১২৮৯ বঙ্গাব্দের ২ পৌষ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে দিনেন্দ্রনাথের জন্ম হয়। মাত্র ৫২টি বর্ষাবসন্ত অতিক্রম করতে না করতেই তাঁর আয়ু নিষ্প্রদীপ হয়ে যায়। তিনি ছিলেন ‘উৎসবরাজ দিনেন্দ্রনাথ’, রবীন্দ্রনাথের ‘সকল গানের ভাণ্ডারী’, ‘সকল নাটের কাণ্ডারী’ এবং বিগতকালের শান্তিনিকেতনের সকলের অতিপ্রিয় ‘দিন্দা’।
দিনেন্দ্রনাথকে শুধু গুণী বললে কম বলা হয়, তিনি ছিলেন গুণীশ্রেষ্ঠ। দিনেন্দ্রনাথ কিছুকাল বিলেতে অধ্যয়ন করেছেন, ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট অধিকার ছিল। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছানুসারেই তিনি আশ্রমের বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়াতেন। সংগীতবিদ্যায় অসম্ভব প্রতিভাধর মানুষটি ছেলেবেলায় যখন ইংরেজি ইস্কুলে পড়তেন, তখনই পিয়ানো বাজিয়ে পুরস্কার পেয়েছিলেন। বড় হয়ে ভারতীয় ধ্রুপদীসংগীতের চর্চা করেছেন। বাউল, ভাটিয়ালি, বাংলার লোকসংগীতে তাঁর অনায়াস দক্ষতা ছিল। দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান এত ভাল গাইতেন যে— স্বয়ং কবিই তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে নানান জায়গায় সেসব গান শোনাতেন। অপূর্ব কীর্তনও গাইতেন দিনেন্দ্রনাথ। পাশ্চাত্যসংগীতে ছিল অপরিসীম প্রজ্ঞা। বিলেতে যখন ছিলেন, তখন ওদেশের সংগীতে এত বেশি নিমগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে— তাঁর আইন অধ্যয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ব্যারিষ্টার হয়ে ওঠা হয় না।
পিতামহ দ্বিজেন্দ্রনাথ তাঁর এই প্রাণাধিক পৌত্রটি সম্পর্কে বলেছেন—
‘দিনু- দাদাজির কি কব কাহিনী
বীণাপানির সে যে শিষ্য।
উথলি উঠে যবে রাগরাগিণী
পুথলি বনি যায় বিশ্ব।।’
রবীন্দ্রসংগীতের জগতে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দান অসামান্য। রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করে সুর দিয়েই ‘দিনু’কে শিখিয়ে দিতেন। দিনু সেই সমস্ত গান স্বরলিপি রচনা করে সংরক্ষণ করতেন, ছাত্রছাত্রী ও আশ্রমবাসীদের শিখিয়ে দিতেন এবং বৈতালিকে, উপাসনায়, সারাবছরের উৎসব-অনুষ্ঠানে ও নাট্যানুষ্ঠানে গাওয়াতেন। তাই তো তাঁকে বলা হত ‘উৎসবরাজ’। দিনেন্দ্রনাথের এস্রাজের হাত ও গানের গলা দুই-ই ছিল অতীব সুন্দর। দিনেন্দ্রের মধ্যে পিতামহ দ্বিজেন্দ্রনাথের নিস্পাপ সরলতা, জ্ঞানস্পৃহা, পিতা দ্বিপেন্দ্রনাথের আভিজাত্য ও ঔদার্য মিশেছিল। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ পর্ব থেকে ক্রমান্বয়ে দিনেন্দ্রনাথের জীবৎকাল পর্যন্ত— যাবতীয় নাট্যচর্চায় তিনি কেবল নির্দেশক, পরিচালক, অভিনেতা ও গায়ক ছিলেন না। তিনি যেন সত্যিকারের শারোদোৎসবের ঠাকুরদা, অচলায়তনের পঞ্চক, ফাল্গুনীর চন্দ্রহাস, বিসর্জনের রঘুপতি হয়ে উঠতে পারতেন। এই চরিত্রগুলি রবীন্দ্রনাথের স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি, কিন্তু ভাবতে ভাল লাগে যেন দিনেন্দ্রনাথের সকর্মক সজীব বাস্তব অস্তিত্বই চরিত্রগুলিকে সৃষ্ট হতে সাহায্য করেছে।
দিনেন্দ্রনাথের অভিনয় নৈপুণ্য ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর কথায়— ‘সকলেই জানেন, রবিকাকা, গগনদা আর দিনু— ঠাকুরবাড়ি’র শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।’ আবার অন্যত্র বলেছেন ‘হয় রবিকাকা কিংবা দিনু পরিচালনা না করলে কোনো নাটক করাই আমাদের সার্থক হত না।’
শান্তিনিকেতন তো একটি সীমাবদ্ধ ভূখণ্ড। তার প্রকৃতির এমন কী শক্তি সারা বাংলাদেশের প্রকৃতির তুলনায়? সেই বৃহত্তর বঙ্গদেশে, সেই নদীমাতৃক বাংলার উদার আকাশের তলায় দীর্ঘ দশবছর কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ যত প্রকৃতির গান লিখেছেন, ষাট থেকে সত্তর বছর বয়সে তার চর্তুগুণ প্রকৃতির গান লিখেছেন, তা কি শুধুই শান্তিনিকেতন প্রকৃতির গুণে, না কি দিনেন্দ্রনাথের পৌরহিত্যে প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে উৎসব গড়ে তোলায়? আশ্রমের আকাশে দিনেন্দ্রনাথ ছিলেন সূর্যালোকিতচন্দ্র। ‘বর্ষামঙ্গল’, ‘বসন্তোৎসব’, ‘শারোদোৎসব’র প্রাণপুরুষ ছিলেন দিনেন্দ্রনাথ। তিনিই রবীন্দ্রনাথের অন্তরলোক থেকে গানের অবারিত ধারাকে উৎসারিত করতে পেরেছিলেন। দিনেন্দ্রনাথ, কেবল দিনেন্দ্রনাথই রবীন্দ্রনাথের গানকে চার দেওয়ালের গণ্ডী থেকে বের করে এনে খোলা আকাশের তলায়, শালবীথিকায়, এককথায় স্থলে-জলে-বনতলে উপস্থাপন করেছিলেন। আজ আমরা যে রবীন্দ্রসংগীতকে কেবল কৃত্রিম শিল্পচর্চার স্বরলিপি গ্রন্থ বলে গ্রহণ করি না, জীবনচর্চার গায়ত্রীরূপে গ্রহণ করি, সেই শিক্ষা দিনেন্দ্রনাথের। তাই দিনেন্দ্রনাথ আমাদের জীবনের অদীনপুণ্য আচার্য।
শুধু কি তাই? শুধু কি গান গাওয়া, স্বরলিপি লেখা, সঠিক সুরে গীতি পরিবেশন করা? আরও কত গুণের অধিকারী ছিলেন দিনেন্দ্রনাথ! তাঁর কাছে শেলী, কীট্সের পাঠস্মৃতি আজীবন স্মরণ করেছেন প্রমথনাথ বিশী। পূর্বেই উল্লেখ করেছি রবীন্দ্রনাথ এই গুণীকে আশ্রমবিদ্যালয়ে বাংলা-ইংরেজি শিক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

