স্বপ্না দেব বাংলা সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার পরিমণ্ডলে অবিস্মরণীয় নাম, যিনি সমস্ত রকম প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে প্রগতিভাবনা ও প্রতিবাদীচেতনার দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও ঘটনাকে বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করতেন। মার্ক্সবাদী বিশ্ববীক্ষা তাঁর সমস্ত কাজ ও জীবনভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেই বৈদগ্ধ্য ও উজ্জ্বলতার প্রকাশ ছিল সমস্ত জীবনচর্যায়। সাংবাদিক জীবনের প্রথম পর্বে তিনি ‘দৈনিক বসুমতি’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখপাধ্যায়ের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন তিনি। তাঁর জন্ম ১৯৪১ সালে। প্রয়াণকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। জন্ম হয়েছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল জেলায়। বাবা সুধীররঞ্জন চক্রবর্তী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। পিতার মার্ক্সবাদী আদর্শ তাঁর কন্যার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল।
১৯৮৩ সালে কলকাতায় একটি সংবাদপাক্ষিকের আবির্ভাব ঘটল। যার নাম ‘প্রতিক্ষণ’। স্বপ্না দেব ও তাঁর স্বামী প্রিয়ব্রত দেব ছিলেন এর উদ্যোক্তা ও প্রধান সংগঠক। কলকাতায় সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের পরিমণ্ডল একটা গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিকতা ও সংকীর্ণ রাজনৈতিক আবহের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এর বাইরে বেরিয়ে এক মুক্ত বাতাস আনতে চাইছিলেন তাঁরা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে।
স্বপ্নাদি ও প্রিয়িব্রতবাবু যোগাযোগ করেন পূর্ণেন্দু পত্রী, দেবেশ রায় ও অরুণ সেনের সঙ্গে। সকলেই প্রগতিভাবনায় বিশ্বাসী। এই পাঁচজনের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ‘প্রতিক্ষণ’ পত্রিকা। দেবেশদা আর অরুণদা তখন ‘পরিচয়’ পত্রিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। পূর্ণেন্দুদা তখনও আনন্দবাজারে ছিলেন। একাধারে কবি, কথাকার, চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্র স্রষ্টা পূর্ণেন্দু পত্রীর উপস্থিতি ‘প্রতিক্ষণ’-কে সাহিত্য, সম্পাদনা ও শিল্পসজ্জা সবদিক থাকেই সমৃদ্ধ করেছিল। সাহিত্যিক ও গবেষক হিসেবে দেবেশদা ছিলেন অদ্বিতীয়। কবিতা ছাড়াও সাহিত্য ও সমাজভাবনার বিস্তৃত ক্ষেত্রে অরুণদা ছিলেন একজন নিবিষ্ট কর্মী ও সংগঠক। প্রিয়ব্রতবাবুর জীবন ও সাহিত্যবোধও ছিল অতুলনীয়। অত্যন্ত সুদর্শন ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন তিনি। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘প্লিজিং পার্সোনালিটি’। স্বপ্নাদি সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। এই পাঁচজন অত্যন্ত বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বের সম্মিলন থেকে গড়ে উঠেছিল ‘প্রতিক্ষণ পত্রিকা’ ও ‘প্রতিক্ষণ প্রকাশন’। যা কলকাতা তথা বাংলার সংস্কৃতি ও প্রকাশনার জগতে নতুন আলো এনেছিল। এই পাঁচজনের সকলেই একে-একে চলে গেলেন। স্বপ্নাদি সব শেষে। বাংলা সংস্কৃতি জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি।
আজ যে প্রবল অনৈতিকতা ও সংকীর্ণতায় ছেয়ে যাচ্ছে বাংলা তথা সারা ভারতের আবহমণ্ডল, স্বপ্নাদি সক্রিয় থাকলে, সাংবাদিকতার জগতে এর বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ব্যক্ত হতে পারত, তা এখন হচ্ছে না। মনে পড়ে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে যখন ‘অভয়া কাণ্ড’ হল, সে-সময়ে অসুস্থ শরীরেও কীভাবে চিঠি লিখে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন স্বপ্না দেব।


১৯৮৩-তে ‘প্রতিক্ষণ’ পত্রিকা শুরু হওয়ার পর প্রায় সূচনাপর্ব থেকেই আমি এই পত্রিকায় লিখতে শুরু করি। তখন ‘প্রতিক্ষণ’-এর অফিস ছিল চৌরঙ্গি রোড আর এস.এন.ব্যানার্জি রোডের সংযোগে মেট্রোপলিটন বিল্ডিংয়ে। এক সময়ে এরই নীচতলায় ছিল আমেরিকান সেন্টার লাইব্রেরি। এখানেই এক সময়ে সুভো ঠাকুরের ফ্ল্যাট ছিল। ‘প্রতিক্ষণ’-এর অফিস ছিল সুন্দরভাবে সাজানো। ওই পাঁচজনের প্রত্যেকের আলাদা-আলাদা ঘর ছিল। প্রিয়ব্রতবাবু প্রধান সংগঠক। স্বপ্নাদি সম্পাদক। পূর্ণেন্দুদা, দেবেশদা আর অরুণদা এক একটি বিভাগের সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। বিকেলবেলা সাহিত্যিক ও শিল্পীদের অনেকেই আসতেন। কাজে বা আড্ডা দেওয়ার জন্য। প্রতিক্ষণের আড্ডা আজও আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই লাজুক স্বভাবের মানুষ। আড্ডায় মুক্তভাবে যোগ দিতে পারতাম না। কিন্তু খুবই উপভোগ করতাম। খালেদ চৌধুরী আসতেন প্রায় নিয়মিত। শঙ্খ ঘোষ ক্কচিৎ-কখনও। কবি সিদ্ধেশ্বর সেন আসতেন প্রায়ই। রণজিৎ সিংহ, ঔপন্যাসিক আফসার আমেদ, কবি শুভ বসু এদের কথা খুব মনে হচ্ছে, কেননা এঁদের কেউই আজ আর নেই। প্রকাশনার কাজের জন্য আলাদা জায়গা ছিল। এক পাশে একটা ছোট ঘরে চা বানানো হত। কাচের স্বচ্ছ কাপে লেবুচা আসত নিয়মিত। এ সমস্ত সম্মিলনের মধ্যমণি ছিলেন স্বপ্নাদি। এক-এক জনের ঘরে ঘুরে-ঘুরে কাজের কথা ছাড়াও— গল্প করতেন নিবিষ্ট বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার ভঙ্গিতে। স্বপ্নাদির হাসিটি ছিল সুন্দর, দীপ্ত আলোর মতো।


কাজের ক্ষেত্রে স্বপ্নাদি ছিলেন অত্যন্ত একনিষ্ঠ, যাকে বলে ‘সিরিয়াস’। মাঝে-মাঝেই চলে যেতেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বা বাংলাদেশে। কোনও একটি ঘটনা সামগ্রিকভাবে নিরীক্ষণ করে ফিরে এসে লিখতেন বিশ্লেষণাত্মক লেখা। সে-লেখার ধার ও ভার দুই-ই ছিল অবিস্মরণীয়। এর বিকল্প খুব বেশি ছিল না। ১৯৮৪-এ ভূপালের সেই গ্যাস দুর্ঘটনার পরে স্বপ্নাদির লেখার কথা আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। কাশ্মীর বিষয়ে লেখাগুলোর কথাও মনে হয় খুব। ছবিও তুলতেন ভাল। যেখানে যেতেন নিজেই ছবি তুলে আনতেন। সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি কেন্দ্রিক এক-একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হত ‘প্রতিক্ষণ’-এর এক-একটি সংখ্যা। এর সঙ্গে থাকত গল্প, কবিতা আর সাহিত্য ও শিল্প-সমালোচনা। সাংবাদিক নিবন্ধের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি সমালোচনার ক্ষেত্রেও স্বপ্না দেব সম্পাদিত ‘প্রতিক্ষণ’ নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছিল। শিল্প-সাহিত্য নিয়ে এত বিস্তৃত বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা তখন কম কাগজেই হত। এক্ষেত্রে ‘প্রতিক্ষণ’ দৃষ্টান্ত স্থাপন করাছিল, যা পরে অন্য কাগজকেও প্রভাবিত করেছে।
সম্পাদনা প্রসঙ্গে আর-একজন মানুষের কথাও খুব মনে হয়। সিদ্ধার্থ রায়। দেবেশদার ছোট ভাই। বিশ্বভারতী থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ পাশ করে, বোধহয় অন্য কোথাও চাকরি করতেন। ‘প্রতিক্ষণ’ শুরু হওয়ার পর এর সঙ্গেও যুক্ত হন। বাংলা, ইংরেজি দুটো ভাষাই খুব ভাল লিখতেন। ‘প্রতিক্ষণ’ শুরুর কিছুদিন পর থেকে বেরোতে শুরু করল ইংরেজি পাক্ষিক ‘পয়েন্ট কাউন্টার-পয়েন্ট’। সম্পাদক দেবেশ রায়। এক সপ্তাহে ‘প্রতিক্ষণ’, পরের সপ্তাহে ‘পয়েন্ট কাউন্টার পয়েন্ট’, এভাবে বেরোত। তখন কী ব্যস্ত ছিল প্রতিক্ষণ-এর দপ্তর! আজও ভাবলে বিস্ময় লাগে। এরই মধ্যে কিন্তু আড্ডার কোনও বিরাম ছিল না। স্বপ্নাদি বা দেবাশদাকে দেখলে বোঝা যেত না এত কাজের চাপ মাথার উপরে। কাজ করতে-করতেই কথা বলতেন সকলের সঙ্গে। ইংরেজি পত্রিকাটার অনেকটাই দায়িত্ব ছিল সিদ্ধার্থর উপর। দেবেশদা খুব ভালবাসতেন সিদ্ধার্থকে। পাগল বলে ডাকতেন। স্বপ্নাদিরও খুব প্রিয় ছিল সিদ্ধার্থ। ‘প্রতিক্ষণ’ চলতে-চলতে কী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে, এখন ঠিক মনে নেই, সিদ্ধার্থ আমেরিকায় চলে গেলেন কোনও বৃহত্তর পরিকল্পনায়। কয়েক বছর পরে দুর্ঘটনায় প্রয়াত হলেন। সেই শোক দেবেশদা ও স্বপ্নাদি দু’জনকেই আমূল বিদ্ধস্ত করেছিল। কিন্তু বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যেত না। কাজে, আচরণে কোথাও কোনও শ্লথতা দেখা যায়নি। স্বপ্নাদিকে দেখলে, তাঁর সঙ্গে কথা বললে অনুভব করা যেত, এক অপার স্নেহের উৎস আছে তাঁর ভেতরে। সেই ভালবাসা দিয়ে ‘প্রতিক্ষণ’-এর পুরো পরিবারকে তিনি আগলে রেখেছিলেন।

প্রতি বছর কেন্দ্রীয় বাজেটের পরে ‘প্রতিক্ষণ’ পত্রিকায় বাজেট বিশ্লেষণ বেরোত। বিশ্লেষণ করতেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্ত। যেদিন বাজেট হত, সেদিন রাতে বা তার পরের দিন স্বপ্নাদি ভবতোষবাবুর সঙ্গে বসতেন। সঙ্গে সিদ্ধার্থও থাকতেন। পুরো বিশ্লেষণ টেপ রেকর্ড করা হত। সিদ্ধার্থই সেটা কাগজে লিখতেন। পরের সংখ্যাতেই সেটা বেরোত। এটা ছিল ‘প্রতিক্ষণ’-এর নিজস্ব এক শৈলী। এছাড়া মাঝে-মাঝেই ‘গোলটেবিল’ বৈঠক হত কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে। সেই বিষয়ের বিদগ্ধ মানুষেরা একত্রিত হয়ে কথা বলতেন। স্বপ্নাদি বা দেবেশদা পরিচালনা করতেন। পূর্ণেন্দুদাও থাকতেন। সেই আলোচনা সবিস্তারে ছাপা হত পরের সংখ্যায়। এই ‘গোলটেবিল’ প্রতিক্ষণ-এর একটি নিজস্ব ঘরানা ছিল। পরে কোনও-কোনও পত্রিকা সেটা গ্রহণ করেছে। এভাবে অনেকগুলো দিকে এই পত্রিকা স্বতন্ত্র ও মৌলিক কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পত্রিকা প্রকাশনার জগতে যা নতুন দিক-দর্শন এনেছিল।
কাজে, আচরণে কোথাও কোনও শ্লথতা দেখা যায়নি। স্বপ্নাদিকে দেখলে, তাঁর সঙ্গে কথা বললে অনুভব করা যেত, এক অপার স্নেহের উৎস আছে তাঁর ভেতরে। সেই ভালবাসা দিয়ে ‘প্রতিক্ষণ’-এর পুরো পরিবারকে তিনি আগলে রেখেছিলেন।
‘প্রতিক্ষণ’ অফিসের ভেতরে একবার মীরা মুখোপাধ্যায়ের ভাস্কর্যের প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল। মীরাদি তখন এসেছিলেন সেই প্রদর্শনীতে। ‘প্রতিক্ষণ’ এভাবে সাংবাদিকতা ছাড়াও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ ছিল।
পত্রিকা প্রকাশের অল্প কিছুদিন পরে শুরু হয়েছিল ‘প্রতিক্ষণ’-প্রকাশনা। প্রথম বই ছিল কবি জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’র অবিকল প্রতিরূপ সংস্করণ। প্রতি বছর বইমেলায় ‘প্রতিক্ষণ’-এর স্টল হত একান্তই ব্যতিক্রমী। যেটা সবার থেকে আলাদা, তা হল স্টলের ভেতরে আড্ডার জন্য একটা আলাদা পরিসর থাকত। প্রতিদিন বিকেলে প্রতিক্ষণের বন্ধু কত মানুষ আসতেন! কথাবার্তায় আলোচনায় মুখর হয়ে থাকতো সন্ধ্যাগুলো। স্বপ্নাদি তাঁর হাসি আর ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখতেন পুরো পরিবেশ। এখানেও খালেদ চৌধুরীর উপস্থিতি ছিল প্রায় নিয়মিত। কবি সিদ্ধেশ্বর সেন এক-একদিন আসতেন সস্ত্রীক। সঙ্গে নিয়ে আসতেন বাড়িতে তৈরি মালপোয়া। অপূর্ব মাধুর্যে ভরে থাকত পরিবেশ। মনে আছে একদিন সন্ধ্যা হওয়ার একটু আগে গিয়ে দেখি, একা বসে আছেন কবি অরুণ মিত্র। দু’একটা কথা হতে-হতে আমাকে বিহ্বল করে হঠাৎ তিনি বললেন, ‘আমার যদি বয়স থাকত, আপনার কাছে আমি শিল্পকলার পাঠ নিতাম।’ শুনে তো আমার প্রায় মরমে মরে যাওয়ার অবস্থা। সে মুহূর্তে বুঝেছিলাম, কত বড় মাপের মানুষ এই বিদগ্ধ কবি! কবি হতে হলে বোধহয় মানুষ হিসেবে এত বড় হতে হয়। স্বপ্নাদির কথা বলতে গিয়ে এই সব মানুষের কথা আসছে। আসলে সবকিছুরই কেন্দ্রে তো ছিলেন দু’জন মানুষ, স্বপ্নাদি আর প্রিয়ব্রতবাবু।


বইমেলায় প্রতি বছর ‘প্রতিক্ষণ’-এর নতুন নতুন বই বেরোত। সেই প্রকাশের একটি অনুষ্ঠান হত মেলার ভেতরেই। দেবেশদা আর স্বপ্নাদি পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। প্রিয়ব্রতবাবু দাঁড়িয়ে থাকতেন এক প্রান্তে। মনে আছে আমার প্রথম বই ‘এই সময়ের ছবি’ বেরিয়েছিল ১৯৮৯ সালে। প্রকাশ অনুষ্ঠানে অরুণদা আমার মেয়েকে বলেছিলেন, ‘তোর একটা ভাই হল।’ স্বপ্নাদি দাঁড়িয়ে ছিলেন পাশে। স্নিগ্ধ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল তাঁর মুখ। শাকিলাকে নিয়ে আমার বইটি বেরিয়েছিল ২০০৬ সালে। সাত দিনের মধ্যে লিখতে হয়েছিল। প্রিয়ব্রতবাবু বলেছিলেন, স্বপ্নার ইচ্ছা তিনি শাকিলার জীবনের কথা লিখবেন আর আমি লিখব শিল্পের কথা। আমি বলেছিলাম, জীবন আর শিল্প তো আর আলাদা নয়। যা লেখার একজনকেই লিখতে হবে। আমিই লিখেছিলাম। বইয়ের নামটা ঠিক করে দিয়েছিলেন স্বপ্নাদি— ‘শাকিলা – জীবনের কোলাজ’।
এরকম কতো স্মৃতি আজ মনে ভিড় করছে। ‘প্রতিক্ষণ’ পত্রিকা একদিন বন্ধ হয়ে গেল। প্রকাশনা আজও আছে। সেই মানুষেরা কেউই আজ আর নেই। সেইসব দিনকে আজ স্বপ্নের দিন বলে মনে হয়। মানুষ তো স্বপ্ন নিয়েই বাঁচে। স্বপ্নাদি মধ্যে বড় স্বপ্ন ছিল। তার অনেকটা চরিতার্থ হয়েছে, অনেকটা হয়নি। এই একজন মানবীকে আমি দেখেছি, ভালবাসায় উজ্জ্বল এক মানুষ, ভেতরের আর বাইরের সৌন্দর্য যাঁর মধ্যে সমন্বিত হয়ে ছিল।
ঋণ: প্রতিক্ষণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়: কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার


