলে কাউকে চায়, যাকে অনুগ্রহ বিলিয়ে ধন্য করা যাবে ও কৃতজ্ঞতা দাবি করা যাবে? না কি মানুষ ভেবে দেখেছে, নিঃশর্ত ভালবাসা পাওয়া যেতে পারে একমাত্র না-মানুষ ক্যান্ডিডেটের থেকেই? যে বিচার করে না প্রভু সারাক্ষণ গুটখা খাচ্ছে কি না, কিংবা মি-টু খাচ্ছে কি না? হতে পারে, কারণ কুকুরের উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তার মূল কারণই হল, সে চোর ভীরু কুঁড়ে সবার গাল সম-উষ্ণতায় চাটে, প্রভু লাস্ট ট্রেনে না ফিরলে স্টেশনেই উদ্বিগ্ন জীবন কাটিয়ে দেয়, বিরক্ত হয়ে ভাবে না: ব্যাটা মাতাল ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। বেড়াল নিয়ে অবশ্য বহু ধন্দ, কেউ বলেছে বেড়াল দেবতা, কেউ অপ-, কিন্তু সেও বিলক্ষণ আদর পোয়ায় ও আধমরা টিকটিকি উপহার দেয়, এমনকী অসুস্থ প্রভুর শিয়রে জাগে। মানুষও সন্তান-কাম-বান্ধবকে আকুল আঁকড়ায়, অভাবে পড়ে গরু বেচতে গিয়ে হাউহাউ কাঁদে, বালিকা পোষা ময়না উড়ে যাওয়ার শোক জীবনে ভোলে না, কিশোরী খরগোশের অকালমৃত্যু মনে রেখে সন্তানের নাম দেয়। এ খুব অদ্ভুত কাণ্ড, যেখানে মানুষ অন্য সম্প্রদায়কে ঘৃণা করে ফাটিয়ে দিচ্ছে, সেখানে অন্য প্রজাতিকে বিছনায় তুলে আহ্লাদ ওথলাচ্ছে। এ মুসলমানের ছোঁয়া খায় না সে হিন্দুর কুশপুতুল পোড়ায়, কিন্তু ল্যাজওলা ডানাওলার জন্যে জান কবুল। না-মানুষেরও, জীবনের ছাঁদ সরু আত্মকেন্দ্রিক বোধহীন, কিন্তু মানুষ নামক আনপ্রজাতির জন্তু অফিস থেকে ফিরলে সে ক্যাম্বিস বলের ন্যায় উল্লাস ছটকায়। হয়তো যার ভাষা মালুম হয় না, যার কাজকম্ম মূল্যবোধ ভাবনাতরঙ্গের পূর্ণ ঘরানাটাই ভিনগ্রহী রকমের স্পর্শাতীত, তাকে ভালবাসা প্রকাণ্ড নিরাপদ, কারণ মনোযোগী বোঝাবুঝির গোটা পুঁটলিটাই অন্তর্হিত। শুধু প্রাথমিক কতিপয় আদরশব্দেই ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলা যায়। সর্বোপরি, দাবি অনুযায়ী সঙ্গ দিতে হয় না, নিজের মর্জি অনুযায়ী স্নেহ ছড়ালেই হল। ডিটেলের ঝামেলা নেই বলেই, হাজার-তন্তুর জটজটিল মধু-বিষ কম্বোর বখেড়া অনুপস্থিত বলেই, দায় আর অপরাধবোধের ঘাতক শলাকা অদৃশ্য বলেই, এই আলিঙ্গন সহজ সটাসট স্নিগ্ধ। 

    কুকুর-বেড়াল-পাখি-ডলফিনের বোর লাগে না। একঘেয়েমির বোধ, যা মানুষকে তছনছ বা লোলালুলু করেছে, তা জন্তুর নেই। তাই সে বুধবারের ভালবাসা বৃহস্পতিবারেও প্রাক-বুধ-বিন্দু থেকেই শুরু করতে পারে, এবং এই অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়ে যেতে পারে সমগ্র আয়ু জুড়ে, নির্ভেজাল ভালবাসার রনরন নিজেও উপভোগ করে, আর তার প্রগাঢ়তা অচিরেই প্রাপকের শিরায়ও চারিয়ে যায়। শুধু এখানেই জানোয়ারের প্রেম মানুষের হৃদি-নির্যাসকে টেক্কা দেয় না, বারবার কুকুর প্রভুর কল্যাণার্থে জীবন দিয়েছে, আগুন থেকে তার অচৈতন্য দেহ জামাপ্রান্ত কামড়ে বের করে এনে, নিজে পুড়ে মরেছে।

    ইরান বলেছে জন্তু পোষা (তাদের আসল রাগ কুকুরের বিরুদ্ধে) ইসলামি জীবনচর্যার বিরুদ্ধে, কারণ জন্তুরা অপরিচ্ছন্ন (বোধহয় আত্মিক অর্থেও, বা আত্মিক অর্থেই বেশি, অর্থাৎ জন্তুরা ‘অপবিত্র’)। বাইরের কারণ অবশ্য দেখানো হচ্ছে, কুকুররা হাঁটতে বেরিয়ে পথচারীদের (বিশেষত বাচ্চাদের) কামড়ে দেয়, তাই বিপজ্জনক, কিন্তু বেড়াল বা খরগোশও কী করে ঘ্যাঁক-বিপদ ঘটাবে তা নিয়ে বহু নাগরিক বুঝভোম্বল। জন্তুর বিরুদ্ধে ধর্মসর্বস্ব দেশের প্রবল অভিযোগের মূল কারণ বোধহয় এই, জন্তুর চিন্তা সারাক্ষণ কেবল স্থূল জৈবিক পরিসরে ঢুঁ-অন্ত, তারা আহার নিদ্রা ও মাঝেমধ্যে মৈথুন— এছাড়া কিচ্ছুটি ভাবে না। যদিও পোষ্যরা অবশ্যই ভাবে তাদের প্রভুদের আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য বিষয়ে, রাণা প্রতাপের জয়ের জন্য তাঁর ঘোড়া প্রাণ দেয় বা কুকুর ঘেউঘেউ আকুল সাহায্যপ্রার্থনা করে মালিক বাথরুমে পড়ে গেলে, এবং নিশ্চিতভাবেই সেই চিন্তা নিঃস্বার্থ ও ত্যাগদীপ্ত, তবে সেটুকুতে ঈশ্বরানুগত মানুষের মন ওঠে না, সে সভায় ঢুকতে দেবে শুধু তাদের, যারা সাধনা ও মোক্ষের কক্ষপথে বনবন-সম্ভব। ঠিকই, বেড়াল নক্ষত্রের পানে তাকিয়ে নির্মাতা বিষয়ে ভেবে ভোঁ হয় না, খরগোশ তৃণ পাচ্ছে বলে ঘাস-সৃষ্টিকারীর ধ্যানে বুঁদ থাকে না, বাদুড়কে কেউ ‘তোমারই ক্রোড়ে নিতে/ ঝুলালে বিপরীতে’ স্তব গাইতে শোনেনি। কিন্তু কিছু শাস্ত্রেকাব্যে এই ধারণার সমর্থন আছে: কসাই যদি সর্বান্তঃকরণে নিজের কাজটা (পশুহত্যা, মাংস কর্তন ও বিক্রি) করে চলে, বারবণিতা যদি নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ে নিজের কাজটুকুকে (বিনা পক্ষপাতে সমান অভিনিবেশে প্রত্যেক অর্থীর সেবা) সম্পাদন করে, তাহলে তারা হতে পারে শ্রেষ্ঠ পুণ্যবান, অর্থাৎ স্বকর্মে মনোযোগই আসলে সর্বোচ্চ সাধনা। একটা কুকুরকে নির্মাণ করেছেন ঈশ্বরই, তাকে দিয়েছেন মৃগয়ার ঔৎসুক্য ও ক্ষমতা, সে যদি তা পেরিয়ে আবার অন্য এক প্রাণীর ভাল-থাকাথাকিকে, নিরন্তর সেবাযত্নপ্রেম-কে নিজ-অ্যাজেন্ডার অন্তর্ভুক্ত করে নেয় এবং তদনুযায়ী চলেফেরে, তবে তো ‘স্বকর্ম প্লাস’, ‘আত্মধর্ম ২.০’ পর্যায়ে উন্নীত হয়ে গেল, সে মনুষ্য-পাত্তার গেট ডিঙোবে না কেমনে? 

