রক্তচয়নিকা
১.
সূর্যাস্ত যাবে না দেখা, এত উঁচু দম্ভের প্রাচীর।
কবেই দেহের কথা ভুলে গেছে ছিন্ন হওয়া শির।
ঘৃণার সমস্ত নদী সমুদ্রে মিশেছে চুপিচুপি…
নিজের আসল রং ভুলে গিয়ে চুপ করে বসে আছে
ওই, বহুরূপী—
সময় জমাট বেঁধে স্থির
উন্মাদ হবার ঠিক পরের অবস্থা, পৃথিবীর!
২.
বানানো দুর্ভিক্ষ, তাতে দাঁড় করানো রোগা রোগা লোক।
হাতে তৈরি করা বন্যা, আরও একটু ক্ষয়ক্ষতি হোক।
যতনে বাঁধানো দাঙ্গা, ছলনায় সাজানো পুলিশ
বাঘ জঙ্গলেই রাখা। বাদবাকি এলাকা নিরামিষ।
টোকা দিলে ভেঙে যাবে, আগলে রাখা তাই প্রাণপণ—
তিনদিনের পৃথিবী। ঝুলন!
৩.
যেখানে পৌঁছতে চায়, তার বহু বহু আগে
লেখাগুলো পুড়ে ছাই হল।
হে ঘৃণা, জ্বালানিপুঞ্জ, এবার চুল্লির মুখ খোলো।
কবে থেকে শুয়ে আছি চাদরে-দঁড়িতে মোড়া-বাঁধা
পাশে পুড়ে যাওয়া কথা, ঝলসে যাওয়া শব্দের তাগাদা…
হ্যাঁ, তোমারই জিত। গিলে নাও।
তুমি থাকবে। জেনে রেখো তাও—
কথা সবই এক। কিন্তু সব নীরবতাই আলাদা।
৪.
ধ্বংসের আলোয় আমি দেখেছি তোমার প্রিয় মুখ
উপগ্রহ থেকে ঠিক যেরকম লাগে বসুন্ধরা—
ক’কোটি মন্বন্তর চলে গেছে। যে ভোলে ভুলুক,
আমি তো ভুলছি না তুমি সময়ের গর্ভে সহোদরা
জানি সব শুষে নেয় অন্ধকার। হাওয়া সর্বভুক।
আমার নিয়তি তবু তোমাকে বিশ্বাস করে মরা!
৫.
এবার দেয়াল থেকে তুলে নাও সমস্ত কবিতা।
পৃথিবীর সব আঁচ শীতের পোশাকে এসে থিতু
তুষার পোহাচ্ছে, দ্যাখো, কাছে দূরে ছোট-বড় চিতা…
নিভে গেল বলে তুমি আগুনের নাম দিলে ভিতু।
নীল রক্ত ফুটে আছে, গাছে গাছে সে অপরাজিতা
আমি খুব দূর থেকে দেখি—
তোমাকে সাজিয়ে দিক কসাই রঙের এই ঋতু।
কভারের ছবি: ভি এস গাইতোণ্ডে