গল্প

অর্ণব চক্রবর্তী

সারপ্রাইজ: পর্ব ১

‘সাহিত্যিক হিসেবে ব্যর্থতাকে আমি ভয় পাই না। আমি ভয় পাই মানুষ হিসেবে ব্যর্থতাকে। আরও পাঁচ বছর পর চাকরি না করার জন্য আমার নিশ্চয়ই আফশোস হবে। দশ বছর পর আফশোস হবে একজন আদর্শ বাবা না হয়ে ওঠার জন্য, আদর্শ স্বামী না হয়ে ওঠার জন্য। এই সংসারে তখন আমার গুরুত্ব কমে যাবে কি?’ মানসিক টানাপড়েন।

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

শিকড়: পর্ব ২

‘রফিকের হাত থেকে চিঠি নিয়ে ও চালান করে দিচ্ছে বুকের ভিতরে ব্লাউজের ফাঁকে। চিঠি দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে রফিকের আঙুল ছুঁয়ে দিচ্ছে ওর আঙুলগুলো। রফিক হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নিচ্ছে ওর হাতের তালু। ‘এ কী! একদম বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে তোর হাতটা! পাগলি মেয়ে একটা। ভয় পেয়েছিস?’’ সম্পর্কের উত্তেজনা।

অপরাজিতা দাশগুপ্ত

শিকড়: পর্ব ১

‘নয়নতারা আগে ডায়েরি লিখতেন নিয়মিত। এখন আর লেখেন না। শুধু ভাবেন। মনের মধ্যে ব্রেক কষে-কষে হাঁটতে থাকেন পিছন দিকে। স্মৃতি রোমন্থন করেন। জীবনে অনেকগুলো বছর নাকে-মুখে গুঁজে স্কুলে ছুটতেন। মধ্য কলকাতার স্কুলে চাকরি পেয়ে গেছিলেন এমএ-র পরই। স্কুলে চাকরির পর পরই বিয়ের সম্বন্ধটা এনেছিলেন তাঁর সম্পর্কে এক পিসি, যিনি আবার অমলজ্যোতির মাসিমা হতেন।’ নতুন গল্প।

রাস্‌কিন বন্ড (Ruskin Bond)

ছোট্ট জোনাকি

‘পাহাড়ি ঘাসের ঢালে বসে, পাইন গাছের ডালে খেলে বেড়ানো মৃদুমন্দ বাতাসের আমেজে একটা কবিতা লেখা– এ যেন শুধু লেখা নয়, কবিতাটার মধ্যে বাঁচা। আজকে, এত বছর পরে ফিরে দেখলেও আমি যেন ওই বাতাসের ছোঁয়া অনুভব করতে পারি, আর গোটা জঙ্গলের গানটা যেন শুনতে পাই, আর সেটাই আমার প্রতিদিনের, আমার জীবনের কবিতা। ‘ নতুন গল্প।

আবুল বাশার

ব্যান্ডিকুট কিংবা ধেড়ে ইঁদুরের গল্প

‘দরদর করে নিঃশব্দে অশ্রু নামছে চোখ থেকে গাল বেয়ে। সে আনন্দে লাফাচ্ছে এবং জাতি-অপমানে কাঁদছে; চাঁদের রোশনি ঈশ্বর-কৃপায় টলটল করছে চারিদিকে; চারটি রাতচরা বক আকাশের সারা তল্লাটে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার অক-অক ডাক; কাঁসি বাজছে আহ্লাদে। নাচছে বাবুলাল।’ নতুন গল্প।

তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়

এলেভূত

‘ম্যাপ যে কী দেখাচ্ছে! অঙ্কুরের নিজের ফোনেও দেখেছে, পুরো ভুলভাল। কানেক্টিভিটি তো পুরো, সব ক’টা বার আছে, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অ্যাপের ওপর ভরসা আছে? খেয়াল না করলেই আরেক জায়গায় এনে ফেলবে। এ তো হল এলেভূত, ভেবে আবার হেসে ফেলল সে।’ নতুন গল্প।

আদিদেব মুখোপাধ্যায়

নবম সিম্ফনি, চতুর্থ মুভমেন্ট

‘সে, ক্ষুরটা, সরাসরি নিজের পেটে ঢুকিয়ে দেয়। ধুপ করে শব্দ হয়। একটু গুঙিয়ে পেটার পড়ে যায়। আমি আবার সেই মিষ্টি সুরটা শুনতে পাই। খুব আস্তে, চরাচর জুড়ে বেজে উঠছে। কে বাজাচ্ছে, এখন, এই চায়ের কেবিনে? সবাই স্থির ও চুপ। সবাই মেঝেয় লুটিয়ে পড়ে থাকা পেটারকে দেখছে।’ নতুন গল্প।

নীলোৎপল মজুমদার

অন্ধকার যেমন কালো হয়

‘পাড়ার লোকের জন্য ব্যাকুল মাসির এক অনবদ্য উপহার এই কুলগাছ। পুরো আকাশটাকেই যেন ঢেকে রেখেছে অগুন্তি শাখা-প্রশাখার নিখিল সংসার। বিস্তৃত ডালপালার বুননে এক সবুজ মৌচাক। চারিদিকে নেমে এসেছে শ্যামলীদির মতো খোলা বেণির আলুথালু চুলের জঞ্জাল। আরেকটু হলেই জানু ছোঁবে মাটি।’ নতুন গল্প।

সুভাষ কর্মকার

মজুত

‘বড়লোক, ছোটলোক সবাই একই জিনিসের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়েছে। মদের দেবতার চোখে সবাই সমান। দোকান থেকে বেরোলেই শুরু হয় ছোট-বড়-মাঝারি! যদিও আজকে সবাই মজুতদার। যার পেটে যতটা সয়। আজকে কারখানার মালিককে কড়কে দিতে হবে। শালা, পাঁচশো টাকায় তিনটে পেট কী করে চলে!’ নতুন গল্প।

সাগুফতা শারমীন তানিয়া

ভবদীয়: পর্ব ৪

‘খ্রিস্টান মেয়েরা দিন-রাত এ-সময় হাত চালায়, তাদের হাতের ভেজা পিঠার মতোই ভক্তিরসে ফুলে উঠবে সকলের মন, এর কতটা ভক্তি আর কতটা আনন্দ কেউ তার তৌল করবে না। গির্জায় খড়ের কুঁড়েঘর গড়া হবে, তাতে মাটির পুত্তলি যিশু-মেরি-যোসেফ আর ব্যগ্র গরু-ভেড়ার দল, যিশুর জন্মস্থান সেই গোশালঘর যত্ন করে আলো দিয়ে সাজানো হবে।’ ক্রিসমাসের প্রস্তুতি।

প্রতীক

বেড়াল-স্মৃতি

‘তারা বলত ‘বড়দি আসলে ব্যাটাছেলে। মেয়েছেলের অত মেজাজ হয়?’ সব শুনে আমার মনে তৈরি হয়েছিল একজন দশাসই মহিলার ছবি। চোখে মোটা চশমা, নইলে তাকালেই আগুন বেরিয়ে এসে ছাত্রীদের পুড়িয়ে ছাই করে দিত। আমাদের বাড়ির দরজার সমান লম্বা আর জানলার সমান চওড়া।’ নতুন গল্প।

সুভাষ কর্মকার

দখল

‘একটা সময় লোকটা আমার গ্রামের বাড়ির জঙ্গল পরিষ্কার করত। লোকটার চোখদুটো যেন আমাকে দেখেও বারবার না দেখার ভান করে ঘুরে যাচ্ছে এদিক-সেদিক। একদিন একমাত্র জোয়ান ছেলেটা প্রেমঘটিত কারণে জমির বিষতেল খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে প্রায় বছর কুড়ি।’ নতুন গল্প।