প্রকাশ্যে শিল্পীর চেয়ে দিনেন্দ্রনাথের শিক্ষকের আসনই ছিল প্রধান। তাঁর প্রিয় ছাত্রী ছিলেন অমিতা সেন ওরফে খুকু। রমা কর, অমলা দাস, সাহানা দেবী, চিত্রলেখা সিদ্ধান্ত, সাবিত্রী কৃষ্ণন, পূর্ণিমা চৌধুরী (ঠাকুর)। শেষোক্ত নামটি অর্থাৎ পূর্ণিমা, দিনেন্দ্রনাথের আপন ভাগ্নী। ছাত্রদের মধ্যে শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, পিনাকীন ত্রিবেদী। পূর্ণিমা ঠাকুর ইংরেজি পড়ালেও, গান শুনতে চাইলে ঘরোয়াভাবে গাইতেন এবং তাঁর কণ্ঠে গানের স্বরক্ষেপণে, উচ্চারণে, সুরের মডিউলেশন-এ দিনেন্দ্রনাথের গায়কির সুন্দর নমুনা পাওয়া যেত। এছাড়াও, দিনেন্দ্রনাথের নিজের রচিত গানের স্বরলিপি তাঁর সংগ্রহে ছিল। ‘সংগীতবিজ্ঞানপ্রবেশিকা’য় তার দৃষ্টান্ত মিলবে। অন্ততঃ একটি গানের কথা জানা যায়, যেটি একসময়ে আশ্রমিকদের কণ্ঠে-কণ্ঠে ফিরত। গানটি— ‘শালবনে শুনি শ্যামশিশুর কাকলি।’ এই গানটিই দিনেন্দ্র রচিত ও সুরোরোপিত শেষ গান। দিনেন্দ্রনাথের মৃত্যুর অনেককাল পরে এবং রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর দু’মাস পরে এই গান স্বরলিপি-সহ প্রকাশিত হয়।
আশ্রমের আকাশে দিনেন্দ্রনাথ ছিলেন সূর্যালোকিতচন্দ্র। ‘বর্ষামঙ্গল’, ‘বসন্তোৎসব’, ‘শারোদোৎসব’র প্রাণপুরুষ ছিলেন দিনেন্দ্রনাথ। তিনিই রবীন্দ্রনাথের অন্তরলোক থেকে গানের অবারিত ধারাকে উৎসারিত করতে পেরেছিলেন। দিনেন্দ্রনাথ, কেবল দিনেন্দ্রনাথই রবীন্দ্রনাথের গানকে চার দেওয়ালের গণ্ডী থেকে বের করে এনে খোলা আকাশের তলায়, শালবীথিকায়, এককথায় স্থলে-জলে-বনতলে উপস্থাপন করেছিলেন।
সংখ্যায় স্বল্প হলেও, দিনেন্দ্রনাথের নিজের রচনাও অতি মনোরম। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি কবিতা, স্বরলিপি সমেত কয়েকটি গান, দু’চারটি গদ্যরচনা, এবং নানা মানুষকে লেখা অগণিত চিঠিপত্র। দিনেন্দ্রনাথ তাঁর কবিতাগুলি ‘বীণ’ শিরোনামাঙ্কিত কাব্যগ্রন্থে প্রকাশ করেছিলেন। দিনেন্দ্রনাথের একটি কবিতার কয়েকটি পংক্তি—
‘এমনি সে নামে কত সাজে
ভূলোক দ্যুলোক হিয়ামাঝে।
কত ছন্দে, কত নব রাগে
বাজে সুমধুর বীণা বাজে।’
কে বলে ঠাকুরবাড়ির গান মানেই গুরুগম্ভীর ব্রহ্মসংগীত? দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানগুলি অত্যন্ত সুললিত ও সুমধুর রোম্যান্টিক কাব্যসংগীতের বিরল নমুনা। যার মধ্যে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে প্রকৃতি, প্রেম ও তাঁর সৌন্দর্যবোধ। দিনেন্দ্রনাথ রচিত গানের রেকর্ড আছে কিনা জানা নেই, তবে বীরেন্দ্রনাথ পালিত, ক্ষমা ঘোষ ও অনুভা ঠাকুর— দিনেন্দ্রনাথের গান আনুষ্ঠানিকভাবেই গাইতেন। দিনেন্দ্রনাথের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের ৬টি গান রেকর্ড করেছিলেন গ্রামোফোন কোম্পানি। এই গানের রেকর্ডগুলো প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৬-২৭ সালে এইচএমভির ব্ল্যাকলেবেল রেকর্ডে।



দিনেন্দ্রনাথ তাঁর পিতামহ দ্বিজেন্দ্রনাথের অনেকগুলি তত্ত্ববিদ্যার গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর সম্পাদনার পরিচয় নিহিত আছে পরোক্ষভাবে ‘আনন্দসংগীত’ পত্রিকায়, প্রত্যক্ষভাবে ‘সংগীতবিজ্ঞান’ প্রকাশিকায় এবং ‘মুক্তধারা’ নামক একটি পত্রিকার সম্পাদকরূপে। এই ‘মুক্তধারা’ পত্রিকাতেই রবীন্দ্রনাথের ‘নবীন’ প্রকাশিত হয়েছিল। একথা সর্বজনবিদিত যে— রবীন্দ্রসংগীত অভিধাটি তিনিই প্রথম ব্যবহার করেন। ‘মর্ডান রিভিউ’তে রবীন্দ্রনাথের গান সম্পর্কে দিনেন্দ্রনাথের ইংরেজি রচনা অন্যভাষী পাঠকের কাছে রবীন্দ্রনাথের গানের মর্ম উদ্ঘাটনে সাহায্য করেছে। তিনি স্বয়ং কবি ও গীতিকাররূপে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারতেন, কিন্তু তাঁর জীবনের সব কীর্তি, সব সাধনা তিনি সমর্পণ করেছেন রবীন্দ্র-অন্বেষণে। রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘চিরজীবন অন্যকেই সে প্রকাশ করেছে, নিজেকে করেনি। তার চেষ্টা না থাকলে আমার গানের অধিকাংশই বিলুপ্ত হোত। কেননা নিজের রচনা সম্বন্ধে আমার বিস্মরণ-শক্তি অসাধারণ। আমার সুরগুলিকে রক্ষা করা এবং যোগ্য এমনকি অযোগ্য পাত্রকেও সমর্পণ করা তার যেন একাগ্র সাধনার বিষয় ছিল।… আমার সৃষ্টিকে নিয়েই সে আপনার সৃষ্টির আনন্দকে সম্পূর্ণ করেছিল।’ সুগভীর কৃতজ্ঞতা ও তৃপ্তিতে রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করেছেন—
‘রবির সম্পদ হত নিরর্থক, তুমি যদি তারে
না লইতে আপনার করি, যদি না দিতে সবারে।’
এই আশ্রমের সংগীতধারাকে প্রবাহিত করেছিলেন দিনেন্দ্রনাথ। দিনেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের আরও দু’তিনটি বাণী-
‘নতুন ফোটা গানের কুঁড়ি
দেব বলে দিনুর হাতে আনি
মনে নিয়ে সুরের গুনগুনানি
চলছিলেম, এমন সময় যেন সে কোন্ পরীর কণ্ঠখানি
বাতাসে সে বাজিয়ে দিল বিনা ভাষার বাণী।’
(‘আনন্দ’, ‘পূরবী’)
১৯২৪ এর নভেম্বর-এ পেরু যাওয়ার পথে আর্জেন্টিনার বুয়েনস এয়ারস-এ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে বাসকালে ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রসঙ্গে কোনও একসময়ে স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দিনেন্দ্রনাথকে ‘জুঁই ফুলের এই গান’ সহযোগে যে কবিতাটি কবি লিখে পাঠান সেটি—
