ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শুভারম্ভ: পর্ব ৭


    শুভা মুদ্গল (Shubha Mudgal) (July 24, 2021)
     

    সঙ্গীতের নতুন চ্যালেঞ্জ

    অপেক্ষা করা আর আফশোস করা এবার বন্ধ করতে হবে। ভারতীয় সঙ্গীতের জগতকে এবার বুঝে নিতে হবে, এই অতিমারী বহুদিন থাকবে এবং এর সঙ্গে বোঝাপড়া করেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ভ্যাকসিন বা অন্যান্য সমাধান-চেষ্টার পরোয়া না করে এই অতিমারী নতুন নতুন রূপ নিয়ে ফিরে আসছে, আর এতখানি মৃত্যু আর ধ্বংসের জন্ম দিচ্ছে, যা সাম্প্রতিক কালে আমরা দেখিনি। দেশ জুড়ে যাঁরা সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁদের কাছে বার্তাটা স্পষ্ট— এই নতুন চিত্রনাট্যের সঙ্গে মানিয়ে নাও, আগেও বহুবার কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছ, নিজেদের রসদ এবং সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগিয়ে এই নিউ নর্মালে সঙ্গীত তৈরির কাজে নেমে পড়ো। 

    অধিকাংশ শিল্পী, আয়োজক এবং সঙ্গীতরসিক শ্রোতা বোধহয় ভাবছেন, অনলাইন কনসার্ট আর যা-ই হোক, লাইভ জলসার ম্যাজিকের ধারেকাছে আসে না। অবশ্যই আসে না। এ দুটো জিনিস আলাদা, তাদের নিজস্ব ভাল দিক ও মন্দ দিক রয়েছে। শিল্পীরা যার অভাব সবচেয়ে বোধ করছেন (আমিও করছি), তা হল, দর্শকের সঙ্গে তাঁরা যে যোগাযোগটা সরাসরি স্থাপন করতে পারতেন, দর্শকদের মধ্যে থেকে ‘ওয়া’ বা ‘আহা’ শুনে, তাঁদের করতালি শুনে ও মাথা নাড়া দেখে শিল্পীরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে উতসাহী হতেন, কখনও সেরার চেয়েও বেশি দিতেন। সেই পারস্পরিক রসায়নটা কোনও শিল্পীই ভুলতে পারেন না, চানও না।

    কিন্তু রেকর্ডিং-এর সময় তো অসামান্য সঙ্গীত রচিত হয়েছে? সব সঙ্গীতরসিকই, বহু দশক ধরে হওয়া প্রচুর রেকর্ডিং-এর মধ্যে নিজের অসংখ্য প্রিয় গান বা বাজনার কথা বলতে পারবেন। স্টুডিওতে তো কোনও দর্শকই থাকতেন না, কিন্তু আমাদের ওস্তাদ গাইয়েরা-বাজিয়েরা সেখানে তুলনাহীন সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। সেসব স্বর্ণসম্পদ বিভিন্ন ফর্ম্যাটে ঢালা হলেও, তার স্বাদ একই থেকে গেছে— ৭৮ আরপিএম রেকর্ড, বা এলপি/ইপি ডিস্ক, বা ক্যাসেট, সিডি, অথবা হালফিলের স্ট্রিমিং কিংবা ডাউনলোড করে নেওয়া যায় এমন ফর্ম্যাট। তখন তো শ্রোতার অভাবটা স্টুডিওতে কাউকে নিরাশ করেনি।

    বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের ৭৮ আরপিএম রেকর্ডিং-এর কথা মনে আছে? একবার ভাবুন তো, ওই সময়ের শিল্পীরা কেমন আঁতকে উঠেছিলেন, যখন এমন একটা যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছিলেন, যা তাঁদের কণ্ঠস্বর বা বাজনা হুবহু ধরে রাখতে পারে এবং ফের শুনিয়েও দিতে পারে! বা, কেমন আঁতকে উঠেছিলেন, যখন তাঁদের বলা হয়েছিল, আপনার দীর্ঘ সঙ্গীতকে এখানে তিন মিনিটের মধ্যেই বেঁধে ফেলতে হবে! অথচ তাঁরা মানিয়ে নিয়েছিলেন, এবং কী অবিশ্বাস্য ভাবে!

    কিছু কিছু স্টুডিওতে তখন খুব উঁচুদরের যন্ত্র থাকত, আর অত্যন্ত দক্ষ পেশাদার রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সবকিছুর তত্ত্বাবধান করতেন, কিন্তু অধিকাংশ স্টুডিওতেই সেসব হত না। যন্ত্রও থাকত সেকেলে ও অপর্যাপ্ত, আর ইঞ্জিনিয়ারও হতেন হাতুড়ে। অথচ এইসব লজঝড়ে স্টুডিওতে তৈরি সঙ্গীত আজও রসিকরা মহা-উদ্দীপনায় বিক্রি করছেন, কিনছেন, শুনছেন। অনেক শিল্পীই স্মৃতিকাতর হয়ে মনে করবেন, আকাশবাণীর স্টুডিওতে কেমন একটা মাত্তর মাইক্রোফেন মাঝখানে বসিয়ে দেওযা হত, আর গলার স্বর জোরে বা আস্তে করার একমাত্র উপায় ছিল হয় মাইকের কাছে গিয়ে গাওয়া, বা মাইক থেকে দূরে চলে গিয়ে গাওয়া। একজন সাহায্যকারী থাকতেন, যাঁর অডিও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কোনও প্রশিক্ষণ নেই, কিন্তু তিনি ওখানকার স্টাফ বাজনদার, অনুগ্রহ করে বাড়তি একটা লোকের কাজ করে দিচ্ছেন। তিনি কয়েকটা খুঁটিনাটি বলে দিতেন, আর রেকর্ডিং হয়ে যেত। এগুলোও হত শ্রোতাশূন্য স্টুডিওতে, কয়েকটা বিশেষ ক্ষেত্রে হয়তো আমন্ত্রিত কিছু শ্রোতা এসে শুনতেন। কিন্তু এইসব সঙ্গীতও এখনও আমরা প্রবল উপভোগ করছি।

    দূরদর্শন-এর স্টুডিওতে কয়েকটা কনসার্ট হত আমন্ত্রিত দর্শকদের সামনে, তাছাড়া গান, বাজনা, সঙ্গীতকারদের বক্তৃতা, গেয়ে-বাজিয়ে বক্তৃতা, অনেক কিছুই হত, যা রেকর্ড করে প্রচার করা হত। সেট ডিজাইন, লাইটিং, এগুলোর মান আদৌ তেমন ভাল ছিল না, কিন্তু এসব সত্ত্বেও শিল্পীরা অসামান্য অনুষ্ঠান করতেন, সামনে কোনও দর্শক না থাকলেও। তখন তো কোনও অসুবিধে হত না।

    শিল্পীদের ডিএনএ-তেই, বদলে যাওয়া পরিস্থিতি বা নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষমতা বোনা আছে। যদিও এ কথার সমর্থনে আমি কোনও তথ্য হাজির করতে পারব না। কিন্তু এক শতক ধরে নতুন নতুন প্রযুক্তি আর অনুষ্ঠান উপস্থাপনার নতুন নতুন ধরনের সঙ্গে শিল্পীদের মানিয়ে নেওয়া আমরা দেখেছি, তার তো প্রমাণ আছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের ৭৮ আরপিএম রেকর্ডিং-এর কথা মনে আছে? একবার ভাবুন তো, ওই সময়ের শিল্পীরা কেমন আঁতকে উঠেছিলেন, যখন এমন একটা যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছিলেন, যা তাঁদের কণ্ঠস্বর বা বাজনা হুবহু ধরে রাখতে পারে এবং ফের শুনিয়েও দিতে পারে! বা, কেমন আঁতকে উঠেছিলেন, যখন তাঁদের বলা হয়েছিল, আপনার দীর্ঘ সঙ্গীতকে এখানে তিন মিনিটের মধ্যেই বেঁধে ফেলতে হবে! অথচ তাঁরা মানিয়ে নিয়েছিলেন, এবং কী অবিশ্বাস্য ভাবে!

    যে কোনও পরিস্থিতি, চাহিদা, প্রযুক্তির সঙ্গে এইভাবে মানিয়ে নেওয়ার ঐতিহ্য যখন আছে, তখন অনলাইন ফর্ম্যাট-টার দিকে আমাদের সবার অত্যন্ত মনোযোগ নিয়ে তাকানো দরকার। প্রায় দেড় বছর কেটে গেছে, সকলেই হা-হুতাশ করেছে এবং অপেক্ষা করেছে, কবে সব ঠিক হবে। এবার নতুন ভাবে অনলাইন কনসার্ট শুরু করতে হবে, যার নিজস্ব আবেদন থাকবে। সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে, যাকে ব্যাকড্রপ হিসেবে ব্যবহার করে সঙ্গীতানুষ্ঠান করা যেতে পারে। কেন শুধু শুধু আমরা হল-এর মধ্যে ঢুকব, যেখানে ভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা? তার চেয়ে আউটডোর লোকেশন খুঁজি, যা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। আমাদের সৃষ্টিক্ষমতাকে, বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এমন অভিনব অনলাইন জলসা করতে হবে, যা লোকে বারবার দেখবে-শুনবে। নিশ্চয়ই গোড়ায় অনেকটা ভুল হবে, ব্যর্থতা আসবে। তবু একটা নতুন ফর্ম্যাটের জন্ম হবে, যা নিশ্চয়ই লাইভ জলসার ম্যাজিক তৈরি করবে না, কিন্তু নিজস্ব, অন্য ম্যাজিক তৈরি করবে। সবচেয়ে বড় কথা, তা করতে পারলে আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পারব ভারতের পারফর্মিং আর্ট-কে, একইসঙ্গে সমুচিত জবাব দিতে পারব সেই সব হর্তাকর্তা ও নীতি-নির্ধারকদের, সঙ্গীত গোল্লায় গেলে যাঁদের কিস্যু যায়-আসে না।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook