আমাদের তখন শুধু ক্লিফ রিচার্ড। প্রিয় চোখের সামান্য এক আশকারাতেই ‘কনগ্র্যাচুলেশন্স, অ্যান্ড সেলিব্রেশন্স’। ক্রমশ আচ্ছন্নতার ডেনভার। ‘সুইট সারেন্ডার’। ‘আয়াম সরি’-র সেই অবিশ্বাস্য হামিং। ‘দিজ ওল্ড গিটার, টট মি টু সিং আ লাভ সং, টোল্ড মি হাউ টু লাফ, হাউ টু ক্রাই…’, এবং সেইসব লিরিকের প্রাসঙ্গিকতায় গিটার এবং সোনালি চুল। ‘টোল্ড মি হাউ টু লাফ, হাউ টু ক্রাই।’ আরও অনেক মুখ, নাম। কী করে কাঁদতে হয়, হাসতে হয়, তার ভেতর একটা ছয় তারের ম্যাজিক। উডি গাথরির কালো গিটারে লেখা— ‘দিজ মেশিন কিলস দ্য ফ্যাসিস্টস’। সবসময় যে হত, এমনটা না। গিটার, মানুষ, সোনালি চুল সেই সময় উদ্দামতা নিয়ে আসত। তুমুল প্রেম নিয়ে আসত। এবং হ্যাঁ, প্রতিবাদও নিয়ে আসত। আনত কিছু মুখ। গড়ন। ভাঙন। সৃষ্টি থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্যশ্রাব্যতা।
একটা অ্যালবাম কভার। ‘অল থিংস মাস্ট পাস’। ফ্রায়ার পার্কার খোলা ঘাসের গালিচার ভেতর একটা মানুষ, চারদিকে ছড়িয়ে থাকা চারটি বামন। ক্যারিকেচার। শুনেছিলাম, লেনন বিরক্ত হয়েছিল কভার দেখে। এত সরাসরি শ্লেষ কী করে করতে পারলে, মেট? না কি যৌথতা থেকে ভেঙে বেরিয়ে এসে নিজস্বতার সুস্পষ্ট দ্যোতক? যে ব্যক্তিগত সত্তা কখনও ‘বিটলস’ নামক গ্যালাক্সির ভেতর তেমনভাবে একক সত্তা হিসেবে দাগ কাটছিল না। কারণ, ‘কোয়াইট বিটল’ জর্জ হ্যারিসনের বড়জোর দু’টি করে গান প্রতি অ্যালবাম পিছু থাকবে বলে এমনই কিছু অঘোষিত নির্দেশিকা ছিল লেনন-ম্যাকার্টনি ডুয়োর। এবং এই প্রসঙ্গেই গান লেখার ইতিহাস।
১৯৬৩-র সিঙ্গার-সংরাইটার হিসেবে জর্জ হ্যারিসনের আত্মপ্রকাশ ‘ডোন্ট বদার মি’ দিয়ে, বোর্নমাউথের একটি হোটেলের বিছানায় অসুস্থ জর্জ পাগলের মতো কলম বোলাচ্ছেন— ‘আই নো আই’ল নেভার বি দ্য সেম, ইফ আই ডোন্ট গেট হার ব্যাক এগেইন’, অনেক পরে স্মৃতিকথায় স্বভাবসিদ্ধ হ্যারিসনীয় উইট, বিনয়— ‘দ্যাট ওয়াজ অ্যান এক্সারসাইজ টু সি ইফ আই কুড রাইট আ সং’। যে প্রচ্ছন্ন নির্দেশিকার কথা বলছিলাম, সেখানে তুমুল বন্ধুত্বের মাঝেও অন্তত গান লেখার ক্ষেত্রে লেনন-ম্যাকার্টনি ডুয়োর প্রাধান্য কোথাও আড়ালে নেই, ছিল না। দলে ক্রমশ সন্দেহ, মতানৈক্য, আসন্ন বিচ্ছেদ-চেতনার কালো মেঘ, ঠিক এরকম অবস্থায় ১৯৬৯-এ লেননকে ম্যাকার্টনি বললেন, ‘এতদিন পর্যন্ত আমাদের দু’জনের গান ওর (হ্যারিসন) থেকে অনেকটাই ভাল ছিল, এ-বছর ওর গানগুলো অন্তত আমাদের সমান আসনে বসল।’ ‘অ্যাট লিস্ট অ্যাজ গুড অ্যাজ আওয়ার্স’।
আরও পড়ুন : অলৌকিক আচ্ছন্ন করেছিল রাইনার মারিয়া রিলকে-কে!
লিখছেন অভীক মজুমদার…
এই ‘অ্যাট লিস্ট’-এর ভেতর ভাঙনের দ্যোতক, পূর্বাভাস। ১৯৬৫ থেকে বিটলস অ্যালবাম পিছু দু’টি করে গানের গণ্ডি টপকে ১৯৬৫-র ‘রিভলভার’-এ তিনটে গান হ্যারিসনের— যার মধ্যে প্রথম পিঠে ‘ট্যাক্সম্যান’ ও ‘লাভ ইউ টু’ এবং দ্বিতীয় পিঠে ‘আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ’। এই অ্যালবামেই ‘ইয়েলো সাবমেরিন’-এর মতো প্রবাদপ্রতিম বিটলস সং-এর সঙ্গে তুল্যমূল্য লড়ছে, তরুণ প্রেমিকের মুখে মুখে ঘুরছে ‘লাভ ইউ টু’, ব্যারিটোনে তুমুল অনুরণন— ‘লাভ মি হোয়াইল ইউ ক্যান/ বিফোর আয়্যাম আ ডেড ওল্ড ম্যান’। এবং এই ‘লাভ ইউ টু’ প্রসঙ্গেই অনেক পরের সেই কিংবদন্তি ‘সামথিং’। ১৯৬৯-এ ‘অ্যাবে রোড’-এর প্রথম পিঠের দ্বিতীয় গান। ক্রমশ লেনন-ম্যাকার্টনির কাছে ‘অ্যাট লিস্ট অ্যাজ গুড অ্যাজ আওয়ার্স’ থেকে নিজস্ব সত্তা, পরিচিতি পাচ্ছে হ্যারিসনের গান। ‘অ্যাবে রোড’-এ লেননের প্রিয়তম, আরও একধাপ এগিয়ে ম্যাকার্টনির প্রিয়তম হ্যারিসন-সং। ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার মতে এই ‘সামথিং’ ‘গত পঞ্চাশ বছরের শ্রেষ্ঠ প্রেমের গান’, আশ্চর্য, দীর্ঘ দিন ধরে সামথিং-কে লেনন বা ম্যাকার্টনির লেখা বলে জেনে এসেছিলেন ফ্রাঙ্ক। বন্ধু, আরেক সিঙ্গার-সংরাইটার জেমস টেলরের ‘সামথিং ইন দ্য ওয়ে শি মুভস’-এর ছায়ায় হ্য্যারিসনের কলম, ‘সামথিং ইন হার স্টাইল দ্যাট শোজ মি… সামথিং ইন দ্য থিংস শি শোজ মি, আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লিভ হার নাও, ইউ নো আই বিলিভ অ্যান্ড হাউ…’।
গানের ভাষায় প্রেম। গানের ভাষায় প্রতিবাদ। যে-কথা শুরুতেই বলেছিলাম গাথরি এবং ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতা প্রসঙ্গে, সেখানেই ‘ট্যাক্সম্যান’-এর মতো গান লিখলেন হ্যারিসন, হ্যারল্ড উইলসনের লেবার সরকারের সময় কর-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জেহাদ, যে-সমস্যায় বিটলস নিজেও ভুক্তভোগী। ‘আই’ল ট্যাক্স দ্য স্ট্রিট/ ইফ ইউ ট্রাই টু সিট, সিট/ আই’ল ট্যাক্স ইওর সিট/ ইফ ইউ গেট টু কোল্ড/ আই’ল ট্যাক্স ইউ হিট/ ইফ ইউ টেক আ ওয়াক/ আই’ল ট্যাক্স ইওর ফিট…।’
প্রসঙ্গত, এই ‘রিভলভার’ জর্জ হ্যারিসনের ‘সংরাইটার’ চেহারায় প্রথম মাইলস্টোন অ্যালবাম, লেখক ইয়ান ইংলিশ-এর ভাষায়— ‘the album on which Harrison came of age as a songwriter’.
এই ‘কাম অফ এজ’-এর পর ক্রমশ সিঁড়ি। ১৯৬৭। ‘সারজেন্ট পেপার্স লোনলি হার্টস ক্লাব ব্ল্যান্ড’-এর ‘উইদিন ইউ, উইদাউট ইউ’। ‘দ্য বেস্ট হ্যারিসন-সং’— লেননের দরাজ সার্টিফিকেট— অবশ্য বন্ধুর শংসাপত্রে ম্যাটার করলেও সেই সময় আসলে বিটলস-এর সৃষ্টি, উচ্চতা এবং পতনে ভাঙনের অসংখ্য চিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার সময়, সেই চিহ্নে অন্তত গীতিকার হিসেবে জর্জ হ্যারিসনের উত্থানের আশার দিকটি হ্যারিসন নিজেই বুঝেছিলেন সুস্পষ্ট। এবং এই উত্তরণে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ঘরানার সুস্পষ্ট ছাপ। ‘লাভ ইউ টু’-র পর আবার ‘উইদিন ইউ…’, কোথাও একটা মোক্ষ, আত্ম-উত্তরণের ইঙ্গিত— ‘হোয়েন ইউ হ্যাভ সিন বিয়ন্ড ইওরসেলফ, দেন ইউ মে ফাইন্ড/ পিস অফ মাইন্ড ইজ ওয়েটিং দেয়ার’। এবং পাশাপাশি সেই অনন্তের দিকে ইশারা, যেখানে ‘টাইম উইল কাম হোয়েন ইউ সি উই আর অল ওয়ান/ অ্যান্ড লাইফ ফ্লো’জ অন উইদিন ইউ অ্যান্ড উইদাউট ইউ…’, এই ঐশ্বরিক চেতনার আভাস, এই দর্শনের পরবর্তী ধাপ নিশ্চিতভাবেই ‘ইনার লাইট’। দরজা খুলতে হবে, জানলা খুলতে হবে, চেতনার উন্মেষ, দর্শন চলে আসবে, আসবেই।
একপিঠে লেনন-ম্যাকার্টনি ডুয়োর ‘লেডি ম্যাডোনা’-র সঙ্গে অন্যপিঠে ‘ইনার লাইট’-এর নন-অ্যালবাম সিঙ্গল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ১৯৬৮-তে। প্রেক্ষিত বলতে, সংস্কৃত পন্ডিত জুয়ান মাস্কারো চাইনিজ টাও টেক্সট-এর অনুবাদ করে লিখেছিলেন ‘Lamps of Fire’, এবং এই ‘ল্যাম্পস অফ ফায়ার’ হ্যারিসনকে উপহার দিয়ে ছোট্ট অনুরোধ জুয়ানের, চ্যাপ্টার ৪৮ কি একবার হ্যারিসনীয় নিজস্ব টোনে প্রকাশ করা যায়? উত্তরে হ্যারিসনের নিজের কথায়— ‘হি সেন্ড মি দ্য বুক অ্যান্ড ইজ আ সুইট ওল্ড ম্যান… ইট ওয়াজ নাইজ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ডস সেইড এভরিথিং… অ্যামেন’। কী সেইসব শব্দ, যা সবকিছু বলতে পারে? যে দরজা, জানলার কথা বলছিলাম, সেই বাহ্যকে তুমুল অস্বীকার করে আত্মোন্নতির খোঁজ— ‘উইদাউট গোয়িং আউট অফ ইওর ডোর, ইউ ক্যান নো অল থিংস অন আর্থ… দ্য ফারদার ওয়ান ট্রাভেলস, দ্য লেস ওয়ান নোজ, দ্য লেস ওয়ান রিয়েলি নোজ।’
এই চাইনিজ টেক্সট প্রসঙ্গেই ’৬৮-র ডবল অ্যালবাম ‘দ্য বিটলস’ বা ‘হোয়াইট অ্যালবাম’-এর ‘হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপস’। ‘আই লুক অ্যাট দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যান্ড আই নোটিশ ইটস টার্নিং… উইথ এভরি মিস্টেক, উই মাস্ট সিওরলি বি লার্নিং …’। মিস্টিসিজমের ক্রম-আচ্ছন্নতার সঙ্গে গান লেখার ভেতর হ্যারিসনীয় ম্যাজিক, সারল্য। গান লেখার প্রেক্ষিত প্রুসঙ্গে হ্যারিসন বলছেন, ‘I picked up a book at random, opened it, saw ‘gently weeps’, then laid the book down again and started the song.’ পাশ্চাত্য আড়ম্বরের অন্যদিকে গিয়ে প্রাচ্য দর্শন এবং সবকিছুর সঙ্গেই সবকিছুর সংযোগ, বন্ধন এবং ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশন। ১৯৬৮-তে বিটলস-এর ভারতভ্রমণ এবং এই সময়েই জানুয়ারিতে বম্বেতে ইনার লাইটের রেকর্ডিং। গীতিকার-সুরকার হ্যারিসন তখন পূর্ণতার দিকে এগচ্ছেন। ভারতীয় সংগীতকে কাছে টেনে নেওয়ার অন্য এক হ্যারিসন, দ্বিতীয় পর্যায়ের হ্যারিসনকে নিয়ে কানাঘুষো, বদলে যাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে গানের ভাষা, গড়ন। ১৯৭৯-র এপ্রিলে ‘রোলিং স্টোন’ পত্রিকার একটি সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হল, মিস্টিসিজম এবং আধ্যাত্মিক উত্তরণকে নিয়ে পৃথিবী জুড়ে এত ভুল বোঝা কেন? এত ডার্ক শেড কেন? উত্তরে সপ্রতিভ, স্মিত হাসির জর্জ হ্যারিসন বলছেন— ‘It’s ignorance. They say ignorance is bliss, but bliss is not ignorance, it’s the opposite of that, which is knowledge.’
সংস্কৃত পন্ডিত জুয়ান মাস্কারো চাইনিজ টাও টেক্সট-এর অনুবাদ করে লিখেছিলেন ‘Lamps of Fire’, এবং এই ‘ল্যাম্পস অফ ফায়ার’ হ্যারিসনকে উপহার দিয়ে ছোট্ট অনুরোধ জুয়ানের, চ্যাপ্টার ৪৮ কি একবার হ্যারিসনীয় নিজস্ব টোনে প্রকাশ করা যায়? উত্তরে হ্যারিসনের নিজের কথায়— ‘হি সেন্ড মি দ্য বুক অ্যান্ড ইজ আ সুইট ওল্ড ম্যান… ইট ওয়াজ নাইজ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ডস সেইড
এভরিথিং… অ্যামেন’।
বিটলস পরবর্তী সোলো-র সেইসব গল্প। ‘ওয়ান্ডারওয়াল মিউজিক’ এবং ‘ইলেকট্রনিক সাউন্ড’— দু-দুটো ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবাম কম্পোজিশনের পর ১৯৭০-এর ‘অল থিংস মাস্ট পাস’, যার কভারে ব্যারি ফেনস্টেইনের তোলা সেই বিতর্কিত ছবি, চারজন বামন, বিদ্রুপ, বিটলস অ্যালিগরি এবং ফ্রায়ার পার্কের ঘাসের করিডরে কিছুটা দিশেহারা, না কি নতুন রাস্তার খোঁজে বসে থাকা একলা দীর্ঘ চুলের পুরুষ? জমে থাকা, বিটলস জমানায় ব্যাকফুটে চলে যাওয়া একের পর এক গান তৈরি হওয়া প্রসঙ্গে বন্ধু, গায়ক ফিল স্পেক্টর-এর স্মৃতিতে সেইসব দিন, ‘আমি জর্জের ফ্রায়ার পার্কে গেলাম। জর্জ বলল, আমাকে শোনানোর জন্য ওর কিছু গানটান আছে। ফিউ ডিটিজ ফর ইউ টু হিয়ার। এবং সেই সামান্য কিছু গানটানের অশেষ, অনন্ত সংগ্রহ। ওর কাছে শ’খানেকের ওপর গান জমে ছিল, এবং প্রত্যেকটাই মনে হচ্ছিল বাকিগুলোর চেয়ে ভাল।’ ‘মাই সুইট লর্ড’, ‘হিয়ার মি লর্ড’, ‘হোয়াট ইজ লাইফ’, ‘লেট ইট ডাউন’, ‘আই ডিগ লাভ’, ‘বিহাইন্ড দ্য লকড ডোর’ বা অ্যালবামের শিরোনামের সেইসব লিরিকাল ব্যালাড, আশা, আলোর কথা, গোষ্ঠী ভাঙলেও, ব্যক্তিসত্তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি, ‘নাও দ্য ডার্কনেস অনলি স্টেইজ অ্যাট দ্য নাইট/ ইন দ্য মর্নিং ইট উইল ফেড অ্যাওয়ে/ ডেলাইট ইজ গুড/ অ্যাট অ্যারাইভিং অ্যাট দ্য রাইট টাইম/ বাট ইটস নট অলওয়েজ গোয়িং/ টু বি দিজ গ্রে’।
বাকিটুকুতে বরং একটা বাদামি খোসার মতো সংক্ষিপ্তসার। ‘রেভোল্যুশন ইন দ্য হেড’ থেকে লেখক ইয়ান ম্যাকডোনাল্ডের কথাগুলো তুলে ধরছি, ‘Of the songwriting Beatles, Harrison was the one with the most coherent belief system and the one most likely to think his lyrics through. This makes his lyrics perhaps more dogged than Lennon and McCartney’s, but at least the listeners of the future have more chance of working out what he was driving at.’
’৮১-তে সদ্যনিহত লেননকে মনে রেখে ‘সামহোয়্যার ইন ইংল্যান্ড’ অ্যালবামের অন্যতম ট্রিবিউট ‘অল দোজ ইয়ার্স এগো’, কণ্ঠ দিচ্ছেন সতীর্থ পল-লিন্ডা ম্যাকার্টনি, স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের হাইফেনে দাঁড়িয়ে জর্জ লিখছেন, ‘উই আর লিভিং ইন আ ব্যাড ড্রিম, দে হ্যাভ ফরগটন অল অ্যাবাউট ম্যানকাইন্ড… ইউ ওয়্যার দ্য ওয়ান হু ইমাজিনড ইট অল।’
’৮৮-তে ডিলান, রয় অর্বিসন, জেফ লিন, টম পেটিদের নিয়ে তৈরি করছেন গানের দল ‘ট্রাভেলিং উইলবারি’। ’৮৮-র অক্টোবরে ‘ট্রাভেলিং উইলবারি’জ ভলিউম ওয়ান’-এর পর ’৯০-এর ডিসেম্বরে বের করছেন ‘ভলিউম থ্রি’। কেন? স্বভাবসিদ্ধ উইটে জর্জ বলছেন, ‘লেটস কনফিউজ দ্য বাগার্স’। খ্যাতি, বন্ধুবিচ্ছেদ, একক সত্তার শিখরে গিয়ে সেই পুরনো স্ট্রিমিং, গিটার, রোলিং স্টোনসের বিচারে সেরা একশো গিটারিস্টের তালিকায় ১১, শ্রেষ্ঠ সংরাইটার-এর তালিকায় ৬৫, বন্ধুমৃত্যু, রবিশংকরের কাছে পড়ে থেকে দিনের পর দিন উদ্দাম সেতার আর সেতার, হার্পটন এল অ্যাকুস্টিক গিটারে ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ শোয়ে উদ্দাম কাঁপন, হিন্দু দর্শন, নেশা, নেশা, নেশা— ঘটনার আশ্চর্য ঢেউ ঢেউ এবং ঢেউ, অথচ কোথাও গিয়ে সমুদ্রের দিগন্তে নৌকোর মতো একা জর্জ। তখন শখ বলতে বাগান করা। আত্মজীবনী ‘আই মি মাইন’-এর উৎসর্গপত্রে লেখা— ‘গার্ডেনার্স, এভরিহোয়্যার’। লিখছেন, ‘I feel I’m actually on the wrong planet, and it’s great when I’m in my garden, but the minute I go out the gate I think ‘What the hell I am doing here?’
শরীর দিচ্ছিল না। ’৯৭-এর পর থেকেই গলার ক্যানসার, একের পর এক রেডিওথেরাপি। সামান্য সুস্থ হতেই ’৯৯-এর ৩০ ডিসেম্বর বন্ধু লেননের মতো প্রায় এক মারণ পরিণতি হতে হতেও বেঁচে গেলেন। প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিক মার্ক চ্যাপমান থেকে এক্ষেত্রে মাইকেল আব্রাম। ফুসফুস, মাথায় প্রায় মারণ ছুরি। ঠিক তার পর থেকেই কি মারণ অসুখ আবার ছড়িয়ে পড়ল কোষ থেকে কোষে? নন-স্মল সেল লাং ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ছিল মস্তিস্কে। দ্রুত, দ্রুত, দ্রুত। আদি শঙ্করাচার্যের কথায় ফিরছেন মুমূর্ষু হ্যারিসন, ‘জীবন পদ্মপাতায় বৃষ্টির ফোঁটার মতো স্বল্পস্থায়ী’।
শেষটুকুতেও জড়িয়ে পড়ল বন্ধুর নাম। বেভারলি হিলসের হিদার রোডে ম্যাকার্টনির মালিকানায় থাকা একটি আবাসনে বছর আটান্নর হ্যারিসনের শেষদিন, শেষ নভেম্বর। স্বামীর শেষ কথা মনে করছেন দ্বিতীয়া স্ত্রী অলিভিয়া অ্যারিয়াস, ‘Everything else can wait, but the search for God cannot wait, and love one another…’
এবং, আশ্চর্য এক অতল লোকে ‘কোয়াইট বিটল’ জর্জ হ্যারিসন লিখছেন, গাইছেন— ‘অল থিংস মাস্ট পাস/ নান অফ লাইফ’স স্ট্রিংস ক্যান লাস্ট/ সো আই মাস্ট বি অন মাই ওয়ে/ অ্যান্ড ফেস অ্যানাদার ডে…’।