ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • জীবনের শিক্ষা, পিচ থেকে


    ভি ভি এস লক্ষ্মণ (V.V.S Laxman) (March 13, 2021)
     

    কুড়িটা বছর পেরিয়ে গেল ইডেন গার্ডেনস-এ আমাদের সেই দুর্দান্ত টেস্ট ম্যাচের, যে ম্যাচের শরিক আমিও ছিলাম। কিন্তু সেই গৌরবময় স্মৃতি এখনও তেমনই উজ্জ্বল, যেমনটা ছিল ২০০১ সালের মার্চে। 

    ওই টেস্ট-সিরিজে, ইডেনের টেস্ট-টা ছিল দ্বিতীয়। আর সেই টেস্টের তৃতীয় দিনে বাধা-বিপত্তির পাহাড় ক্রমশই আমাদের সামনে জমা হয়ে চলেছিল। স্টিভ ওয়া’র টিম মুম্বই টেস্টে দিন তিনেকের মধ্যে আমাদের হারিয়ে দিয়ে পর পর ষোলোটা টেস্ট জেতার রেকর্ড করে ফেলেছে। আর ইডেন টেস্টের প্রথম দিনে ভাজ্জি (হরভজন সিং) দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করে ভারতীয় টেস্ট ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড করার পরেও, তৃতীয় দিনে আমরা বেশ বুঝতে পারছি যে ফলো-অন হতে চলেছে। 

    তার পর যা ঘটেছিল, তা নিয়ে প্রচুর লেখালিখি হয়েছে। যদিও ওই জয়ের স্বাদটা অনন্য, কিন্তু ওই ম্যাচটা থেকে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল জীবনের কয়েকটা অমূল্য শিক্ষা। যেমন, যাই হোক না কেন, কোনও সময়ই হাল ছাড়া যাবে না। যতই কঠিন মনে হোক না কেন, নুয়ে না পড়ে তোমায় সমস্যার সমাধান করতেই হবে। তোমায় চূড়ান্ত চেষ্টাটা করতে হবে, মনে রাখতে হবে তোমার সহ-খেলোয়াড়রাও তোমার সঙ্গে লড়াই করছে। তোমায় বর্তমানে বাঁচতে হবে, আগে কী হয়েছে আর পরে কী হতে পারে— এই নিয়ে ভাবলে চলবে না। ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করতে হবে, এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেলে আনন্দে আত্মহারা না হয়ে ফের নতুন লক্ষ্য স্থির করে এগোতে হবে। এবং এই অখণ্ড সত্য কেবলমাত্র ক্রিকেটের মাঠেই নয়, জীবনের ক্ষেত্রেও একই রকম ভাবে প্রযোজ্য।                        

    আমি, ভাজ্জি আর দ্রাবিড় ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় ছিনিয়ে আনার সিংহভাগ কৃতিত্বটা পেয়েছিলাম, কিন্তু এই জয়টা ছিল টিমের চেষ্টা আর টিম স্পিরিটের ফল। পুরো ড্রেসিং-রুমের আমাদের প্রতি যে বিশ্বাস ছিল এবং তাদের থেকে আমরা যে সমর্থন পেয়েছিলাম, তা অবিশ্বাস্য। মনে হচ্ছিল, মিডল অর্ডারে মাঠে কেবল আমি আর রাহুল খেলছিলাম না, আমাদের পুরো টিম আর ইডেনের অসাধারণ দর্শকরাও আমাদের সঙ্গে এই পিচে খেলছেন।

    হ্যাটট্রিক-উল্লাস

    সদ্য ভাইরাল ফিভারের কোপ থেকে উঠে দ্রাবিড় ওই ম্যাচটা খেলছিল। ১৮০ রান করার সময় অনেক বারই ওর শরীরে টান ধরে যাচ্ছিল। দ্রাবিড় তখন সহ-অধিনায়ক, তা সত্ত্বেও কোনও রকম বিরক্তি না দেখিয়েই সেকেন্ড ইনিংসে ওর তিন নম্বর জায়গাটা আমার জন্য অবলীলায় ছেড়ে দিয়েছিল। তখন ওর একমাত্র লক্ষ্য ছিল, কী করে ওই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে টিমকে টেনে তোলা যায়। আর সেই দিন সারা পৃথিবীর সব দরজা বন্ধ করে শুধু ওই সময়ের খেলার দিকে যে ভাবে মন-প্রাণ ঢেলে দিয়েছিল, সেই দৃঢ় সঙ্কল্পের শিক্ষাটা আমার মনে গেঁথে গেছে সেই মুহূর্ত থেকে।   

    যখন ভাবি, ওই নাটকটা ইডেনেই মঞ্চস্থ হয়েছিল, আমার খুব একটা অবাক লাগে না। ইডেন শুধু আমার কাছে স্পেশাল নয়, গোটা ভারতীয় দলের কাছেই বিশেষ মাঠ। কারণ ইডেন সবসময়ই এমন পিচ উপহার দেয়, যা সব খেলোয়াড়দের পক্ষেই চমৎকার, আর তাই একটা দুরন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে পাওয়া যায়। ইডেনের দর্শকেরাও খুব স্পেশাল। তাঁরা আসেন প্রচুর সংখ্যায়, প্রাণশক্তি আর উৎসাহে ভরপুর, আর নিজেদের দল ও প্রিয় খেলোয়াড়দের সাফল্য দেখতে উদগ্রীব। তৃতীয় দিনের খেলার শেষদিকে যখন তেন্ডুলকর আর তারপর গাঙ্গুলি আউট হল, অনেকেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেছিলেন, কিন্তু তাঁরা দৌড়ে ফিরে আসেন, যখন আমার আর দ্রাবিড়ের ওই ঐন্দ্রজালিক পার্টনারশিপটা চলতে থাকে। এতে বোঝা যায়, তাঁরা কতটা প্যাশনেট, শুধু খেলাটার ব্যাপারে নয়, খেলার ফলাফলটার ব্যাপারেও।

    অনেকবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আমি ওই খেলায় তিনশো করতে পারিনি বলে আফশোস হয় কি না। আমার উত্তর একটাই— একেবারেই না। আমি বিশ্বাস করি, একজন খেলোয়াড়ের কৃতিত্বের মূল্য খুবই কম, যদি তা দলকে জিততে সাহায্য না করে। শেষদিনে, আমাদের লক্ষ্য ছিল খুব তাড়াতাড়ি রান তোলা, কারণ আমরা ডিক্লেয়ার করব। তা করতে গিয়ে আমি যদি আউট হয়ে থাকি, দুঃখ কিসের? আমি যদি তিনশো করতাম, আর অস্ট্রেলিয়া কোনও ভাবে ম্যাচটা বাঁচিয়ে দিত, তাহলে আমি ভেঙে পড়তাম। আমার ২৮১-টা স্পেশাল হয়ে আছে, ম্যাচটার ফলটার জন্য, যেভাবে ম্যাচটা শেষদিনে আমরা জিতেছিলাম তার জন্য, যেখানে এমনকী তেন্ডুলকরও অমন দুরন্ত বল করল।  

    অপরাজিত আনন্দ

    ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য মেনেই, আমরা সম্প্রতি একটা দুর্দান্ত সিরিজ দেখলাম অস্ট্রেলিয়ায়। আমার মতে, এমসিজি আর গাব্বায় ভারতের জয় আমাদের ওই ইডেন জয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। শেষ টেস্টটা অস্ট্রেলিয়া খেলছিল ব্রিসবেনে, যেখানে গত ত্রিশ বছর তারা হারেনি। উল্টো দিকে ভারতীয় দলে বিরাট কোহলি নেই, তা ছাড়া প্রথম সারির বোলাররা কেউ নেই। এই অবস্থায়, সিরিজের ফলাফল নির্ধারণের এই টেস্ট ম্যাচে, ভারতের তরুণ তুর্কিরা যেভাবে এগিয়ে এসে নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব নিল, তার কোনও তুলনা হয় না।  

    এটা বলা বাহুল্য যে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোনও জয়ই সহজ নয়। যদি এদের বিরুদ্ধে কেউ রান করে বা উইকেট পায়, সেটাকে উপহার ভাবার কোনও কারণ নেই। সেটাকে অনেক লড়ে অর্জন করতে হয়। ভারতও কিন্তু সেই মানসিকতায় বিশ্বাস করে। ফলে এই দুই দলের মধ্যে খেলা হলে পরিস্থিতি বেশ তীব্র আর উত্তেজনাপূর্ণ থাকে। 

    অস্ট্রেলিয়া ভারতে এসে বারবার দিব্যি ভাল খেলেছে এবং চমৎকার মোকাবিলা করেছে, ঠিক যেমনটা আমরা করেছি ওদের দেশে ট্যুর করে গত ২০ বছরে। টেস্ট ক্রিকেটে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন গৌরবময় আসন পেয়েছে। এই দুই দলের ম্যাচ হলে টেলিভিশনে তা দেখতে সবচেয়ে বেশি দর্শক মুখিয়ে থাকেন তো বটেই, এই দুই দলের খেলোয়াড়রাও পরস্পরের সঙ্গে টক্কর নিতে মুখিয়ে থাকেন। কারণ একজন খেলোয়াড়ের কাছে, সত্যিকারের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার চেয়ে উত্তেজক আর কিছুই নেই। 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook