ছোটবেলার সেই পাড়াবেড়ানি অভ্যেসটা বদলে গিয়ে, ফেসবুকের যুগে এখন পাড়াটাই কেমন ঘুরে বেড়ায় ঘরে-ঘরে! বোতাম টিপতেই আজ এল অদ্ভুত এক পোস্ট। মধ্যবয়সি একটি আধুনিকা, ভারী রাতে নিজের ছাদেই উদ্দাম নেচে চলেছে; সেই সঙ্গে কীসব যেন বলেও চলেছে জোরে-জোরে। গানটা আবহে বাজছে। হালকা শরীর, কিন্তু মজবুত; মাথা থেকে পা অবধি— সবটাই জড়ানো পাঁচমিশেলি পশ্চিমি-পোশাকে; খামচা করে ছাঁটা চুলের একপাশে আবার সবুজ ও সোনালি স্ট্রিক। উন্মুক্ত দু’পায়ের গোছে জবরদস্ত করে আঁটা এক জোড়া পা-বন্ধ জুতো। দেখে বোঝা যায় যে, বেশ সম্পন্নতার মধ্যেই খেয়ে-পরে বাঁচে এই মহিলা। কিন্তু কেনই-বা তার নাচ পাচ্ছে এমন! আমার পাতায় যেখানে তার পোস্টটি এসেছে, সেখানে তার নামের পাশে নীল কালিতে জ্বলজ্বল করছে ‘follow’। বুঝতে পারলাম না, কেনই-বা অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে তাকে! এ-মহিলা না আমার বন্ধু তালিকায়, না তাকে আমি চিনি। কিন্তু আমিও দেখতে থাকলাম; এবং তা মোহগ্রস্তের মতোই। কারণ, মহিলা কিন্তু নাচ জানে। আর তার চেহারাতেও জিম-জগিংয়ের বেশ নিয়মিত অনুশীলনের ছাপ। দেখতে-দেখতে আমার যেন কেমন এক স্থির বিশ্বাস হল যে, এ-তো এক ঘোর পাগলামি। কিন্তু তার হাসি ও চাহনিতে যে আত্মবিশ্বাসের প্রলেপ, তা তো পাগল বা মতিচ্ছন্নের মতো একেবারেই নয়। কে এই মহিলা?
এবার তার প্রোফাইলটা খুলতেই দেখি যে, মেয়েটি বাঙালি। আপাতত মুম্বইবাসী, কারণ এটাই তার হোম টাউন। কিন্তু বসবাস এবং পড়াশোনার প্রায় সবটাই আমেরিকার এক নামী শহর ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। শৈশব- কৈশোরের নানা সম্ভার সে সাজিয়ে রেখেছে নিজের পাতায়; কিন্তু যৌবনের সংসার-যাপন সম্পর্কে সে একেবারে নীরব। এখনকার ছবিগুলিতে হয় সে নাচছে, নয়তো মোম জ্বালিয়ে, কেক কেটে কিছু একটা উদযাপন করছে; আর তার নীচে যে রাশি-রাশি মন্তব্য, তার প্রায় সবগুলিই সান্ত্বনাবাক্যে ভরা। মাথাটা কেমন গুলিয়ে গেল! এত হাসি, এত নাচ এবং লোকজন জুটিয়ে এত মাতামাতি, তবু এমন সান্ত্বনাবাক্য কেন! সারা পৃথিবীজুড়েই তার বন্ধুবৃত্ত। মনে না হয়ে পারে না যে, বখাটে নাম্বার ওয়ান; সেই সঙ্গে দেদার বৈভবে থেকে, সারাদিন শুধুই মেরি-মেকিং করে বেড়ায়। এই ধরনের জীবন এবং তার প্রভাব সম্পর্কে কিছুমাত্র আগ্রহ না-থাকায়, স্ক্রোল করে নেমে যাই, অন্যদের পোস্টে।
মাঝে কিছুদিন ভুলে গেলেও, আবার সে জুড়ে বসল আমার পাতায় এবং নাচতেও লাগল সেই প্রমত্ত উদ্দামতায়। তবে আজ তার ডান হাতে ধরা একটা বাঁধানো ফোটোগ্রাফ, যেটা বুকে জড়িয়ে ধরে সে নাচছে এবং মাঝে মাঝেই চুমুও খাচ্ছে ছবিটায়। ঠিক ওই ছবির জোড়াটাই টেবিলের ওপর সাজানো; অন্য যে-ভিডিয়োটি পোস্ট করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ফোটোতে প্রতিভাত একটি সুপুরুষ ছেলের সামনে বসে অনর্গল বকে চলেছে মহিলাটি; প্লেটে করে ব্রাউনি নিয়ে তাকে খাওয়াচ্ছে; কত কী সাজিয়ে এনে উপহারও দিচ্ছে; যেন কোনও সিরিয়াল-দৃশ্য। আন্দাজ করতে চাইলাম যে, ছেলেটি কি তবে বেঁচে নেই! কিন্তু মৃত ছেলের মায়ের চোখে উৎসবের এই হাজার পাওয়ার কীভাবে জ্বলছে? কমেন্টবক্স ঘেঁটে ইংরেজিতে লেখা রাশি-রাশি ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ ছাড়া আর কিছুই দেখলাম না।
২
ফেসবুকে নিয়মিত যাতায়াত থাকলেও, ওই অপরিচিত মেয়েটির কথা ভুলেই গেছিলাম। প্রায় মাস চারেক পর আজ আবার তা এল। বেশ কিছু লোক জুটিয়ে আবারও সেই কেক কাটা; কিন্তু কেক-এর ওপর লেখাটা দেখে তাজ্জব বনে গেলাম— ‘Happy Death Day-Prashant’… একই গান গাইছে সকলে মিলে; শুধু ‘বার্থ-ডে’ না বলে, বলছে ‘ডেথ-ডে’; অন্যদের স্বর স্তিমিত হয়ে গেলেও, ওই মায়ের চিৎকার যেন সকলের সমবেত স্বরের ভার একাই বহন করতে চায়। শুধু তাই নয়, সুখের উৎসবের নিয়ম মেনেই ডিনার এবং আড্ডারও ব্যাপক আয়োজন। পর্বে-পর্বে পোস্টগুলি দেখে কৌতূহল বাড়তে থাকায়, এবার একটু গুছিয়ে বসলাম। রাত প্রায় কাবার হয়ে গেল ওই মহিলার প্রোফাইল এবং পোস্ট পড়তে-পড়তে। এবার আর কোনও সন্দেহ রইল না যে, এইটি তার বড় ছেলে এবং কোনও এক দুর্ঘটনাতেই সে মারা যায়, মাত্র ষোল বছর বয়সে। ঘটনা বলতে সে শুধু লিখেছে, ‘accident’; কিন্তু গত প্রায় পনেরো বছর ধরে ওই মহিলা একইসঙ্গে পালন করে চলেছে ছেলের ‘Happy Birth Day’ এবং ‘Happy Death Day’। নিজের সম্পর্কে যে-পোস্টগুলি আছে, তাতেও বেশির ভাগ আত্মীয়স্বজন এবং চেনা-পরিচিতের মৃত্যুসংবাদ এবং ওই একই ধারাবাহিকতায় উদযাপন করে চলা মৃত্যু-উৎসবও। প্রত্যেকের পরিচিতি দিতে-দিতে সমানেই জানানো ওই মৃত ছেলের সঙ্গে সেই মানুষগুলির কী সম্পর্ক; প্রত্যেকটির শেষেই, ‘প্রশান্ত’কে সম্বোধন করে একই ভাবে লেখা, My boy you are no more alone… didu is going to meet you… choto mama will reach you soon…. your fav. doggie Ludo is going… সত্যিই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কিন্তু মেয়েটি পাগল নয়। কারণ আর-যে পোস্টগুলি তার বন্ধুবান্ধব এবং কাজকর্মকে ঘিরে, সেখানে তো দেখছি যে, সে একজন সিনেমা পরিচালক; সে-সব সিনেমার মধ্যে বহু প্রচারিত এবং পুরস্কার পাওয়া দু’একটি ছবি তো আমিও দেখেছি। বুঝতে পারলাম যে, এই মেয়েটিকে বুঝতে গেলে জেগেই কাটাতে হবে, আরও কয়েক রাত। কারণ এ এক অন্য অনুভবের মানুষ। একমাত্র মৃত্যুকেই কি স্থির বিশ্বাসে ভালবাসতে পেরেছে সে!
তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বুঝতে পারলাম না, কী সেই অ্যাকসিডেন্ট; কে ওর স্বামী! আরও সন্তানাদি আছে কি! সন্ন্যাসীদের পূর্বাশ্রমের মতোই সে-সব যেন ত্যাগ করেছে মেয়েটি। অবাকই লাগল তার নিজের মায়ের মৃত্যু-সংক্রান্ত পোস্টটি পড়ে। সাদা-কালো ছবিতে শাড়ি-পরা বাঙালি মা। সেই সঙ্গে নিজের ছোটবেলার একরাশ ছবি। প্রাণবন্ত ঝকঝকে এক মেয়ে সাইকেল চড়ছে, সাঁতার কাটছে, ইস্কুলে যাচ্ছে; মায়ের কোল ছেড়ে বড় হতে-হতে ছড়িয়ে পড়ছে বন্ধুদলে। সে-সময়কার চেহারায় এমন পাগলাটে ছাপ নেই। সহজ লাবণ্যে আনন্দ-যাপনের স্থিরচিত্র। মনে হয় তার মা বেশ অল্প বয়সেই চলে গেছেন। আর একটি পোস্টে এক বয়স্ক স্নেহময়ী মায়ের রঙিন ছবির নীচে লেখা পড়ে বুঝলাম যে, ইনি ওর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী; তাঁর আগের দুই মেয়েসমেত বাবার সঙ্গে ঘর করেছেন। সৎ-মা এবং সৎ-বোনেদের নিয়ে কোনও গ্লানি তো নেই-ই, উলটে কী সুন্দর করে লিখেছে, তার জীবনে এই দ্বিতীয় মায়ের অবদান। শাশুড়ি-মায়ের মৃত্যুতে লেখা তার সেই মরমি পোস্টটাও মনে গেঁথে গেল। সে লিখেছে, ‘কারণে-অকারণে কলকাতায় ছুটে আসার দায়টাও তো আর রইল না, মা; বাড়িটাই তো বন্ধ হয়ে গেল, চিরদিনের জন্য।’ জীবনাবসান হিসেবে না ভেবে, তার এই তিন মায়ের মৃত্যুকেই সে দেখেছে, তার ছেলে ‘প্রশান্ত’-এর কাছে ফিরে যাবার যেন এক নিশ্চিত পথ হিসেবেই ; দেখছে তাঁদের পক্ষে, ‘প্রশান্ত’কে ছেড়ে থাকার নিদারুণ কষ্টের অবসান হিসেবে।
তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বুঝতে পারলাম না, কী সেই অ্যাকসিডেন্ট; কে ওর স্বামী! আরও সন্তানাদি আছে কি! সন্ন্যাসীদের পূর্বাশ্রমের মতোই সে-সব যেন ত্যাগ করেছে মেয়েটি। অবাকই লাগল তার নিজের মায়ের মৃত্যু-সংক্রান্ত পোস্টটি পড়ে। সাদা-কালো ছবিতে শাড়ি-পরা বাঙালি মা। সেই সঙ্গে নিজের ছোটবেলার একরাশ ছবি। প্রাণবন্ত ঝকঝকে এক মেয়ে সাইকেল চড়ছে, সাঁতার কাটছে, ইস্কুলে যাচ্ছে; মায়ের কোল ছেড়ে বড় হতে-হতে ছড়িয়ে পড়ছে বন্ধুদলে। সে-সময়কার চেহারায় এমন পাগলাটে ছাপ নেই।
