পদে পদে বিপদে
‘কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে/ তোমারে দেখিতে দেয় না’— কতবার কত নামী-অনামী গায়কের গলায় শুনেছি এই গান, নিজের মতো করে ব্যাকুলও হয়েছি। সে যে এমনই কঠিন সত্যি হয়ে দেখা দেবে জীবনে, কে ভেবেছিল?
এই আধো অন্ধকারে সারাংকোটের টিলার ওপর হা-পিত্যেশ দাঁড়িয়ে আছি, শুধু আমি কেন, পৃথিবীর অন্তত দশটা দেশের শ’খানেক ট্যুরিস্ট আমার মতোই হাঁ করে তাকিয়ে আছে দিগন্তের দিকে। সেখানে মোহমেঘে ‘অন্ধ করে রাখে’। তবে আলো ফুটুক না ফুটুক, ভোর তো বটেই। ঠান্ডা বাতাসে ভাসছে গম্ভীর এক শুনি, ধাক্কা খেয়ে ফিরছে পাহাড়ে পাহাড়ে। কাছেই ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা, সেখানে শ্রমণরা নিশ্চয়ই ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে প্রার্থনা শুরু করেন। ঠিক ঘণ্টাধ্বনি নয়, জলের ভেতর দিয়ে বয়ে আসা ধাতব ‘ওম’ মন্ত্র মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা কী, আবিষ্কার করেছিলাম পরে।
আপাতত অধৈর্য অপেক্ষা, যদি মেঘ কেটে গিয়ে উঁকি দেয় সূর্য। সেরকম কোনও লক্ষণ অবশ্য দেখা যাচ্ছে না। সেই ভোর চারটেয় উঠে সবাই এসেছে পোখরার লেকের ধারে পিক আপ পয়েন্টে। তারপর গাড়িতে আধঘণ্টা জঙ্গলের চড়াই পথ পেরিয়ে সারাংকোট টিলার নিচে। এবার সিঁড়ি ওঠা, তাও কম নয়, মিনিট পনেরো। তবে না এই ভিউপয়েন্ট! এত কষ্ট করা কীসের জন্য? হিমালয়ে সূর্যোদয় বই তো কিছু নয়। ‘সত্যিই কি মেঘ সরবে না?’ এক আধোঘুম চোখের সুন্দরীর প্রশ্নে খুব লজ্জিত মনে হল তুখড় ইংরেজি-বলিয়ে গাইড ছেলেটিকে। যেন ওর দোষেই উদয়-রবির আজ এমন ভরাডুবি। আমার হাসি পেয়ে গেল। সুন্দরীর অভিমান তবু সহ্য করা যায়, আমার ক্যামেরাম্যান তো রীতিমতো রেগে গেল। কার ওপর কে জানে!
ওশো আশ্রমের ছমছমে অভিজ্ঞতা ও পাহাড়ের হাতছানি! তপশ্রী গুপ্তর কলমে পড়ুন ‘ডে়টলাইন’ পর্ব ২৩…
ঘণ্টাদেড়েক অপেক্ষার পর গুটিগুটি পায়ে নামতে শুরু করলাম টিলা থেকে। ঘড়ির কাঁটা বলছে, সূর্য তার নিজের নিয়মে উঠে আকাশভ্রমণ শুরু করে দিয়েছে। মেঘের দল জেদি বাচ্চার মতো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। এমন চক্রান্তে প্রকৃতির কিছু যায় আসে না, শুধু একদল মানুষ কাঁদো কাঁদো মুখে সময় আর টাকা গচ্চার হিসেব কষে। আমিও তাদেরই দলে, কিন্তু সেই ভোরে কেন জানি না আফশোস হল না তেমন। পরে ভেবে দেখেছি, ওই যে ‘ওম’ ধ্বনি ভরে রেখেছিল আকাশ-বাতাস, সেটাই যেন কেমন মনটাকে শান্ত করে দিল। এর উৎস আমাকে জানতেই হবে।
একটু দূরে ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা বা শান্তি স্তূপ, সেখানেই যে জন্ম এই ধ্রুবপদের, সে-বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আহা, কী অসাধারণ দৃশ্য! বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর দল পুবদিকে মুখ করে সার দিয়ে বসে আছেন, প্রত্যেকের বাঁ-হাতের তেলোয় রাখা জলভরা পিতলের বাটি। ডানহাতে একটা ছোট কাঠের মুগুর, সেটা বাটির কানায় ঠেকিয়ে গোল গোল ঘোরাচ্ছেন সবাই একসঙ্গে, আর ওই হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়া ‘ওম’ ধ্বনি উঠছে। প্যাগোডার সীমানা ছাড়িয়ে সেই ধ্বনি আলতো গড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে, হাওয়া তাকে কোলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। পাশেই দোকানে বিক্রি হচ্ছিল বুদ্ধিস্ট সিংগিং বোল, ছোট-বড় অনেক সাইজের। আমি ছোট দেখে একটা কিনলাম। দোকানি দেখালেন, কীভাবে কাঠের মুগুর আকৃতির জিনিসটা প্রথমে আস্তে করে বোলানো শুরু করে ক্রমশ স্পিড বাড়াতে হয়।
একটু পরেই ওম ধ্বনি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জানলাম, নিরিবিলিতে একমনে এই অভ্যেসের লক্ষ্য এক-একজনের এক-একরকম হতে পারে। কেউ ধ্যানে মনঃসংযোগের জন্য, কেউ মানসিক চাপ কমানোর জন্য, কেউ বা আত্মশুদ্ধির জন্য সিংগিং বোলে ওম ধ্বনি তোলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেতার-সরোদের মতো এটাও প্র্যাকটিসের ব্যাপার, একদিনে হয় না। আমি ওখানে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করলাম, বারবার হাত পিছলে যেতে লাগল। ‘বিষয়-বাসনা বিসর্জন’ না দিলে কি আর আলো দেখা যায়?

পরদিন ভোরে আবার আমরা এসেছিলাম সারাংকোটে। সেদিন মেঘেরা আবার গুন্ডামি করতে এসেছিল বটে, কিন্তু শেষমেষ রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাল। আর আমরা যারা নির্নিমেষ তাকিয়ে ছিলাম হিমালয়ের দিকে, তাদের চোখের পাতা ছুঁয়ে গেল একরাশ মুগ্ধতা। তিনটি শৃঙ্গ দেখা যায় এখান থেকে— ধৌলাগিরি, অন্নপূর্ণা আর মানসলু। তাদের বরফমোড়া চুড়োয় যেন গলানো সোনা ঢেলে দিল কেউ। চোখ ছাড়া আর কোনও ক্যামেরার সাধ্য নেই ধরে রাখে সেই অপার্থিব দৃশ্য, মন ছাড়া আর কোনও কলমের সাধ্য নেই অনুভব করে সেই অলৌকিক হোলিখেলা। সেই সঙ্গে আবহে বেজে চলেছে সিংগিং বোলের সমবেত ওম শুনি। বিশ্বাস করুন, চারপাশের ওয়াও, স্টানিং, সাররিয়েল— সব মন্তব্য আস্ত আস্তে মিলিয়ে যাবে কানের পাশ দিয়ে।
চরাচর জুড়ে নেমে আসবে নিঃস্তব্ধতা, তাঁবুর মতো ঘিরে থাকবে আপনাকে। সারাংকোটের আরও একটা মাহাত্মা আছে। পৃথিবীতে হাতে গোনা কিছু পাহাড় বা সৈকত আছে, যেখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। সারাংকোট সেরকম একটা স্পট।
সকালে উঠে অবশ্য দেখলাম, মেঘলা হলেও বৃষ্টি নেই। চটপট হাতির কাছে পৌঁছে তো গেলাম, কিন্তু এই পাহাড়ের পিঠে ওঠা সহজ কাজ না। পাশেই একটা সিমেন্টের তৈরি সিঁড়ি আছে যদিও, কিন্তু সেখান থেকে হাতির পিঠে বসার সময় যদি গ্যাপটা বেশি হয়ে পড়ে যাই! মাহুত অভয় দিল, কোনওমতে ম্যানেজ করলাম। জটায়ু যদি উটে উঠতে পারেন, আমি পারব না হাতিতে চড়তে? একেবারে সামনে মাহুত, মাঝে আমি আর পিছনে ক্যামেরাম্যান।
কোথায় একটু আগে কামনা-বাসনা বিসর্জনের কথা ভাবছিলাম, এখন নাকি যেতে হবে মনোকামনা মন্দিরে। নেপালের বিখ্যাত মন্দির, সেখানকার দেবী ভগবতী ভক্তের মনোকামনা পূরণ করেন বলেই বিশ্বাস। আমি অবশ্য দুর্ধর্ষ রোপওয়ে ট্রিপটার লোভে মনকে বাঁধলাম। তাছাড়া এসেছি ট্রাভেল শো-এর অর্ডারি কাজে। এখানে নিজের পছন্দ-অপছন্দ দেখানোর জায়গা কোথায়? পোখরা থেকে ঘণ্টাতিনেকের পথ, মনোকামনা। কিংবদন্তি বলে, এখানকার রাজা নাকি একদিন হঠাৎ করে রানির আসল রূপ দেখে ফেলেন আর সেই কথা জানান রানিকে। এই ‘অপরাধ’-এ মৃত্যু হয় তাঁর। না, ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যের সুরূপা, কুরূপা কেস নয়, রানি ছিলেন সাক্ষাৎ ভগবতী। দেবীদর্শনে মানা সাধারণ মানুষের। তাই এরকমই নাকি কথা ছিল।
তার পরের ঘটনা আরও অদ্ভুত। দেবী অকস্মাৎ মানবীর মতো আচরণ করলেন। স্বামীর চিতায় সহমরণে গিয়ে সতী হলেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে জানিয়ে গেলেন ভক্ত লক্ষ্মণ থাপাকে যে, তিনি আবার আবির্ভূত হবেন। কিছুদিন পর এক কৃষক মাঠে দেখলেন, এক আশ্চর্য শিলা, যার গা থেকে গড়িয়ে পড়ছে দুধ ও রক্ত। খবর পেয়ে এলেন লক্ষ্মণ, সেখানেই তৈরি করলেন প্যাগোডার মতো মন্দির। সে ১৬৭৮ সালের কথা। তার পর থেকে এই মন্দিরের সব পুরোহিতই নিজেকে লক্ষ্মণ থাপার উত্তরসূরি বলে দাবি করেন।

ভক্তি থাকুক বা না থাকুক, নেপাল গেলে মনোকামনা মিস করবেন না এর অসামান্য প্রকৃতির জন্য। একসময় ঘণ্টাতিনেক দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে তবে পৌঁছনো যেত ৪০০০ ফিটেরও বেশি উঁচু পাহাড়ের ওপর মন্দিরে। পরে ১৯৯৮ সালে এখানকার যুবরাজ তৈরি করলেন কেবল কার। কুরিম্ভার থেকে দশ মিনিটে যা আপনাকে নিয়ে যাবে মনোকামনায়। এক-একটি স্বচ্ছ ক্যাপসুলে ছ’জন করে যেতে পারে। অস্ট্রিয়া থেকে আমদানি করা এই কেবল কার খুবই উন্নত প্রযুক্তির, বিদ্যুৎ চলে গেলে আপনা থেকে জেনারেটর অন হয়ে যায়। অবশ্য এসব ভয়ভাবনার কথা মাথাতেই আসবে না, যখন আপনি সওয়ার হবেন আর আপনার পায়ের নিচে পড়ে থাকবে এক অসামান্য সবুজ উপত্যকা, নীল আকাশের চালচিত্রে সগর্বে মাথা তুলে থাকা প্রাচীন গাছরা আপনাকে অভিবাদন জানাবে। আফসোস হবে, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত…’। নামার পরে মন্দির দেখবেন কী, যেদিকে তাকান পাহাড় আর পাহাড়। নিচে বয়ে যাচ্ছে জলস্রোত ত্রিশূলী আর মারসাংদী নদীর সংগম। কুয়াশাঘেরা সেই বিকেলে দূরে অন্নপূর্ণা রেঞ্জ আর আরও কত নাম না-জানা পাহাড়চুড়োর দিকে তাকিয়ে কেন জানি মনে হল, মনোকামনা পূর্ণ হল।
ওই যে কুরিন্তার রোপওয়ে স্টেশন থেকে এলাম মনোকামনা মন্দির, সেখান থেকেই ঘণ্টাদুয়েক লাগে চিতওয়ান যেতে। নেপালের সবচেয়ে নামকরা ন্যাশনাল ফরেস্ট। একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। কেবল কার আর তার পরের এই অ্যাডভেঞ্চারের জন্য ব্যাকুল ছিলাম আমি। পাহাড় ছেড়ে এবার নামব তরাইতে। সেখানকার ঘন জঙ্গলে থাকব দু-দিন। ঠিক জঙ্গলের বাইরেই আমাদের ছোট্ট হোটেল। এখনকার দিন হলে বলতাম, হোম স্টে। কিন্তু বছর সতেরো আগে হোম স্টে কনসেপ্টটা ঠিক চালু ছিল না ভারত বা নেপালে। এক নেপালি দম্পতি একতলা ড্যাম্পধরা বাড়িতে কয়েকটা ঘর হোটেল হিসেবে ভাড়া দেয়। সেখানে পৌঁছতে আমাদের সন্ধে গড়িয়ে গেল। ঢোকার মুখেই রিসেপশনের বদলে রান্নাঘর। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের অভ্যর্থনা জানাল মেটে সিঁদুর পরা বউটি। আধো-অন্ধকার একফালি জায়গা পেরিয়ে আলোজ্বলা বারান্দায় উঠেই আঁতকে উঠলাম। আমার পা বেয়ে রক্তের ধারা কেন? কোথাও তো আঘাত লাগেনি। থ্রি কোয়ার্টার্স আর স্নিকার্সের মাঝখানের জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। নেপালি বউটি কিছু বলার আগেই ক্যামেরাম্যান বলল, ‘ভয় পেও না, জোঁক লেগেছে।’ ভয় পাব না মানে? সে একমুঠো নুন চাইল আর মুঠোয় নিয়ে চেপে ধরে জোঁক ছাড়াল।
আসলে এর আগে কখনও জোঁকের খপ্পরে পড়িনি। পরে লাভা, লোলেগাঁও, পেডং-এর কাছে সাইলেন্ট ভ্যালিতে বেড়াতে গিয়ে এরকম প্রচুর জোঁক যখনতখন জিনস, স্নিকার্স ভেদ করে কামড়ে ধরছিল আর আমরা সবাই সবার রক্তাক্ত পায়ের সেবা করছিলাম। যাই হোক, এইসব ছোটখাটো হোটেলের কিছু সুবিধে আছে। যেমন, এই রাত আটটায় হাতিওয়ালাকে ডেকে আনল। কাল ভোরে সাফারিতে যাব। আজ রাতেই ঠিক করে রাখতে হবে। মাহুত এল, সরকারি রেট বাঁধা আছে, ফলে দরদস্তুরের ঝামেলা নেই। আমরা নিশ্চিন্ত মনে স্নান সেরে ভাত-ডাল-ঝাল সয়াবিনের তরকারি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। জঙ্গলের আশপাশে যাঁরা থেকেছেন জানেন, রাতভর নানারকম শব্দ হয়, যেগুলো আমাদের নাগরিক কানে একদম অচেনা। তার মধ্যে নামল বৃষ্টি। গাছপালায় ঝুপঝুপ জলের নাচন দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিল, কাল সাফারি হবে তো?
সকালে উঠে অবশ্য দেখলাম, মেঘলা হলেও বৃষ্টি নেই। চটপট হাতির কাছে পৌঁছে তো গেলাম, কিন্তু এই পাহাড়ের পিঠে ওঠা সহজ কাজ না। পাশেই একটা সিমেন্টের তৈরি সিঁড়ি আছে যদিও, কিন্তু সেখান থেকে হাতির পিঠে বসার সময় যদি গ্যাপটা বেশি হয়ে পড়ে যাই! মাহুত অভয় দিল, কোনওমতে ম্যানেজ করলাম। জটায়ু যদি উটে উঠতে পারেন, আমি পারব না হাতিতে চড়তে? একেবারে সামনে মাহুত, মাঝে আমি আর পিছনে ক্যামেরাম্যান।
হাতি তো ঢুকে পড়ল জঙ্গলে। রাতভর বৃষ্টিতে পিছল বনপথ, দুলকি চালে চলেছে হাতি, গাছের পাতা থেকে জল ঝরে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের। খুব জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম, হাতির কি কখনও পা পিছলে যায়? কিন্তু জটায়ুর ‘উট কি কাঁটা বেছে খায়’ প্রশ্নের কথা মনে পড়ায় আর সাহস করলাম না।
হঠাৎ সারা মুখে-মাথায় কী যেন জড়িয়ে গেল। চোখ ঝাপসা হয়ে এল। কী রে বাবা? কোনওমতে দেখলাম, বিরাট মাকড়সার জাল। গাছে জাল বুনেছে বুনো মাকড়সা, তাদের সাইজ চড়াইপাখির মতো আর জালের সাইজ তথৈবচ। সে না-হয় হাত দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু বিষাক্ত নয় তো? আমার প্রশ্নে হাসতে লাগল মাহুত ভাই। পিছন থেকে টিপ্পনি কাটল ক্যামেরাম্যান, ‘ট্যারেন্টুলা’।

ঠিকঠাক স্পটে নিয়ে গেল শিক্ষিত হাতি, দাঁড়িয়ে আছে দু-দুটো বিরল প্রজাতির একশিং গন্ডার। কাছে যেতেও পাত্তা দিল না তেমন। এরপর হাতি মুখ ঘুরিয়ে চলল বাঘের সন্ধানে। কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। গাছে গাছে বাঁদরের লাফালাফি বেড়েছে মানে বাঘ থাকতে পারে আশপাশে। আমি অবশ্য বাঘের থেকে আপাতত বাঁদর নিয়ে চিন্তিত বেশি। যেরকম উত্তেজিত ওরা, ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়তে পারে যেকোনও মুহূর্তে। মাহুত আবারও অভয় দিল, ‘ওরা হাতিকে খুব ডরায়।’
বাঘও হাতিকে ভয় পায় কি না, সেটা অবশ্য জানা হল না। সেযাত্রা বাঘ দেখা হয়নি। তবে প্রচুর রংবেরঙের পাখি আর হরিণ দেখলাম। জঙ্গলের ভেতর দিঘির পাড়ে কুমির আর ঘড়িয়ালও দেখা দিল। এত সুন্দর সুন্দর পাখিদের নাম জানার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। সেজন্য গাইড নিয়ে অরণ্যে হাঁটার ট্রিপ বুক করতে হয়। ওর মধ্যে আমি নেই। নিচে তাকিয়েই বুঝেছি, লম্বা ঘাসে ভরা ভেজা জমি জোঁকেদের স্বর্গরাজ্য।
ওহ্, জানা হল না, গন্ডারের না-হয় চামড়া মোটা, হাতিদের পায়ে কি জোঁক লাগে না?
ছবি সৌজন্য : লেখক