সাদা পাখির উপকথা
পুনাখায় দুটো দিনেই অভ্যেস খারাপ করে দিয়েছেন রায় বৌদি। সেই যে দেখা হল পুনাখা ঢুকেই আধো অন্ধকারে খাবার দোকানে, সেই শুরু। এবেলা-ওবেলা পাত পড়েছে রায়বাড়িতে। ভাত, মুগডাল, বড়ি দিয়ে পালংশাক, দইমাছ কী না রান্না করেছেন আমাদের জন্য! এবার বুমথাং রওনা হওয়ার পালা। সকাল-সকাল বেরিয়ে কিছু ছবি তুলে, পথেই লাঞ্চ সেরে বেরিয়ে যাব পুনাখা ছেড়ে। ট্রাভেল শোতে এবার আর স্থানীয় খাবারের ছবি তোলা হয়নি। রথ দেখা আর কলা বেচা একসঙ্গে সারব ভেবে ঢুকে পড়লাম মাঝারি মাপের এক সাজানো-গোছানো রেস্তরাঁয়। মেনু দেখে তো একেবারে লাফিয়ে উঠলাম। ইয়াকের মাংস পাওয়া যায় এখানে! রুটি দিয়ে খাব, সেই সঙ্গে দারুণ পিস টু ক্যামেরা দেওয়া যাবে। ক্যামেরাম্যান সাবধানী, এক্সপেরিমেন্টে একদম বিশ্বাসী নয়, প্রথমেই জানিয়ে দিল সে চিকেন কারি আর রুটি খাবে। আমি ঠাট্টা করে বললাম, ‘এই তোদের মতো টিপিক্যাল বাঙালিগুলো ব্যাংককে গিয়ে অক্টোপাস না খেয়ে বাংলাদেশী রেস্তরাঁয় তেল-কই খোঁজে। ছ্যাঃ
বাটিতে মাটন কষার মতো দেখতে একটা পদ এল, ইয়াক মিট কারি। অতি উৎসাহে একটুকরো তুলে মুখে পুরে চিবোতে শুরু করলাম। সেই যে শুরু, তার শেষ কিন্তু হল না। অসম্ভব শক্ত, একেবারে ইলাস্টিকের মতো। যত চিবোই, বাগে আর আনা যায় না। এমন স্বতঃস্ফূর্ত বিরক্তি ফুটে উঠল আমার মুখে যে ক্যামেরাম্যান হতাশ হয়ে বলল, ‘দিদি, এরকম তো দেখানো যাবে না। ভাল এক্সপ্রেশন দাও।’ সে তো আমিও জানি। মুখের থেকে মাংসের টুকরোটা বার করে ফেলি আগে, সুরুৎ করে গলায় চলে গেলে শ্বাসনালীতে আটকে মারা যাব নির্ঘাৎ! এবার জিজ্ঞেস করলাম ম্যানেজারকে, ‘এই মাংসটা ঠিক কতদিনের বাসী?’ সে অম্লান বদনে হাতের কর গুনে বলল, ‘ম্যাডাম, মাস ছয়েক তো হবেই।’ আমার তো চোখ কপালে। বলে কী! ছ’মাস? সে বর্ণনা করল, ‘এখন মে মাস। গরমকালে তো ইয়াকেরা উঁচুতে থাকে। শীতে যখন নেমে আসে নীচে, তখন দু-চারটে ধরে মাংস স্টোর করে রাখা হয় ডিপ ফ্রিজে। খুব চাহিদা। সব দোকানে পাবেন না।’ বলা বাহুল্য, এরপর আর কোনও মাংসই খাইনি আমি, আলুভাজা দিয়ে রুটি খেয়েছি। ইয়াক-মিটের শুধু ফটো সেশন হল, আর সেই সঙ্গে ক্যামেরার সামনে গুণগান গাইলাম আমি। আমাদের ট্রাভেল শো দেখে যদি কেউ গ্রীষ্মকালে ভুটানে ইয়াকের মাংস ট্রাই করে ডিপ্রেশনে চলে যান, আজ এত বছর পরেও ক্ষমা চাইছি। ‘আপরুচি খানা’ কথাটা এরপর থেকে মাথায় রাখবেন।