শ্রীমান দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্যানীয়েষু,
‘দূর প্রবাসে সন্ধ্যাবেলায় বাসায় ফিরে এনু,
হঠাৎ যেন বাজল কোথায় ফুলের বুকের বেণু।
আঁতিপাঁতি খুঁজে শেষে বুঝি ব্যাপারখানা।
বাগানে সেই জুঁই ফুটেছে চিরদিনের জানা
গন্ধটি তার পুরোপুরি বাংলাদেশের বাণী,
একটুও তো দেয়না আভাস এই দেশি ইস্পানি।
…
জিতবে গন্ধ হারবে কি গান নৈব কদাচিৎ
তাড়াতাড়ি গান রচিলাম জানি নে কার জিত।
তিনটে সাগর পাড়ি দিয়ে একদা এই গান
অবশেষে বোলপুরে সে হবে বিদ্যমান।
এই বিরহীর কথা স্মরি গেয়ো সেদিন, দিনু
জুঁই বাগানের আরেকদিনের গান যে রচেছিনু।
(‘চিঠি’, ‘পূরবী’)
দিনেন্দ্রনাথের অকাল মৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ গভীর আঘাত পেয়ে মন্দিরের উপাসনায় বলেছিলেন— ‘আমাদের আশ্রমের যে একটি গভীর ভিত্তি আছে, তা সকলে দেখতে পান না। এখানে যদি কেবল পড়াশুনার ব্যাপার হত তাহলে সংক্ষেপ হত, তাহলে এর মধ্যে কোনো গভীর তত্ত্ব প্রকাশ পেত না। এটা যে আশ্রম, এটা যে সৃষ্টি, খাঁচা নয়, ক্ষণিক প্রয়োজন উত্তীর্ণ হলেই এখানকার সঙ্গে সম্বন্ধ শেষ হবে না, সেই চেষ্টাই করেছি। এখানকার কর্মের মধ্যে যে একটি আনন্দের ভিত্তি আছে, ঋতু-পর্যায়ের নানা বর্ণগন্ধগীতে প্রকৃতির সঙ্গে যোগস্থাপনের চেষ্টায়, আনন্দের সেই আয়োজনে দিনেন্দ্র আমার প্রধান সহায় ছিলেন। এই আশ্রমকে আনন্দনিকেতন করবার জন্য তরুলতার শ্যামশোভা যেমন, তেমনি প্রয়োজন ছিল সঙ্গীত উৎসবের। সেই আনন্দ উপচার সংগ্রহের প্রচেষ্টায় প্রধান সহায় ছিলেন দিনেন্দ্র। এই আনন্দের ভাব যে ব্যাপ্ত হয়েছে, আশ্রমের মধ্যে সজীবভাবে প্রবেশ করেছে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে চলেছে, এর মূলেতে ছিলেন দিনেন্দ্র। আমার কবিপ্রকৃতিতে আমি যে গান করেছি, সেই গানের বাহন ছিলেন দিনেন্দ্র। অনেকে এখানে থেকে গেছেন, সেবাও করেছেন, কিন্তু তার রূপ নেই বলে ক্রমশ তাঁরা বিস্মৃত হয়েছেন। কিন্তু দিনেন্দ্রের দান এই যে আনন্দের রূপ, এতো যাবার নয় যতদিন ছাত্রদের সঙ্গীতে এখানকার শালবন প্রতিধ্বনিত হবে, বর্ষে বর্ষে নানা উপলক্ষ্যে উৎসবের আয়োজন চলবে, ততদিন তাঁর স্মৃতি বিলুপ্ত হতে পারবে না,ততদিন তিনি আশ্রমকে অধিগত করে থাকবেন, আশ্রমের ইতিহাসে তাঁর কথা ভুলবার নয়। এখানকার সমস্ত উৎসবের ভার দিনেন্দ্র নিয়েছিলেন।…প্রতিদিন বৈতালিকে যে রসমাধুর্য আশ্রমবাসীর চিত্তকে পুণ্যধারায় অভিষিক্ত করে, সেই উৎসকে উৎসারিত করতে তিনি প্রধান সহায় ছিলেন। এই কথা স্মরণ করে তাঁকে সেই অর্ঘ্য দান করি, যে অর্ঘ্য তাঁর প্রাপ্য।’
রেকর্ডচিত্র ঋণ: রাজীব চক্রবর্তী



