অধরা মাধুরী কিংবা স্বপনচারিণী— সব ব্যাকুল বিশেষণের অন্যতম বিশেষ্য— মেরিলিন মনরো। মৃত্যুর ৬২ বছর পরেও তাঁর আকর্ষণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। তাঁর উত্তুঙ্গ যৌবন একটুও টসকায়নি বা জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। বরং, পুরু ওষ্ঠাধরের মাঝখান থেকে রহস্যময় এবং বেপথু করে দেওয়া হাসিতে চোখ রাখলে চলকে ওঠে হৃদি।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁকে মনে রেখেছে কীভাবে? সেক্সি-ব্লন্ড-বম্বশেল। অর্থাৎ কিনা, মেরিলিন, তুমি আসলে পুরুষের হৃদয়ে হিল্লোল তোলা, স্বমেহনকালীন বাসনা-সঙ্গী, যার বাস কল্পনায়। তা না হলে লরেন্স অলিভিয়ের-এর মতো বিখ্যাত অভিনেতা কখনও মেরিলিনকে বলতে পারতেন, ‘তোমায় সেক্সি দেখালেই চলবে!’ পরে অবশ্য খানিক সংশোধন করে বলেছিলেন, ‘মেরিলিন আসলে চারপাশের উন্মাদনা, আলোড়ন আর খ্যাতির বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিল।’
এই মেরিলিন মনরো কি হলিউড স্টুডিওর বানিয়ে তোলা এক যৌন আবেদনময়ী পুতুল? না কি তিনি নিজেই এই ফাঁদে পা দিয়ে হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন এক মহাতারকা? না কি এই খেলায় নেমে খেলাটাকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন? তিনি কি আসলে ছিলেন এক প্রখর বুদ্ধিমতী মহিলা, যিনি পুরুষশাসিত একটা বিরাট যন্ত্রে প্রথমে তাদের শর্ত অনুযায়ী চলে, তারপর নিজের শর্ত আরোপ করতে চেয়েছিলেন? সবরকম তত্ত্বই তাঁকে ঘিরে প্রচলিত আছে, কেউ বলে মেরিলিন শুধুই গ্ল্যামার বুঝতেন ও পুজো করতেন, কেউ বলে তিনি এক কোমল হৃদয়ের নারী যিনি শুধু প্রেমের আলেয়ার পিছনে ছুটে মরেছিলেন। যুগ যুগ ধরে বহু কবিতা লেখা হয়েছে সিনেমা তৈরি হয়েছে, যেখানে মেরিলিন এক অসহায় শিকার। চিরবঞ্চিত, চিরবিপন্ন। দর্শক তাঁকে বোঝেনি, সমালোচক তাঁকে বোঝেনি, প্রেমিকেরা তাঁকে বোঝেনি। কোন মেরিলিন যে আসল, তা কিছুতেই বোঝা যায় না বলেই তিনি আজ মিথ। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তাঁর আচমকা মৃত্যুও এই মিথ-এ যথাযথ জ্বালানি জুগিয়েছে।
আরও পড়ুন : বানু মুশতাকের লেখায় চেনাজানা নারীবাদের ছক খুঁজে পাওয়া যাবে না! লিখছেন ঈপ্সিতা হালদার…

১৯২৬ সালের ১ জুন, লস এঞ্জেলসে এই মেয়েটার জন্ম। নাম ছিল নর্মা জিন মর্টেনসন। মা গ্ল্যাডিস খুব টেনেটুনে দিন চালাতেন। বাবার কোনওদিন পাত্তাই পাওয়া যায়নি। কিন্তু নর্মা যখন বেশ ছোট, তখনই গ্ল্যাডিস স্কিৎজ়োফ্রেনিক প্যারানোইয়ায় আক্রান্ত হন। সুতরাং, মেয়ে মানুষ করার দায়িত্ব তো তাঁকে দেওয়া যায় না। মেরিলিনের ঠাঁই হয় এক-এক করে বিভিন্ন পালক পরিবার বা ফস্টার ফ্যামিলিতে, তারপর চেনা-পরিচিতদের বাড়িতে, শেষে অনাথ আশ্রমে। এই অহরহ স্থানান্তরের মধ্যেই আট বছর বয়সে নর্মা যৌন হেনস্থার শিকার হয়। সুতরাং, অবহেলা আর আতঙ্কে ভরা একটা ছোটবেলা কাটাতে হয় তাকে। আর, মাত্র ১৬ বছর বয়সে অনাথ আশ্রমে ফিরে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে বিয়ে করে নেয় জেমস এডওয়ার্ড ডগার্টিকে, যে প্রথমে কাজ করত একটি কারখানায়, পরে যোগ দেয় নৌবাহিনীতে।
চারপাশের বিষাদমাখা দুনিয়াটা থেকে পালিয়ে বাঁচতে নর্মা রুপোলি পর্দায় খুঁজত রূপকথা। সিনেমাই তাকে একমাত্র আনন্দ দিত। যখন সে জানল, অভিনয় করে চারপাশে বোনা যায় রূপকথার জগৎ, তার মন বলে উঠল— আসলে এটাই তো সে করতে চায়।
১৯৪৪ সালে নর্মা যখন একটা কারখানায় কাজ করে, সে এক ফোটোগ্রাফারের চোখে পড়ে যায়। মডেলিং-এর দিকে ঝুঁকে পড়ে নর্মা জিন। কিন্তু স্বামী একেবারেই রাজি ছিলেন না। অতএব প্রথম ডিভোর্স। নর্মার ছবি নিয়মিত ছাপা হতে থাকে পুরুষদের ম্যাগাজিনের কভার পেজে। আর নর্মা লেগে যায় নিজেকে তৈরি করার কাজে, যাতে সে প্রকৃত ‘পিন-আপ’ গার্ল হয়ে উঠতে পারে। সে-সময়ের পিন-আপ গার্লদের মতো, চুল সোজা করে, সোনালি রঙে রাঙায় এবং শারীরিক ব্যায়াম-সমেত নিজেকে তৈরি করার এক কঠোর রুটিনে নিজেকে জুতে দেয়। তার চেহারা হয়ে ওঠে অনেকটা বিখ্যাত অভিনেত্রী রিটা হেওয়ার্থের মতো।
শুরুর দিক থেকেই, মেরিলিনকে নিয়ে কাজ করা ছিল একটু ঝামেলার। কখনও তিনি নিজের লাইন ভুলে যেতেন, কখনও নার্ভাস হয়ে পড়তেন, কখনও খুব দেরি করে আসতেন সেটে। তবে অনেকের মতে, এই অভিনয় করতে গিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার পিছনে অন্য কারণও আছে। আসলে তখনকার স্টুডিও-কালচার চলত পুরুষদের অঙ্গুলিহেলনে। পরিচালকদের দাপটে আর ধমকে মেরিলিন তাঁর স্বাভাবিক অভিনয়টা মেলে ধরতেই পারতেন না।
১৯৪৬ সালে মডেলিং এজেন্সির মালিক তাকে এক অভিনয় এজেন্সিতে পাঠান। বিখ্যাত স্টুডিও টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স-এর ড্যারিল এফ জ্যানাক তাকে স্টুডিওর হয়ে চুক্তিবদ্ধ করেন। নাম বদলে যায় তার। তাকে দেখে নাকি তৎকালীন ব্রডওয়ের এক বিখ্যাত নায়িকা মেরিলিন মিলারের কথা মনে পড়ে যায়, তাই তার নাম হয় মেরিলিন। আর ‘মনরো’ ছিল— নর্মার মা গ্ল্যাডিসের কুমারী সময়ের পদবি। দুইয়ে মিলিয়ে আবির্ভাব হয় মেরিলিন মনরো-র, ‘দ্য অঘটনঘটনপটিয়সী’।
এখান থেকেই আমরা মেরিলিনের সর্বনামে ‘তিনি’ বসিয়ে দিতে পারি। ১৯৫২ সাল নাগাদ মনরো হয়ে ওঠেন এক দুর্দান্ত ‘সেক্স সিম্বল’। সিনেমায় তিনি ছিলেন সেই চিরচেনা ‘পিন-আপ-গার্ল’ চরিত্র— মায়াবী, রহস্যময়, আবেদনময়ী। আর ক্যামেরার বাইরে? মেরিলিন মানেই দারুণ সব পাবলিসিটি স্টান্ট! কখনও তিনি ভীষণ খোলামেলা পোশাকে হাজির, কখনও আবার সাংবাদিককে ঠোঁট চেপে বলছেন— ‘আমি অন্তর্বাস পরি না।’ চারদিকে হইচই। এরই মধ্যে শুরু হয় প্রেম, বেসবল-কিংবদন্তি জো ডি ম্যাজিও-র সঙ্গে।


পরের বছরই মনরো হয়ে ওঠেন ‘হট প্রপ্রার্টি’— হলিউডের টিকিট বিক্রির নিশ্চয়তা। তাঁর রূপ আর স্টাইল চোখ ধাঁধিয়ে দিল সব্বার— গাঢ় ভ্রু, টকটকে লাল ঠোঁট, গালে ছোট্ট তিল; সঙ্গে আঁটোসাটো পোশাক আর সিগনেচার পাফি প্ল্যাটিনাম চুলের ঢেউ— তিনি হয়ে উঠলেন বিখ্যাত ‘ব্লন্ড বম্বশেল’। ‘নায়াগ্রা’ আর ‘জেন্টলমেন প্রেফার ব্লন্ড’ সিনেমায় তাঁর রূপ আর আবেদন দেখে দর্শক হাঁ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ছবিটিতে তিনি অভিনয় করেছিল আনিতা লুজ-এর রচিত বিখ্যাত ‘ডাম্ব ব্লন্ড’ লোরিয়েলি-র চরিত্রে। সেখানে মেরিলিনের নিখুঁত কমেডি সেন্স-এর পরিচয় পাওয়া যায়। আর ‘ডায়মন্ড আর এ গার্লস বেস্টফ্রেন্ড’ গানে তাঁর পারফর্ম্যান্স? আইকনিক বললেও কম বলা হয়! আসলে মনরো তখন শুধু স্টার ছিলেন না, ছিলেন এক সাংস্কৃতিক ঝড়।
তবে শুরুর দিক থেকেই, মেরিলিনকে নিয়ে কাজ করা ছিল একটু ঝামেলার। কখনও তিনি নিজের লাইন ভুলে যেতেন, কখনও নার্ভাস হয়ে পড়তেন, কখনও খুব দেরি করে আসতেন সেটে। তবে অনেকের মতে, এই অভিনয় করতে গিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার পিছনে অন্য কারণও আছে। আসলে তখনকার স্টুডিও-কালচার চলত পুরুষদের অঙ্গুলিহেলনে। পরিচালকদের দাপটে আর ধমকে মেরিলিন তাঁর স্বাভাবিক অভিনয়টা মেলে ধরতেই পারতেন না। তা সত্ত্বেও কাজ চলছিল। কিন্তু ঝঞ্ঝাটটা বাধল ১৯৫৪ সালে। মেরিলিন স্টুডিওকে জানালেন, তিনি আরও একটা পিন-আপ গার্লের চরিত্র করতে রাজি নন। এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হল।
যে জনপ্রিয়তার জন্য তিনি রোজ প্রাণপাত করে খেটেছেন– এমনকী, স্টিল-ছবি তোলার পর ফোটোগ্রাফারদের কাছ থেকে ছবি নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ঠিক করেছেন অন্য কতরকম পোজে, কীভাবে দাঁড়ানো যায়, সারাক্ষণ ভেবেছেন নিজেকে হলিউডের একজন মহাতারকা হিসেবে কী করে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সেই মেরিলিন বরখাস্ত হওয়ার পর আচমকা জনপ্রিয়তায় ভাটা সহ্য করবেন কী করে? সেই সময়ই তিনি বিয়ে করেন বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড় জো ডি ম্যাজিও-কে। নিন্দুকে বলে, এ ছিল জনপ্রিয়তা জিইয়ে রাখার এক কৌশল। কিন্তু মেরিলিন যা-ই করবেন, তাকেই আমরা পাবলিসিটি স্টান্ট বলে দাগিয়ে দেব কেন? আমরা কি তাঁর নিঃসঙ্গতাটা দেখব না, কিংবা তাঁকে ভালবাসার কাঙাল বলে আমাদের মনে হবে না? প্রতিটি সম্পর্কই একটা দাবার চাল হতে যাবে কেন? ছোটবেলা থেকে মেরিলিন শুধু প্রকৃত ভালবাসা খুঁজে ফিরেছেন, আর উল্টে পেয়েছেন শুধু তাঁকে ছিবড়ে করে সুবিধে ভোগ করতে ব্যস্ত কিছু পুরুষকে, এভাবেও গল্পটাকে দেখা যেতে পারে।


এই বিয়ে টিকেছিল মাত্র ন’মাস। কারণ? সেই বিখ্যাত দৃশ্য— ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইচ’ ছবির প্রচারে মনরো দাঁড়িয়ে আছেন নিউ ইয়র্কের সাবওয়ের গেটের ওপর, তাঁর সাদা পোশাক বাতাসে উড়ে উঠে গিয়েছে উরু পর্যন্ত। আশপাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দু’হাজার দর্শক। ডি ম্যাজিও রেগে আগুন। অতএব, দ্বিতীয় ডিভোর্স।

তৃতীয় বিয়ে ১৯৫৬ সালে, বিখ্যাত নাট্যকার আর্থার মিলার-এর সঙ্গে। আপাতভাবে দেখলে মনে হয় পাত্র ও পাত্রী খুবই বেমানান। তা নিয়ে লেখালিখিও হয়েছিল বিস্তর। কোথায় বিশ্ববরেণ্য বুদ্ধিজীবী, আর কোথায় শরীরসর্বস্ব রূপসি! বিখ্যাত ‘ভ্যারাইটি’ পত্রিকা লিখেছিল, ‘Egghead weds hourglass.’ কোনও সন্দেহ নেই, মেরিলিনের প্রাথমিক আবেদন যৌন পুতুল হিসেবেই, কিন্তু পাশাপাশি তিনি মন ও মগজে নিয়মিত শান দেওয়ার জন্য পড়াশোনা করতেন, সে-খবর রাখার গরজ কেউ দেখায়নি। মেরিলিন নিজেকে উন্নত করার জন্য মনোবিজ্ঞান, দর্শন, কবিতা, শিল্প, নাটক— সবরকম বই পড়তেন। নিউ ইয়র্কের খ্যাতনামা অ্যাক্টরস স্টুডিও-তে লি স্ট্রাসবার্গের কাছে পড়াশোনা করতেন, কারণ মেরিলিন চেয়েছিলেন নাটকের একজন একনিষ্ঠ শিক্ষার্থী হতে, যদিও তখন তিনি বিখ্যাত একজন হলিউড অভিনেত্রী। দেখেশুনে মনে হয়, মেরিলিন নিয়ম ভেঙে নতুন পথ তৈরির করার একজন পথিকৃৎ।


১৯৫৮ সালে ‘সাম লাইক ইট হট’ ছবিতে মনরোর কমেডি অভিনয় সিনেমাটায় যেন একটা স্বতন্ত্র আলো বিছিয়ে দেয়। অথচ তখন তাঁর বাস্তব জীবন একের পর এক শারীরিক আর মানসিক সমস্যায় জর্জরিত— তিনবার গর্ভপাতের কষ্ট, ক্লান্তি, হতাশা তাঁকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছিল। সিনেমায় কাজ করা যেন ক্রমে কষ্টকর হয়ে উঠছিল। ১৯৬১ সালে আর্থার মিলারের সঙ্গে পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনও শেষ হয়ে গিয়েছে। মেরিলিনের এত খ্যাতি, তাঁকে ঘিরে এত উন্মাদনা সহ্য করতে পারেননি মিলার, অবহেলিত বোধ করেছিলেন।

কিন্তু মেরিলিন তো মেরিলিন! গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে, খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি নাকি মজেছেন মেরিলিনে। প্রাইভেট প্লেনে মেরিলিনের যাতায়াত চলছে আমেরিকার পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূল। কেনেডির জন্মদিনে মেরিলিন এমন পোশাক পরে ‘হ্যাপি বার্থডে’ গাইছেন, যা তাঁর শরীরে আঁটো হয়ে চেপে বসে আছে এবং নিখুঁত ফুটিযে তুলছে তাঁর সৌষ্ঠব। মেরিলিনের ফোটোগ্রাফারের স্ত্রী বলেছেন, মেরিলিন ইচ্ছেমতো এক লহমায় নিজেকে আবেদনময়ী করে তুলতে পারতেন, যেন একটা ম্যাজিকের সুইচ অন করা হল। এই এক্ষুনি হয়তো নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তায় কেউ তাঁকে চিনতেই পারছিল না, আবার পরের মুহূর্তেই গাড়িগুলো শুধু তাঁকে দেখার জন্য গতি কমাচ্ছে, লোকে রাস্তা পেরোতে ভুলে যাচ্ছে। এও কি অভিনয়েরই এক আশ্চর্য কৌশল নয়? মেরিলিন আসলে অনেকরকম ছিলেন কি না, তিনি নিজেই নিজেকে সামলাতে না পেরে বহু টুকরোয় ছড়িয়ে পড়েছিলেন কি না, না কি তিনি ছিলেন স্রেফ একটা মেয়ে, যিনি নিশ্চিন্ত আশ্রয় চেয়েছিলেন কিন্তু নিজের গ্ল্যামারই তাঁর শত্রু হযে দাঁড়িয়েছিল, তা নিয়ে জল্পনা চলেছে ও চলবে— এখানেই অন্য সেক্স সিম্বলদের সঙ্গে তার তফাত।
১৯৬২-র জুন মাসে ফক্স স্টুডিও তাঁকে মানসিকভাবে অস্থির বলে দাবি করে তাঁর পরবর্তী সিনেমার কাজ বন্ধ করে দেয় এবং তাঁকে বরখাস্ত করে। আগস্ট মাসে, মনরোকে তাঁর বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কারণ— প্রাণঘাতী বার্বিচুরেট ওভারডোজ। সরকারিভাবে একে ‘সম্ভাব্য আত্মহত্যা’ ঘোষণা করা হয়। অনেকেই বলে খুন। হোয়াইট হাউসের চক্রান্ত। জানা যায়নি।
আমাদের ভেবে দেখতে হবে, একজন শিল্পী ভাল অভিনয় করলেও শুধু তাঁর স্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়ে থাকা কি ঠিক অভ্যাস? এ কি তাঁর ক্রমাগত মর্যাদাহানি নয়? মেরিলিন এই রূপবন্দনার লোভে পড়ে গিয়েছিলেন, সে তো স্বাভাবিক। হতেই পারে, বাকি জীবনটাকে সেই গ্ল্যামারেরই ঠিকঠাক সঙ্গী হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। যা হওয়া মুশকিল, কারণ বাস্তব তো রুপোলি নয়, যথেষ্ট ম্যাড়মেড়ে।
ফিল্ম ইতিহাসবিদ মিশেল ভোগেল একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি মনে করি, কোনও ‘আসল’ মেরিলিন মনরো ছিলেন না। মেরিলিন ছিলেন একটা চরিত্র, একটা নির্মিত ব্যক্তিত্ব —যা পর্দায় যেমন ছিল, পর্দায় বাইরেও তেমনই বজায় রাখতে হত।’
সত্যিই হয়তো তাই। সারাজীবন নর্মা জিন নিখুঁত অভিনয় করে গিয়েছেন মেরিলিন মনরোর চরিত্রে!