নীল আকাশ ও ধূসর পাহাড়ের মাঝে পুনাখা জং-এর ব্রোঞ্জের চূড়া যেন স্বর্গীয়! তপশ্রী গুপ্ত-র কলমে পড়ুন ডেটলাইন পর্ব ২৮…
বুমথাং ভুটানের সুইজারল্যান্ড। পারো, থিম্পু, পুনাখার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী হয়েও তত জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট নয়। তার কারণ মনে হয় ঘনঘন বাঁক নেওয়া দীর্ঘ খাড়া পাহাড়ি পথ। পুনাখা থেকে দুশো কিলোমিটার যেতে সময় লাগে সাতঘণ্টাররও বেশি। কোথাও রাস্তা সারাইয়ের কাজ চললে সেই যাত্রা আট-ন’ঘন্টারও হতে পারে। পুনাখা চার হাজার ফিট, ভুটানের ভূগোল অনুযায়ী প্রায় সমতল বলা চলে। সেখান থেকে অনেকটা ওপরে উঠতে হয়, বুমথাং সাড়ে ন’হাজার ফিট। যদি আপনি পাহাড় ভালবাসেন, পথের মজা নিতে জানেন, তবেই বুমথাং রাখবেন আপনার ট্রাভেল প্ল্যানে। নয়তো পুনাখা থেকে ফেরত যাওয়াই ভাল। যদি বেরিয়েই পড়েন এই রুটে, তাহলে হাতের ঘড়ির দিকে আর একচুল ওপাশের খাদের দিকে না তাকিয়ে দিব্যি বসে থাকুন গাড়িতে। চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ক্যামেরার লেন্সে ঢাকনা পরাতে পারবেন না। ঝাঁপিয়ে নেমে আসা পাগলাঝোরা হঠাৎ দেখা দেবে বাঁকের মুখে, তার সাদা ফেনাতোলা জলের ছাঁট লাগবে গাড়ির কাচে। নামলেই দেখবেন সেই জল তিরতির করে বয়ে চলেছে মাটিতে, স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। আঁজলা ভরে তুলে মুখেচোখে ছিটিয়ে নিন ঠান্ডা জল। ক্লান্তি দূর। একটু এগলেই ঘনিয়ে আসা কুয়াশা ফুঁড়ে ভেসে উঠবে ক্যাফে, তার জানালায় দুধসাদা লেসের পর্দা হাওয়ায় দুলে দুলে ডাক দেবে। কাউন্টারে চুরপির মালা ঝুলছে (ইয়াকের দুধ থেকে তৈরি শক্ত চিজকিউব, শরীর গরম রাখে বলে সারাদিন মুখে রেখে দেয় পাহাড়ি লোকেরা), সেখানকার মালকিন আপনার মানা না মেনে অবশ্যই ওমলেটে প্রচুর লঙ্কা দেবেন এবং আপনার অভিযোগের জবাবে শুধু মুচকি হাসবেন। আপনি বসুন পাহাড়কোলের বারান্দায় এক মগ কফি নিয়ে, আপনার পায়ের কাছে লেজ গুটিয়ে বসে থাকবে পোমেরিয়ানের মতো লোমওয়ালা নেড়ি। এই আয়েস কি আর মেলে রোজকার নগরকীর্তনে?
ঠিক এইসব করতে-করতে আর এন্তার ছবি তুলতে-তুলতে সাত ঘণ্টার পথ পেরতে যে দশ ঘণ্টা লাগবে তাতে আর আশ্চর্য কী! অতএব আমরা বুমথাং পৌঁছলাম রাত ন’টা নাগাদ। নিশুতি রাত, টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। পুনাখাতে যাও-বা দু’চারটে লোক চোখে পড়ছিল, খাবার দোকান খোলা পেয়েছিলাম, এখানে সে আশা নেই। আর পুনাখার দেবদূতের মতো দাদা-বৌদিও নেই। আমাদের হোটেলটা আবার শহরের একপ্রান্তে, আপেল বাগিচার মধ্যে। সেখানে পৌঁছনোর পর কেউ গেট খুলবে তো? এই প্রশ্নে ড্রাইভারও নীরব দেখে ঘাবড়ে গেলাম। যাই হোক, যেতে তো হবেই। আমাদের সব আশঙ্কা অমূলক করে দিয়ে গাড়ির আওয়াজ পেয়েই ছুটে এলেন ম্যানেজার, হাসিমুখে স্বাগত জানালেন। বৃষ্টিটা বেড়েছে না কি চারপাশের আপেলগাছে জল পড়ে এত বেশি শব্দ হচ্ছে, অন্ধকারে ঠাহর হল না। একটা ব্রিটিশ আমলের বাংলো টাইপ বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেখানে গোটা কয়েক ঘর। তার দুটোতে আমরা। এখানেও আলো একেবারে ঢিমে, বোধহয় ভোল্টেজ সমস্যা। সেই আলোতেই দেখলাম, দেওয়ালজোড়া বড়-বড় কাচের জানালা, ওপাশে আবছা গাছ আর গাছ, বৃষ্টিতে ভিজছে। এখন আপেলের সময় নয়, তাই নেড়া-নেড়া মনে হল। সকালে উঠে অবশ্য দেখেছিলাম, ঠিক নেড়া না হলেও গাছগুলো বেমরশুমে নিষ্প্রাণ। কোথাও-কোথাও দু-চারটে অপুষ্ট সবজেটে আপেল ঝুলছে, যেন জানান দিতে এটা আপেল বাগান।
যে বয়সের যা। ধর্ম বা দারিদ্র, যে কারণেই হোক না কেন, এরা সাত-আট-দশ বছরে ঘর ছেড়ে এসে থাকুক মঠে, মায়ের আদরের বদলে মেনে নিক কঠোর অনুশাসন, খেলে বেড়ানোর বদলে বাধ্য হোক মন্ত্রপাঠে, আসলে এদের ভেতরের শিশু ভোলানাথকে তো কেউ মেরে ফেলতে পারবে না।
বুমথাং উপত্যকার আদরের নাম জাকর। ভুটানি ভাষায় এর মানে সাদা পাখি। উপকথা বলে, কোনও এক সাদা পাখি যে জায়গায় এসে বসেছিল, বুঝিয়েছিল এই সেই পবিত্র স্থান, সেখানেই ১৫৪৯ সালে তৈরি হয় জাকর জং। তার থেকেই নাম। বুমথাংকে কেন তুলনা করা হয় সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে? এখানে তো আল্পস নেই। তবু বুমথাং-এর প্রেমে পড়েন বিদেশিরা কারণ এর অসামান্য প্রকৃতি। সুইস কান্ট্রিসাইডের মতো সবুজ প্রান্তর, ঘন অরণ্য, বছরভর শীতের আমেজ, আপেল বাগিচা আর দূরে পাহাড়ের সারি। নির্জনে ছুটি কাটানোর অসামান্য আয়োজন। সঙ্গে স্থানীয় চিজের স্বাদ, যাকে অনেকে বলেন সুইস চিজ।
জাকর জং ভুটানের সবচেয়ে বড় জং। বেশ অনেকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। মনে আছে, একদল বালক লামা আমাদের সঙ্গে সঙ্গে উঠছিল, তাদের কলরবে একটা অন্যরকম প্রাণ পেয়েছিল নীরব পাহাড় আর বন। অবিকল শহরে যেমন দেখি স্কুল ছুটির পর। সত্যি বলছি, খুব ভাল লাগছিল। যে বয়সের যা। ধর্ম বা দারিদ্র, যে কারণেই হোক না কেন, এরা সাত-আট-দশ বছরে ঘর ছেড়ে এসে থাকুক মঠে, মায়ের আদরের বদলে মেনে নিক কঠোর অনুশাসন, খেলে বেড়ানোর বদলে বাধ্য হোক মন্ত্রপাঠে, আসলে এদের ভেতরের শিশু ভোলানাথকে তো কেউ মেরে ফেলতে পারবে না। একটু ফাঁকফোকর পেলে এরা নিশ্চয়ই মেতে ওঠে নিজেদের মতো করে! এদের মধ্যে এক ছোট্ট লামা দেখলাম পিছিয়ে পড়েছে, তার একটা পায়ের পাতা অর্ধেক মুড়ে থাকা। সে খুঁড়িয়ে উঠছে খালিপায়ে। আমি তার পাশে-পাশে চলতে লাগলাম, সে আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভারি সুন্দর হাসি দিল। ভাষা সমস্যা না থাকলে অনেক কথা বলতাম সেই খুদে সন্ন্যাসীর সঙ্গে, জানতাম তার লাল বলের বা আইসক্রিমের শখ আছে কি না। মাঝপথে পাইন গাছের নীচে ঝুঁকে, সে আমার জন্য কুড়িয়ে আনল ফল, কাঠের তৈরি ফুলের মতো দেখতে, পাপড়িমেলা। এখনও সেই দু’টি ফল সাজানো আছে আমার বাড়িতে, বিবর্ণ হয়ে গেছিল বলে কাঠের পালিশ দিয়েছি তাতে।

জাকর জং ঠিক যত প্রাচীন, তার শ্রমণদের ঠিক তত আধুনিক মনে হল আমার। বেশ কয়েকজন ভাল ইংরেজি বলেন। মাখন দেওয়া নোনতা চা খাওয়ালেন আমাদের, আজকের পৃথিবীর নানা বিষয়ে বেশ খোঁজখবর রাখেন দেখলাম। ওপর থেকে এত চমৎকার ভিউ উপত্যকার, পারোর টাইগার নেস্ট মনেস্ট্রির কথা মনে পড়ে গেল। ওঁরাই বললেন ফুড প্রসেসিং ইউনিট যেন দেখতে যাই। সত্যিই দেখার মতো। বুমথাং-এ বিয়ার থেকে জুস, জ্যাম থেকে সাইডার, আপেলের নানা আইটেম তৈরির বিশাল কারখানা রয়েছে। সে জায়গাটা ভারি সুন্দর। পাহাড়ি নদীর ধারে ছিমছাম ইউনিট। ভারত থেকে গেছি শুনে শ্যুটিংয়ের ঢালাও অনুমতি, যেসব মেশিন সেদিন বন্ধ ছিল, অতি উৎসাহে সেগুলোও সব চালিয়ে দেওয়া হল। আপেলের জ্যাম চেখে দেখার জন্য জোরাজুরি, লজ্জা পেয়ে দুটো শিশি কিনেই ফেললাম।

বার্নিং লেক মেবারৎশো। না, এই লেকে আগুন নেই, জলই আছে। তাহলে এমন নাম কেন? কেনই বা বৌদ্ধদের কাছে এই হ্রদ এত পবিত্র? কিংবদন্তী বলে, ভুটানের ধর্মগুরু পেমা লিংপা ষোড়শ শতাব্দীতে এই লেকের জলে ডুব দিয়ে তুলে এনেছিলেন গুরু রিনপোচের আধ্যাত্মিক সম্পদ। জলে নামার আগে গ্রামের লোকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, তখন পেমা বলেছিলেন, ‘আমি যদি সত্যি বলে থাকি, তাহলে দেখবে যে জ্বলন্ত প্রদীপ হাতে ডুব দিচ্ছি, সেটা নিভবে না।’ যখন জলের নীচ থেকে তিনি উদ্ধার করে আনলেন রিনপোচের রেখে যাওয়া পুঁথি ও মূর্তি, তখনও নাকি প্রদীপের শিখা অনির্বাণ। সেই থেকে ভুটানের মানুষ বিশ্বাস করেন, এই হ্রদের জলের অলৌকিক ক্ষমতা আছে, যাবতীয় খারাপ কর্মাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পারে বার্নিং লেক।

কাশ্মীর বা মানালি গিয়ে অনেকেই সেখানকার পোশাক পরে ফটো শ্যুট করেন। ভাড়ার ড্রেস নিয়ে ফটোগ্রাফার দাঁড়িয়ে থাকে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে। আমি অবশ্য কখনও এরকম ছবি তুলিনি। কিন্তু মুশকিল হল, যাথা হ্যান্ডলুমের দোকানে ছবি তুলতে গিয়ে। যাথা হল ভুটানের, বিশেষ করে বুমথাং-এর নিজস্ব বুনন। ইয়াক অথবা ভেড়ার লোম থেকে সুতো বানিয়ে বোনা, প্রাকৃতিক রঙে ডাই করা ঝলমলে কাপড়। সাধারণত মেয়েরা বোনে। সেই যাথা দিয়ে তৈরি কিরা আর ওনজু পরে ছবি তোলার জন্য আমাকে ভীষণ চাপাচাপি করতে লাগলেন দোকানের ম্যানেজার। সারাদিন ঘোরাঘুরির পর আর ইচ্ছে করে? কিন্তু যখন উনি বললেন, ‘আপনাকে এটা পরে টিভিতে দেখলে কত লোক জানতে পারবে ভুটানের মেয়েদের পোশাক কী। জানেন, এটা বুনেছে জুগনে বলে একটা প্রত্যন্ত এলাকার মহিলারা’, আর না বলতে পারলাম না। দু’জন সেলসগার্ল মিলে আমাকে পরাল র্যাপ অ্যারাউন্ডের মতো কিরা আর লম্বাহাতা ব্লাউজের মতো ওনজু। সঙ্গে ইয়াকের হাড়ের গয়না। সেই বিচিত্র বেশে আমি ক্যামেরার সামনে বর্ণনা করলাম, কীভাবে ভাঙাচোরা কাঠের ঘরের ভেতর দীর্ঘ সময় ধরে হাতে বা পায়ে চালানো তাঁত বোনা হয়, জঙ্গলের লতাগুল্ম, খনিজ পদার্থ থেকে রং সংগ্রহ করা হয়, উনুনে হাঁড়ি চড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা ডাই করা হয় উল। তাই দিয়ে শুধু পোশাক তৈরি হয় না, বেড কভার থেকে ব্যাগ, অনেক কিছুই হয়।

ঢুকেছিলাম আকাশপথে পারো দিয়ে, বেরবো সড়কপথে ফুন্টশোলিং দিয়ে। ভুটান গেটের ওধারে পশ্চিমবঙ্গের জয়গাঁও। রমরমা বাণিজ্য দু’পারেই। বুমথাং থেকে থিম্পু বাসে, সেখান থেকে ফুন্টশোলিং। থিম্পুর বাসের একটা ছবি আজও আমার চোখে লেগে আছে। মনে পড়লে টনটন করে বুকের ভেতর। কমবয়সী ভুটানি বর-বৌ, কোলে বছরখানেকের বাচ্চা। তারা বসেছিল আমাদের মুখোমুখি। হঠাৎ খেয়াল করলাম, বাচ্চাটাকে বুকে আঁকড়ে থাকা মায়ের দুচোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। আর বাবা একবার বৌ আর একবার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কী যেন বলছে কানে-কানে। তাতে আরও উপচে পড়ছে চোখের জল। আমি ভাবলাম, তবে কি বাচ্চাটা অসুস্থ? দেখে তো মনে হচ্ছে না। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলাম। ছেলেটি মাথা নীচু করে বলল, ‘আমার বৌ দুবাই চলে যাচ্ছে। সেন্টার থেকে কাজ পেয়েছে আয়ার। টাকার দরকার তো।’ বাচ্চাটা দেখি নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে মায়ের কোলে। ভাবলাম, মা চলে যাওয়া পর্যন্ত যেন ঘুমিয়েই থাকে।