মেলার সময়ে বৃষ্টি? এই পৌষ মাসে? গভীর রাতে একেবারে উথাল-পাথাল বৃষ্টির তোড়ে মনে হচ্ছে পুরো মেলাটাই ধ্বংস হয়ে গেল বুঝি। পাঁচ বছর আগে, ১৯৮৯ সালে, শান্তিনিকেতনেরই বাসিন্দা তখন আমি, পূর্বপল্লীর একটা প্রান্তিক বাড়িতে শুয়ে ভাবছি থরে থরে সাজানো মেলাভর্তি ছাউনিগুলির কথা। রবীন্দ্রভবনেরও একটা প্রদর্শনী আছে ওখানে, দুর্লভ ছবিতে-পোস্টারে ভবনের কর্মীরা সাজিয়ে তুলেছেন ক’দিন ধরে, এখনকার মেলার এও একটা অঙ্গ, এই বৃষ্টিতে হয়ত-বা তা নষ্টই হয়ে গেল সব। কিংকর্তব্য স্থির করতে বাইরে এসে একবার দাঁড়াই, হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির ঝাপট এসে লাগে, আর নিরাপদ ঘরের প্রশ্রয়ে দাঁড়িয়ে-থাকা-আমার হঠাৎ মনে পড়ে যায় ছত্রিশ বছর আগেকার একটা অসহায় শীতবোধ, এই শান্তিনিকেতনে আমাদের প্রথম পৌষমেলা দেখার স্মৃতি।
১৯৫৩ সালে এক সকালবেলায় কাগজ পড়তে পড়তে বন্ধুকে বলেছিলাম: ‘শান্তিনিকেতন যাবি? পৌষমেলায়?’ বন্ধু সঙ্গে সঙ্গে তৈরি, সেদিনই সাতই পৌষ। আভাস পেয়ে ভাই জানায় সেও যাবে। সবই ঠিক, সমস্যা শুধু টাকার। আমাদের সে-আমলে দু’দিনের জন্য শান্তিনিকেতনে যাওয়াও ছিল মস্ত একটা বিলাসিতার সমান। দিন আনি-দিন খাই সংসারের মধ্যে এমন একটা প্রস্তাব তোলাও বেশ বেহায়াপনা, কিন্তু তবু খানিক ঝুঁকি নিয়ে মায়ের কাছে কাকুতি করতেই মিলে গেল যাওয়া-আসার ভাড়াটুকু, ঠিক হল যে তক্ষুনি গিয়ে ফিরে আসব আবার গভীর রাতের গাড়িতে, আশ্রয়ের ঝঞ্ঝাট নেই কিছু। সম্মতির আনন্দে আমরা কেবল খেয়াল করিনি যে পৌষের শান্তিনিকেতনের জন্য ন্যূনতম একটা শীতের জামাও চাই। সন্ধ্যের পর মেলার প্রান্তে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থর্থর্ কাঁপছিলাম যখন তিনজনে, সামনের যাত্রাগান যখন বেশ ঝাপসা লাগছিল চোখে, নিজেদের বিবেচনাহীন নির্বুদ্ধিতার কথা মনে পড়ল কেবল তখন। এ-নির্বুদ্ধিতার কথা ভেবে পরে আমরা বিস্মিত হয়েছি অনেকবার, কিন্তু দুঃখিত হইনি কখনও।
দুঃখিত হইনি, কেননা সে-সুযোগটা হারালে শান্তিনিকেতনের ভিন্ন-একটা যুগের ভিন্ন-একটা ছবি দেখাই হত না আমাদের। কতই সহজ ছিল তখন যাওয়া, কতই ঘরোয়া ছিল মেলা। ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউসের পা ছুঁয়ে প্রায় ভুবনডাঙা পর্যন্ত উপচে-পড়া, আশ্রমপ্রান্ত থেকে পূর্বপল্লী পর্যন্ত ছড়িয়ে-যাওয়া, সুরক্ষার আয়োজনে আদ্যন্ত ভরপুর প্রায় একটা স্বতন্ত্র-শহর-হয়ে-ওঠা আজকের দিনের মেলার সঙ্গে তার কোনও তুলনাই হয় না। মেলা তখন ছিল আশ্রমের উত্তরপ্রান্তের বাইরে খোলা মাঠটকুর মধ্যে, যে-মাঠও আজ বাঁধা পড়েছে খাঁচায়, ওরই, মধ্যে বাউলগান যাত্রাপালা আর টুকিটাকির পসরা। মাইক আর লাউডস্পিকারবিহীন সেই পসরায় গ্রামীণ গন্ধের তাজা ভাবটা লেগে আছে তখনও। কাঠের পুতুল মাটির পুতুল গালার পুতুল, মেয়েদের নানা রকমের সাঁওতালি গয়না, হাঁড়িকলসি টেবিলচেয়ার, ঢোল বাঁশি তাঁতের কাপড়, আর আছে বেতের টুপি আর ছোট ছোট ছড়ি। মেলায় কেনা একটা ছড়ি হাতে ঘুরে বেড়ানোটা তার পরের কয়েকবছর ধরে হয়ে উঠেছিল তরুণ কবি-লেখকদের প্রায় যেন এক মর্যাদার চিহ্ন। ‘পৌষমেলায় গিয়েছিলে? জয়দেবে?’ এই প্রশ্নের উত্তরের উপর যেন সেদিন নির্ভর করছিল শিল্পীসমাজের মধ্যে পৌঁছবার কোনও ছাড়পত্র পাওয়া।
পুরনো গ্রামীণ ছবিটা এখনকার মেলা থেকে যে একেবারে মুছে গেছে তা নয়, কিন্তু অনেকটা লুকিয়ে গেছে মনে হয়; মস্ত আয়োজন থেকে খুঁজে বার করতে হয় তাকে, নিমাই চট্টোপাধ্যায়ের মত কোনও কোনও প্রাক্তন খুঁজে নেনও সেটা। আজ তাকে ঘিরে ফেলেছে শহুরে মেলা। নিজের চোখে শান্তিনিকেতন দেখবারও প্রায় দশ বছর আগে প্রমথনাথ বিশীর অবিস্মরণীয় স্মৃতিকথায় পড়েছিলাম আরও পুরনো দিনের এই মেলার এক বর্ণনা, যেখানে কত রকমের দোকানের মধ্যে ছিল ‘সন্দেশ, লোহার বাসন, কাটা কাপড়, তেলে-ভাজা, খেলনা, এমনকি শিউড়ি হইতে কয়েকখানা মোরব্বার দোকানও আসিয়াছে।’ ১৯৫৩ সালের মেলায় দাঁড়িয়ে এই ‘এমনকি’ শব্দটার তাৎপর্য বোঝা শক্ত ছিল না, কিন্তু পূর্বপল্লীর দিকদিশাহীন প্রান্তরের মধ্যে আজ সিউড়িও নিতান্ত তুচ্ছ হয়ে যায়, মনে হয় যেন গোটা মহানগর তার গ্রাস মেলে দিয়েছে এখানে। তার মস্ত হাঁ-মুখের মধ্যে ঢুকে গেছে গ্রাম।
একটু একটু করে যে বেড়ে উঠবে সব, পালটেও যাবে অনেকখানি, এ অবশ্য স্বাভাবিক। আমাদেরও সেই প্রথম দেখার ছত্রিশ বছর আগেকার আরেক মেলার বর্ণনা যদি ভাবি সীতাদেবীর ‘পুণ্যস্মৃতি’ থেকে, যেখানে তিনি লেখেন: ‘এখন যেখানে উত্তরায়ণ অবস্থিত সেইখানেই তখন মেলা হইত।’ সেসব দিনের মেলায় মেয়েদের এত অবাধ প্রবেশ ছিল না, আসতে হত আয়োজন করে, মুজতবা আলী লিখেছেন ‘আশ্রমের মাস্টারদের গৃহিণী-কন্যারা যখন মেলা দেখার প্রথম অনুমতি পেলেন… তখন তাঁদের আনা হয়েছিল গরুর গাড়িতে করে এবং তাঁরা মেলার প্রত্যন্ত প্রদেশ থেকে, গাড়িতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেলা দেখেছিলেন।’ ঠিক গরুর গাড়িই হয়ত ছিল না সেটা, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় একটু ভিন্নরকম জানিয়েছিলেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। লিখেছিলেন, ‘মহর্ষির সময়ের একটা বিরাট চার-চাকার শকট ছিল; তার মধ্যে মেয়েদের ভরিয়া আমরা ঠেলিতে ঠেলিতে মন্দিরের কোণায় গাড়ি লইয়া যাইতাম। শকটের ঝিলিমিলি দিয়া মেয়েরা বাজি দেখিত।’ সেই আমলেও অবশ্য সীতাদেবীদের মনে হত, ‘লোকে লোকারণ্য; মাঠ, পথ-ঘাট সবেরই চেহারা যেন অন্যরকম’, প্রমথনাথ বিশীরাও দেখতেন, ‘মন্দিরের উত্তরের মাঠখানা এক রাত্রির মধ্যে দোকানে তাঁবুতে গাড়িতে নাগরদোলায় শামিয়ানায়’ ভরে যাচ্ছে, আর ‘হাজার হাজার লোক’। আলোর সাজ বা জাহাজ আর কেল্লার যুদ্ধ দেখানো বাজির আয়োজনে ভিড় সামলানো শক্ত হত সে-আমলেও, বেত হাতে ‘রায়পুরের রবিসিংহ ছাড়া’ আর কারও নাকি সম্ভব ছিল না সে জনতাকে শাসন করা, সীতাদেবীদেরও না কি আশ্রমগণ্ডির মধ্যে ফিরতে হত নেপালি ছাত্র নরভূপের মত ‘কয়েকটি বলবান ছাত্রের সাহায্যে’।
মাঝখানে কি তবে একটু কমেই গিয়েছিল জনসমাগম? কেননা, অন্তত ১৯৫৩ সালের ছিমছাম মেলায় দুপুর একটা থেকে রাত একটার মধ্যে আমাদের তো অত উদ্ভ্রান্ত লাগেনি, নরভূপ বা রবিসিংহদের দরকার বুঝিনি তেমন। কমে যাবার এই ধারণাটা একেবারে অমূলক হয়ত নয়, সীতাদেবীও একবার তুলনা করে ভেবেছিলেন যে ‘১৩৪৬ সালে মেলা যেমন দেখিলাম, তখন ইহার চেয়ে জমিত অনেক বেশি।’
পুরনো দিনের কথা অবশ্য স্মৃতিরঞ্জনে অনেকটা বড় হয়েও দেখা দেয়। আজকের দিনের মেলার মধ্যে তাই প্রতি বছরই আরও একটা গোপন-মেলা ছড়িয়ে যেতে থাকে প্রাক্তনদের মনে। বাইরের অভ্যাগতদের কাছে পৌষমেলা শুধু এই মেলার মাঠ, আগে যা ছিল একদিনের আর আজ তিনদিনের। এই তিনদিনের পরেও অনেকদিন ধরে পড়ে থাকে যে ভাঙা মেলা, সেখানে যেন আজও অল্প জেগে ওঠে আবার সেই গ্রামটুকু। কিন্তু এটা ছাড়াও, আশ্রমিকদের কাছে প্রাক্তনদের কাছে উৎসব ছড়ানো ছিল আট তারিখের পুরনো ছাত্রছাত্রীদের মিলনে, ন’তারিখের প্রয়াতস্মরণে। আর, শান্তিনিকেতনের পুরনো ছাত্র যাঁরা, কিংবা যাঁরা অবিরাম আসা-যাওয়ায় শান্তিনিকেতনকে করে নিয়েছেন প্রায় তাঁদের আপনভূমি, মেলার মাঠের প্রকাণ্ড ভিড়ের মধ্যে তাঁরা গড়ে তোলেন মিলনস্মরণের আরেক সমান্তরাল মেলা, প্রচ্ছন্ন কিন্তু সজীব। কালোর দোকানের কালো নেই কিন্তু মেলায় তাঁর দোকান তবু আছে; আর অনিবার্যভাবে আছে ভিড়ের যে কোনও প্রান্ত থেকে খুঁজে খুঁজে সেই দোকানে কিছু মানুষের এসে বসেথাকা কথাবলা গানগাওয়া, শরীরেমনে সমস্ত অতীতটাকে একবার জাগিয়ে নেওয়া। এও এক পুনর্মিলনের শীতমেলা, সময় চলে যাওয়ার ভয়মাখানো মধুরতায় ভরা, যখন হয়ত যে-কোনও স্টলের সামনে শতরঞ্চি বিছিয়ে কয়েকজন গাইতে শুরু করেছেন গান, পঞ্চাশের এপারে-ওপারে তাঁদের বয়স এবং মধ্যবর্তী বৃত্তে ওই বয়সীরাই গানের ছন্দে শুরু করেছেন নাচ, চলমান দর্শকেরা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেছেন চারপাশে— বিরাট মেলার মধ্যে আজ থেকেথেকে এই ছোট্ট মেলাও বসে যায় অনেকসময়ে।
কিন্তু ফুর্তির বাইরে, নাগরিক অবসাদ কাটিয়ে আসবার জন্য কয়েকটা দিনের অবসরবোধের বাইরে, ট্যুরিজমের বাইরে, এইসব স্মৃতিরোমাঞ্চের বাইরে, সাতই পৌষে কি একথাও কারও কারও মনে হয় যে ‘আজ আমাদের পবিত্র হবার দিন, শুদ্ধ হওয়ার দিন’? রানী চন্দের একটা বর্ণনা মনে পড়ে, ওই লাইন দিয়েই উৎসবের বর্ণনা তিনি শুরু করেছিলেন যেখানে, বলেছিলেন: ‘উত্তরায়ণের সামনে ছোট একটা মাঠ, মেলার মাঠ। তখনকার দিনে এটিকে মনে হত না ছোট বলে। মন্দির থেকে বেরিয়ে সোজা পথে এই মাঠে ঢুকতে চার তালগাছের উঁচু কান্তের (খুঁটির) উপরে ছোট একটি কাঠের ঘর, খড়ের ছাউনি দেওয়া। মই বেয়ে উঠে জনাচারেক লোক বসতে পারে ভিতরে। এইটি আমাদের নহবৎখানা। শুধু এই দিনটির জন্য নহবৎখানার চারদিকের চারখানি ছোট ছোট দরজা খুলে যায়, এই দরজা দিয়ে সুর ছড়িয়ে পড়ে পুবে পশ্চিমে উত্তরে দক্ষিণে। আজকের এই সানাইয়ের সুর বড় মধুর। এই সুর যেন শুনি না আর কখনও কোথাও।’
এই নহবৎখানা সানাইয়ের সুর আর তার সঙ্গে ওই ‘পবিত্র হবার’ কথা শুনলে একটা আধুনিক ভ্রূকুঞ্চন জেগে উঠবার কথা, অথচ এ মেলার সূচনা তো হতে পেরেছিল ওই শুদ্ধতারই একটা অনুষঙ্গ থেকে। এ কথা আজ আর কারও মনে থাকবার কথা নয়, মনে পড়বার কথা নয় যে দেবেন্দ্রনাথ ১৮৮৮ সালে আশ্রমের জন্য যে ট্রাস্ট-ডীড তৈরি করেছিলেন, তার মধ্যেই ছিল এই মেলার নির্দেশ, আর মেলার একটা সম্ভাব্য প্রকৃতিও চিহ্নিত করে দেওয়া ছিল সেখানে। বলা ছিল: ‘ধর্মভাব-উদ্দীপনের জন্য ট্রস্টীগণ বর্ষে বর্ষে একটি মেলা বসাইবার চেষ্টা ও উদ্যোগ করিবেন। এই মেলাতে সকল ধর্মসম্প্রদায়ের সাধুপুরুষেরা আসিয়া ধর্মবিচার ও ধর্মালাপ করিতে পারিবেন। এই মেলার উৎসবে কোনপ্রকার পৌত্তলিক আরাধনা হইবে না ও কুৎসিত আমোদ-উল্লাস হইতে পারিবে না; মদ্যমাংস ব্যতীত এই মেলায় সর্বপ্রকার দ্রব্যাদি খরিদ-বিক্রয় হইতে পারিবে। যদি কালে এই মেলা দ্বারা কোনরূপ আয় হয়, তবে ট্রস্টীগণ ওই আয়ের টাকা মেলার কিংবা আশ্রমের উন্নতির জন্য ব্যয় করিবেন…’
কোনও কিছুরই নিছক আক্ষরিক অনুবর্তন থাকতে পারে না ইতিহাসে, ১৮৯৪ সালে প্রথম বাজিপোড়ানো আর তার পরের বছর প্রথম মেলা শুরু হবার পর এই একশ বছর জুড়ে তার যে পরিবর্তনমূলক প্রসার হবে অনেকখানি, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তবু, উৎসব-আহ্লাদের বিস্তীর্ণ আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে, বিপণনের সমস্ত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, স্মৃতিমেদুরতার সমস্ত প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে মুজতবা আলীর মত কেউ কেউ হয়ত একটু উৎসও ছুঁয়ে থাকতে চান, ভাবেন যে, ‘এই মেলার সময় যদি দেশবিদেশের সর্বধর্মের জ্ঞানী-গুণী সাধক-পণ্ডিত সম্প্রদায়কে আহ্বান করে তিনদিনব্যাপী’ কোনও চিন্তাবিনিময়েরও চেষ্টা করা যায়, মেলা হয়ত একটা ভিন্ন সুরও পেতে পারে তাহলে। মুজতবা আলীর এই ভাবনার সঙ্গে আমাদের কেবল জুড়ে দিতে ইচ্ছে করে এইটুকু যে এ চেষ্টা ঠিক হালফিল সেমিনারের চেহারায় আসবার কথা নয়, মেলার উপযোগী করে এ হতে পারে একরকমের কথকতারই চেহারায়। আর, এ দেশবিদেশ শুধু বড় বড় নগরের মধ্যে বাঁধা থাকবার নয়, আমাদের গ্রাম-গ্রামান্তরে মানুষজনের মধ্যেই ছড়ানো আছে সেই কথকেরা। তাঁরা ধর্মের কথা বলতে পারেন, দর্শনের কথা বলতে পারেন, জীবনের কথা বলতে পারেন, আবার সেইসঙ্গে রানী চন্দের দেখা জসিমুদ্দিনের আচরণের মত এই ছবিটার দিকেও নিয়ে যেতে পারেন যে ‘এমন ছড়া কাটলেন— হাসিতে হাততালিতে ভরে গেল মেলার মাঠ। কালো কোটের উপরে কোমরে চাদর জড়ানো, ভিড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নাচছেন, গাইছেন, দুলছেন, হাসছেন—’
এই ছড়াগান হাসি আনন্দের মেলা প্রতিবছরেরই সাতই পৌষে ফিরে আসে আমাদের অনেকের মনে, ফেরে না শুধু রবীন্দ্রনাথের সেই আহ্বানটুকু: ‘আপনাদের দেখে যেতে হবে আমাদের এই অনুষ্ঠান। দেখে যেতে হবে দেশের উপেক্ষিত এই গ্রাম, বাপ-মায়ের তাড়ানো সন্তানের মত এই গ্রামবাসীদের… কোথায় আমাদের দেশের প্রাণ, সত্যিকার অভাব অভিযোগ কোথায়, তা আপনাদের দেখে যেতে হবে।’ মেলার থেকে হারিয়ে গেছে শুধু সেই দেখাটুকু।
কৃতজ্ঞতা : সোমেশ্বর ভৌমিক, জয়িতা সেনগুপ্ত, দেবাঙ্গন বসু
শঙ্খ ঘোষের এই রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘আজকাল’ পত্রিকায় ১৯৯৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর। বানান অপরিবর্তিত রেখে লেখাটি পুনর্মুদ্রিত হল।