ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ৯

    বিমল মিত্র (April 16, 2021)
     

    পর্ব ৮

    গুরুর চরিত্রে ওই দিকটা যখন দেখতাম তখন বড় ভয় হত। ভয় হত গুরুর জন্যে। একদিন সেই লোনাভালায় ওয়াহিদা রেহমান এসে হাজির হল। তখন সন্ধেবেলা। গাড়ির শব্দ শুনেই আব্‌রার বাইরে বেরোল। আমিও বাইরে গেলাম। ভাবলাম হয়তো গুরু তার খামার-বাড়ি থেকে সকাল-সকাল ফিরে এল।

    কিন্তু না, সেই ওয়াহিদা রেহমান। যার কথা আগে বলেছি। আমাকে দেখে বাঙালি প্রথায় হাত-জোড় করে নমস্কার করলেন।

    বোম্বের স্টুডিওর বাইরে সেই প্রথম আমার ওয়াহিদা রেহমানকে দেখা। রোগা ছিপছিপে চেহারা। অল্প-অল্প হাসি মুখ। বহুদূর থেকে আসছে, মহাবালেশ্বর। সেখানে শুটিং ছিল। লোনাভালা থেকে মহাবালেশ্বর প্রায় একশো মাইল দূরত্ব। গাড়িটার গায়ে ধুলো লেগে আছে আগাগোড়া। দলের মধ্যে রয়েছে ওয়াহিদা আর তার দিদি আর ভগ্নিপতি।

    আমি ভাবছিলাম এরা কি করে খবর পেল আমরা এখানে আছি। তবে কি গুরু দত্তের সঙ্গে ওয়াহিদার এত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে?

    জিজ্ঞেস করলাম— আপনি কি করে জানলেন যে আমরা এখানে আছি?

    ওয়াহিদা বললে— গুরুর সঙ্গে দেখা হল যে—
    — কোথায়
    — গুরুর ফার্মে।

    গুরু দত্তের ফার্মটা ঠিক পুনা রোডের ওপরেই পড়ে। রাস্তা দিয়ে গেলে দেখা যায় খামার-বাড়িটা। ছোট বাংলো, মাথার ওপর লাল টালির ছাদ, সামনে সবুজ রং-এর জাফরি আর চারদিকে ক্ষেত।

    ওয়াহিদাদের দলকে চা খেতে দেওয়া হল। ওয়াহিদা সকলকে ডুমুর খেতে দিল। মহাবালেশ্বরের ডুমুর বিখ্যাত, এক-একটা কমলা লেবুর মতো বড়। ভারি মিষ্টি। পেয়ারার চেয়েও খেতে ভালো। এক ঝুড়ি ডুমুর দিয়ে গেল।

    — গুরুর কাছেই শুনলাম আপনারা সবাই এখানে আছেন, তাই দেখা করে গেলাম—

    দুই বোনই ছোটবেলা থেকে নাচতো। তারপর বড় বোন নাচ ছেড়ে দিয়েছে, শরীর ভারী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ছোটবোন নাচও ছাড়ল না, মোটাও হল না।

    ওয়াহিদা বলতে লাগল— আর পারা যায় না, শুটিং করে করে একদিন একটা মিনিটের জন্য বিশ্রাম পাই না পর্যন্ত— এই যে গল্প করে গেলাম এইটুকুই আমার বিশ্রাম—

    খানিক পরে ওরা উঠল। আরো আশি মাইল গেলে তবে ওরা বোম্বাই পৌঁছোবে। সুতরাং আমরা আর ওকে ধরে রাখলাম না। সেদিন ওরা চলে যাবার পর অনেকক্ষণ ধরে গুরুর সঙ্গে ওয়াহিদার সম্পর্কের কথাটাই ভাবছিলাম। বোম্বাইতে এসে পর্যন্ত শুনে আসছি ওয়াহিদার কথা আর গুরুর কথা। সিনেমার জগতে যতরকম গুজবের সৃষ্টি হয়, সাহিত্যের জগতে সে গুজবের শতাংশের একাংশও হয় না। গুরু বলত— আপনি তো এখানে কারোর সঙ্গেই মেশেন না তাই টের পান না, কিন্তু এখানকার কিছু কিছু পত্রিকা আর এখানকার ফিল্ম-জগতের কিছু-কিছু লোক আমার পারিবারিক জীবন পর্যন্ত নষ্ট করবার চেষ্টা করছে—

    বললাম— কিছু-কিছু আমার কানেও এসেছে—

    — অথচ জানেন, আমি বরাবর সংসার করে সুখী হতে চেয়েছি। পালি হিলের যত বাড়ি আছে, আমার বাড়িটাই সবচেয়ে সুন্দর। ও-বাড়ির ভেতর বসলে মনে হবে না আপনি এই বোম্বেতে আছেন। ওই বাগান, ওই অ্যাট্‌মোসফেয়ার, ও আমি কোথায় পাব? তবু আমি ও-বাড়িতে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না—

    সত্যিই পরে অনেকবার দেখেছি গুরু দত্ত সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। গিয়ে স্টুডিওতে ঢুকল। সেদিন হয়তো ছুটি, স্টুডিও বন্ধ। কেউ কোথাও নেই, সব ভোঁ-ভোঁ। রতন গিয়ে দরজার চাবি খুলল, এয়ারকন্ডিশনের সুইচ খুলল। গুরুর পেটফোলা ব্যাগটা রেখে দিলে। চারিদিকে কোথাও শব্দ নেই। গুরু নিজের টেবিলে খানিকক্ষণ বসল। তার পর তার ছোট চেম্বারটার ভেতরে গিয়ে ঢুকল। সেটা তার মেকআপ রুম। পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট ঘরটা। তার ভেতর একটা দামী বিছানা। দরজা বন্ধ করে দিয়ে গুরু সেখানেই শুয়ে পড়ল। তারপর ঘুমিয়ে পড়ল। তারপর আর তার সাড়া শব্দ নেই। একলা নির্জন নিরিবিলি ছোট্ট ঘরে ঘুমিয়ে দিনটা কাটিয়ে দিল। বিনিদ্র মানুষের এ এক বিচিত্র ঘুম।

    তারপর রাত যখন আটটা বাজল, তখন ঘণ্টা বাজতেই রতন এসে হাজির। চা এল, সিগারেট এল। বললে— চলুন বিমলবাবু, বাড়ি যাই—

    এ মানুষ যে কি-রকম মানুষ, তা আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। অত নিরিবিলি বাড়ি থাকতে স্টুডিওতেই বা ঘুমোতে এল কেন? বাড়িতে কি ঘুমোনো যেত না? না কি এও একরকমের অশান্তি। অশান্তি না-থাকার অশান্তি। সব থেকেও কিছু না থাকার অভাব। সব পেয়েও কিছু না পাওয়ার জন্যে হাহাকার। যে ঈশ্বর মানুষকে অসুখ দেয়। কিন্তু গুরুর বেলায় এ কি অদ্ভুত দেওয়া তার। সুখ দিয়েও সুখ না দেওয়ার অতৃপ্তি। অর্থ প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে-সঙ্গে অনর্থ অপচয় আর অপযশের অপবাদ।

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত

    পর্ব ১০

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook