অন্য পুরাণ

পৃথিবীর সেরা দশটি পৌরাণিক কাহিনি: পর্ব ২

‘আদম এবং ইভ ঈশ্বরের হুকুম মেনে চলত, তবে শয়তান একদিন সাপের রূপ ধরে এসে ইভকে ভুল বুঝিয়ে ফলে একটি কামড় বসাতে বাধ্য করল। এরপর ইভও আদমকে বাধ্য করলেন ফলটি খেতে। ফল খাবার পরে অকস্মাৎ দুজনের নিষ্পাপ চরিত্র উধাও হয়ে গেল। তাঁরা প্রথমবার নিজেদের নগ্নতা দেখে লজ্জা পেলেন এবং চেষ্টা করলেন নিজেদের শরীর পোশাক দিয়ে ঢাকার। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টিদের এই অবাধ্যতায় বড় হতাশ হলেন এবং এই প্রথম পাপ, এই প্রথম অবাধ্যতার অপরাধে তাঁদের ইডেন উদ্যান থেকে বহিষ্কার করলেন।’

পৃথিবীর সেরা দশটি পৌরাণিক কাহিনি

একটি পৌরাণিক গল্পর অনুগামীরা যে তাঁদের সত্যটিকেই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস করেন, সে-কথা অবশ্য অনস্বীকার্য। বহিরাগতদের তাঁদের সাথে মতান্তর ঘটে। এই মতান্তর থেকেই জন্ম নেয় যত গোষ্ঠীগত, ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয়-রাজনৈতিক সংঘর্ষ, যুদ্ধবিগ্রহ। আমরা বরং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দশটি পৌরাণিক গল্প নিয়ে তুলনা করে দেখি, কীভাবে বিভিন্ন সমাজের মানুষ এই পৃথিবীর স্বরূপ চেনার চেষ্টা করেছেন।

জয়া মিত্র

ভিন্নরঙের মহাকাব্য

‘ঋত্বিকের ‘সুবর্ণরেখা’য় পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টে সীতার মুখে সেই আলগা ভাসিয়ে দেওয়া মন্তব্যটি মনে পড়ে, ‘কবে একটা যুদ্ধ হয়েছিল, এখনো দেখ তার দাগ পড়ে আছে।’ কোন সেই আদিম যুদ্ধের বীজ— ভূমি আর নারীর দখল নিয়ে, ক্ষমতাশালী পিতৃতন্ত্র যা থেকে তৈরি করে কখনো ইলিয়াড, কখনো মহাভারত, বা রামায়ণ। অন্য কোনো দেশে ক্ষমতাদখলের আরো কোনো গাথা। কিন্তু দেখি, আমাদের নিত্যজানিত এই সীমানার বাইরেও কত অভিনব রূপে বেঁচে ছিল সেই গাথাগুলি— যাদের নাম ‘জয়কাব্য’ নয়।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

সরস্বতীকে বোঝা শক্ত

পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছে, আর সম্পদ ও শক্তি দিয়ে নিজেদের পুষ্ট করার বাসনা উৎসারিত হয় ভয় থেকে। সরস্বতী সেই জ্ঞান, সেই দর্শন, যা আমাদের সেই ভয়কে জয় করার ক্ষমতা দেয়। বিশ্বের প্রকৃত রূপ, এবং নিজেদের আসল রূপ জানার মধ্য়ে দিয়ে এই ভয়কে জয় করা যায়। জ্ঞানং দেহি!

ন’টা লেজওয়ালা শেয়াল

‘কিছু গল্পে দেখা যায়, শেয়ালেরা অন্য প্রাণীর রূপ ধারণ করছে, যাতে কোনো গরিব পরিবার তাদের বিক্রি করে কিছু পয়সা অর্জন করতে পারে। বিক্রি হবার পরেই তারা নিজমূর্তি ধারণ করে। এইভাবে একই পরিবার বারবার নানা রূপে তাদের বিক্রি করতে পারে, এবং ধীরে-ধীরে বিত্তবান হয়ে ওঠে। এইসব পরিবারদের বলা হয় শেয়ালের মালিক পরিবার।’

Fox With Nine Tails

‘There are stories of foxes turning into different animals, allowing a poor family to sell them to make money. As soon as they are sold, they return to their fox state. This enables the family to sell them, repeatedly, in different forms, helping them to become rich.’ The myth of the fox as spirit animal.

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

নৈতিক চেতনা

‘আমরা যে-সময়ে বাস করি, সে-সময়ে চেতনা এবং নীতিবোধের মধ্যে একটা ফাটল দেখা যাচ্ছে। চেতনা হয়ে উঠেছে গুরুদের ব্যাপার, আর নীতিবোধ এসে পৌঁছেছে পুলিশ এবং অ্যাকটিভিস্টদের এক্তিয়ারে। এ হয়তো চেতনার বৃদ্ধি এবং প্রসারকে সামাজিক স্তর থেকে ব্যক্তিগত স্তরে নিয়ে আসারই ফল।’ সমাজ, ধর্ম এবং নীতিবোধ।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

ভারত থেকে তিব্বতের পথে তন্ত্র

‘পৌরাণিক হিন্দুধর্মে মেনকার মতো অপ্সরারা বিশ্বামিত্রের মতো তপস্বীদের মোহগ্রস্ত করতেন, শিবকে গৃহস্থ-জীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য করেন শক্তি। কিন্তু তান্ত্রিক হিন্দুধর্মে অপ্সরা হয়ে উঠলেন যোগিনী। যৌনতা এ-ধারায় পুলক বা শিশুর জন্ম দেওয়ার নিমিত্ত নয়, আধ্যাত্মিক শক্তিকে ধারণ করার আধার।’ হিন্দুধর্মে তন্ত্র-প্রভাব।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

দেহাংশ উপাসনা

‘বুদ্ধের দেহাংশ আর সতীর দেহের খণ্ডের ছোঁয়ায় বিভিন্ন স্থানের পবিত্র হয়ে ওঠার যে কাহিনী, তার মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ্য না করে পারা যায় না। এ কাহিনীগুলো কি একে অপরের দ্বারা অনুপ্রাণিত? সবই তর্কের বিষয়!’ পীঠস্থানের মাহাত্ম্য।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

এক্স ফ্যাকটরের দেবী

শ্রীদেবী খানিকটা কপালের ফেরের মতো, ক্যারিসমা বা জনপ্রিয়তা, ব্র্যান্ড বা সামাজিক প্রতিপত্তির মতো। যে-প্রতিপত্তিকে ঠিক অঙ্কের হিসেবে মাপা যায় না, কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় আমাদের কত দাম বা দর, তার পিছনে এ-জিনিসের অবদান অপার। শ্রীদেবী দান করেন জৌলুস। লক্ষ্মীঠাকুরের দুই রূপ।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

কর্মকারদের দেবতা

স্থাপত্যশাস্ত্র, বাস্তুশাস্ত্র, শিল্পশাস্ত্র, এবং জনবসতি ও ঘরবাড়ি সংক্রান্ত বিভিন্ন শাস্ত্রাদির সাথে তাঁর যোগসূত্র রয়েছে। বিশ্বকর্মাই সম্ভবত প্রথম কর্মকার, এবং বিশ্বকর্মা জাতি বা কর্মকার সম্প্রদায়ের (ছুতোর, এবং কামার শ্রেণীর মানুষ) প্রতিষ্ঠাতা। ভক্তিতে উপেক্ষিত দেবতা।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

মাতৃগর্ভ এড়িয়ে

‘…বুদ্ধের জন্ম স্বাভাবিক পদ্ধতিতে হয় নি, এই বিশ্বাসের আভাস পাওয়া যায় পরবর্তী যুগের একাধিক বৌদ্ধ উপাখ্যানে। বুদ্ধের জন্ম হয়েছিলো তাঁর মায়ের দেহের পাশ থেকে, যোনিদ্বারের মাধ্যমে নয়। এই বিশ্বাস সুদূর ইয়োরোপ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, খৃষ্টধর্মের প্রথম যুগের গির্জাপতিদের মুখে শোনা যায় যীশুর জন্মও বিনা যৌনসঙ্গমে, অপাপবিদ্ধ উপায়ে হয়েছিলো, সম্ভবত তাঁর ক্ষেত্রেও গর্ভকে এড়িয়েই তাঁর ভূমিষ্ঠ হওয়া।’ দেবতার জন্ম ও মৃত্যু।