    ইরানে আরও বলা হচ্ছে, অন্য জন্তুর প্রতি ভালবাসা খরচা করে মানুষ তার হৃদয়স্থিত প্রেমের অপব্যবহার করছে, কারণ ওই শুদ্ধ আবেগ মানুষের আধারে প্রদত্ত হয়েছে তো পরিবারের অন্য সদস্যদের, গোষ্ঠীর অন্য মানুষের প্রতি ধাবিত হবে বলেই। তাই পোষ্য রাখার অভ্যাস ‘ক্ষতিকর সামাজিক সমস্যা’। মানে, একটি মানুষের হৃদয়ে ৬৫৭ গ্যালন ভালবাসার ভাঁড়ার, তাহা হইতে ৫৯% কুকুরে অর্পিত হইল, মানুষের নিমিত্ত তবে কত পড়িয়া থাকিল? প্রেমের এই আঁটো-ট্যাংকের থিওরিকে দেখাবে সমীচীন ঠ্যাং কে? পলিসি-ওলা’র মূল তর্জনী নির্ঘাৎ: মানুষের প্রতি প্রেম যদি জানোয়ারের প্রতি বয়ে যায়, তা অবনমন নয়? কারও মনে হতে পারে, বরং উল্টো। পৃথিবীতে কোনও মানুষ অন্য একটি মানুষকে দেখে ৭৬৮৪৫৩০৩৮ বার একই তীব্রতায় পুলকিত হয়ে ওঠে? সম্ভব? না, কারণ মানুষের গোটা জীবন ধরে ক্রিয়াশীল সর্বাধিক শক্তিশালী তত্ত্ব (বা অনুপম ধাঁধা) হল: খালিপেটে সে একটাই রসগোল্লা খেতে পারে। পেট ভরে এলে বিরিয়ানির লোভ কমে আসে, বয়স হলে লোকে পুজোয় নাচতে নাচতে ঠাকুর দেখতে যায় না, হৃৎপিণ্ড নিংড়োনো চুম্বনও ক’বছর পর পানসে অভ্যাসে বদলে স্যাঁতস্যাঁত। কিন্তু কুকুর-বেড়াল-পাখি-ডলফিনের বোর লাগে না। একঘেয়েমির বোধ, যা মানুষকে তছনছ বা লোলালুলু করেছে, তা জন্তুর নেই। তাই সে বুধবারের ভালবাসা বৃহস্পতিবারেও প্রাক-বুধ-বিন্দু থেকেই শুরু করতে পারে, এবং এই অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়ে যেতে পারে সমগ্র আয়ু জুড়ে, এই প্রগাঢ় ভালবাসার রনরন অচিরেই প্রাপকের শিরায়ও চারিয়ে যায়। শুধু এখানেই জানোয়ারের প্রেম মানুষের হৃদি-নির্যাসকে টেক্কা দেয় না, বারবার কুকুর প্রভুর কল্যাণার্থে জীবন দিয়েছে, আগুন থেকে তার অচৈতন্য দেহ জামাপ্রান্ত কামড়ে বের করে এনে, নিজে পুড়ে মরেছে। প্রেমের জন্য আত্মবিলোপ যে পারে, নিজ-অস্তিত্ব-রক্ষার আদিপ্রবৃত্তি পেরিয়ে সঙ্গীর প্রাণকে লালন করে, সে নিকৃষ্ট প্রাণী? বরং সে মানুষিকতা-অতিক্রমকারী জীব, প্রশ্নাতীত প্রণম্য ও চির-সৌহার্দ্যের মক্কেল।

    এবং ভেবে দেখার: ঈশ্বরবাদী বলেন কী করে, মানুষের হৃদয়ের আকুল অনুরাগ শুধু মানুষের দিকেই যাবে? ঈশ্বরের বিচিত্র বিস্তৃত সৃষ্টি, সূর্য থেকে অ্যামিবা অবধি প্র-ঢিসুম পসরা, মানুষকে সাড়েবত্রিশ প্রকারে সম্মোহিত রাখবে না? কেউ ভালবাসবে মানুষকে, কেউ পাহাড়কে, কেউ গোরিলাকে, কেউ গ্রহতারকার আশ্চর্যকে। কেউ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে শুধু নির্জন ছাদে সঙ্গীত শুনবে বলেই, কেউ ব্রেকফাস্টের ডিমভাজার পর থেকেই জপতে থাকে লাঞ্চের আলুপোস্তর কথা, কেউ টিভিতে ফুটবলের শিডিউলে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধক রেখেছে। কোনও মানুষের প্রাণের প্রাণ হতে পারে তার পোষা কুকুর, বা কচ্ছপ, সে তাকে ঘুচুপুচু করে পেতে পারে সর্বাধিক নিরাময়। কেউ ভগবানকেও সর্বোচ্চ ভালবাসতে পারে, তখন তাকে এই পান্ডারা ‘সমাজ-ভিলেন’ দাগিয়ে উল্টো-গাধায় ঘোরাবেন কি?

    আসল ঝঞ্ঝাট অন্যত্র। মানুষ যুক্তি গোল্লায় দিয়ে, স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে বিশ্বাস করেছে: এই পৃথিবীর, গোটা সৃষ্টি-কারখানার কেন্দ্রে আছে মানুষ, বাকিটা স্রেফ মানুষের সাহায্যের নিমিত্ত গড়ে দেওয়া হয়েছে। পাঁঠা গড়া হয়েছে মানুষে খাবে বলেই, সিংহ গড়া হয়েছে মানুষ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে দেখাবে বলেই। মানুষ এই গ্রহের অধীশ্বর, ভগবানের প্রিয়তম জীব, কোটি বচ্ছরের বিশ্বপ্রস্তুতি শুধু তার নাচনকোদনের জন্যেই, ফলে সে যদি নদীকে বাঁধে গাছকে কাটে হাওয়াকে বিষিয়ে ছাড়ে, বেশ করেছে। আর সে যদি তার প্রাণরস ব্যয় করে অ-মানুষ জীবের সঙ্গে আদিখ্যেতায় ঢলে, তবে তা পেল্লায় অপচয়। এবং ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষার বিরোধিতা, কারণ সম্রাটের সঙ্গে ভৃত্যের সখ্য হবে কেন? এখন, যে-লোকটা মানুষ, সে মানুষকেই গোড়ায় সবচেয়ে জরুরি ভাববে, স্বাভাবিক, কিন্তু একমাত্র মানুষই পারে সেই সাম্প্রদায়িক ঠুলি ছিঁড়ে চাদ্দিকে বড়-বড় চোখে সত্য নেহারিতে। মানুষ অন্য সব প্রাণীর নাকের ছ্যাঁদায় লাগাম পরিয়ে রেখেছে বলে, নিয়মিত চাবকাচ্ছে বলে, বেধড়ক লাভ নিষ্কাশন করছে বলে, এবং তা প্রতিরোধহীন ভাবে ঘটছে বলে, সেই মেগা-মস্তানি দিব্যি সঙ্গত ন্যায্য ও ঈশ্বর-অনুমোদিত: তা হয়? মানুষ চাকা এবং পাঁচনবাড়ি আবিষ্কার করেছে বলেই গরুকে গাড়িতে জুতে দেওয়ার অধিকার অর্জন করেছে? মনুষ্যজাত অতীব নিষ্ঠুর ও নিপুণ, কিন্তু নিতান্ত নবাগত, সে আসার আগে বহু বছর বহু প্রাণী এ-ভবগোল্লায় থেকেছে খেয়েছে ধ্বংস হয়েছে, সে চলে গেলেও পৃথিবীর বিরাট কিছু কম পড়বে না। ঠিকই, বিচিত্রকর্মা বিধাতার মহাকীর্তির যোগ্য সমাদর একমাত্র সে-ই করেছে, সে না থাকলে ত্রিভুবেনশ্বরের প্রেম নকড়া-ছকড়া, কিন্তু সত্যিই কি ক্রিটিক না থাকলে শিল্পী মিইয়ে মরুঞ্চে? তায় আবার যে শিল্পী সমুদ্রের তলায় পাহাড় পোঁতে, সকালে বিন্দু-পোকা বিকেলে ব্ল্যাক হোল বানায়? মিথ্যে (ও ঠুনকো) অভিমান পেরিয়ে মানুষকে একটু বাইরে থেকে নিজেকে ও অন্যকে দেখতে শিখতে হবে, এবং তক্ষুনি বোঝা যাবে: অমুক প্রাণী গামবাট, তমুক প্রাণীর আমবাত— তকমা লাগাবার কোনও অধিকারই তার নেই। সে অন্যতম প্রাণীমাত্র, নগণ্য ও অগণ্য জানোয়ারের লাইনে দাঁড়িয়ে নিজ আধার কার্ড হাতে।

    পোষা একটা প্রাণীকে অত্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলে, মানুষের পরিধি বাড়ে, সে আপসেই ভাবতে শিখে যায়, মানুষবিশ্ব পেরিয়ে এক বিরাট বিশ্ব স্পন্দিত হচ্ছে, দপদপে, ধড়ফড়ে, স্ক্যান করলে পাওয়া যাবে ফুর্তি বিষাদ ভয় হইহই প্রীতি আত্মত্যাগ। এমনকী একটু ঝুঁকলে মানুষ পোষা জীবটির কাছে ক্লাসও করে, হয়তো সারল্য আর আশাবাদের, যেটুকু প্রাপ্তি তা-ই চেটেপুটে ভোগের ও কাঁদুনি না গাওয়ার। এত কিছু যদি না-ও ঘটে, স্রেফ আত্মা উপচে ভালবেসে চলার একটি আধার খুঁজে পেয়ে, আর এই ভরসা আঁকড়ে যে সেই বন্ধুটির পক্ষে বিশ্বাসভঙ্গ অসম্ভব, সে মাঝেমধ্যেই এই পোষ্যের সঙ্গে লাল বল খেলার দ্বীপটিতে এসে হাঁফ ছাড়ে। সারাক্ষণ মানুষের সঙ্গে গা-ঘষাঘষি ও ত্বক ছড়ে যাওয়ার আখ্যানের শেষে, না-মানুষের আশ্রয় তাকে আঙুল আঁকড়ে অনেকটা স্নান দেয়। ইরান তার প্রজাদের এই পালাবার জায়গাগুলোই সুপরিকল্পিত ভাবে কাড়তে চাইছে কি না, কে জানে।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook