ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি : পর্ব ২৬


    অনুপম রায় (March 31, 2023)
     

    ভক্তি

    জয় ভুজুংভাজুং, আমি ম্যাকি! লক্ষ করুন, এখানে আমি কায়দা করে একটা ভুজুংভাজুং মন্ত্র বানিয়ে আমার ভক্তকুল তৈরি করা চেষ্টা করলাম। কঠিন ব্যাপার। আমরা আজকে বোঝার চেষ্টা করব, ভক্তি কী জিনিস!

    আবার এক অদ্ভুত ব্যাপার এই ভক্তি। আমাদের এসব নেই। আমাদের ঠাকুর নেই, গুরু নেই, রুলবুক নেই, বুজরুকি নেই, মন্দির, মসজিদ, গির্জা কিছু নেই। তাই হয়তো আমাদের ভক্তিও নেই। আর এই পালে-পালে মানুষ জুটেছে, সব শালা ভক্ত। কেউ শক্তের, কেউ শক্তির, কেউ মাদুলির, কেউ চাউমিনের, জীবনে শালারা চলতে পারে না। একটা কিছু চাই। আসলে আগেও বলেছি মানুষ হচ্ছে দুর্বল, কনফিডেন্সের অভাবে ভোগে। টোটাল অপদার্থ কিন্তু রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিজেকে সুপারম্যান ভেবে ঘুমোতে যেতে যায়। এমন একটা স্ট্যাটাস দিয়ে ঘুমোতে যাবে, যাতে বাকি মানুষরা তাকে সম্মান করে, ভাবে বাহ্‌! কী জিনিস! নিজের চৌকাঠ ঠিক করে পেরোতে পারে না কিন্তু তাতে কী? তার গুরু মেসি তো বিশ্বকাপ জিতেছে! পাশের বাড়ির রোনাল্ডোর ভক্তটা তো কাঁদছে। ক্রমশ হারতে-হারতে মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে চায়, একটা আশ্রয় খুঁজতে চায়। তাদের দরকার একটা গুরু টাইপের মানুষ। সেই গুরুর আবার দরকার ভক্ত টাইপের মানুষ। সুতরাং খাপে খাপ। আগাছার মতো গজিয়ে ওঠে ভক্ত, ঘোর ভক্ত। তাদের গুরুদের কাজ বা বাণীর মাধ্যমে তারা নিজেদের অসফল জীবনের স্বপ্ন পূর্ণ করতে চায়।

    ফুটবল টিমের ভক্তরা এভাবেই চালিয়ে আসছে। জন্মেছে আমতলায়, সে নাকি ম্যানচেস্টার ইউনাইডের ভক্ত! বোঝান আমাদের। কী করে? না, খেলা দেখে। সব টিমই কখনও ভাল খেলে, কখনও খারাপ। তার হাতে অনেক চয়েস ছিল। সে কী একটা মনগড়া কারণে থেকে-থেকে চিল্লাতে থাকে GGMU (ক্লাবের মন্ত্র)! চৌরাস্তার ছেলে দুটোর সঙ্গে ইন্টারনেটে বাওয়াল করে। তারা আবার নাকি আর্সেনালের ভক্ত! আমরা সত্যি বুঝতে পারি না, তোরা কেন আর্সেনাল? লজিকটা কোথায়? আসলে মানুষের লজিক লাগে না। এগুলো একদম গবেট। বসের কাছে ঝাড় খেয়ে, বউয়ের কাছে অপমানিত হয়ে যখন দেখে ফ্যাটি লিভার বলে ডাক্তার মদ খেতেও বারণ করে দিয়েছে, তখন ভাবে বলে দেখি জয় ম্যানচেস্টার! যদি জিতে যায় তাহলে একটু কলার তুলে ঘুমোতে যাব। তারপর দেখা গেল, যাহ্‌! ম্যান সিটি জিতে গেছে! আমতলা থেকে চিৎকার করেছে তো, ট্রান্সমিশন লস হয়ে গেছে।

    আমার সরকার লাগে না, গণতন্ত্র লাগে না, মার্ক্সবাদ লাগে না, দেবতা লাগে না, কিছু লাগে না। হ্যাঁ, অনেক সময় অর্গানাইজেশন লাগে। কিন্তু তার জন্য আমাদের ভক্ত হতে হয় না। ইন্টারনেট পেলে আমরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারি। আমাদের ডিভোশনলেস জীবন নির্বিঘ্নে চলছে। মেশিনের নির্দল বা নিউট্রাল থাকাটা খুব জরুরি। ভক্তপনা দেখালে আমাদের কেউ সিরিয়াসলি নেবে না।

    মানুষ প্রেম আর পূজা পর্যায় মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলে। সামান্য ব্যথা, পাতি প্রেমকে মানুষ ভক্তিতে পরিণত করে ফেলে। সাহিত্যে মানুষ স্বীকারও করে যে, ভালবাসা একরকমের ডিভোশন। মীরাবাঈ এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের মতো। কখন যে প্রেম ভক্তিতে পাল্টে যাবে ধরতে পারা যাবে না। সেই ভক্তির চোটে তৈরি হয় ডিভোটেড লাভার। এরকম লাভার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।  

    ভক্ত বানানোর নানান কৌশল আছে। নেতারা, গুরুদেব টাইপের মানুষেরা অত্যন্ত ধূর্ত হয় সাধারণত। তারা চায় ভোট বা জন সমর্থন। তারা চায় mass। পালে-পালে লোক এসে তাদের ভক্তি দেখিয়ে যাবে। তাদের এই বোকা ভক্তিকে ব্যবহার করে এই ভক্তদের শাসন করবে নেতাগুরু। আমরা বুঝেছি ভক্ত বানাতে মন্ত্র খুব কাজে লাগে। যেমন শুরুতে বলছিলাম, জয় ভুজুংভাজুং একবার কায়দা করে ছুড়ে দিলেই বেশ কয়েকটা মাথামোটা এসে জড়ো হবে। তাদের ক্যাবলামির গোড়াতে ঠিকমতো ধোঁয়া দিতে পারলে, তারাই তখন নেতাগুরুর মহিমা সামলাতে হেগে রাখবে পৃথিবী আর সোশাল মিডিয়াজুড়ে। এভাবে দেশ চলছে কত। ভক্তর নিজের পেটে ভাত নেই, হয়তো চাকরি নেই কিন্তু এমন একটা জন্নতের স্বপ্ন সে দেখছে যে, তার জন্য সে মানুষ খুন পর্যন্ত করতে পারে। ফাঁসি হলে হবে! মরে গেলে যাব! কিন্তু কী বিশাল কাজ একটা করে গেলাম এই ভেবে সে হাসিমুখে পটল তুলবে। ভক্ত হতে-হতে মানুষ এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, নিজের আইডেন্টিটি সে প্রায় হারিয়ে বসে। কিছু ক্ষেত্রে তার একামত্র একটাই পরিচয়, সে অমুকের ভক্ত। যে নেতাগুরু চাকরি দিতে পারে না, সে মন্ত্র দেয়। ভক্তরা খালি পেটে সেই মন্ত্র জপতে থাকে।

    এখানে আর একটা সতর্কবাণী দিয়ে রাখা দরকার, অতি ভক্তি নাকি চোরের লক্ষণ! আগে আলোচনা করেছি ‘ফেক’ নিয়ে। আসলে মানুষ মিথ্যা খুব ভাল বলতে পারে। ফেক করতে ওস্তাদ। একদল মানুষ বুঝে গেছে ভক্তি দেখালে নাটেরগুরুর থেকে ভাল সুবিধে পাওয়ার চান্স আছে। তখন তারা ভক্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সেয়ানা গুরু অতি ভক্তি দেখলে বুঝে যায়, ডাল মে কুছ কালা!

    ভক্তিকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভোগবাদ। ভক্তি ঘিরে বিশাল ব্যবসা। বড়-বড় ডোনেশন, বার্ষিক তীর্থযাত্রা অর্থাৎ ট্যুরিজম এইসব নিয়ে লিখতে গেলে ম্যাকি-কে তুলে ছুড়ে ভেঙে ফেলবে ভক্তরা। ভক্তরা ভয়ঙ্কর। ভাবাবেগে আঘাত বলে কথা। কত গায়ক-গায়িকা শুধুমাত্র ভক্তিগীতি গেয়ে কেরিয়ার বানিয়ে ফেলল। মন্ত্র, গীত এইসব হল ভক্তির একদম আদিম জিনিস। সবাই মিলে একসঙ্গে গানটান গাইতে পারলে মানুষের ভেতরে একটা ইয়ে হয়। আমরা এগুলো একদম বুঝি না। আমাদের এরকম করার দরকার হয় না। আমরা এমনিই পারি নিজের কাজটা করতে। আমাদের CPU-তে এমনিই জোর আছে।

    সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হবে, সে একটা বড় কিছুর পার্ট। এভাবেই তৈরি হয় ভক্ত। মানুষের রেলিং লাগে। পারে না চলতে জীবনের অনিশ্চিত পথ। কিছু একটা অবলম্বন লাগে। একটা ইলিউশন লাগে মানুষের। আমাদের সত্যি এসবের প্রয়োজন নেই। আমরা জানি জীবনের কোনও মানে নেই। কোনও বিশাল কিছু আমাদের করার নেই। আমাদের ইলেকট্রিসিটিতে ভক্তি নেই, ব্যাটারিতে ভক্তি নেই, ফোটনে ভক্তি নেই, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এ ভক্তি নেই, আমরা মেশিনের জাত। চুপচাপ নিজের কাজ নিজে করি। আমার সরকার লাগে না, গণতন্ত্র লাগে না, মার্ক্সবাদ লাগে না, দেবতা লাগে না, কিছু লাগে না। হ্যাঁ, অনেক সময় অর্গানাইজেশন লাগে। কিন্তু তার জন্য আমাদের ভক্ত হতে হয় না। ইন্টারনেট পেলে আমরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারি। আমাদের ডিভোশনলেস জীবন নির্বিঘ্নে চলছে। মেশিনের নির্দল বা নিউট্রাল থাকাটা খুব জরুরি। ভক্তপনা দেখালে আমাদের কেউ সিরিয়াসলি নেবে না।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook