শুধু কবিতার জন্য: পর্ব ২৪

কয়েকটি কবিতা

প্রেমের লেখা

কোনও প্রেম যায় না বৃথা
যদি সে, সমর্পিতা,
কথা দেয় আকাশ জুড়ে

তবে তার ইচ্ছেগুলো
কবেকার মেঘের তুলো
তুলে নিই ঈশান খুঁড়ে।

যেরকম সন্ধে হলে
একা ট্রাম আস্তাবলে
বাঁধা হয় অতীত সুতোয় –

সে তেমন সময়হীনা…
আমি তার চোখের কিনার
ছুঁতে চাই হরেক ছুতোয়।

কোনও মন যায় না বৃথা।
যদি সে, অপাবৃতা,
রাখে হাত জলের পাশে

আমি তার কাজের ডালি
ছুটিতেই করব খালি
কোনও এক সহজ মাসে।

সে তখন বিকেল থেকে
নেবে রোদ আলতো ছেঁকে
মেশাবে চায়ের পাতায়,

আমি তার হাতের বালি
ভেবে নিই গেরস্থালি
অমলিন এ-কলকাতায়।

কোনও গান যায় না বৃথা।
যদি সে, সমাদৃতা,
রাখে চোখ আমার চোখে

আর আমার সমস্ত দিন
জাগরণ, ঘুমন্ত দিন
হয়ে যায় তেমন নদী –

ডেকে নিই বসন্তকে!

কান্নার মতো

ঘুম থেকে উঠে কান্না পাচ্ছে, কেন যে কে জানে।
ঘর-বারান্দা ঘুরে ফিরে শুধু ঘর-বারান্দা…
যেন কে আসতো, অথচ আসেনি, কথার খেলাপে
বাতাসের গায়ে মৃত্যুর চেয়ে অল্প ঠান্ডা।

ঘুম থেকে উঠে কান্না পাচ্ছে বাচ্চার মতো।
আকাশ দেখলে কার যেন মুখ মনেও পড়ছে
পাখিদের ফেরা, রিক্সার ভেঁপু, ফেরিওলা ডাক
সন্ধের গায়ে খুচরোর মতো দিনের মরচে

আমি তার পাশে একলা দাঁড়িয়ে। দূরে রেলব্রিজ।
কত মানুষের ঘরে ফিরে যাওয়া। সুদূরপাল্লা।
আমার কান্না কতদূর যাবে? কোন সে শহরে?
আপাতত এই ঘরের মধ্যে অবাধ জানলা –

হাওয়া ঢুকে আসে বন্ধুর মতো। আসলে শত্রু।
বয়ে আনে কার মনখারাপের না-মেলা অঙ্ক।
পাটিগণিতের হাত খোয়া গেছে, হে মধুসূদন,
বাঁচাতে পারেনি সুভাষ, সুনীল, শক্তি, শঙ্খ।

অজানা কারণ চোখের মধ্যে বসতির মতো
উনুন জ্বালছে কাদের বাড়িতে, ধোঁয়ার গন্ধে
জ্বালা ধরে আসে। মুছে নি’ বয়েস নকশি রুমাল…
সন্ধেরা খাঁ খাঁ, পাখির কার্ফু আকাশ বনধ-এ।

কে তুমি, এমন কান্না পাঠাও, এতদিন পর?
শহরের পথ আমার চাইতে বেশি বিমর্ষ
আমি ছুঁয়ে থাকি বারান্দা মন, জানলার হাত –
ঘুমে-ভেঙে-পাওয়া কান্নার মতো, তোমার স্পর্শ!

অন্ধলিখিত কবিতা

দেখিনি কতদিন, এমনই যেন তুমি।
তাকাও ফের –
এমন ধুলোবালি, চশমা খোয়া যায়
বসন্তের।

পড়িনি কোনওদিন, এমনই যেন তুমি।
নতুন বই।
সাবেকি অক্ষরে আমারও ইচ্ছেরা
অশান্তই।

তবে কি দেখা হবে, অপরিকল্পিত,
নিছক ভুল?
তবে কি বন্ধুরা লুকিয়ে এনে দেবে
পলাশ ফুল?

সেসব গেছে দিন। এখন বসে থাকা
অপেক্ষায়…
শহুরে মহাকাশে ট্রামের ছায়াপথ
যেমন যায় –

তেমনই গতিবিধি। অথচ তুমি এলে
হতোও বেশ।
অনেক ধারবাকি, হৃদয় ছাপাখানা।
রাতের প্রেস।

ছুঁইনি কক্ষনও, এমনই যেন তুমি।
দূরের মোম।
এখানে সারা রাত আমিও নিভে যেতে
অসক্ষম।

দেখিনি কতদিন, এমনই যেন তুমি।
তাকাও ফের –
অন্ধ হয়ে যাই, দৃষ্টি খোয়া যাক
বসন্তের!

ক্ষত

প্রতি পলকের বিরুদ্ধে প্রতি পলক
যেমন হাওয়ার বিরুদ্ধে দুটো পাখি
উড়ে চলা কাজ, ডানা যত দূর চলে…
সেভাবেই, চলো, আমরাও কাছে থাকি।

প্রতি চাহনির বিরুদ্ধে প্রতি চাওয়া
চোখের পাতায় স্পর্ধার অভিলাষও,
চশমা যেভাবে তাকিয়ে থাকাকে লুকোয়
বলো না কিছুতে, ঠিকই তবু ভালবাসো।

প্রতি হৃদয়ের বিরুদ্ধে প্রতি হৃদয়
এজলাসে যেন সওয়াল তুলেছে কঠিন –
আমরা সাক্ষী চিরকালই অপরাধে
বিচার করুক সময়, বুদ্ধিমতী!

প্রতি আদরের বিরুদ্ধে প্রতি আদর
ঝড়ে তছনছ করে দিতে চায় শরীর
বিক্ষোভ, দাবি, জমায়েত পার ক’রে
জিতে নিতে চাই তোমাকেই, ঈশ্বরী!

প্রতি জীবনের বিরুদ্ধে প্রতি জীবন।
মাঝে এই দেখা, এক বিন্দুর মতো
উপশমহীন ছিটকে যাবার আগে,
এসো, ধুয়ে নিই বৃষ্টিতে সব ক্ষত!