তবে তার এই সহাস্য মৃত্যু-উদযাপনের আর একটি পোস্ট পড়ে আমিই কাঁদতে লাগলাম, ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে। ছেলেটি মারা যাবার ঠিক আগে-আগেই তোলা একটি ফোটো; দু’জনেই লাল পোশাক পরে আছে। নিশ্চয় স্বামী বা অন্য কেউ সঙ্গে ছিল, যে ওই ফোটোটি তুলেছিল। কোনও এক পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে, রেলিং-এ ভর দিয়ে ঝুঁকে পড়ে, দু’জনেই মুগ্ধ হয়ে দেখছে নীচের সবুজ উপত্যকা। তার সঙ্গে আরও একটা ফোটো, যাতে মেয়েটি একাই দাঁড়িয়ে আছে ওই একই লাল জামা পরে। মন দিয়ে না দেখলে গুলিয়ে যাবে সময়কাল। ফোটোদুটির প্রসঙ্গে সে লিখেছে, ‘ষোল বছর আগে, এই পাহাড়ের যে-জায়গায় দাঁড়িয়ে, যে-পোশাকটা পরে আমরা ফোটো তুলেছিলাম, সেই দিনটা মনে রেখে, সেদিনের সেই পোশাকটা পরেই আজ আবার আমি সেখানেই এসেছি, যাতে তুমি চিনতে পারো; যাতে তোমার মনে পড়ে যায়; আর আমার এই জামাটা গায়ে যাতে ছোট হয়ে না যায়, আমি তাই রোজ শরীরচর্চা করি; আমার মধ্যে অল্প বয়সের যে-তারুণ্য তুমি দেখে গেছ, তাকে যদি নষ্ট করে ফেলি তো, তোমার চিনতে অসুবিধে হবে যে ‘প্রসু’!’ দুটি ছবির সঙ্গে তৃতীয়টি একটি ভিডিও, যেখানে মরাছেলের সেই লাল টি-শার্টটা উড়িয়ে-উড়িয়ে সে নাচছে আর প্রলাপ বকে চলেছে, তার ‘প্রসু’র সঙ্গে। অন্য আর একটি পোস্টে ভিন্ন দিনের স্মৃতি নিয়ে, মেয়েটি এসে দাঁড়িয়েছে নির্জন এক বালিয়াড়িতে; আদিগন্ত সমুদ্র-জলোচ্ছ্বাসেও যেন কম পড়েছে তার অশ্রুবিন্দু। তরঙ্গ আছড়ে পড়া সেই তটরেখা ধরে, তিরবেগে ছুটতে-ছুটতে চিৎকার করছে উন্মাদিনী… ‘প্রশান্ত… প্রসু… আমার প্রাণ… আমার মন…’। এখানেও লেখা, ‘আজকের দিনে’, কোন সালে ছেলেকে নিয়ে ছুটি কাটাতে সে এসেছিল, ওই একই সমুদ্র-বেলায়।
৩
ভয়ংকরভাবে ঘেঁটে যাওয়া আমি এবার যেন একটু নড়েচড়ে বসলাম, মেয়েটির সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে; বাংলা বাজারের বাইরেও মিডিয়ার খোঁজ খবর রাখে এমন একজনের কাছ থেকে জানলাম যে, মেয়েটি একজন অত্যন্ত শক্তিশালী চিত্র-পরিচালক; মূলত স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতেই তার খ্যাতি; ছেলের মৃত্যুতে সে যে দমে গেছে তা নয়। শুধু ধ্বস্ত হয়েছে তার ব্যক্তিগত জীবন। কলকাতায় জন্মানো দুটো মেধাবী ছেলে-মেয়ে দিল্লি-মুম্বই-আমেরিকা চষে, বিয়ে করে, সংসারে থিতু হয়ে এবং দু’জনেই পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমার পরিচালক এবং প্রোডিউসার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, ছেলের অকালমৃত্যুকে কেন্দ্র করে! ইলেক্ট্রিক শেভারে দাড়ি কামাতে গিয়ে, বৈদ্যুতিক গোলযোগে, মুহূর্তের মধ্যে ইলেক্ট্রোকিউটেড হয়ে মারা যায় তাদের প্রথম সন্তান, ‘প্রশান্ত’। দু’জনেই দায়ী করল নিজেদের, ছেলের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সাবধান হয়নি মনে করে; শেষে আইনি বিচ্ছেদ। ছোট ছেলেকে নিয়ে তার স্বামী তাদের সেই আমেরিকার বাড়িতে থেকে গেলেও, ‘প্রশান্ত’কে যেন একলাই বুকে করে নিয়ে, মেয়েটি ফিরে এল মুম্বইতে। কী বিচিত্র এক কারণে ডিভোর্স হল তাদের! মেয়েটি তো নিজেকে এখন উভকামী বলেও ঘোষণা করেছে। হয়তো চিরাচরিত সব বন্ধন থেকেই মুক্তি চাইছে সে!
নিরন্তর মৃত্যুযাপনের উচ্ছ্বাসই কি তার একমাত্র বৈভব! কান্নার বদলে সমানেই তাই হেসে চলেছে সে! ঠিক যে-বয়সে ছেলেটি চলে গেছে, আজ প্রায় তত বছর ধরেই সে একইসঙ্গে পালন করে চলেছে, তার ‘প্রসু’র জন্ম ও মৃত্যুদিনকে সম-আনন্দের উৎসব হিসেবে। ওই জন্মদিন যাতে থেমে না যায় এবং মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই আবার যাতে নতুন করে জন্ম নেয় তার ‘প্রশান্ত’; জন্মের বয়স না বাড়লেও মৃত্যুর বয়স তো বেড়ে যেতে-যেতে বিচ্ছেদের পথটাই লম্বা হতে থাকে। ছেলের নামে একটা প্রোডাকশন হাউসও করেছে। কীই-বা সুকীর্তি রেখে গেছে ওই ‘প্রশান্ত’ যে, লোকে তাকে মনে রাখবে! তাই নিজেকে সুস্থ রেখে এবং মনে আনন্দ জাগিয়ে বেঁচে থাকতেই হবে তাকে। কারণ সে যতদিন বাঁচবে, তার ‘প্রসু’ও ঠিক ততদিনই সজীব থাকবে সকলের মনে। মরে যাওয়ার কথা ভাবলেই তার তাই মনে হয়, প্রশান্তকেই কি হত্যা করতে চাইছে না সে!
তবে, নব্বই-পার-করা তার স্মৃতিভ্রষ্ট বাবার মৃত্যু-পোস্টটিতে, একটু হলেও যেন কেঁপে গেছে মেয়েটি; স্তিমিত হয়ে গেছে মোমবাতি জ্বালিয়ে ‘Happy Death Day’-র কেক-কাটা উচ্ছ্বাস; কারণ তার মনে এখন সন্দেহ— বাবা কি স্মৃতি হাতড়ে চিনে নিতে পারবেন তাঁর বড় নাতি ‘প্রশান্ত’কে!
এই মেয়েটির উদ্বেল উচ্ছ্বাস দেখে মনে হল, এর থেকে কি ভাল ছিল না, পুত্রশোকে পাগল হয়ে যাওয়া? বিবিধ আয়োজনে সে কি চাইছে না, পূর্ণমাত্রায় একজন উন্মাদ হয়ে যেতে! একমাত্র পাগলরাই তো ‘দুনিয়ার-বার’ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তূরীয় আনন্দে।
এতটাই কি কঠিন পাগল হয়ে যাওয়া?
ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী