প্রিয় সুবিমল: পর্ব ৩

cover_subimal_3

প্রেরণা, যোগ্যতা, অভিমান

ভাস্কর চক্রবর্তী ‘প্রিয় সুব্রত’ বইয়ের উৎসর্গপত্রে ভাস্কর চক্রবর্তী লিখেছিলেন— ‘সঙ্গে থাকো। সঙ্গে থাকো। সারাক্ষণ/ সঙ্গে সঙ্গে থাকো।’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। কিন্তু, কথা রাখেননি সুব্রত চক্রবর্তী। প্রয়াত হন ১৯৮০-তেই। তবে ভাস্কর-সুব্রতর সম্পর্ক এই পর্বের বিষয় নয়। বরং সুবিমল বসাককে লেখা সুব্রত চক্রবর্তীর অনেকগুলি চিঠি থেকে তিনটি তুলে ধরা হবে এ-পর্বে।

এবং একইসঙ্গে ঘুরেফিরে আসবে একটি পত্রিকার নামও— ‘আবহ’। সত্তরের দশকে, এই পত্রিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন সুবিমল। সম্পাদক হিসেবে অসিত গুপ্তের নাম ছাপা হলেও, বিভিন্ন চিঠিপত্র ও ডাইরির নোট থেকে প্রমাণ পাচ্ছি, কবি-লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে লেখা সংগ্রহ এমনকী পত্রিকা পাঠানোর ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখতেন সুবিমল। সুব্রত-সুবিমল কথোপকথনেরও বড় অংশ জুড়ে আছে ‘আবহ’ পত্রিকা। অনেকগুলি সংখ্যায় লিখেছিলেন সুব্রত চক্রবর্তী— কবিতা, গদ্য, অনুবাদ— সবই।

আরও পড়ুন: ‘আমি চ্যাংড়া কিংবা বদমাইসদেরও ভালোবাসি, কিন্তু মিথ্যুকদের সইতে পারি না’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কথার জবাবে চিঠিতে কী জানিয়েছিলেন সুবিমল বসাক? লিখছেন তন্ময় ভট্টাচার্য…

১.৪.৭২

প্রিয় সুবিমল, হাবিজাবি ও আপনার চিঠি যথাসময়েই পেয়েছিলাম। ঐ চিঠি— ক্ষোভের তো নয়ই, আমার যথেষ্ট প্রীতির কারণ হয়; কিন্তু গত ২-মাস আমি, ধারাবাহিকভাবে, এমনই গোলমালে পড়ে আছি যে আপনাকে চিঠি লিখতে পারি নি। সাধারণভাবে ১-টা চিঠি লেখা নিশ্চয়ই যেতো, কিন্তু, আমার ইচ্ছে ছিলো, ‘হাবিজাবি’ পড়ে আমি কিরকম react করেছি— ঐ বিষয়ে বিস্তৃতভাবে আপনাকে লিখবো। অপেক্ষা করাই হলো, এখনও বিস্তৃতভাবে লেখার মনস্কতা ও স্থিরতা আমার নেই। আপনার ২-য় চিঠি গতকাল পেয়েছি এবং, যেন আপনি ভুল না বোঝেন, আজই অত্যন্ত সাধারণ এই চিঠি আপনাকে লিখছি। হাবিজাবি সম্পর্কে, পরে নিশ্চয়ই আপনাকে লিখবো, আপাতত আমাকে ক্ষমা করুন।
    অসিত গুপ্তের চিঠি পেয়ে, গত শনিবার তাঁকে ভাস্করের বই সম্পর্কে আমার reaction বিষয়ে ১-টা ছোট প্রবন্ধ পাঠিয়েছি। অত্যন্ত মানসিক অশান্তির মধ্যে লেখাটা তৈরি করেছি এবং পোস্ট করার পরে, ঐ লেখা সম্পর্কে— অর্থাৎ যা বলতে চাই লিখতে পেরেছি কি-না ভেবে— উত্তরোত্তর মানসিক উদ্বেগ বাড়ছে। এখনকার, আমাদের লেখার adventure সম্পর্কে কমবেশি ভেবেছি এবং অত্যন্ত প্রস্তুতভাবে কিছুদিনের মধ্যেই আমি ১-টা লেখা শুরু করবো। দেখা যাক, লিখতে পারি কি না!
   চিঠি দেবেন।
   ভালোবাসা।

সুব্রত

‘হাবিজাবি’— ১৯৭০ সালে প্রকাশিত সুবিমল বসাকের কাব্যগ্রন্থ। চিঠির প্রথমাংশে সেই বই পড়ে পাঠ-অভিজ্ঞতা জানানোর অপারগতা জানাচ্ছেন সুব্রত। সুবিমলের ১৯৭২-এর ডাইরি খুঁজে না-পাওয়ায়, চিঠিটি পেয়ে প্রতিক্রিয়া কী ছিল, বোঝা গেল না। যাই হোক, চিঠির দ্বিতীয়ার্ধে ভাস্কর অর্থাৎ ভাস্কর চক্রবর্তীর বই নিয়ে প্রবন্ধের উল্লেখ করেছেন সুব্রত। বইটি বস্তুত ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’, আর সুব্রত-লিখিত প্রবন্ধটির শিরোনাম— ‘৫৪ তাসের মিরাক্‌ল্‌’, প্রকাশ পেয়েছিল ‘আবহ’ পত্রিকার বৈশাখ ১৩৭৯ সংখ্যায়।

ব্যাংক কলোনি
৩, ইছলাবাদ
বর্ধমান
৪.৮.১৯৭৫

প্রিয় সুবিমল,
   তোমার বই, গেরিলা আক্রোশ, পড়লাম। সবকটি লেখাই আগেও পড়েছি; এখন আবার লেখাগুলি একত্রে পড়ে ভালো লাগলো। নিজের মতো এক গদ্যের আঘাতে-আঘাতে তুমি নিজেকে জবর ভাঙতে পেরেছো— এটা খুব কম কথা নয়। আশরীর আত্মা একজন মরমানুষের Projection বলে মনে হলো বইটিকে। কিন্তু তুমি কি মানো Projection মাত্রই conditional? এখানে, তোমার বইএ, ঐ condition সমূহ, অন্তত আমার কাছে, তেমন বিশদ নয়— যে জন্য কখনো কখনো ফাঁক মনে হয়েছে। তোমার পদ্ধতি খুব সরল, যে সরলতা তোমার ভাঙা টুকরোটাকরার ওপর মমতাময় হাত বোলায়— যার স্পর্শশান্তি, পাঠশেষে, একধরনের মায়া ছড়িয়ে দেয়। চিঠিতে খুব বেশি কিছু লিখতে অক্ষম— পরে কখনো আরো লিখবো।
   আশা করি সপরিবারে ভালো আছো। এবারের ‘আবহ’ এখনো পেলাম না। এটা কি ঠিক করলে? ডাকযোগে আর দেরি না করে যদি পাঠাও, ভালো লাগবে।
   প্রীতি জানাই—

সুব্রত চক্রবর্তী

পুনশ্চ/ একটা খটকা: প্রচ্ছদে গোরিলার ছবি কেন? গেরিলার সঙ্গে গোরিলার কি সম্পর্ক?

১৯৭৪-এর ডিসেম্বরে বেরোয় সুবিমল বসাকের বই ‘গেরিলা আক্রোশ’, প্রকাশক ‘জেব্রা বুকস’-এর তরফে লেখক নিজেই। প্রচ্ছদেও ব্যবহৃত হয় সুবিমলেরই স্কেচ। এই চিঠিতে সুব্রত সুবিমলের বইটির পাঠ-প্রতিক্রিয়া সংক্ষেপে জানিয়েছেন। ডাইরিতে ৬.৮.৭৫-এ সুবিমল লিখছেন—

বাড়ি ফিরে সুব্রত চক্রবর্তীর চিঠি পেলুম। ‘গেরিলা-আক্রোশ’ পড়ে মতামত জানিয়েছে। এই প্রথম আমি গ্রন্থ সম্পর্কে মতামত পেলুম। সুব্রতকে আমি উপহার স্বরূপ দিয়েছিলুম। আরও কয়েকজনকে দিয়েছি— তারা কেউই আর জানায়নি। অবশ্য কাভার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য।
ওকে চিঠি দিতে হবে।
‘আবহ’ ওকে যে দুদিন দেবার জন্য নিয়ে গেছিলুম— দেয়া হয়নি। পোষ্টে পাঠানো হয়েছিল সকলকে একসঙ্গে— মনে হয় সে পায়নি। সুবর্ণরেখায় রেখে আসতে হবে।

পরের চিঠিটি ‘আবহ’-কেন্দ্রিক, তবে লিটল ম্যাগাজিন-সম্পর্কে সুব্রত-র দৃষ্টিভঙ্গির আভাস পাওয়া যায় এতে।

ব্যাংক কলোনি
৩, ইছলাবাদ
বর্ধমান ৭১৩১০১
৮.১২.৭৫

প্রিয় সুবিমল,
   তোমার চিঠি যথাসময়েই পেয়েছিলাম, উত্তর দিতে বড্ড দেরি হয়ে গেলো বলে নিজেরই খারাপ লাগছে। ‘আবহ’ পেয়েছি; এই সংখ্যা— অন্যান্য সংখ্যার তুলনায়— কিছুটা অমনোযোগী বলে মনে হয়েছে। আমার মনে হয়, প্রকাশ না করার উপায় নেই, এমন লেখা ছাড়া little mag-এ আর কিছু ছাপা ঠিক নয়। ভালোমন্দ লেখা আর অনিবার্য লেখার মধ্যে যে ফারাক সে তুমি ঠিকই জানো, কেননা তুমি লেখক। আর, একটি যেমন-তেমন সংখ্যা দু দশটা চমৎকার সংখ্যাকে ঢেকে দিতে পারে। খোলাখুলি লিখলাম, কেননা তুমি আমার বন্ধু; ভুল বুঝো না যেন। আমার লেখাতেও কয়েকটা মুস্কিলকর ছাপার ভুল রয়ে গেছে। আগে যা হয়নি। যাইহোক, আমার ঐ লেখা তোমাকে শিরদাঁড়া সোজা রাখতে প্রেরণা দিয়েছে জেনে খুশি হলাম। গদ্য পাল্টানোর কথা ভাবছো— তোমার পরিবর্তিত গদ্য পড়ার জন্য উৎসুক হয়ে রইলাম।
   ২/১ কপি আরও (আবহ) পেলে ভালো হয়। ১টা প্যাকেটে আমার নাম লিখে ‘সুবর্ণরেখা’য় রেখে আসতে পারো— রেখে নিশ্চয়ই জানিয়ো। আমি কলকাতায় খুবই কম যাই ইদানীং— কেটিতে একেবারেই না।
   ভালো থেকো।

সুব্রত

আমি বেশ কিছুদিন এক গোলমালের মধ্যে থেকে এখন একটু সামলে উঠেছি। তবে, এখনও কিছু লিখতে পারছি না বলে মনে কষ্ট পাই।

‘আবহ’-র কোন সংখ্যার কথা বলছেন সুব্রত? চিঠির তারিখ দেখে মনে হয়, ১৩৮২-র শারদীয়া সংখ্যা। ওই সংখ্যাটি হাতে না-পাওয়ায়, পত্রিকার সঙ্গে মিলিয়ে সুব্রত-র বক্তব্য যাচাই করা গেল না। চিঠিতে উল্লিখিত দুটি স্থান, ‘সুবর্ণরেখা’— কলেজ স্ট্রিটের বইবিপণি ও প্রকাশনা সংস্থা; ‘কেটি’— খালাসিটোলা। খালাসিটোলা-সংক্রান্ত এক স্মৃতিচারণায় সুবিমল লিখেছেন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেখানে হুল্লোড় করার কথা, যে-দলে ছিলেন সুব্রত-ও। ‘ফি-শনিবার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত লেকচার শেষ করে খালাসিটোলায় আসত, সঙ্গে কবি সুব্রত চক্রবর্তী, দুজনেই অধ্যাপনা করে বর্দ্ধমানে। হাওড়া স্টেশনে নেমে সরাসরি কেটিতে।

আলোচ্য চিঠিটি সম্পর্কে সুবিমল ডাইরিতে (১০.১২.৭৫) লিখছেন— ‘বাড়ি ফিরে এসে সুব্রত চক্রবর্তীর চিঠি পেলুম। পোষ্টকার্ড। আমার বহু দিনের চিঠির জবাব। ভালই লিখেছে। লিটল ম্যাগাজীন তো এরকম হবেই। Syetematic হবার কথা নয়।

সুব্রত প্রয়াত হন ১০ জানুয়ারি, ১৯৮০-তে। ১৩ জানুয়ারি, ডাইরিতে একটি কথাই লিখে রেখেছেন সুবিমল— ‘সুব্রত চক্রবর্তীর মৃত্যু সংবাদ।’ লাল কালি দিয়ে। স্পষ্ট অক্ষরে।

পরের ব্যক্তির চিঠিতে চলে যাওয়া যাক। উদয়ন ঘোষ— বাংলাভাষার অন্যতম উল্লেখযোগ্য গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। সুবিমল উদয়নের থেকে চার বছরের ছোটো— প্রায় সমসাময়িকই বলা যায়। উদয়ন ঘোষের লেখা দুটি চিঠি খুঁজে পেয়েছি আমরা, ১৯৮০ সালের। দেখে নেওয়া যাক—

২ সেপ্টেম্বর ৮০

শ্রী
সুবিমল বসাক
সমীপেষু

আপনার পত্র পেলাম। কোনো সংকলনে আমার গদ্য জায়গা করতে পারে না, কেননা সে যোগ্য নয়। কিন্তু, বুঝি, ফাঁকা মাঠ, তাই আমাকেই মাঠে নামানো হল। আমার দৈন্য আপনি অন্তত বোঝেন, তবু কেন যে আপনার আমার কথা মনে হল, ভেবে পাই না। আমার এখনো সময় হয় নি, সুবিমল। যোগ্যতাও আসে নি। সুতরাং সব জেনে শুনেও অধুনা প্রায় অপাঠ্য গদ্য যদি তবু সংকলিত করার বাসনা থাকে তো করুন। আমার ব্যক্তিগত কোনো ভালোমন্দ বোধ নেই এ ব্যাপারে— কেননা আমার সব গদ্যই, অন্তত আজ পর্যন্ত, ভালো না, ভালো হতে চেয়েছিল, পারে নি। আপনার যা খুশি, করুন।

উদয়ন ঘোষ

চিঠিতে অভিমানী সুর স্পষ্ট। এ-ও বোঝা যায়, সুবিমল কোনও-এক সংকলনে উদয়নের পুরনো কোনও এক লেখা রাখতে চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন, তারই জবাব এটি। এই চিঠি সম্পর্কে সুবিমল ডাইরিতে (উদয়নের পদবি ভুল লেখা) ৫.৯.৮০ তারিখে লিখছেন— ‘উদয়ন দাশগুপ্তের চিঠি পেয়েছি। খুব অভিমান করে চিঠি দিয়েছে। সেই পনরো বছর আগের লেখা ছাপাতে রাজী নয় তেমন। অবশ্য বলেছে, আপনি ছাপতে পারেন আমার আপত্তি নেই। আমিও ভেবে দেখলুম, ‘অধুনা সাহিত্যে’ ‘অবনীর লাল রক্ত’ গল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তাকে একটা চিঠি দিতে হবে।

১৯৭১ সালের আগস্টে, সুধাঙ্কুর মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘অধুনা সাহিত্য’ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল উদয়ন ঘোষের ‘অবনীর লাল রক্ত’ গল্পটি। সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ে সুবিমল দ্বিতীয় চিঠিটি লেখেন উদয়নকে। সম্ভবত উল্লেখ ছিল অভিমানের বিষয়টিও। জবাব আসে দিনকতক পরেই।

১২.৯.৮০

সুবিমল,

   না অভিমান না, তবে যদি অভিমানী হয়েও বুকের স্পর্শ পাই, তাহলে আজীবন অভিমানী হতে পারি। আসলে, সুবিমল, এদেশে এই লেখালিখি ও তারপরের ব্যাপার-স্যাপারে এত সব জিলিপি আছে যে অখ্যাত ছোট কাগজে লিখেই জীবন কাটাব, এই ইচ্ছে। আর সেখানেই, এই ৪৬এ পড়ে বুঝেছি, আমি এখনো শিখিনি লিখতে। খাস-মহলে থাকলে এটা বুঝতে জীবন যেত। এখন আমার পাঠশালা পর্ব চলছে— এ পর্বে কেউ যদি তবু গদ্যের যে কোন রকম মুদ্রণ চায়, স্বভাবতই কেমন যেন লাগে— তাই ওরকম চিঠি।
    ঠিক আছে, যা নির্বাচন করেছেন তাই থাক। এ গল্পের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এর কপি (মুদ্রিত) কত খুঁজলাম কাল, পেলাম না। আমার পাণ্ডুলিপি তো ছাপতে যায়, অতএব হাতে থাকে না। তবু যেন স্মরণ হছে, গল্পটায় কিছু শব্দের ভুল ছাপা আছে— সম্ভবত ২/১টি ইংরাজি শব্দে। Bloodএর ব্যাপারে। যতদূর স্মরণ হয়, কর্পাস ছাপা আছে। ওটা হবে, জানেনই তো, ‘কর্পাসলস’। ভালো থাকুন।

উদয়ন ঘোষ

সুবিমল কোন সংকলনের জন্য লেখা চেয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। উদয়নের আর-কোনও চিঠি নেই, সুবিমলের ডাইরিতেও উল্লেখ নেই। অতএব, এ-প্রসঙ্গের ইতি এখানেই।

পরের চিঠিটি নেহাতই কেজো, তবে ব্যক্তির কারণে উজ্জ্বল। মলয় রায়চৌধুরীকে চিঠি লিখছেন তরুণ কবি ও সম্পাদক শম্ভু রক্ষিত। মলয় যেহেতু তখন পাটনায় থাকতেন, তাঁকে লেখা অনেক চিঠিই পাঠানো হত সুবিমলের ঠিকানায়। পরবর্তী কোনও পর্বেও এমন উদাহরণ দেখতে পাব আমরা। সেইসব চিঠিরও কিছু-কিছু থেকে গিয়েছিল সুবিমলের সংগ্রহে।

মা পত্রিকা
১১, ঠাকুর দাস দত্ত ১ম লেন,
হাওড়া

মলয় রায় চৌধুরী
সবিনয় নিবেদন,

   আপনাকে মা পত্রিকার দুটো বার্ত্তা সংখ্যা পাঠান হল। আশা করি আপনি যথা সময়ে পাবেন। এখন আপনি যদি অনুগ্রহ করে মা পত্রিকার আগামী সংখ্যার জন্য একটি প্রবন্ধ বা কবিতা পাঠিয়ে দেন— তাহলে আমরা খুব আনন্দিত হব। আশা করি মা পত্রিকার আগামী বৈশাখ সংখ্যার জন্য একটি রচনা অবশ্যই পাঠাবেন।
   রচনার সঙ্গে আপনার শুভেচ্ছাবাণীও পাঠাবেন। আপনার উৎসাহ প্রেরণা আমাদের আগামী দিনে জয়যুক্ত হোক।
   আপনার রচনার আশায়, শুভেচ্ছাবাণীর আশায় রইলাম। পত্র অবশ্যই দেবেন।
   আপনার পত্রের আশায় থাকব।
   নমস্কার নেবেন।

১৭.৩.১৯৬৬                                                                                                                        শম্ভু রক্ষিত
হাওড়া

শম্ভু রক্ষিত সম্পাদিত ‘মহাপৃথিবী’ পত্রিকা শুরু হয় সাতের দশকের গোড়ায়। তাঁর সঙ্গে ওই পত্রিকাটি অঙ্গাঙ্গী হয়ে রইলেও, তৎপূর্বে প্রকাশিত ‘মা’ পত্রিকা সম্পর্কে বিশেষ জানা যায় না। ‘মা’ পত্রিকা এবং ‘মহাপৃথিবী’র মাঝের পর্বে কিছুদিন তিনি সম্পাদনা করেন ‘ব্লুজ’। বস্তুত, হাংরি আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রজন্মের কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন শম্ভুও। ১৯৬৫-’৬৬ সালেই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। ১৩৭৪ বঙ্গাব্দে মলয় রায়চৌধুরী সম্পাদিত ‘জেব্রা’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় শম্ভুর কবিতাও ছাপা হয়।

সুবিমল বসাককে সরাসরি লেখা শম্ভু রক্ষিতের কোনও চিঠি আমরা খুঁজে পাইনি।

(ডাইরি ও চিঠিগুলির বানান অপরিবর্তিত)

ছবি সৌজন্যে: তন্ময় ভট্টাচার্য